-মেয়ে কি করে ?
বাবা আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন জাতিসংঘের ত্রিদেশীও গুরুত্বপূর্ন মিটিংয়ে বলিউডের মুভি নিয়ে কথা বলে ফেলেছি । তিনি পরোটা মুখে দিতে দিতে বলল
-মেয়ে কি করে তোমাকে তো বললাম-ই । এনএসইউতে আর্কিটেকচারে পড়ছে ।
-তার মানে মেয়ে বেকার ?
বাবা চোখ গরম করে আমার দিকে তাকালেন । আমি বিশেষ পাত্তা দিলাম না । এটা বাবার অজন্ম স্বভাব । কারো কোন কথা পছন্দ না হলেই তিনি চোখ গরম করে তাকান ! আগে বেশ ভয় পেতাম তবে এখন এই চোখ গরম পর্যন্তই । বাবা আবারও বললেন
-বেকার মানে তুমি কি বলতে চাচ্ছো ? তোমার মাকে আমি যখন বিয়ে করি তখন কি সে স্বকার ছিল নাকি ?
-বাবা, বিয়েটা তুমি করতে যাচ্ছো না, আমি করতে যাচ্ছি । আমার কিছু বিষয় আছে সেটা না মিললে আমি বিয়ে করবো না ।
এবার বাবা চিৎকার করে উঠলো ।
-বিয়ে করবি না মানে, তুই করবে তোর ১৪ গোষ্ঠী করবে !
বাবার মেজাজ সব সময়ই একটু চড়া থাকে । এমনিতে আমাকে তুমি করে বললেই রেগে গেলে আমাকে তুই করে বলে । আমি দুটোতেই অভ্যস্ত ।
বাবার চিৎকার চেঁচামিচি শুনে মা এগিয়ে এল সাথে সাথেই । আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল
-কি শুরু করলে তোমরা ?
বাবা বিন্দু মাত্র শান্ত না হয়ে বলল
-তোমার ছেলেকে বলে দাও । শফিকের মেয়ের সাথেই আমি ওকে বিয়ে দেব । যদি এই ঘরে থাকতে হয় তাহলে ওকে ঐ মেয়েকেই বিয়ে করতে হবে । নয়তো .....
আমি মায়ের দিকে শান্ত কন্ঠে বললাম
-আমি বিয়ে করবো না, সেই কথা তো বলি নি । তবে কোন বেকার মেয়েকে বিয়ে করবো না ।
বাবা আবারও বলল
-কেন? তুই কি বেতন কম পাস ? তোর মাকে যখন বিয়ে করেছিলাম আমি তখন ১২০০ টাকা বেতন পেতাম । কই আমাদের তো সমস্যা হয় নি । বউয়ের টাকায় চলতে হবে কেন তোকে ?
-বাবা কথা সেটা না যে সে কত টাকা বেতন পায় । কথা হচ্ছে আমি কোন বেকার মেয়েকে বিয়ে করবো না । কোন মেয়ে যেমন বেকার ছেলেকে বিয়ে করতে চায় না আমিও কোন বেকার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই না ।
-তোর চিন্তা করতে হবে না । দরকার হলে তোমার বউয়ের খরচ আমি দেব । তোকে পালছি তোর বউকেও পালার মত ক্ষমতা আমার আছে ।
বাবা অবশ্য সত্যিই বলেছি । আমি যদিও চাকরি করি । বেতনও খারাপ না তবে আমাকে কিছুই দিতে হয় না । নিজের টাকা নিজের খরচ করি । বাবার সাফ কথা, যতদিন তিনি আছেন আমাকে সংসারের জন্য কিছু করতে হবে না । তিনি যাওয়ার পরে কেবল মাকে দেখে রাখতে হবে । এর বেশি কিছু তিনি আমার কাছে চান না ।
আমি আর দাড়ালাম না । আমার নাস্তা খাওয়া শেষ । নিজের ঘরের দিকে যেতে যেতেই বাবার চিৎকার চেঁচামিচি শুনতে পেলাম । বাবা মাকে বলছে
-আমি কোন কথা শুনতে চাই না । ওকে শফিকের মেয়েকেই বিয়ে করতে হবে । আমি ওকে কথা দিয়েছি । তুমি তোমার ছেলেকে বলে দিও !
