somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ সুপ্তির বিয়ে

১৯ শে মে, ২০১৬ দুপুর ১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক
----


বিয়ে যে করতে হবে, এই ভাবনাটা অনেক দিন আমার মাথায় আসেই নি । এর পেছনে অবশ্য যুক্তি যুক্ত কারণও ছিল । এখনও জেরিনের কথা গুলো আমার কানে খুব পরিস্কার ভাবেই বাজে । মনে না করতে চাইলেও মাঝে মাঝে সেগুলো সুচালো তীরের মতই বুকের ভেতরে বিঁধে । অবশ্য আমি জেরিনকে দোষ দিতে পারি না । মেয়েটার কোন কিছু করারও ছিল না । চুপচাপ দেখা ছাড়া আর কিছু করারও ছিল না ।

শান্ত কন্ঠেই জেরিন আমর দিকে তাকিয়ে ছিল কিছুটা সময় । ওর এই চেহারাটা আমি খুব ভাল করেই চিনতাম । কঠিন কিছু বলার আগে ও এমন করে তাকিয়ে থাকে । মনে মনে ঠিক করে নেয় কি বলবে । আরও কিছু সমু চুপ থাকার পরে জেরিন বলল
-বাবা রাজি হচ্ছেন না !
আমি জানতাম জেরিনের বাবা কোন দিনও রাজি হবে না । জেরিন আবার বলল
-তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো কেন রাজি হচ্ছে না । কোন মেয়ের বাবাই চাইবে না তার মেয়ে একটা শূন্য ঘরে যাক । তার উপর তোমার অবস্থা এমন ভাল না যে আমি সাহস করে চলে আসবো ।

আমার অবস্থা বলতে জেরিন আমার আর্থিক অবস্থাকে বোঝাচ্ছে । সবে মাত্র একটা চাকরিতে ঢুকেছি তখন । বেতন খুব একটা ভাল না । নিজের চলে যায় ভাল ভাবে কিন্তু বউ নিয়ে চলার মত নয় ।
জেরিন বলল
-আগামী সপ্তাহে ওরা আমাকে দেখতে আসবে ! আজকেই .....

লাইনটা শেষ করলো না জেরিন । আমি জানতাম ও কি বলতে এসেছিলো । সেদিনই আমাদের শেষ দেখা ছিল । এরপর আর ওর সাথে আমার দেখা হয় নি । শুনেছিলাম বিয়ে হয়েছে খুব ভাল জায়গায় । তারপর থেকেই আমি একা একা সামনের দিকে যাচ্ছি । সপ্তাহে ৫ দিন কাজ করি । দুইদিন ঘুমাই আর বই পড়ি । অন্য কিছু মাথার ভেতরে আনি না । বেশ ভালই ছিলাম কিন্তু মাঝখান দিয়ে রফিক মামা আমাকে ঝামেলায় ফেলে দিলেন ।

আসলে আমার আত্মীয়ের ভেতরে কেবল এই মামাকেই আমি চিনি কিংবা কেবল ইনার সাথেই আমার যোগাযোগ আছে । ঢাকাতে আমার অভিভাবকও এই মামাই । মায়ের যদিও আপন ভাই নয় তবুও এক মাত্র জীবিত আত্মীয় বলতে এই রফিক মামাই আমার আছে । বাবা মা তো মারা গেছে সেই কবে । দাদা কিংবা নানার দিক থেকেও কেউ আর বেঁচে নেই । কিংবা থাকলেও আমি চিনি না তাদের তারাও আমাকে চেনার দরকার মনে করে না । বেশি চিনলেই ঝামেলা । এই রফিক মামাই আমাকে ঝামেলা মনে করেও একটু একটু চেনে । যদিও আমি তাকে খুব একটা ঝামেলাতে কোন দিন ফেলি নাই ।

মামা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-বিয়ে করতে হবে না ?
আমি টেবিলে বসে ভাত মাখাচ্ছিলাম । মাঝে মাঝে মামার বাসায় আমার দাওয়াত থাকে । মাসের ভেতরে দু এক দিন । অথবা বিশেষ কোন দরকার পড়লে মামা কিংবা মামি আমাকে ডেকে পাঠায় । আজকের বিশেষ দরকার তাহলে আমার বিয়ে । মামাকে বললাম
-যা বেতন পাই এই টাকা দিয়ে বউ পালা যাবে না ।

টেবিলে মামী নেই । আমি আর মামা একা খেতে বসেছি । মামা বলল
-সেটা নিয়ে তোকে চিন্তা করতে হবে না । মেয়ের বেশ টাকা পয়সা আছে । ঢাকায় ফ্ল্যাট আসে একটা । সেই ফ্ল্যাটে থাকবি দুজন আর তোর চাকরির বেতন দিয়ে সংসার চলবে । ব্যস !

