গল্প এক
-আমি ছবি তুলে দেই ?
রিয়া কথাটা শুনেই খানিকটা থমকে দাড়ালো । সম্ভবত এই কথাটা অনেক দিন সে শুনি নি কিংবা কেউ জানে বলে নি । আমি আবারও কথাটা বললাম
-আমি কটা ছবি তুলে দিবো তোমার ? তোমার সব ছবিই তো দেখি ফেলফি !
রিয়া বলল
-আমার সব ছবি দেখো তুমি ?
-কেন দেখবো না ? আমি তোমার হাজার হাজার ফলোয়ারের ভেতরে একজন ক্ষুদ্র ফলোয়ার !
রিয়া কিছুটা সময় আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর হাতের মোবাইল টা আমার দিকে বাড়িয়ে দিল । ক্যামেরা অপশন আনাই ছিল । আমি ক্যামেরাটা হাতে নিয়ে বললাম
রেলিংয়ের উপর হেলান দিয়ে দাড়াও । চোখ আমার দিকে !
রিয়া তাই করলো । আমি কিছুটা সময় তাকিয়ে রইলাম ক্যামেরার মনিটরের দিকে । মেয়েটার চোখে কেমন জানি ছলছল করছে । মারাত্বক একটা ছবি আসবে । যে কোন ছেলের মাথা খারাপ করিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ঠ ।
বেশ কয়েকটা ছবি তুললাম ওর । মোবাইলটা সনি কোম্পানির হওয়াতে ক্যামেরাটা অনেক ভাল । ছাদের বিভিন্ন জায়গায় দাড়িয়ে আরও কয়েকটা ছবি তুললাম ।
যখন মোবাইলটা দিতে গেলাম ওর হাতে বললাম
-সুন্দর ছবি এসেছে তোমার । তোমার ক্যামেরা ফেস বেশ ভাল ।
-তার মানে কি আমার আসল চেহারা খারাপ ?
-আরে তাই বললাম নাকি ? ক্যামেরা ফেসের সাথে চেহারা ভাল খারাপের কোন সম্পর্ক নেই আসলে । এই যে দেখো আমার চেহারা কি খারাপ ?
রিয়া আমার দিকে তাকালো ভুরু কুচকে ! আমি বললাম
-আরে মানে খারাপ বলতে আমি বলছি না যে আমি খুব হ্যান্ডসাম দেখতে । বলতে চাচ্ছি ঠিক ঠাকই তো নাকি ?
-হ্যা ।
-কিন্তু আমার ছবি আসে মারাত্বক বাজে । একদম ভাল আসে না । দেখবা ?
এই বলে দেরি না করে ঠিক আরও একটু কাছে চলে গেলাম ওর । মোবাইলে তখন সেলফি মোড চালু করাই ছিল টুক করে রিয়ার সাথে সেলফি তুলে ফেললাম । তারপর এমন একটা ভাব করলাম যেন কিছুই হয় নি । ক্যামেরার ছবির গ্যালারি বের করে বললাম
এই দেখো বাজে এসছে না ।
রিয়া আবারও আমার দিকে কিছুটা সময় তাকিয়ে থেকে ক্যামেরার দিকে তাকালো । তারপর বলল
-হ্যা বাজে এসেছে । তা তুমি আমার সাথে সেলফি তুললে কেন ?
-সমস্যা কি ?
-সমস্যা আছে ।
-আরে বাবা ক্যামেরা তো তোমার । তোমার কাছে ছবি থাকবে । তুমি না চাইলে এই ছবি কেউ কোন দিন দেখবে না । ঠিক না ?
রিয়া কিছুটা সময় কি যেন ভাবলো । আমার কথায় যুক্ত খুজে বেরাচ্ছে যেন । তারপর আমার কাছ থেকে মোবাইলটা নিয়ে নিল । বলল
-তা ঠিক । এনি ওয়ে থ্যাঙ্কিউ ছবি তুলে দেওয়ার জন্য ।
-মেনশন নট । এনি টাইম । একটা কথা বলবো ?
-বল
-তুমি ফেসবুকে খুব পপুলার কিন্তু বাস্তবে খুব একা তাই না ?
যখন প্রথমবার ওর ছবি তুলে দেওয়ার কথা বলেছিলাম তখন ও খানিকটা চমকে ছিল এবারও ঠিক তেমন ভাবেই চমকালো । বরং আরও বেশি একটু । আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কোন কথা না বলে । তারপরপ বলল
-আমি যাই । কাজ আছে ।
আর কথা না বলে রিয়া সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল । আমি তাকিয়ে রইলাম ওর চলে যাওয়ার দিকে ।
রিয়া আমাদের বিল্ডিংয়েই থাকে । আমরা যেমন ভাড়াটিয়া ওরাও ঠিক তেমনি । বিকেলে ওকে ছাদে উঠতে দেখি প্রায়ই, মাঝে মাঝে সিড়িতে উঠতে কিংবা নামতে দেখা হয় । কিন্তু কথা হয় না । কিন্তু ওকে নিয়মিত দেখি ফেসবুকে । চেহারা সুন্দর বিধায় ফেসবুকে জনপ্রিয়তা পেতে খুব একটা সময় লাগে না । রিয়ার ব্যাপারটাও তাই । কিন্তু ওর ভার্চুয়াল লাইফ টা বাস্তব দেখে অনেক টাই আলাদা । অনলাইনে সারাটা সময় হইচই করলে ওকে আমি বাস্তবে খুব নিরব থাকতে দেখেছি সব সময় । যখন সিড়ি দিয়ে নিচে নামে তখন মাথা নিচু করে নামে আবার যখন উঠে তখনই মাথা নিচু করে । ওর কেন জানি কোন বন্ধু নেই । ওর কলেজে কোন বন্ধুদের সাথে আমি ঠিক ওর কোন ছবি দেখি নি । সারাটা দিন বেশ কয়েকটা ছবি আপলোড দেয় কিন্তু সব গুলোই ফেলসি । কে জানি বলেছে যে মেয়েটি দিনে শ খানেক সেলফি তুলে তার মানে হচ্ছে মেয়েটির এমন কেউ নেই যে তার ছবি তুলে দিবে ।
আমারও তাই মনে হল । মনে যেন মেয়েটি বাস্তবের একাকিত্ব ভার্চুয়্যাল লাইফে কাটানোর চেষ্টা করছে ।
বাসায় গিয়ে ফেসবুক ওপেন করতেই দেখি একটু আগে যে ছবি তুলেছিলাম সেটার থেকে একটা আপলোড করে প্রোফাইল পিকচার দিয়েছে । তার থেকে অবাক করা বিষয় ও আমাকে খুজে বের করে আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টও দিয়েছে । একবার মনে কিছুটা সময় ঝুলিয়ে রাখি কিন্তু পরে মনে হল এই রিস্ক নিয়ে লাভ নেই । এক্সসেপ্ট করে ফেলি ।
তারপর ?