আসলে বেশ কদিন থেকেই বাবা মা আমাকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা রয়েছে । তাও আবার অন্য কোন মেয়ের সাথে নয়, বাবার কোন এক বন্ধুর মেয়ের সাথে । আগে নাকি একই গ্রামে থাকতো । তারপর অনেক দিন দেখা সাক্ষাত নেই । পরে খোজ পেয়েছে কয়েক মাস আগে । আমাদের বাসাতে কয়েকবার এসেছে । একবার নাকি ঐ মেয়েও এসেছে । আমি অবশ্য একবারও বাসায় ছিলাম না । মায়ের নাকি খুব পছন্দ হয়েছে মেয়েটাকে, বাবারও । বাবা প্রস্তাব দেওয়াতে বাবার ঐ বন্ধু নাকি রাজিও হয়ে গেছে সাথে সাথেই । মেয়েরও নাকি কোন আপত্তি নাই ।
কিন্তু আমার বেশ আপত্তি আছে । ছোট বেলা থেকেই আমার কেন জানি বেকার মেয়েদের একদম দুই চোক্ষে দেখতে ইচ্ছে করে না । কিন্তু চারিপাশে এতো এতো বেকার মেয়ে যে তখনই ঠিক করে নিয়েছিলাম কোন স্বাবলম্বী মেয়ে ছাড়া জীবনে বিয়েই করবো না । আমি ঐ মেয়েকে কিছুতেই বিয়ে করতে চাই না । যত সুন্দরীই হোক না কেন ? আমি কোন বেকার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই না !
অবশ্য আরেকটা কারন আছে । জেরিনকে আমার মনে ধরেছে বেশ, একদম আমার মনের মত একটা মেয়ে । নিজের পায়ে দাড়ানো একটা মেয়ে । আমি যে অফিসে কাজ করি সেই অফিসেই মাস খানেক হল জয়েন করেছে ।
অবশ্য মেয়েটার মনের কথা কি আমি এখনও জানি না । জানার কথাও না । সবে মাত্র মেয়েটা জয়েন করেছে । খুব বেশি কথা বলার সময় পেলাম কোথায় ? অফিসের অন্য সবার থেকে মেয়েটা অবশ্য আমার সাথে একটু যেন বেশি মেলামেশা করে । যদিও এর অন্যতম কারন হচ্ছে আমাদের কাজ করতে হয় একই সাথে ।
অফিসে গিয়ে দেখি জেরিন আগেই এসে বসে আছে । আমাকে দেখে একটা হাসি দিল । প্রতি উত্তরে আমি নিজেো হাসি দিলাম । প্রতিদিন এভাবেই আমার কাজ শুরু হয় ।
আজকে মনে হল ওকে কথাটা বলা দরকার । কারন আমি মুখে যাই বলি না কেন বাবার বিরুদ্ধে খুব বেশি সময় টিকে থাকতে পারবো কি না আমি জানি । বাবা ঠিক ঠিকই আমাকে তার বন্ধুর মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবেন । আমি ঠেকাতে পারবো না । কিন্তু জেরিনকে যদি একবার বিয়ে করে ফেলতে পারি তাহলে বাবা আর বেশি চিৎকার চেঁচামিচি করতে পারবেন না ।
অফিস শেষে জেরিন কে বললাম একটু কথা আছে । ও যেন সামনের রেস্টুরেন্টে একটু অপেক্ষা করে । আমার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বলল
-এখানে বলা যাবে না ?
-না । ওখানেই যাওয়া লাগবে !
-সিরিয়াস কিছু ?
-হুম !
-আচ্ছা, আমি আসছি !