আমার মাথায় ঠিক ঢুকলো না যে মেয়ের ঢাকায় ফ্ল্যাট আছে সেই মেয়ে আমাকে কেন বিয়ে করবে । কোন দুঃখে ?
মামা বলল
-আসলে মেয়েরও তোর মত কেউ নেই । বাবা মা মারা গেছে বেশ কয়েক বছর আগে । মেয়েটা একাই থাকে । মেয়ের বাবার এক বন্ধু বলল আমাকে । আমাদের অফিসের এক কলিগের মাধ্যমে জানতে পারলাম । তুইও একা জেনে সেই আগ্রহ দেখালো । বলল যে দুজনের যখন কেউ নেই তাহলে একে অন্যের দুঃখটা বুঝতে পারবে ।

আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না । কিন্তু তবুও কেমন জানি লাগছিলো । আমার কাছে কেবল মনে হল মামা যেন কিছু যেন এখনও বলে নি আমাকে । মামার চেহারা দেখেই বুঝতে পারলাম । আমি মামার দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুটা সময় । মামা খানিকটা ইতস্তত করে বলল
-মেয়ের আগে একবার বিয়ে হয়েছিল । স্বামীটা ভাল ছিল না । একদিনও সংসার করতা পারে নি । আসলে মেয়ের ফ্ল্যাটের পেছনে পড়েছিল স্বামীটা । মেয়েটা প্রথমেই দিতে রাজি হয় নি ।

হুম । এইবার বুঝতে পারলাম আমাকে কেন এতো পছন্দ হল তাদের । পাত্র হিসাবে আমি কোন কালেই কারো প্রথম চয়েজ হতে পারি না । না আমার পরিবার আছে, না আমি অনেক টাকার মালিক ! এমন ছেলেদের জন্য মানুষের কেবল মায়া কিংবা করুনাই জন্মে, ভালবাসা নয় । জীবন সঙ্গী হিসাবে কোন মেয়েই এমন ছেলেদের কে আশা করে না ।

একবার মনে হল মামাকে বলি যে আমি ঝামেলায় যাবো না তারপর কি যেন মনে বললাম
-আচ্ছা আপনি যা ভাল মনে করেন ।

আমার উত্তর শুনে মামা খুশি হলেন । মেয়ের মোবাইল নাম্বার আমাকে দিয়ে বললেন
-আমি জানতাম তুই রাজি হবি । আমি কথা বলেই রেখেছি । কাল মেয়ের সাথে দেখা করে আয় । কি বলিশ !
-আচ্ছা !

----
দুই
-----


বসুন্ধরার আট তলায় দাড়িয়ে আছি । আমার থেকে একটু দুরে মেয়েটা বসে আছে । বুঝতেই পারছি আমার জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু আমার কেন জানি সামনে যেতে ইচ্ছে করছে না । তার প্রধান কারন হচ্ছে মেয়েটা দেখতে অন্য রকম সুন্দর । কি রকম সুন্দর আমি বলতে পারবো না তবে একম কাউকে আমি বহুদিন দেখি নি । আমি চোখ ফেরাতে পারছি না । আসে পাশের অনেকেই দেখি মেয়েটার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে । মেয়েটার ভাব দেখেই মনে হচ্ছে আসে পাশের মানুষের এমন আচরনে মেয়েটা অভ্যস্ত । তাই তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই । আমার তবুও মনের ভেতর থেকে সন্দেহ যাচ্ছে না । ছবিতে মেয়েটাকে কম সুন্দরী লাগছিলো । বাস্তবে আরও বেশি সুন্দর মনে হচ্ছে । এই মেয়ে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে বলে মনে হয় না ।