রিয়ার সাথে কি আমার প্রেম হয়েছিল ? হতেও পারে আবার নাও হতে পারে ! সেটা অন্য কোন গল্প ।
গল্প দুই
মুনির হাসি দেখে নিশি যেন আরও একটু রেগে গেল । বিরক্ত হয়েই বলল
-হাসছিস কেন ?
-হাসবো না ?
-আমি আসলে ভাবতেও পারি নি সুমন চলে আসবে ! মানুষ কি জীবনে কোন দিন সিরিয়াস হবে না ? আজিব !
-আরে বাবা রাগ করিস কেন ? তুই দাওয়াস দিয়েছিস বলেই তো এসেছে !
-আমি তো ওকে জ্বালানোর জন্য দাওয়াত দিয়েছিলাম কিন্তু ছাগলটা যে চলে আসবে সেটা ভাবি নি ।
-আরে রাগ করিস না । আমি দেখছি !
মুনি হাসতেই লাগলো । হাসতে হাসতেই ঘর ছেড়ে বাইরে চলে গেল । নিশি আসলেই নিজেকে ঠিক মত ধরে রাখতে পারছে না । তবে নিশির রাগের কারন টা ঠিক এটা নয় যে সুমন সত্যি সত্যিই ওর বিয়ে খেতে চলে এসেছে । যখন নিশি নিজের হাতে সুমন কে বিয়ের কার্ড টা দিয়েছিলো তখনই মনে হয়েছিল সুমনের বিশ্বাস নেই । চলেও আসতে পারে । আজকে যখন সুমন কে মেহমান দের সারিতে বসে থাকতে দেখলো তখনও একটুও অবাক হয় নি । ওর রাগের কারন হচ্ছে ও এখানে এসেও মেহমানদের একটা মেয়ের সাথে হেসে কথা বলছে ।
নিশি আসলেই ভেবে পায় না কি ধরনের ছেলে যে নিজের প্রেমিকার বিয়ের দাওয়াত খেতে এসেও অন্য মেয়ের সাথে ফ্ল্যার্ট করছে । নিশি এটা দেখে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না । কেমন যেন একটা ঈর্ষা অনুভব করছে । এই ছেলেটার কি কোন দিন কিছু মনে করেবে । তার নিজের ভালবাসার মানুষটার যে অন্য কারো সাথে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে এটা কি ছেলেটার কাছে কিছুই নয় ?
সুমনের সাথে নিশির ব্রেকআপটাও হয়েছে ঠিক এই জন্যই । সুমন কোন কিছুতেই সিরিয়াস নয় । পড়ালেখা শেষ করে যখন সবাই চাকরি বাকরি চেষ্টা করছে তখন সে হাওয়া খেয়ে বেড়াচ্ছে । এখনও তাই আছে । নিশি যখনই কিছু বলতো তখনই বলতো এতো তাড়াহুড়ার কি আছে । এই বিষয়টা নিয়েই ওদের মাঝে প্রায়ই ঝগড়া লেগে যেত । একদিন এমন পর্যায়ে পৌছালো যে ব্রেকআপ হয়ে গেল । তার কয়েক দিন পরেই মাহমুদ ওকে দেখতে এল । যদিও নিশির খুব একটা ইচ্ছে ছিল না তবুও বাবা মাকে আর কিছুতেই আটকাতে পারছিলো না । আসলে সুমনের উপর প্রচন্ড রাগ থেকেই ও মাহমুদ কে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলো । সুমনকে আরও একটু রাগানির জন্য নিজের হাতে বিয়ের কার্ডটা দিয়ে আসলো ওকে । নিশি ভেবেছিলো হয়তো বিয়ের কার্ড দেখে সুমন কিছু একটা করবে কিন্তু উল্টো আরও খুশি হল । সেটা দেখে নিশির রাগটা যেন আরও একটু বেড়ে গেল । আর আজকে এখানে এসে অন্য মেয়ের সাথে টাংকি মারছে ।
নিশি নিজের ভেতরেই রাগে ফুসতে লাগলো । কয়েকবার দেখেও এল দরজার ফাঁক দিয়ে । সেই একই ভাবে বসে আছে আর আড্ডা চালিয়ে যাচ্ছে । নিশি কি করবে না করবে যখন ভাবছে তখনই নিশির মা ঘরে ঢুকলো । একটু যেন বিষন্ন মায়ের চেহারা টা । অবশ্য বিয়ে বাড়িতে কন্যার বাবা আর মা সব সময় চিন্তায় থাকে । কখন কি হয় বা না হয় ! এটা নিয়ে তাদের চিন্তার শেষ নেই ।
-কি হয়েছে মা?