আমি আরও খানিক পরে গিয়ে হাজির হলাম
-বলেন আপনার সিরিয়াস কথা !
-ইয়ে মানে এখনই ? আগে একটু নাস্তা করা যাক ।
-নাস্তার সময় নাই । আমাকে আবার একজনের বাসায় যেতে হবে ।
-কার বাসায় ?
-আছে । আপনি চিনবেন না !
-কোন পাত্র পক্ষকে দেখতে না তো !
জেরিন হেসে ফেলল ।
-না তেমন কিছু না । তবে একটু কাজ আছে !
-আসলে আমি একটা কথা জানতে চাচ্ছিলাম । তোমার কি খুব শীঘ্রই বিয়ে টিয়ে করার কোন প্লান আছে ?
জেরিন মুখে হাসি নিয়েই বলল
-হঠাৎ ? এই কথা কেন জানতে চাইছেন !
-প্লিজ বল !
-না তো । এখন তো ক্যারিয়ার নিয়ে সামনে এগুনোর সময় । বিয়ে করার সময় কার আছে বলেন !
-মানে যদি এমন কাউকে বিয়ে করো যে তোমার ক্যারিয়ারের পথে কোন বাঁধা হবে না । তখন ?
জেরিন অনেক টা সময় আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো । মেয়েরা জানি ছেলেদের না বলা কথা সহজেই বুঝে ফেলে । জেরিনও যে বুঝে ফেলেছে সেটা বুঝতে আমার কষ্ট হল না । জেরিন অন্য দিকে তাকালো কিছুটা সময় । আমার মনে হল মেয়েটা আমাকে এখন ধমক দেবে । তারপর বলবে ছিঃ লাবিব ভাই । আমি আপনাকে বড় ভাইয়ের মত দেখতাম আর আপনি কি না আমাকে ....
আমি মোটামুটি এটা শোনার জন্যই অপেক্ষা করে রইলাম । জেরিনের দিকে তাকাতেই দেখি ও শান্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । তারপর বলল
-আপনি আমাকে বিয়ে করতে চান ?
-হুম !
হুম বলেই চুপ করে রইলাম । আর কি বলবো খুজে পেলাম না । মনে হল আরও কিছু বলা উচিৎ । তারপর বললাম
-আসলে বাবা এক প্রকার জোর করেই আমাকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে । কিন্তু বাবার পছন্দের মেয়েকে আমি বিয়ে করতে চাই না ।
-কেন ? মেয়ে দেখতে সুন্দর না ?
-আমি মেয়েকে দেখি নি ।
-দেখুন আগে । হয়তো আমার থেকেই সুন্দর হবে দেখতে ।
-হোক । আই ডোন্ট কেয়ার ! আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই !
-কেন ? আপনার সাথে আমার ঠিক প্রেম নেই । আবার আপনি প্রথম দেখাতে আমার প্রেমেও পড়েন নি আমি যতদুর জানি । তাহলে ?
-আসলে, আমি ছোট বেলা থেকেই স্বাবলম্বী মেয়েদের কে বেশ পছন্দ করি । যারা নিজেদের পায়ে দাড়ানো, অন্যের উপর নির্ভরশীল নয় !
-কেন ঐ মেয়ে বেকার নাকি ?
-হুম ! কেবল পড়ছে । এনএসইউতে ।
-আরে তাহলে তো ভাল । আমিও তো এনএসইউ থেকে পড়েছি । মেয়েটা নিশ্চয়ই পড়া লেখা শেষ করে কিছু করবে ।
-করুক ।
-তাহলে সমস্যা কি ! ওকেই বিয়ে করে ফেলুন । আপনার বাবার পছন্দ বলে কথা ।
আমি কিছুটা সময় চুপ করে থেকে জেরিনের দিকে তাকিয়ে রইলাম । মেয়েটা যেন খুব মজা পাচ্ছে আমার কথা শুনে । আমি বললাম
-আচ্ছা মনে কর, একটা মেয়েকে একটা ছেলে বিয়ে করতে চায় । ছেলেটা ভার্সিটিতে পড়ে তবে কদিন পর পড়া লেখা শেষ হবে । সেই মেয়ে কি ছেলেটাকে রাজি হবে ?