আমি আরেকটু সামনে গিয়ে ফোন বের করে ফোন দিলাম আরও ভাল করে নিশ্চিত হওয়ার জন্য । দেখলাম মেয়েটার ফোন বেজে উঠলো । আমার নাম্বার আগেই ছিল মেয়েটার কাছে । স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েই এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো আর আমার দেখতে পেল । দুজনের চোখাচোখী হল ।

আমি অনুভব করলাম যে আমার পা খানিকটা কাঁপছে । কেন কাঁপছে আমি ঠিক জানি না । না ঠিক পা নয়, আমার বুকের ভেতরটা কাঁপছে । কিছু একটা হচ্ছে সেটা আমি বুঝতে পারছি । আমি আস্তে আস্তে মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেলাম ।

বাসা থেকেই ঠিক করে এসেছিলাম যে এই মেয়ে এখন বিয়ে করবো না । দেখা করবো । মামাকে খুশি করার তারপর মেয়েটার সাথে কথা বলে তাকে বলবো সে বিয়ে করার আমার কোন ইচ্ছে নেই । আমি এই ঝামেলার ভেতরে যেতে চাই না । কিন্তু মেয়েটাকে দেখার পরে আমার মনে আর কিছুই রইলো না । আমার কেবলই মনে হল জেরিন আমাকে বিয়ে করে নি ভালই করেছে তাহলে হয়তো এই মেয়েটার সাথে আমার দেখাই হত না ।

আমি মেয়েটার সামনে গিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করলাম ।
বললাম
-দেরি হয়ে গেল ?
-না । সমস্যা নেই । আমি মাত্রই এলাম !
আমি বসতে বসতে বললাম
-আমার নাম তো আপনি জানেনই তাই না ?
মেয়েটা বলল
-আমি আপনার ব্যাপারে সব কিছুই জানি । আপনি জানেন তো ?
-হ্যা ! মামা বলেছে ।
-কি কি বলেছে ?

আমি বলতে লাগলাম কি কি বলেছে । কথা বলার মাঝ খানে একটা সময়ে মনে হল আমি যেন একটু দ্রুত কথা বলছি । আসলে নিজের কাছেই একটু একটু বেশি উত্তেজিত মনে হল । মেয়েটা একটু হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর মেয়েটা বলল
-একটু আস্তে বলেন । আমি তো কলেজের টিচার না । আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে আপনি স্যারের কাছে পড়া দিচ্ছে ।
-আসলে ......।

আসলে কি ?
সত্যিই তো ! কেবল চেহারা দেখেই আমি কাত হয়ে গেলাম । এটা ঠিক হচ্ছে না । নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু কেন জানি মনে শুনলো না কথাটা ।

প্রায় ঘন্টা দুয়েক ছিলাম সুপ্তির সাথে । সুপ্তি মানে যার সাথে আমি কথা বলছি । মামা অবশ্য ফারজানা আহমেদ বলেছিলো । ওটা ফরনাম নেইম । ডাকনাম সুপ্তি ।
আহ কি চমৎকার নাম !
যাই হোক দুই ঘন্টা কোন দিয়ে চলে গেল টেরই পেলাম না । সন্ধ্যা বেলা ওকে একদম ওর বাসা পর্যন্তই এগিয়ে এলাম । আসলে আমি ওর সাথে রিক্সায় চড়ার সুযোগটা হাত ছাড়া করতে চাচ্ছিলাম তাছাড়া সুপ্তির বাসাটাও চিনে আসা দরকার ।

রিক্সা থেকে নামতে নামতে বললাম
-আবার কবে দেখা হবে ?
-কবে আপনি চান ? এখনও তো সিদ্ধান্তই জানালেন না । বাসায় গিয়ে চিন্তা ভাবনা করুন । এতো বড় সিদ্ধান্ত একটু ভেবে চিন্তে নেওয়া ভাল ।

আমি রিক্সা নিয়ে ফেরৎ আসার সময় যত কয়েকবার ফিরে তাকালাম দেখলাম সুপ্তি গেটের কাছেই দাড়িয়ে আছে । চোখের আড়াল হতেই আমার কি হল আমি ফোন বের করে সুপ্তিকে ফোন দিলাম ।
-হ্যালো !