-তোর আব্বু তোকে ডাকছে ।
মায়ের সাথে সাথেই আব্বুর ঘরের যেতে দেখলো তার আব্বা বিছানায় শুয়ে আছে । তার মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে ।
-কি হয়েছে ?
নিশির মাথায় যেন কিছুই আসছিলো না । তার আব্বার মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে কেন ?
ঘরে ওর বাবা মা ছাড়াও কাজের মানুষটা রয়েছে । নিশির মা সেই দিকে তাকাতেই কাজের মানুষটা বাইরে চলে গেল । নিশির মা বলল
-মাহমুদদের বাসা থেকে একটু আগে ফোন এসেছিলো !
-কি হয়েছে ?
-ওরা আসছে না !
-মানে ? কি বলছো ?
-হ্যা ! ওরা আসছে না ।
-কেন ?
নিশির মা জবাব দিতে পারলো না । কেবল চেয়ে রইলো নিশির দিকে ।
নিশি কি বলবে ঠিক বুঝতে পারলো না । কিছু সময়ের ভেতরেই বর চলে আসার কথা ছিল । ওর দিক কার সব আত্মীয় স্বজনেরা চলে এসেছে । এখন ? বিয়ে না হলে খুব একটা সমস্যা হবে না কিন্তু মান সম্মানের একটা ব্যাপার আছে । নিশির বাবার কাছে নিজের মান সম্মান টা অনেক বড় একটা ব্যাপার । এই জন্যই নিশির বাবা বিছানায় পড়ে গেছেন । নিশি যখন এই কথা ভাবছে তখনই নিশি শুনতে পারলো ওর বাবা কন্ঠটা ।
-নিশি মা,
-বল বাবা !
-আমাকে মাফ করে দিস । তোকে জোর করেই বিয়ে দিতে গিয়ে কি হয়ে গেল !
-কিছু হয় নি বাবা । কিছু হবে না । তুমি চিন্তা করো না । কদিন পরে সবাই ভুলে যাবে !
বাবার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতেই নিশির একটা কথা মনে হল চট করে । একবার মনে হল বাবা হয়তো রাজি হবে না । তারপরে মনে হল রাজি না হয়ে যাবে কোথায় ? এখন বাবা অথৈ পানিতে ডুবে যাচ্ছে । যা পাবে সেটা ধরেই ভেসে থাকতে চাইবে ।
আসলেই সত্যি বলতে কি মাহমুদ যে আসছে না এতে করে নিশি কেন জানি মোটেই খারাপ লাগছে না । বরং একটু যেন নিজেকে মুক্ত মুক্ত লাগছে । নিশি বলল
-বাবা আমি একটা কথা বলবো ?
-বল !
-দেখো আমি একটা ছেলেকে পছন্দ করতাম । আমি কোন দিন তোমাদের বলি নি । ছেলেটা আজকে এখানে আছে । ওকে দাওয়াত দিয়েছিলাম ও চলেও এসেছে । আমি ঐ ছেলেটাকে বিয়ে করতে চাই ।
নিশির বাবা বলল
-ছেলে কি করে ?
নিশি চট করেই রেগে গেল ।
-বাবা ! এখন ছেলে কি করে খুজতেছো ? খুব তো কাজের ছেলে খুজে এনেছিলে । দেখলে না কি হল ! দেখ যদি আজকে এই আসরে আমার বিয়ে না হয় তাহলে এর পরে আর কোন দিন তুমি আমাকে বিয়ের ব্যাপারে কোন কথা বলতে পারবে না । এই আমি বলে দিলাম ।
এই বলে নিশি উঠে চলে এল । দরজার কাছে যেতেই বাবার ডাক আবার শুনতে পেল ।
-কোথায় তোর সেই ছেলে । আমাকে দেখা !
দুই
সুমন কিছুটা সময় ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে রইলো । কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলো না । নিশির বাবাকে আগে থেকেই চিনতো তবে কোন দিন কথা হয় নি আর আজকে যেন ভদ্রলোককে অন্য রকম লাগছে । আর একটু আগে তিনি যা বলেছে তার জন্য আরও অন্য করম লাগছে ! সুমন বলল
-ওর সাথে আমার যা ছিল সব শেষ হয়ে গেছে । আমি কেবলই বিয়ের দাওয়াত খেতে এসেছি । বিয়ে করতে নয় !
-তুমি আরেকবার ভেবে দেখো !
-কোন ভাবা ভাবির কিছু নেই । আমি বেকার মানুষ । বিয়ে করে বউকে খাওয়াবো কি ?
-সেটা পরে চিন্তা করা যাবে । এখন যদি আমার মেয়ের বিয়ে না হয় তাহলে আর কোন দিন ও বিয়েই করবে না । দেখো তোমাকে ও এখনও ভালবাসে । তাই সবার আগে ও তোমার কথাই আমাকে বলেছে ।
-নিশি বলেছে ও আমাকে বিয়ে করতে চায় ?
-হ্যা !
-আচ্ছা আমি ওর সাথে কয়েকটা কথা বলতে চাই !
-আচ্ছা আমি ব্যবস্থা করছি ।
এইবলেই নিশির বাবা বের হয়ে গেল । নিশি ঢুকলো কিছু সময় পরেই ।
-কি বলবে বল ?
-তুমি সত্যিই আমাকে বিয়ে করতে চাও ?