জেরিন একটু চুপ থেকে বলল
-না ঠিক । ছেলেটা যেহেতু কিছু করে না তাই রাজি হবে না সম্ভবত ।
-কিন্তু ছেলেটা কিন্তু সামনে কিছু করবে । নিশ্চয়ই করবে । কিন্তু মেয়েরা তাকে বিয়ে করবে না । মেয়েরা করবে কার চাকরি আছে সেটা দেখে । এমন কি ছেলেটা যদি তার প্রেমিকও হয় তবুও করবে না । যতক্ষন না ছেলেটা কিছু না করে । তাহলে আমি কেন করবো !
জেরিন হেসে ফেললো । তারপর বলল
-লাবিব ভাই আপনি এমন হাসির কথা কেন বলছেন ? আমাদের দেশে এমন ভাবে ভাবা হয় না ।
-না হোক । আমি ভাবি এমন ভাবেই । এই কথাই চিন্তা কর, এখন যদি আমি ঠিক ঠাক মত চাকরি না করতাম তাহলে ঐ মেয়ে কি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হত । কেবল ঐ মেয়ে বলছি কেন অন্য কোন মেয়ে কি রাজি হত ? তাহলে আমি কেন হব ?
জেরিন আরও কিছুটা সময় তাকিয়ে রইলো আমার দিকে । তারপর বলল
-আচ্ছা আমি কিছু টা সময় ভাবি । বাসায় বলে দেখি তারা কি বলে । এভাবে তো চাইলেই সব কিছু হয় না !
আমি জানি চাইলেই সব কিছু হয়না । এখানে আমার অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছু করারও নাই । জেরিন যা বলবে সেটার উপর আমার পরের জীবন অপেক্ষা করছে । তবে আশার কথা হচ্ছে মেয়েটা আমাকে একেবারে রিজেক্ট করে দেয় নি ।
কিন্তু বাসায় গিয়ে নতুন বিপদের কথা শুনতে পেলাম । বাবা নাকি সত্যি সত্যিই আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন । অনেকটা জোর করেই আমাকে বিয়ে দেবেন । মাকে বলেছেন আমাকে যেন এসবের কোন কথাই জানানো না হয় । কেবল আগামীকাল আমি যখন অফিস থেকে বাসায় আসবো তখনই নাকি আমাকে জোর করেই বিয়ে দেওয়া হবে । আমার পালানোর পথ সব বন্ধ করে দেবেন ।
আমার রাতে ঘুম হল না । কি করবো না করবো । শেষে ঠিক করলাম যে কালকে আবারও জেরিনকে বলল কথা গুলো । ও যদি রাজি না হয় তাহলে আগামীকাল আর বাসায় আসবো না । সোজা যেদিকে দুচোখ যায় সেদিকে চলে যাবো ।
পরদিন অফিসে বলতে গেলে পুরোটাই আমার দুশ্চিন্তে কাটলো । জেরিন নিজের কাজে বেশ ব্যস্ত । তবে যখন লাঞ্চ আওয়ারে ওকে বিয়ের কথা বললাম তখন ও যেন আকাশ থেকে পড়লো । বলল
-এভাবে হুট করে বিয়ে করা যায় নাকি ?
একবার মনে হল অনুরোধ করি । কিন্তু পরে মনে হল মেয়েটা তো ঠিকই বলেছে । এভাবে একটা মেয়ে হুট করে বিয়ে করে ফেলতে পারে না । তাই ঠিক করলাম পালাবো ! অফিসে কিছু বললাম না । না বলে কয়েকদিন না আসলে খুব একটা ক্ষতি হবে না । জেরিন ঠিক ঠিক সামলে নিবে । আর অফিসের বস আমার সম্পর্কে দুরের মামা হয় । খুব একটা ঝামেলাঝওয়ার কথা না ।
জেরিন ছুটির সময় এসে বললাম
-আপনি তাহলে সত্যিই পালাবেন ?