আমি কোন ভূমিকা না করে বললাম
-আমাকে কি আপনার পছন্দ হয়েছে ?
সুপ্তি আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলল
-আপনার কি আমাকে পছন্দ হয়েছে ?
-কি মনে হচ্ছে ?
-এতো জলদি এতো বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক না । আপনি কিন্তু আমার ব্যাপারে কিছুই জানেন না ।
-যা জেনেছি ওটুকুই ঠিক আছে ।
ওপাশ থেকে দীর্ঘ নিরবতা । তারপর সুপ্তি বলল
-এমন কিছু বিষয় আছে যা জানলে হয়তো আপনি আমাকে বিয়ে করতে চাইবেন না । একটু সময় নিন ।

আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না । এমন কি বিষয় থাকতে পারে ! ওর যেমন কেউ নেই আমার কেউ নেই । আর ওর যে ডিভোর্স হয়েছে এটা তো ও আমার কাছ থেকে লুকায় নি । এর থেকে বড় আর কি পারে !
থাকুক ! আমার কিছু যায় আসে না । আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলাম । এই সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলাম ।

-----
তিন
-----


আমি মামার দিকে তাকিয়ে রইলাম বোকার মত । মনে হচ্ছিলো যেন মামা অন্য কোন ভাষায় কথা বলছে । আমি কেবল তার মুখ নাড়ানো দেখছি কিন্তু কিছু বুঝতে পারছি না । মামা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-ঐ মেয়েকে বিয়ে করার দরকার নেই । মেয়ের এতো সমস্যা থাকলে তো সেটা মেনে নেওয়া যায় না, তাই না ? আমি ওদের কে ফোন করে মানা করে দিচ্ছি ! ঐ মেয়ের সাথে আর যোগাযোগ করার দরকার নেই ।

আমি মামার বাসা থেকে বের হয়ে কোন দিকে যাবো ঠিক বুঝতে পারলাম না । আমার বাসার দিকে যাওয়া যায় আবার সুপ্তির বাসার দিকেও । কিন্তু ওর বাসায় গিয়ে কি বলবো ? বলবো যে আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না । তুমি আমাকে এসব কেন বল নি ! এসব তো আমাকে বলা উচিৎ ছিল । ও তো আমাকে বলেই ছিল যে এমন কিছু আছে যা জানলে আমি ওকে বিয়ে করতে চাইবো না । আগে অনেকেই চায় নি হয়তো ।

আমি যাবো কি না ওদিকে এই কথা ভাবতে না ভাবতেই সুপ্তির ফোন এসে হাজির হল আমার ফোনে । একবার মনে হল সম্পূর্ণ ভাবে এড়িয়ে চলে যাই । একবার এড়িয়ে চললেই মেয়েটা বুঝে যাবে সব কিন্তু কেন জানি মন সায় দিলো না । ফোন রিসিভ করলাম ।

ওপাশ থেকে হ্যালোর শব্দ এল না । কিছু সময় নিরবতা । আমিও চুপ করে রইলাম । আরও কিছু সময় কেটে যাওয়ার পরে সুপ্তি বলল
-কথা বলবা না ?
-তুমি তো কিছু বলছো না !
আরও কিছু সময় নিরবতা । তারপর সুপ্তি বলল
-তোমার মামা একটু আগে ফোন দিয়েছিলো । বিয়ে টা হচ্ছে না বলে দিয়েছে ।
-হুম ! আমি জানি ।
তারপর আবারও দুজন কথা হারিয়ে ফেললাম । আমার কেন জানি নিজের কাছে খুব ছোট মনে হল । কেবল মনে হল আমি সুপ্তিকে এমন একটা কাজের জন্য দোষারোপ করছি যেটা ও করেই নি । ঠিক ওর আগের স্বামী সব জানার পরেই ওর সাথে থাকতে চায় নি ঠিক তেমনি টাই আমি আচরন করছি ।

সুপ্তির বিয়ের দিন ওর স্বামী সব কিছু জানতে পারে । বাসররাতে ওর সাথে একটা কথাও বলে নি । মেয়েটা অনেক কান্না কাটি করেছে কিন্তু ওর স্বামী সেটা শোনে নি । সকাল বেলা বাসা থেকে চলে যেতে বলেছে । সুপ্তি আমাকে সম্পর্ণ টুকু বলেনি । অর্ধেক কথা বলেছিলো । আরও একটা ঘটনা যে ছিল সেটা আমি আজকে মামার কাছ থেকে শুনলাম । এবং মনে হচ্ছিলো মেয়েটা আমাকে কেন বলল না আগে ! অবশ্যই বলা উচিৎ ছিল ।