-হ্যা !
-গুড ! তা আমার কি রাজি হওয়া উচিৎ ?
-মানে ? তুমি রাজি না ?
-রাজি তবে এভাবে না । যেহেতু তুমি প্রস্তাবটা করেছো সেহেতু আমাকে তুমি অফিশিয়ালি বিয়ের জন্য প্রোপোজ করবে ! লাইক হাটু গেড়ে নিচে.........
-জীবনেও না ! যাও তোমার বিয়ে করতে হবে না !
এই বলে নিশি চলে যেতে চাইলে পেছন থেকে সুমন ওকে জড়িয়ে ধরলো ! কানের কাছে মুখটা এনে বলল
-কোথায় যাও সুন্দরী । যখন আমাদের এই সুযোগ দিয়েছে সেটা আমি হাত ছাড়া কেন করবো !
প্রথমে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলেও পড়ে নিশি শান্ত হয়ে গেল । আসলে এখন ওর রাগ করাটা ঠিক হচ্ছে না । এমন ভাবে ওদের আবারও কাছে আসার সুযোগ আসবে ও ভাবতে পারে নি । ভাবতেও পারছে না আসলেই এটা ঘটতে যাচ্ছে !
তিন
বাসর ঘরের ব্যবস্থা নিশিদের বাসাতেই হল । নিশির ঘরেই । নিশির কাছে তখনও খানিকটা স্বপ্নই মনে হচ্ছে যেন । সুমনের সাথেই ওর বিয়ে হয়ে গেছে এবং সেটা ওর বাবার মতেই সেটা ও এখনও ঠিক ভাবতে পারছে না ।
দরজা খুলে সুমন করে ঘরে ঢুকলো । ওর বিছানার কাছে এসে একটা মোবাইল বের করে দিয়ে ওর দিকে বাড়িয়ে দিল !
-কি ?
সুমন বলল
-একজন তোমার সাথে কথা বলবে ।
নিশি খানিকটা অবাক হয়ে বলল
-কে ?
-কথা বল । বললেই বুঝতে পারবে । আমি বারান্দায় আছি । কথা শেষ হলে বারান্দায় এসো । তোমার সাথে আজকে আমার জ্যোঁছনা দেখার দিন !
নিশি ফোন টা কানের কাছেই ধরে হ্যালো বলতেই ও পাশ থেকে আওয়াজ ভেসে এল !
-কন্গ্রাচুলেশন !
-মাহমুদ !!
নিশির মাথায় কিছু ঢুকছিলো না । সুমনের ফোনে মাহমুদ কেন ?
-আপনি ? এসবের মানে কি !
-এখনও বুঝতে পারছো না ?
-মানে এই সব ?
-সুমন করেছে । আসলে ও যখন আমাকে তোমার কথা বলল আমি প্রথমে রাজি হচ্ছিলাম না । কিন্তু ওর সাথে কথা বলে আমি রাজি না হয়ে পারি নি । আমার একটা কথা শোন, ছেলেটা তোমাকে সত্যি সত্যিই ভালবাসে । ওর সাথে কথা বলে আমার মনে হয়েছে আমার থেকে ওই-ই তোমাকে বেশি ডিজার্ভ করে ।
নিশি কি বলবে কিছুই খুজে পেল না । ওর চোখ তখন চলে গেছে বারান্দার দিকে ।
মাহমুদ বলল
-সামনের জীবনে তুমি কেবল ওর হাত দুটো শক্ত করে ধরে রেখো । দেখবে পৃথিবীর সব সুখ ও তোমার জন্য এনে দিবে ।
-জানি !
-আচ্ছা যাই তাহলে । তোমার সামনের জীবন সুখের হোক ।
লাইন কেটে গেল !
নিশি আস্তে আস্তে নামলো বিছানা থেকে । যা কিছু হয়েছে সেটা ভাগ্যের কারনে হয় নি । সুমন ঘটিয়েছে । ভালবাসার মানুষটাকে কাছে পাওয়ার জন্য মানুষের কি না চেষ্টা ! এটা ভাবতেই একটা অসম্ভব ভাললাগা শুরু হয়েছে মনের ভেতর !
বারান্দায় পা রেখে দেখে সুমন বসে আছে ভরা জ্যোঁছনার ভেতরে ।
ও ঢুকতেই ওর দিকে হাসলো ! বলল
-তুমি ভাবলে কিভাবে যে তুমি আমাকে আমি চলে যেতে দিবো ?
-যদি মাহমুদ রাজি না হত !
-তখন অন্য ব্যবস্থা করতাম !
-তাই ?
-খুব বীর পুরুষ ?
-হুম !
-আর আমার বাবার যদি কিছু হয়ে যেত ?
-তখন তো আরও সহজ হয়ে যেত ।
-একদম .....!!
সুমন ওর হাত ধরে নিজের কাছে বসালো !
-আজ কোন ঝগড়া নয় ! আজকে আমাদের জ্যোঁছনা দেখার দিন !
গল্প তিন
-আপনার নামে মামলা করা উচিৎ জানেন ?
মেয়েটা কিছুটা সময় আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । একটা অবিশ্বাসের ছায়া দেখতে পেলাম মেয়েটার চেহারায় । আসলে কেউ তাকে এমন কথা বলতে পারে এমন ধারনা সম্ভবত মেয়েটার মাথায় ছিল না । আমি একটু পেছনে দিকে তাকিয়ে দেখি লিজা আর লিপি এখনও সজিবের সাথে গল্প করে যাচ্ছে যদিও লিজার চোখ খানিকটা আমার দিকে ।
মেয়েটি কিছুটা সামলে নিয়ে মেয়েটি বলল
-সরি, কি বললেন ?