-কি করবো বল ? তুমি তো কোন সমাধান দিলে না । এখন বাসায় গেলে আমি আর জীবিত থাকবো না এটা নিশ্চিত । পালালে একটা চান্স থাকবে !
জেরিন বলল
-আমাকে সত্যি সত্যিই বিয়ে করতে চান ?
-হুম !
-পরে পস্তাবেন না তো ?
-নাহ । কোন ভাবেই না !
-আমার সম্পর্কে তুমি কিছুই জানো না তবুও বিয়ে করতে চাও ?
জেরিন হঠাৎ করেই আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছে । এটা অবশ্য ভাল লক্ষ্যন ! আমি বললাম
-আমার কিছুই জানার দরকার নেই । আমি চাই তবুও !
-আচ্ছা চল তাহলে ।
-সত্যি
-হ্যা ! সত্যি !
যখন জেরিন কে সাথে নিয়ে কাজী অফিস থেকে বের হলাম তখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিলো না ।
জেরিন অবশ্য স্বাভাবিকই ছিল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-এখন কোথায় যাবে ? বাসায় নাকি অন্য কোথাও ?
-বাসায়ই চল । আব্বা যতই রাগ করুক না কেন আমাকে তো আর দ্বিতীয়বার বিয়ে দিতে পারবে না । সো নো টেনশন !
-আমাকে আবার বকবে না তো ?
-আরে না । তোমাকে কিছু বলবে না । তবে আমাকে বকতে পারে । সেটা ব্যাপার না !
আমার নিজের কাছে যে ভয় লাগছিলো না সেটা না । তবে কেন জানি মনে হচ্ছিলো যে আসল বিপদ কেটে গেছে । এখন আর সমস্যা হবে না ।
বাড়ির গেটের কাছে যখন নামলাম তখনও একটু একটু ভয় ভয় করছিলো । একা একা বিয়ে করে ফেলেটা বেশ সাহসের একটা কাজ যেখানে বাসায় অন্য একজন বউ সেজে বসে আছে ।
দরজার কাছে এসে ভেতর থেকে আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম । নিশ্চয়ই আব্বার সেই বন্ধুরা এসেছে । আমাকে বিয়ে দিবে । কিন্তু সেটার তো আর উপায় নেই । আমি তো এখন বিবাহিত । কোন মেয়ের বাবাই বিবাহিত ছেলের সাথে নিজের মেয়ের বিয়ে দিতে চাইবে না ।
দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই দেখলাম সবার চোখ আমাদের দিকে ফিরলো । বাবাকে দেখতে পেলাম সোফাতে বসে কয়েকজনের সাথে গল্প করছে । অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম সেখানে আমার অফিসের বসও জাহিদ মামা আছে । বাবাকি বসকেও দাওয়াত দিয়েছে । তাই মনে হচ্ছে । আত্মীয় যখন হয় তাকে দাওয়াত দিতেই পারে । ভেতরে তাকিয়ে দেখি অনেকেই আছে । সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে হাসি মুখে । আমার পাশে জেরিন কে দেখেও তাদের কোন ভাবান্নর হল না । বরং এটা যেন স্বাভাবিক ছিল এমন একটা ভাব করে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ।
ঠিক তখনই আমার মনে হল কোথাও বড় একটা ঝামেলা হয়েছে । বাবার কিংবা অন্য কারো তো জেরিনকে দেখে হাসি মুখ রাখার কথা না ! আমি জেরিনের দিকে তাকাতেই দেখি ও আমার দিকে তাকালো । হাসলো, তারপর বলল
-হার্টএটাক কর না প্লিজ ! আমি এখনই বিধবা হতে চাই না !
তারপর আরেকটু হাসি দিয়েই সামনে চলে গেল । বাবার সামনে গিয়ে বাবাকে সালাম করলো তারপর বাবার পাশে বসা ভদ্রলোকের পাশে গিয়ে বসলো । হাসি মুখে !
আমার মাথায় এখনও কিছু ঢুকছে না । কি হচ্ছে এসব ?
সবাই এরকম ভাবে হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে কেন ?
বাবা বলল
-তুই কি ভেবেছিস ? বেশি বুদ্ধি তোর ? মনে রাখিস তুই আমাকে জন্ম দিস নাই, আমি তোকে পৃথিবীতে আনছি !
আমি কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম । আমার দিকে আমার বস এগিয়ে এসে বলল
-এখনও বুঝতে পারো নি তুমি ? আসলে এই জেরিন হচ্ছে তোমার বাবার বন্ধু শফিক সাহেবের মেয়ে । তোমার বাবার কথা মতই আমি ওকে অফিসে তোমার সাথে কাজ করার কদিন সুযোগ করে দিয়েছিলাম । যাতে.....।
যাতে জেরিন আমার সাথে মিশতে পারি । আর যেহেতু জেরিন চাকরি করে সেহেতু ওকে বিয়ে করতেও আমার খুব একটা সমস্যা থাকার কথা না ! বস বলল
-তুমি যদি ওকে বিয়ের কথা না বলতে তাহলে দুএক দিনের ভেতরে ও নিজেই বলতো ! বুঝছো ! কিন্তু তুমি নিজ থেকেই সব সহজ করে দিলে । হাহাহা !!
কি !!
আমার সাথে এতো বড় ধোকা !!
এই বিয়ে আমি মানি না !
কোন ভাবেই মানি না !
আমি কোন কথা না বলে নিজের রুমের দিকে চলে গেলাম ।
কি রকম একটা বেকুব বনে গেলাম ।
আমার এখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না, আমার পুরো পরিবার, আমার অফিসে বস, জেরিন সবাই মিলে এই কাজটা করেছে । আমি দরজা বন্ধ করতে যাবো দেখি সামনে জেরিন দাড়িয়ে ।
অনেকটা আমাকে ধাক্কা দিয়েই ঘরে ঢুকে পড়লো । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আমি তোমার কাছে জানতে চেয়েছিলাম তুমি আমাকে সত্যিই বিয়ে করতে চাও কি না ! বলেছিলাম ? বলেছিলাম তুমি আমার সম্পর্কে কিছুই জানো না । তুমি কি বলেছিলে ?
আমি কোন কথা না বলে চুপ করে রইলাম ।
জেরিন বলল
-তবে একটা কথা তোমার জানা দরকার । সেটা হল এই বুদ্ধিটা কিন্তু আমার ।
-তোমার ?
-হুম ! একজন বেকার মেয়ের বুদ্ধি । যে বেকার মেয়েকে তুমি বিয়ে করতে চাও নি সে তোমাকে বুদ্ধিতে কিভাবে হারিয়ে দিল দেখলে তো ! সামনে আর কত কি তোমার জন্য অপেক্ষা করছে টের পাবা !
তারপর হাসতে হাসতেই বিছানার উপরে গিয়ে বসে পড়লো । এমন একটা ভাব যে এসব নিজের জিনিস । অবশ্য এখন থেকে এই ঠিক ঠিক সব কিছুর উপরে জোর খাটাবে । যে মেয়ের মাথা থেকে এই জিনিস বের হতে পারে সেই সব কিছু করতে পারবে ! জেরিন আমার বিছানার উপরে বসতে বসতে বলল
-আরে বাবুটা এমন মুখ গোমড়া করে কেন আছো ? কাছে এসে আদর করে দেই !
আমার কেবল মনে হল যে সামনে জীবনে আসলেই খবর আছে ।
বিরাট গ্যাড়াকলে পড়ে গেছি !
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৫৪