ফোনের ওপাশ থেকে সুপ্তি বলল
-আমি তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম । বিশ্বাস কর চেয়েছিলাম । কিন্তু পারি নি । কেন যেন কোথায় একটা বাঁধা ছিল । তুমি যখন ঐদিন আমার বাসায় এসে হাজির হলে কি পরিমান যে ভাল লেগেছিল তোমাকে, আমি আশা করেছিলাম তারপর তুমি যখন এলে.... অনেক দিন ... অনেক দিন পর নিজেকে একটু মানুষ মনে হচ্ছিলো । মনে হচ্ছিলো যে আমাকে .....

লাইণটা শেষ না করে আবারও চুপ করে রইলো সুপ্তি । আমি কি বলবো খুজে পেলাম না । সত্যি সত্যি প্রথম দেখার পরে সুপ্তির কথা আমি মন থেকে বেরই করতে পারছিলাম না । ঘুরে ফিরে কেবল ওর কথাই মনে হচ্ছিলো । আমি পরদিন অফিস ছুটির পরেই ওর বাসায় গিয়ে হাজির হই । কোন ফোন না দিয়েই । দরজা খুলে আমাকে দেখে সুপ্তি বেশ খুশি হল মনে হল । চেহারায় একটা সপ্রতিভ ভাব দেখতে পাচ্ছিলাম । আমি লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিয়ে বললাম
-এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম, ভাবলাম যে আপনার সাথে আরেকবার দেখা করে যাই ।
সুপ্তি একটু সেহে বলল
-আপনার অফিস এদিকে ?
-হ্যা ! এদিকেই তো । এই তো কাওরানবাজার !

আমার কথা শুনে সুপ্তি হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়লো । কাওরান বাজার এই বাসা থেকে অনেক দুরে । আমার বাসার ঠিক উল্টো দিকে । অবশ্য মামার বাসা একটু কাছেই ।
আমি তখনও দরজাতেই দাড়িয়ে । একটু অস্বস্থি যে লাগছিলো না বলবো না তবে ভাল লাগছি বেশ । সুপ্তি হাসি থামিয়ে বলল
-আসুন । ভেতরে আসুন । বাধরুম ডান দিকে । আপনি ফ্রেস হয়ে আসুন আমি খাবার দিচ্ছি !
আমি ঘরের ঢুকতে ঢুকতে বললাম
-না না । আমি কিছু খাবো না । কেবল কিছু সময় থেকেই চলে যাবো ।
-বুঝতে পারছি আপনি এখানে খেতে আসেন নি । কিন্তু আমি আমার বাসায় আসা সবাইকেই আপ্যায়ন করতে ভালবাসি । আপনি ফ্রেস হয়ে আসুন, প্লিজ !

হাত মুখ ধুয়ে টেবিলের দিকে তাকাতেই বেশ অবাক হয়ে গেলাম । অনেক আয়োজন । এবং সব থেকে বড় কথা সেগুলো একটাও ঠান্ডা নয় । মনে হচ্ছে একটু আগেই রান্না করা হয়েছে । আমি একটু অবাক না হয়ে পারলাম না । আমাকে তরকারির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সুপ্তি বলল
-আসলে .....
-আসলে কি ?
-আসলে আমার সকাল থেকেই কেন জানি মনে হচ্ছিলো আপনি আসবেন । তাই নিজ থেকে কিছু রান্না করেছি । রান্না এখনও শেষ হয় নি । এখনও ডাল রান্না হচ্ছে । আপনি খেতে খেতে হয়ে যাবে !

আমি কি বলবো খুজে পেলাম না । মনে হল মেয়েটাকে তক্ষুনি কাজী অফিসে নিয়ে যাই । আর পর তিন কবুল বলে ফেলি ! আমি আপাতট কাজী অফিসের দিকে না গিয়ে টেবিলে বসে পরলাম । খাওয়ার সময় সুপ্তি আমার পাশেই বসে ছিল । কি পরিমান ভাল লাগছিল আমি বলে বোঝাতে পারবো না । বারবাই কেবল মনে হতে লাগলো এবার থেকে আমাকে আর একা একা হোটেলে হোটেলে ভাত খেতে হবে না । অন্তত খাওয়ার সময়ে আমার আপন কেউ বসে থাকবে আমার কাছে ।
-জানেন আমি যখন হোটেলে খাওয়া দাওয়া করি তখন কেন জানি বাসার কথা মনে হয় খুব । একা একা খেতে কেমন একটা কষ্ট হয় । আমার যে এই দুনিয়াতে কেউ নেই সেটা পরিস্কার ভাবে বুঝতে পারি এই খাওয়ার সময় !

সুপ্তির দিকে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা আমার দিকে এক ভাবে তাকিয়ে আছে । আমার কষ্ট টা মেয়েটা ঠিক ঠিক বুঝতে পারছে । সুপ্তি বলল
-এবার থেকে প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার পথে এদিক দিয়ে যাবেন । কেমন ! দুজন মিলে এক সাথে রাতের খাবার খাওয়া যাবে । আমিও খানিকটা ক্লান্ত হয়ে গেছি একা একা খেতে ।
-আচ্ছা !

তারপর থেকে প্রত্যেকটা দিন আমি সুপ্তির বাসায় গিয়েছি । ওর সাথে অফিসের পর ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করেছি। বেড়াতে গেছি । কত কথা বলেছি । আর আজকে ওকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি !

ফোনের ওপাশে তখনও সুপ্তির কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি আমি ।
সুপ্তি কান্না থামিয়ে বলল
-এটাই কি আমাদের শেষ কথা ?
-কি বললে ?
-বললাম এর পরে আর কথা হবে না আমাদের ?
-তুমি কি চাও ?
-আমি কি চাই তুমি জানো না ? আমি তোমার কাছে লুকিয়েছি তোমাকে হারানোর ভয়ে । কিন্তু জানতাম একদিন তুমি ঠিক ঠিক জানতে পারবে । সেদিন হয়তো তোমাকে হারাতে হবে । সেদিন ....।
আমি বললাম
-তুমি কি বাসায় ?

কিছু সময় কোন কথা বলল না ও । তারপর বলল
-হ্যা ! কেন ?
-দরজা খোল । মামার বাসা থেকে না খেয়ে বের হয়েছি ।
-মানে ......
-দরজা খোল !

সুপ্তির সাথে কথা বলতে বলতে আমি কখন যে ওর বাসার সামনে চলে এসেছি আমি নিজেই জানি না । দরজার সামনে দাড়িয়ে বেল চাপতে গেলাম তার আগেই দরজা খুলে গেল । কান্না ভেজা চোখ নিয়ে সুপ্তি দাড়িয়ে । কানে ফোন লাগানো । আমার দিকে অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে আছে । চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে ।

আমি ভেতরে ঢুকবো কি ও নিজে বাইরে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো । তারপর হুহু করে কেঁদে উঠলো । ছোট বাচ্চাদের কোন জিনিস হারিয়ে যাওয়ার পরে যখন ফিরে পায় তখন যেমন করে সুপ্তির আচরনও আমার কাছে তেমন মনে হল । আমি বললাম
-আজকে কি রান্না হয়েছে ?

আমার বুক থেকে মানা না উঠিয়েই সুপ্তি বলল
-এখনও কিছু রান্না করি নি ।
-রান্না হবে না ?
-হবে ।
-আজকে আমি কি ঠিক করেছি জানো ?
-কি ?
-ঠিক করেছি যে আজকে আমি আমার বউয়ের হাতে রান্না খাবো ! বুঝেছো । এেকবারে রেজিস্ট্রি করা বউয়ের হাতে রান্না !

সুপ্তি আমার ছেড়ে দিয়ে আমার চোখের দিকে তাকালো তারপর আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়েই রইলো । ওর চোখ দিয়ে তখনও পানি বের হচ্ছে । ঠিক যেন বিশ্বাসই করতে পাচ্ছে না যে আমি ওকে আজকেই বিয়ে করতে যাচ্ছি ! কান্না ভেজা কন্ঠে বলল
-কিন্তু তোমার মামা যে ....
-আরে মামাকে গুল্লি মারো ! মামা তো আর বিয়ে করবে না । আমি করবো ।
তারপর হাত দিয়ে ওর চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললাম
-তোমাকেই বিয়ে করবো । রাজি তো ?

(সমাপ্ত)


(কারনটা অজানাই থাক কেন সুপ্তির বিয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছিলো)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১৬ দুপুর ১:৩৪
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×