-বললাম যে আপনার নামে মামলা করা উচিৎ ? এবং আপনাকে জেলে আটকে রাখা উচিৎ !
-কেন ? জানতে পারি কি ?
-অবশ্যই । আপনাকে কেউ বলে নি যে আপনার চেহারা দেখলে ছেলে মানুষদের বুকে একটা চিনচিন ব্যাথা হয় । রাতে ঘুম হয় না । আমি নিশ্চিত আজকে রাতে এবং সামনে আরও কয়েকটা রাতে আমার ঘুম আসবে না !
মেয়েটা আমার কথা শুনলো কয়েক মুহুর্ত । এখন দুইটা ঘটনা ঘটতে পারে । এক হচ্ছে মেয়েটা চরম ভাবে বিরক্ত হতে পারে আবার দুই মেয়েটা হেসে ফেলতে পারে । আমি যে তার রূপের প্রসংশা করছি সেটা নিয়ে খানিকটা খুশি হতে পারে । যদিও এই পদ্ধতিটা অনেক পুরানো । আগে প্রায়ই হিন্দি সিনেমাতেই এই টাইপের ডায়ালগ দেখা যেত ।
মেয়েটাকে দেখে আসলেই মাথা খানিকটা গুলিয়ে গেছিলো তাই মাথায় আর কিছু আসে নি ! এটা মনে আসলো তাই বলে দিলাম । এবং আমাকে খানিকটা অবাক করে দিয়েই মেয়েটা হাসলো । তবে যতটা ভেবেছিলাম ততটা নয় ।
মেয়েটি বলল
-সবার সাথে এভাবে ফ্ল্যার্ট করেন ?
কথাটা শুনে এমন ভাব করলাম যে ন এর থেকে অবাক করা আর বিশ্ময়কর কথা আমি জীবনে আর শুনি নাই । বললাম
-আপনার কি তাই মনে হচ্ছে ? আমার চেহারার দিকে তাকিয়য়ে দেখুন !
মেয়েটি কিছু না বলে তাকিয়ে রইলো আমার চেহারার দিকে । আমি তাড়াতাড়ি বললাম
-যার আসার কথা ছিল সে আসে নি তাই না ?
মেয়েটা কিছুটা যেন চমকালো । তারপর বলল
-আপনি দেখছিলেন ?
-সত্যিই দেখছিলাম । আসলে আমার চোখ আপনার দিকেই ছিল । সরি ! আসলে আমি চোকখ সরাতে পারছিলাম না ।
মেয়েটা আমার এই সদ্য বলাটা যেন বিশ্বাস করে নিল এবং সেটা অপছন্দ করলো বলে মনে হল না। বলল
-হ্যা । আসার কথা ছিল তবে আসবে না ।
-চলে যাবেন এখন ?
-হ্যা ! বসে থেকে কি করবো ?
-একটা কথা বলি !
-না করলে কি বলবেন না ?
-নাহ বলবো । আসলে একটা অনুরোধ করবো । আমি আমার বন্ধুদের দিকে ইশারা করে দেখালাম । তারপর বলল
-আসলে আজকে আমার বন্ধু লিজার জন্মদিন । দেখতেই পাচ্ছেন । আমাদেরও একজন আসার কথা ছিল কিন্তু সে আসে নি । আপনি আমাদের সাথে যোগ দিন তাহলে খুব ভাল হয় !
-কি বলেন ? নাহ ঠিক আছে । ধন্যবাদ ।
-না প্লিজ আসুন ! প্লিজ !
-না ঠিক আছে ।
-আরে আসুন না ! কেক-ই তো কাটবো !!
আমি এতোবার করে অনুরোধ করতে লাগলাম যে মেয়েটা শেষে রাজি হয়ে গেল । ওকে নিয়ে আমাদের টেবিলের দিকে গেলাম !
আসলে লিজার জন্মদিনের ট্রিট খেতে এসেছি আল-ফ্রাস্কোতে । সেখানেই মেয়েটাকে দেখি । কারো জন্য অপেক্ষা করছিলো । মনযোগ আকর্ষন করার মতই মেয়েটার চেহারা ছিল । আমিও গ্রুপের সাথে আড্ডা দিতে দিতে মেয়েটার দিকে লক্ষ্য রাখতে লাগলাম । এক পর্যায়ে মেয়েটা কাকে যেন ফোন করলো । কয়েক বার যেন ফোনে পেল না । তারপর একটা সময় কিছু কথা হল এর পর মেয়েটার চেহারায় আরও যেন একটু বেশি হতাশ হল । বুঝতে কষ্ট হল না যে মেয়েটা যার জন্য অপেক্ষা করছিলো সে আসতে মানা করে দিয়েছে । মনে মেয়েটা একা একা চলে যাবে । তাই একটা চান্স নিলাম । এবং মেয়েটা আমাকে অবাক করে দিয়ে রাজি হয়ে গেল ।
আমাদের সবার সাথেই বেশ মিশে গেল । মেয়েটা নিজের নাম বলল ফাইজা । শেষে যখন আমাদের আড্ডা শেষ হল আমাদের সবাইকেই ধন্যবাদ দিল চমৎকার এই সময়টার জন্য । নিজের জন্য বেশ কয়েকটা ছবিও তুললো । সবার শেষে আমাকে যেন একটু বেশিই ধন্যবাদ দিলো ।
আমার কাছে মনে হয় মেয়েটা আসলে এভাবে রাজি হয়ে যাবে আর রাজি হলেও মানিয়ে নিতে পারবে না । কিন্তু মনে হল যেন মেয়েটা আমাদের গ্রুপের কত দিনের চেনা । মিশুক প্রকৃতির মেয়ে সেটা ব্যাবহারেই বুঝতে পারলাম । যাই হোক একবার মনে হল মেয়েটার কাছে মোবাইল নাম্বার চাই কিন্তু সেটা লেইমনেসের মাত্রা আসলেই ছাড়িয়ে যাবে বলে আর চাওয়া হল না ।
কিন্তু তখনই ঘটনা ঘটনার আরও বাকি ছিল । রাতে ফেসবুকে বসে ছিলাম । রাত তখন তিন কার কাছাকাছি বাজে তখনই আমার ইনবক্সে একটা নক এল । এতো রাতে পরিচিত সবাই-ই ঘুমিয়ে পড়ে । বাইরে থাকে কয়েকজন তাদের মাঝে মাঝে নট দেয় ! কিন্তু আজকে তাকিয়ে আমার খানিকটা চোখ কপালে উঠলো । নক দিয়েছে আর কেউ না, ফাইজা ! এই মেয়ে আমার খোজ পেল কিভাবে ?
নক দেওয়ার আগে প্রোফাইলে গিয়ে দেখি আসলেই আজকের মেয়েটা । এবং আজকে সন্ধ্যায় আমাদের সাথে নিজের ক্যামেরায় যে ছবি গুলো তুলেছিলো সেই ছবি গুলো সে সেখানে শেয়ার করেছে । খাইছে আমারে ।
-আপনি ? আমার খোজ পেলেন কিভাবে ?
মেয়েটা কিছু টাইপ করলো কিন্তু সেটা পোস্ট হল না । মানে হল মেয়েটা যা লিখে ছিল সেটা মুছে ফেলেছে । কয়েক মুহুর্ট চুপচাপ । তারপর ফাইজা লিখলো
-আপনার ভাইবার নাম্বার টা কি দেওয়া যাবে ?
মনে মনে বললাম দেওয়া যাবে না মানে ? তুমি বললে আমি আমার ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার থেকে নিজের অন্য আরও কত নাম্বার দিতে দেব !
ফাইজা বলল
-আসলে আজকে আসার সময়ই নাম্বার টা নিয়ে আসার দরকার ছিল । ভুলে গেছিলাম
আমি না্ম্বার দিয়ে দিলাম । তারপরই কল চলে ।
আমি রিসিভ করে বললাম
-আমি আসলেই আপনাকে আশা করি নি । ভেবেছিলাম আর কোন দিন দেখা হবে না হয়তো !
মেয়েটা হাসলো ।
-আমার কিন্তু মনে হয়েছিলো আমাদের আবার কথা হবে !
-সত্যি ? আমি খুব বেশি অবাক হয়েছি ।
-হুম ! একটা কথা বলবো । তাহলে আপনি আরও বেশি অবাক হবেন !
-বলুন !
-আমি কিন্তু আপনাকে আগে থেকেই চিনি ।
-মানে ! কিভাবে ?
-আসলে আই ইউজড টু রিড ইয়োর স্টুপিড স্টোরিস !
-স্টুপিড !!
-সরি !
-না ঠিক আছে । আপনি সত্যিই আমার গল্প পড়তেন ?
-হুম ! প্রথমে আপনি যখন এলেন তখন আপনাকে চিনতে পারি নি কিন্তু চেহারা ঠিক চিনতে না পারলেও কেমন যেন চেনা চেনা লাগছিলো । তারপর চিনেছি !
-আচ্ছা এই জন্যই রাজি হয়েছেন আমাদের সাথে জয়েন করতে ?
-বলতে পারেন !
আমার তাই মনে হল সেখানে কিছু ঘাপলা ছিল । একটা মেয়ে এভাবে রাজি হওয়ার তো কথা না কোন ভাবেই । ফাইজা আবার বলল
-আসলে আমার জীবনে একটা বড় ধ্বংসের জন্য আপনি খানিকটা দায়ী ! তাই মনে হল আপনার সাথে যোগাযোগ করে কথাটা বলা দরকার !
-মানে ?
আমি মেয়েটার কথা কিছুই বুঝতে পারলাম না । মেয়েটার আমি কি এমন ক্ষতি করলাম ? আমি তো ওকে চিনতামই না আজকের আগে ।
ফাইজা কিছুটা সময় চুপ থেকে তারপর বলল
-ঐ যে বললাম না আমি আগে আপনার স্টুপিড স্টোরি গুলো পড়তাম । পড়ে মনে হত আসলেই পৃথিবীতে ভালবাসা বলে কিছু আছে ।
-আপনার কি মনে হয় নেই ?
-অবশ্যই নেই !
আমার আসলে মেয়েটার জীবন সম্পর্কে কোন ধারনা নেই । তাই কি বলতে গিয়ে কি বলবো সেটা আবার কোন দিকে যাবে তাই চুপ করে রইলাম ।
ফাইজা বলল
-সত্যি বলতে কি আপনার গল্প পড়ে মনে হয়েছিলো যে আসলেই এরকম বাস্তবের প্রেমে হয় । সব হ্যাপি এন্ডিং । কিন্তু হয় না । খুব খারাপ লাগে জানেন । যদি কোন দিন আপনার লেখা না পড়তাম তাহলে এরকম হত না । মানে স্বপ্ন জাগতো না । সেটা ভেঙ্গেও যেত না ।
আমি কি বলবো ঠিক বুঝলাম না । ফাইজা আবার বলল
-আপনি এসব ফাউল গল্প লেখা বন্ধ করে দেন । বাস্তবে এমন কিছু হয় না । বাস্তবে যা হয় তাই লিখুন !
অন্য কেউ হলে তাকে এই সময় আমি কঠিন কিছু কথা বলতাম কিন্তু ফাইজাকে কেন জানি বলতে পারলাম না । কেন বলতে পারলাম না কে জানে ? আমি ভেবেছিলাম যে তখনই ফাইজা ফোন রেখে দিবে তবে সে দিলো না । প্রায় ভোর পর্যন্ত কথা বলল আমার সাথে । ফোন রাখার আগে কেবল বলল
-আসলে খুব একা একা লাগছিলো । আজকে ভেবেছিলাম সুইসাইড করবো । কোন একটা কারন খুজছিলাম বাঁচার জন্য । আপনার সাথে কথা বলে সেটা কাটিয়ে উঠলাম । ধন্যবাদ আর আপনার লেখাকে স্টুপিড স্টোরি বললাম বলে মন খারাপ করবেন না । কেমন !
-নাহ মন খারাপ কেন করবো ! খানিকটা সত্য অবশ্য বলেছেন ।
-আপনার সাথে কথা বলে ভাল লাগলো !
-আমারও
ঐদিন সকালে বেশ বেলা করে ঘুম ভাঙ্গলো । উঠে দেখি ফাইজার এসএমএস এসেছে বেশ কয়েকটা । সব গুলো পড়লাম । যার একটাতে বলা হয়েছে আমার আজকে বিকেলে কোন কাজ আছে নাকি । যদি না থাকে তাহলে একবার দেখা করা যায় নাকি !
লিখে দিলাম যে যাবে ।
আমি আসলে জনাতাম না ফাইজা মেডিক্যালের ছাত্রী । অবশ্য এমন মেয়েদের ডাক্তারই হওয়া উচিৎ । রোগি কেবল চেহারা দেখেই অর্ধেক ভাল হয়ে যাবে । আমি ওর মেডিক্যালের সামনে হাজির হলাম বিকেল বেলা । ওকে ফোন দিতেই ও বের হয়ে এল । আমাকে নিয়ে রিক্সায় উঠলো ।
-কোথায় যাচ্ছি আমরা ?
-জানবেন । তবে কোন কথা বলবেন না । আমি যা করবো সেটাতে হ্যা হ্যা করবেন । মনে থাকবে ?
-মানে ?
-কোন মানে নেই । আপনার গল্পের একটা সুত্র এপ্লাই করতে যাচ্ছি ।
-আমি আসলেই ঠিক বুঝতে পারছি না ।
-বুঝবেন
সত্যি বুঝতে পারলাম । ফাইজা আমাকে আরেকটা প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজের সামেনে নিয়ে এল । এবং নেমেই ওর হাবভাব খানিকটা বদলে গেল । আমার হাত ধরলো খুব স্বভাবিক ভাবে । তারপর আমাকে প্রায় টেনেই নিয়েই গেল ।
কয়েকটা ছেলে মেয়ে আড্ডা দিচ্ছিলো একজায়গায় বসে । সেখানে গিয়ে ফাইজা আমার হাত ধরা অবস্থায়ই একজনকে বলল
-শিহান কোথায় বলতে পারো ?
-ও তো এখানে নেই ?
-কোথায় গেছে ?
আমি আসলে তখনই বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে । ফাইজা শিহান নামের কাউকে খুজতেছিলো । কিন্তু আমার কেন জানি মনে হল ও সেটা খোজার চেয়ে আমার হাত ধরে আছে সেটা সবাইকে দেখাতে ব্যস্ত ।
আমি যখন আবার ওকে নিয়ে বের হলাম তখনও আমার হাত ছেড়ে দিল । রিক্সায় চড়তে চড়তে বললাম
-কি ব্যাপার ফাইজা ?
-অবাক হচ্ছেন খুব ?
-একটু ?
-কেন আপনার গল্পে তো এমন ঘটনা ঘটে প্রায়ই ঘটে না ?
-তা ঘটে ! কিন্তু আজকে বাস্তবে ঘটলো !
-আসলে আপনি কি চাচ্ছেন একটু কি বলা যাবে !
আমার সেই কথার জবাব না দিয়ে ফাইজা বলল
-আচ্ছা আমি যতদুর জানি আপনি এখন সিঙ্গেলই আছেন । আপনার প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে আর কারো সাথে আর কিছু হয় নি ।
-ইচ্ছে করে নি আর কি !
-কটা দিন আমার সাথে ইন এ রিলেশনশিপে গেলে কি খুব বেশি সমস্যা হবে ?
-মানে ?
আমি সরু চোখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলাম । মেয়েটা আমার দিকে ঠিক তাকিয়ে নেই । আমার ব্যাপার টা বুঝতে কিছুটা সময় লাগলো তবে ধরতে পারলাম ঠিক ঠিক । আসলে এরকম আমার গল্পে প্রায়ই অনেক বারই হয়েছে । একজন কে পাওয়ার জন্য অন্য জন অন্য কারো সাথে মিথ্যা প্রেমের অভিনয় করেছে ফেইক রিলেশনশীপে গেছে ।
আমি বললাম
-আপনি সত্যি এটা করতে চান ?
-হ্যা !
-কেন ?
-জানি না । বললাম না আপনার গল্প পড়তাম । মনে হল কাজ হলেও হয়তো হতে পারে ।
-ওকে সমস্যা নেই । কদিনের জন্য আপনার বয়ফ্রেন্ড হতে খারাপ লাগবে না ।
তারপর সত্যি সত্যি আমাদের লোক দেখাবো প্রেম শুরু হল । এক সপ্তাহ করে মাস গড়ালো । ফোন থেকে ম্যাসেঞ্জার আর ভাইবারে কথা হত অনেক । মানুষকে দেখানোর জন্য দেখা হল বেশ কয়েকবার । ছবিও উঠানো হল অনেক । সেই সাথে সগুলো ফেসবুকে পোস্টও হল ।
একটা সময় জানতে পারলাম ফাইজার এক্স বয়ফ্রেন্ড নাকি ওর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে । ওকে বেশ খুশি লাগলো । বলল যে কাজ হচ্ছে । আরও সপ্তাহ খানেক পরে ও জানালো যে শিয়ান নাকি ওর সাথে দেখা করতে চেয়েছে । আমি যেন ওখানে থাকি সত্যটা বলার জন্য ।
খানিকটা মন খারাপ হল । অন্য কিছু না হলেও মেয়েটার সাথে চমৎকার সময় কাটছিলো । শিয়ানের সাথে সব কিছু ঠিক হয়ে গেলে আর তো কথা হবে না । তখন ?
কিন্তু কি আর করা !
ভাগ্য মেনে নিতে হবে ।
আমাদের দেখা হল সেই আল-ফ্রাস্কোতেই । আমাদের যাওয়ার কিছু সময় আগেই দেখলাম শিয়ান সাহেব এসে হাজির । আমাকে আসতে দেখে একটু যেন মলিন হয়ে গেল । কিছু যেন ঠিক ঠিক বলতে পারছিলো না । একটু যেন দ্বিধা করলো । ফাইজা বলল
-ওর সামনেই বল । সমস্যা নেই ।
-আমি জানতাম শিয়ান কি বলবে । এবং এও জানতাম ফাইজা কি বলবে । শেষে আমাকে বলতে হবে ।
কিন্তু শিয়ানের কথা শোনার পড়েই ফাইজার চেহারা একটা সুক্ষ হাসি দেখতে পেলাম । কেমন যেন মিলল না । ফাইজা বলল
-আমি কত দিন ধরে এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করেছি তুমি জানো শিয়ান ! যে তীব্র অবহেলা তুমি আমাকে করেছো বিশ্বাস ছিল সেটা একদিন তুমি বুঝতে পারবে !
-আই এম সরি বেইবি ! আসলে তোমাকে অন্য কারো সাথে দেখে আমি বুঝতে পারলাম তোমাকে আমি কতটা ভালবাসি ! এবং আমি জানি তোমাদের এই রিলেশন টা সত্যি না । আমি খুব ভাল করেই জানি । আমার বেইবি কোন দিন আমাকে ছেতে অন্য কোন ছেড়ে যেতে পারে না । তাই না বাবু ! আমাকে একটা ধাক্কা দেওয়ার জন্য তুমি এটা করেছো !
আমি তাকালম ফাইজার চোখে দিকে । ফাইজা তাকিয়ে আছে শিয়ানের দিকে । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে মৃদ্যু স্বরে হাসলো । ওর হাসি দেখেই আমার কেন জানি মনে কিছু একটা ঠিক নেই । আমি তাকিয়েই আছি আমার চোখের সামনে ধপ করে ফাইজা শিয়ানের গালে চড় মারলো । আমি আসলে ভাবতেই পারি নি ও এমন কিছু করতে পারে । আমি কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম । সব ঠেকে বেশি অবাক হয়েছে শিয়ান নিজে । ও নিজেও আসলে মনে হয় ভাবতে পারে নি যে ফাইজা ওকে মারতে পারে । ভাগ্য ভালে যে তখন আশে পাশে আর কেউ ছিল না । থাকলে তারাও আমাদের মত অবাক হয়েই তাকিয়ে থাকতো !
ফাইজা বলল
-শোধ দিয়ে দিলাম । মনে আছে ?
ফাইজা বলেছিলো ওকে একবার নাকি শিয়ান চড় মেরেছিলাম !
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-চল ওঠা যাক ।
-মানে ?
-মানে ওঠা যাক ! আমার কাজ শেষ ।
আমি আর কোন কথা না বলে ফাইজার পেছন পেছন হেটে বের হয়ে গেলাম রুম থেকে । তাকিয়ে দেখি শিয়ান তখনও গালে হাত দিয়ে বসে আছে ।
রিক্সা উঠে বললাম
-ওটা কি ছিল ?
-কেন ? আসলে সব কিছু নতুন ভাবে শুরু করার জন্য একটা ধাক্কার দরকার হয় । এতোদিন আমি ঠিক মত নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না । আজকের পর থেকে খুব পারবো । এতো শান্তি লাগছে যে তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না ।
-হুম বুঝলাম ।
তারপর কি বলবো ঠিক খুজে পেলাম না । মনে হল একটা কথা বলা দরকার । আমি বললাম
-আচ্ছা এখন তো লোক দেখানোর দরকার নেই । তা আমাদের ঐ রিলেশনশীপ স্টাটাস টার কি হবে !
-কেন ? সমস্যা কি ! আমার বয়ফ্রেন্ড হয়ে থাকতে কি খুব বেশি সমস্যা হচ্ছে ?
-না মানে আমি কি তাই বললাম নাকি ! মানে ভারপ্রাপ্ত হয়ে আর কদিন !
ফাইজা আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-মিস্টার অপু তানভীর এতো জলদি এতো কিছু আশা করা ভাল না । অপেক্ষা করেন ঠিক আছে । সামনে দেখেন কি হয় !
কথা টা বলেই ফাইজা মুখ কঠিন করতে গিয়ে হেসে ফেলল । আমার কেন জানি মনে হল অপেক্ষা করতে হলেও অপেক্ষার ফল খারাপ হবে না !
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩৭