-আমি কত শত মানুষের বিয়ে করিয়ে দিয়েছি আর আমার নিজের ভাগ্নে এখনও অবিবাহিত হয়ে আছে !!
ছোট মামা, যাকে আমরা ঘটক মামা বলে ডাকি, এমন ভাবে মুখ ভঙ্গি করলেন যেন তিনি এখনও আমার বিয়ে দিতে পারেন নি বলে লজ্জায় মরে যাচ্ছে । এটা তার জীবনের সব থেকে বড় ব্যর্থতা ।
মাও কম যায় না । মামার সাথে তাল মিলিয়ে বলল
-তাই দেখ, ওর থেকে ছোট ছোট ছেলেরা বিয়ে করে ফেলছে আর ও এখনও বিয়ে করছে না । মানুষজন তো নানান কথা বলা শুরু করেছে ।
আমি মা আর মামা দুজনের দিকে বিরক্ত হয়ে তাকালাম। এমন ভাবে কথা বলছে যেন আমার বয়সী কোন অবিবাহিত মানুষ আর এই পৃথিবীতে নেই ।
আর কিই বা এমন বয়স হয়েছে আমার । আমি শান্ত কন্ঠে বললাম
-তা বিয়ে যে করতে বলছো বিয়ের পর বউকে খাওয়াবো কি শুনি ? আমি ক'টাকা আয় করি ?
-যা করিস তা অনেক ।
-জি না মা। তা অনেক না । আমি যে কয় টাকা বেতন পাই তা দিয়ে আর যাই হোক বউ পালা যায় না ।
-তুই কেন চিন্তা করছিস কেন ? আমরা কি মরে গেছি নাকি ?
-জি না, বিয়ে তো করবো আমি, তোমরা না, তাই না ? সুতরাং তার দায়িত্ব আমার । আর আমার এই টাকায় এখনকার একজন পড়ালেখা জানা মেয়েকে ভাল ভাবে ভরণ-পেষন করা সম্ভব নয় । তার চাহিদা মেটানো সম্ভব নয় । আগে বেশি বেতনের চাকরী পাই তারপর ভেবে দেখা যাবে ।
মামা আর মা দুজনেই কোন কথা না বলে আমার দিকে অসন্তোষের চোখে তাকিয়ে রইলো । আমি যে যুক্তি দিয়েছো তারা সেটা কিছুতেই খন্ডন করতে পারছে না । আমি মনে মনে হাসি । এবার দুজন কে বাগে আনা গেছে । এই বছরের শুরু থেকে দুজন আমার মাথায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিয়ে বিয়ে করে। এবার যদি একটু ঠান্ডা হয় । মামা বলল
-তার মানে তুই বিয়ে করবি না ?
-আরে আমি কখন বললাম যে আমি বিয়ে করবো না ? আমার সংসার আমাকে চালাতে হবে না ? যদি আমি ঠিক মত সংসারই চালাতে না পারলাম তাহলে বিয়ে করে আমার লাভ কি বল ? তবে হ্যা যদি মেয়ে নিজেও কর্মজীবি হয় আমার মতই আয় করে তাহলে একটা কথা হয় ।
-তার মানে কর্মজীবি মেয়ে হলে তাকে বিয়ে করবি ।
-কর্ম জীবি হলেই আবার হবে না
-তাহলে আবার কি ?
-আরে বাবা এমন ভাবে হতে হবে যেন তার আয় আর আমার আয় সমান হয় । তাহলে আমাদের দুজনের সাংসার চালাতে সমস্যা হবে না । যদি কম হয় তাহলে কিন্তু হবে না ।
আমি নিশ্চিত জানি ছোট মামা যতই বিয়ের পাত্র পাত্রি ম্যাচিং এক্সপার্ট হোক না কেন এই টাইপের মেয়ে খোজা তার পক্ষে সম্ভব নয় । না মানে, আমি এই বলছি না যে আমি মাসে যে ক'টাকা বেতন পাই সেই পরিমান টাকা কোন মেয়ে আয় করে না । আমার থেকে বেশি টাকা আয় করা হাজার হাজার মেয়ে আছে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমার সমান যে মেয়ে গুলো আয় করে তারা বিয়ে করার জন্য কখনই আমার মত ছেলেকে খুজবে না । না মেয়ের ফ্যামিলি থেকে, না মেয়ে নিজে । তারা খুজবে আমার থেকেও অনেক বেশি বেতন পাওয়া কাউকে।
প্রেম ভালবাসা হলে আলাদা কথা কিন্তু যখন এরেঞ্জ করে মেয়েদের বিয়ে হয় তখন আমাদের দেশে মেয়ের থেকেও ছেলের আয়টা অনেক বেশি হও্য়াটা একপ্রকার অত্যাবশ্যকীয় শর্ত হিসাবে ধরে নেওয়া হয় । সেই হিসাবে আমি নিশ্চিত । আমার মামা কোন ভাবেই মেয়ে খুজে পাবে না । আর আমার খুব ইচ্ছে নেইও এতো দ্রুত কোন জব সুইচ করা ।
আমি নিশ্চিতই ছিলাম । কিন্তু কপালে হয়তো অন্য কিছু লেখা ছিল । সপ্তাহ না ঘুরতেই মামা পাত্রীর খোজ নিয়ে হাজির ।
আমি সত্যি সত্যি ভাবতে পারি নি যে মামা এমন একজন কে ঠিকই খুজে বের করে ফেলবে । এমনই কি সম্ভব এই দেশে ?
যে মেয়ে নিজে আমার সমান টাকা আয় করে সে কি আমাকে বিয়ে করতে রাজী হবে ?
নাহ । আমাদের দেশের মেয়েরা স্বাধারনত এই কাজটা করে না । তাদের চোখ সব সময় উপরের দিকে তাকে । সমান কিংবা নিচে তাদের চোখ যাবেই না । বিশেষ করে এই বিয়ের ক্ষেত্রে তো নয় ই । তাহলে এই মেয়ের সমস্যা কি ।
তাহলে অন্য কোন সমস্যা কি আছে ?
আমার কেন জানি মনে হল মেয়ে ঠিক ঠাক মত দেখতে সুন্দরী হবে না । এই দিক দিয়ে আমি একটু নিশ্চিন্ত হলাম । তাহলে আম্মা এই মেয়ে পছন্দ করবে না । আমাকেও বিয়ে করতে হবে না ।
---------
আমাদের দেখা করার কথা ঠিক হল বসুন্ধরায় । মেয়ের নাকি বাসায় গিয়ে মেয়ে দেখার ব্যাপারটা পছন্দ না। মেয়ে চাচ্ছে আগে আমরা দেখা করি কোথাও । যদি দুজনেরই মনে হয় যে সামনে এগোনো ঠিক হবে তখনই পারিবারিক ভাবে কথা বার্তা এগুনো যাবে ।
ঠিক ঠিক সময় মত পৌছে গেলাম বসুন্ধারায় । আগে থেকেই জানা ছিল যে মেয়ে আমার জন্য কোথায় অপেক্ষা করবে কিংবা আমি যদি আগে যাই তাহলে কোথায় বসব । অবশ্য মেয়ের ফোন নাম্বারও আমার কাছে দেওয়া ছিল । আমি নির্দিষ্ট টেবিলের কাছে গিয়ে একটু ধাক্কার মত খেলাম ।
ভেবেছিলাম মেয়ে ঠিক সুন্দরী হবে না । কিন্তু এই মেয়েকে সুন্দরী না বললে আমার নামে মামলা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে । আমার লজিক মিলতেছে না দেখে নিজের কাছেই কেমন অবাক লাগলো । তখনই মনে হল যে মেয়ে নিশ্চয়ই এখনও আসে নি । এখানে অন্য কেউ বসে আছে ।
আমি মোবাইল বের করে ফোন দিলাম মেয়েকে । এবং সেই মেয়ের ফোনই বেজে উঠলো ।
-আপনি চলে এসেছেন ?
মেয়েটা কথা বলতে বলতে আমার দিকে তাকালো । তারপর নিজেও বুঝে গেল যে আমিই সেই ব্যক্তি যার সাথে সে দেখা করতে এসেছে ।
একটু হাসলো আমার দিকে তাকিয়ে । আমিও প্রতি উত্তরে হাসলাম কেবল । তখনও আমার মাথায় ঠিক এইসব ঢুকছে না । এই মেয়ের কোন ভাবেই এখানে আসার কথা না । তাহলে কেন ?
কারন টা কি ।।
খাবারের অর্ডার দেওয়া হল । আমি ঠিক কি বলবো বুঝে উঠতে পারছি না । মেয়েটাও ঠিক আমার মতই কিছু একটা ভাবছে । কি বলবে কিংবা কি বলা উচিৎ । মেয়েটাই আগে কথা বলল
-আপনি আমার নাম জানেন তো ? নাকি ?
-হ্যা । কেবল ডাক নাম । জেরিন ।
-হুম । আপাতত ওটা জানলেই চলবে । আমি কোথায় জব করি সেটা ?
-হ্যা । মামা কাছ থেকে শুনেছি ।
-আচ্ছা দেখুন যদি আমাদের সম্পর্কটা টা সামনের দিকে এগোয় তাহলে আমি মনে করি যে সব কিছু খোলাখুলি কথা বলে নেওয়াই ভাল । কি বলেন ?
-হ্যা । হ্যা । তা তো অবশ্যই ।
-আপনার কথা কথা আমি শুনেছি । আসলে আমিও এরকমটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম । আমার আগেও অনেক জায়গা থেকে বিয়ের কথা আসছিল যেখানে আমি কেবল বউ হয়ে থাকবো । এই জন্য আমি রাজি হয় নি ।
আমি কি ভুল শুনলাম । মেয়ে কেবল বউ হইয়া থাকতে চায় না । তাহলে কি হয়ে থাকতে চায় শুনি ? আমি কিছু না বলে জেরিনের দিকে তাকিয়ে রইলাম । জেরিন আবারও বলল
-দেখুন আমি চাই বিয়ের পরে আমার সংসারে আমরা যাই করি না কেন সেটা দুজনের আলোচনায় হবে । কেউ কারো উপর কোন কথা চাপিয়ে দিবে না । দুজন মিলে ভেবে চিন্তা যেটা দুজনের জন্য বেস্ট হবে সেটাই করা হবে ।
আমি তো জানি । সব মেয়েরাই ঠিক এমন কথাটা বলে । দুজন মিলে সব কিছু ঠিক করবে । পরে দেখা যায় দুজন মিলে যাই ঠিক করা হোক না কেন মেয়েটা যা চাচ্ছে আসলেই সংসারে সেই বাস্তবায়িত হচ্ছে ।
জেরিন বলল
-সংসারে যেমন টা অধিকার দুজনের সমান হবে । ঠিক তেমনি দায়িত্বও সমান হবে । দুজনের কন্ট্রিবিউশনও হবে সমান ।
আমি একটু সপ্রতীভ হলেম এবার ।
বাহ । এদেশের মেয়েদের মনভাব আবার এমন আছে নাকি ।
কন্ট্রিবিউশন !!
আমাদের দেশের মেয়েরা তো কেবল অধিকারের বেলাতেই সমান সমান হতে চায় সংসারের খচরের কন্ট্রিবিউশনের বেলায় তাদের ইকুয়ালিটির তত্ত্ব কোথায় হারায়া যায় ! কিন্তু এই মেয়ে বলছে অন্য কথা । আমার এবার সত্যি সত্যি মেয়েটা মনে ধরলো ।
জেরিন বলল
-আমার কাছে ব্যাপার কি রকম হাস্যকর লাগে যে একটা মেয়ে সমান কন্ট্রিবিউশন না করে সমান অধিকারের জন্য অনেকে হাউখাউ করে । আমি চাই না এমন কিছু হোক । দেখুন যেহেতু আপনার আর আমার আয় প্রায় সমান তাই আমার মনে হয় আমরা দুজন একই পরিমান কন্ট্রিবিউশন করে এগুতে পারবো । ঠিক আছে ?
-হ্যা অবশ্যই ।
-আপনার কিছু বলার নেই ?
-আমার সব কথা তো আপনি নিজেই বলে দিলেন । আমার আর কিছু বলার নেই । কেবল বলছিলাম যে ....।
কথাটা বলতে গিয়ে থেমে গেলাম । কি বলবো কিংবা বলা ঠিক হবে কি না আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না । মেয়েটা আমার কি মনে করে বসে ।
-বলুন ।
-না মানে বলতে চাচ্ছিলাম যে বিয়ের আগে আমরা কদিন মিশি । দেখি দুজনের চিন্তা ভাবনা গুলো এক হয় নাকি । আমাদের কোন বিষয় গুলো দুজনের অপছন্দ এই সব আর কি ।
-হ্যা । আসলে আমিও ঠিক এই কথাটাই বলতে যাচ্ছিলাম । আপনি বলে দিলেন দেখে ভাল লাগলো ।
ঐ দিন আরও কিছু কথা হল । দুজনের কাছে দুজনের মোবাইল নাম্বার আগে থেকেই ছিল এবার ফেসবুক আইডি নিলাম । এখন দেখার দরকার আমাদের সামনে কি হয়।
------
তবে আমার আগে যেমন বিয়ে করার বিপক্ষে ছিলাম কিন্তু জেরিন সেটা বদলেই দিলো । আমি আসলে ভাবতেই পারি নি এমন মেয়েও কোন দিন হতে পারে । আমরা এরপর থেকেই দেখা করতে লাগলাম । অফিসের পর কিংবা ছুটির দিনে । ওর সাথে সময় কাটাটে গিয়ে কেবল একটা জিনিসই লক্ষ্য করলাম যে আমি মেয়েদের ভেতরে যে যে গুন গুলো অপছন্দ করি সেগুলো ওর ভেতরে নেই বললেই চলে । যেকারনে অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে চাইতাম সেটা আর রইলো না কোন ভাবেই । এদিকে আমাকেও যে ওর পছন্দ হচ্ছে সেটা ওর কথা থেকেই বুঝতে পারছিলাম ।
এদিকে মেয়ের পরিবার আর আমার পরিবারের লোকজন দেখা করে ফেলল । আসলে তারাও তাদের এই মেয়ে নিয়ে বেশ ঝামেলায় ছিল । মেয়ে নাকি কিছুতেই বিয়ে করতে চায় না । যে ছেলেই আসুক রিজেক্ট করে দেয় । তারপর আমার সাথে মেশার পর নাকি তারও মনভাবও খানিকটা বদলেছে । এজন্য তারা কিছুতেই আমাকে হাত ছাড়া করতে চাচ্ছে না । যদিও বিচারে আমি একেবারে পার পার্ফ্যাক্ট পাত্র বলা যাবে না তবে মেয়ের যদি বিয়েই করতে রাজি না হয় তাহলে পার্ফেক্ট পাত্র দিয়ে কি হবে !
সব কিছু যখন ঠিকঠাক চলছিলো তখনই ঝামেলা বেঁধে গেল একটা । সব কিছু ঠিক বলতে একদম আমাদের বিয়ের তারিখ পর্যন্ত ঠিক হয়ে গেছে তখনই ঝামেলা বেঁধে গেল ।
------
আমি সবে মাত্র অফিস থেকে বের হয়ে বাসার দিকে যাচ্ছি ঠিক তখনই জেরিনকে দেখলাম একটা ছেলের সাথে রিক্সায় করে যাচ্ছে । ছেলেটার সাথে এমন ভাবে কথা বলছে যে সেটা দেখে আমি মোটেই ভাল লাগলো না । এই কদিনের পরিচয়ে ওর বন্ধুদের সাথে আমি বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে । কিন্তু এই ছেলেটাকে আমি এর আগে কোন দিন দেখি নি ।
আমার কাছে ব্যাপারা টা কিছুতেই সহ্য হল না । নিজের বউ, মানে হবু বউ অন্যের সাথে ঢুরবে কেন ? আমি ওকে সাথেই সাথেই ফোন দিলাম । জানতে চাইলাম যে ও কোথায় আছে । বলল যে সবে মাত্র অফিস থেকে বের হয়েছে ।
মিথ্যা ।
মিথ্যা কেন বলল ?
মোটেই ভাল লক্ষ্যন না । আমি বললাম
-তুমি থাকো আমি আসছি ।
-আরে না না । তোমাকে আসতে হবে না । আমিই তোমার ওখানে আসছি । তুমি অফিসের সামনেরই থাকো ।
জেরিনের আসতে আরও মিনিট বিশেক লাগলো । এই সময়টা আমি নিজের কাছে নিজেই বোঝা পড়া করতে লাগলাম । ওকে কিছু বলার আগে চেষ্টা করলাম যে নিজেকে বোঝাতে । কিন্তু কিছুতেই নিজেকে বোঝাতে পারছিলাম না । মেনে নিতেও পারছিলাম না ব্যাপারটা ।
জেরিন রিক্সা থেকে নামতেই আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো কিন্তু আমার কেন জানি হাসি এল না । আমি কোন প্রকার ভুমিকা না করেই বললাম
-ছেলেটা কে ?
জেরিন যেন একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেল তবে সামলে নিলো মুহুর্তেই । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কোন ছেলেটা ?
-যার সাথে তুমি একটু আগে রিক্সায় চড়ছিলে ?
জেরিন কিছুটা সময় আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বুঝে গেল যে আমি ওদেরকে দেখে ফেলেছি । মিথ্যা বলে লাভ নেই । বলল
-আমার এক ফ্রেন্ড ।
-ভাল । তা আমাকে মিথ্যা বললে কেন ? এমন তো না তোমার বন্ধুদের সাথে আমি দেখা করি নি । তাহলে এর সাথে দেখা করলে সমস্যা কি ?
এই কথা শুনে জেরিন যেন একটু রেগে গেল । আমার দিকে তাকিয়ে
-দেখো অপু সব প্রশ্নের জবাব আমি তোমাকে দিবো না ।
-আরে আজিব, তুমি একটা ছেলের সাথে রিক্সা করে ঘুরে বেড়াবে আমি তোমাকে হবু হাজব্যান্ড সেটা জিজ্ঞেস করতে পারবে না ?
-এখনও তুমি আমার হাজব্যন্ড হও নাই । বুঝেছো ? সো লাইন ক্রস করো না ।
-এটাকে লাইন ক্রস বলছো ?
-হ্যা ।
-আমার বোঝা হয়ে গেছে । তোমার মনে সোজা কিছু থাকলে তুমি আমাকে মিথ্যা বলতে না । সোজা সত্যই বলতে । আর অন্যায় করেছো সেইজন্য রেগে যাচ্ছো ।
এই কথা শুনে জেরিন যেন আরও রেগে গেল । মুখটা লাল হয়ে গেল আরও । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-শুনো আমাকে ন্যায়-অন্যায় শেখাতে এতো না । তুমি ফেসবুকে কটা মেয়ের সাথে প্রেম করেছো সেটা কিন্তু অজানা নেই ।
-থাকবে কেন ? আমি তো তোমার কাছে সেটা লুকাই নি । কারন আমি কোন কোন অন্যায় নেই । তোমার মনে ...
-চুপ আর একটা বাজে কথা না । আসলে তোমাকে আমি ভুল বুঝেছিলাম ।
-আমিও তাই করেছি মনে হচ্ছে ।
জেরিন আমার দিকে আর কিছুটা সময় তাকিয়ে থেকে বলল
-গুড বাই ।
তারপর সোজা চলে গেল । উত্তেজনার জন্য এতোটা সময় ঠিক মত লক্ষ্য করি নি কিন্তু ততক্ষনে আমাদের চার পাশে বেশ কয়েকজন কৌতূহলী মানুষ জমে গেছে । আমিও আর না দাড়িয়ে থেকে রিক্সা নিলাম । কিছুটা সময় এদিক ওদিক ঘোড়াঘুরিকরে তারপর বাসায় ফিরে এলাম ।
বাসায় আসতে না আসতেই মা আমার দিকে দৌড়ে এল । বলল
-তোর সাথে জেরিনের কি হয়েছে ?
-কেন ?
-ওদের বাসা থেকে ফোন এসেছিলো । জেরিন নাকি বেঁকে বসেছে ।
-ভাল হয়েছে । ক্যান্সেল করে দাও ।
-মানে কি । আংটি বদল হয়ে গেছে । বিয়ের তারিখ পড়ে গেছে ।
-মা এমন না যে বিয়ের সব আয়োজন সম্পন্ন হয়ে গেছে । কার্ড ছেপে গেছে । অফ যাও ।
-আরেকটু ভেবে দেখ বাবা । মানুষ জন কি বলবে !
-যা বলে বলুক ।
দুই পরিবার থেকেই বোঝানোর চেষ্টা চলল কিন্তু আমরা দুজনেই যেখানে বেঁকে বসেছি সেখানে তারাও কিছু করতে পারলো না । বারবার জানতে চাইলো যে কি এমন হয়েছে কিন্তু আমরা কেউ কিছু বললাম না । শেষে বিফল হয়ে ফেরৎ গেল । আর আমার ছোট মামা আবারও পূর্ন দমে পাত্রী দেখা শুরু করে দিল ।
--------------
ভেবেছিলাম জেরিনকে নিজের জীবন থেকে বের করতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না । কিন্তু ভুলটা ভাঙ্গলো কদিন পরেই । ১০ দিনের মাথায় বুঝে গেলাম যে মেয়েটা আমার মাথার ভেতরে চেপে বসে আছে । গত দুই মাসে ওর সাথে কাটানো সময় গুলো বারবার ঘুরে ফিরে আমার সামনে আসতে লাগলো । আমি নিজে খানিকটা অসহায় বোধ করলাম । এমনটা আগে কোন দিন হয় নি । মেয়েদের সাথে আমি কম প্রেম করি নি । তবে কারো প্রতি আমার আকর্ষন কোন কালেই খুব বেশি গাঢ় ভাবে তৈরি হয় নি কিংবা আমি নিজে তৈরি করি নি । কিন্তু এই মেয়েটার সাথে কি এমন হল ?
সব থেকে ঝামেলা শুর হল সেদিনের সত্যটা জানার পরে । ওর এক বন্ধুর কাছ থেকেই ব্যাপার টা জানতে পারলাম । সেদিন যে ছেলেটা ওর পাশে ছিল সে নাকি জেরিনকে ভালবাসতো, ওদের ক্লাসেই পড়তো । একটু নাকি এবনরমাল । তবে জেরিন কোন দিন ছেলেটাকে পাত্তা দেয় নি । এখন ওর বিয়ে যাচ্ছে বলেই নাকি ছেলেটাকে একটু বুঝানোর জন্য ওর সাথে রিক্সায় চড়েছিল । যাতে করে ও আর পাগলামো না করে । আর আমাকে সে সেটা বলতে চায় নি । আমাকে কিংবা নিজে বিব্রত হতে চায় নি ।
বেশ কয়েকবার ফোন দিতে গিয়েও ফোন দিলাম না । ঈগোর কাছে মনটা বারবার পরাজিত হতে লাগলো । এদিক ওদিক যাই কিন্তু জেরিন কে কিছুতেই মন থেকে বের করতে পারলাম না । একদিন লুকিয়ে ওর অফিসের কাছে চলে গেলাম । দুর থেকেই ওকে দেখতে পেলাম । মনে হচ্ছিলো তখনই গিয়ে ওর সাথে কথা বলি । বলি সব কিছু ভুলে গিয়ে আবার নতুন করে কিন্তু ঐ যে ঈগোর কাছে হেরে গেলাম আবারও ।
তারপর দেখতে দেখতে আমাদের বিয়ের তারিখটা চলে এল । মানে যেদিন আমাদের বিয়ের তারিখে পড়েছিল সেদিন সত্যি সত্যি নিজেকে খানিকটা নিয়ন্ত্রন করা আমার পক্ষে সম্ভব হল না । লাঞ্চ আওয়ারেই অফিস থেকে বের হয়ে জেরিনের অফিসে হাজির হলাম । রিসিপশনে ওকে চাইলে আমাকে জানালো
-ম্যাডাম একটু আগে বাইরে গেছে । আপনি চাইলে এখানে অপেক্ষা করতে পারেন । লাঞ্চ শেষ করেই ময়াডাম ফিরে আসবে ।
আমি অপেক্ষা না করে বাইরে বের হয়ে এলাম নিজের মোবাইল টা বের করে কয়েকবার ফোন দিতে গিয়েও নিজেকে আটকাতে লাগলাম । মন বলছে সব কিছু ভুলে গিয়ে জেরিনকে ফোন দিতে আর ঈগো বলছে দেওয়া লাগবে না । শেষে ঈগো এবার পরাজিত হল । আমি জেরিনকে ফোন দিয়েি ফেললাম
কিন্তু নাম্বার বিজি ।
দুর শালা ।
ঈগো আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো । বারবার কানের কাছে যেন বলতে লাগলো দেওয়া লাগবে না । লাগবে না ।
আবারও দিলাম ফোন ।
এবারও বিজি ।
মনে মনে বললাম আর একবার । যদি এবার বিজি পাই তবে আর ফোন দিবো না । এখান থেকে সোজা চলে যাবো । তিনবারের যখনই ফোন দিতে যাবো তখনই আমার ফোনে ফোন ঢুকলো একটা ।
জেরিনের ফোন ।
তাহলে ও আমাকেই ফোন দিচ্ছিলো । এই জন্য বিজি দেখাচ্ছিলো ।
-হ্যা-হ্যালো
-কোথায় তুমি ?
-তোমার অফিসে সামনে ।
ওপাশ থেকে কিছুটা সময় নিরবতা নেমে এল । আমি বললাম
-তুমি কোথায় ?
-গাধা কোথাকার ? কোথায় থাকবো ? তোমার অফিসের সামনে ।
-মানে কি ।
-মানে বোঝো না ।
মানে হচ্ছে আমি যেমন আজকের দিনে থাকতে না পেরে এখানে এসেছি ঠিক ও নিজেও আমার ওখানে গেছে । জেরিন বলল
-এর আগেও দুদিন এসেছি । তুমি তো ঠিকই ছিলে তখন । আর আজকে যখন দেখা করতে এসেছি তখন উনি আমার অফিসে !!
আমি বললাম
-আমিও তো গেছিলাম ।
-ভাল করেছো !
-তুমি থাকো । আমি আসছি । একক্ষুনি আসছি !
কিভাবে আবারও ওর সামনে পৌছালাম আমি নিজেই জানি না । গিয়ে দেখ ঠিক মাস দেড়েক আগে ও যেখান থেকে চলে গিয়েছিলো, যেখানেই দাড়িয়ে আছে । আমার দিকে তাকিয়ে আছে ।
আমি কাছে গিয়েই বলতে গেলাম
-আসলে.......
আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে ওর হাত দিয়ে চুপ করিয়ে দিল । বলল
-কিছু বলতে হবে না । কিছু না । ঐদিন আমার ভুল ছিল তোমার ছিল । আমরা দুজনেই ঠিক করি নি ।
-এখন ? কি করবো ?
-জানি না । আজকে আমাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল ।
জেরিন আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । আসলেই আজকে আমাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল । এতো সময়ে ঠিক ঠিক আমি হয়তো গাড়ি নিয়ে ওদের বাসার দিকে রওনাও হয়ে যেতাম ।
আচ্ছা ছিল বলছি কেন ? এখনও তো হতে পারে ।
পারে না ?
অবশ্যই পারে । সবের মাত্র লাঞ্চ আওয়ার শেষ হয়েছে । পুরো বিকেল পড়ে রয়েছে ।
আমি জেরিনের দিকে তাকিয়ে বললাম
-এখনও হতে পারে !
-মানে ?
-মানে হচ্ছে আমি তুমি রাজি । এখনই বিয়ে করে ফেলি ?
-কিভাবে ?
-আরে কিভাবে মানে কি । রিক্সা নেব কাজী অফিসে যাবো । কবুল বলব, সাইন করব ব্যাস ।
-কিন্তু বাবা মা !
-আরে ওনারা কি মানা করবে ? করবে না । আমাদেরকে বিয়ে দেওয়ার জন্য ওনারা কি না করেছিলো ? মনে নেই ?
জেরিন কিছুটা সময় কি যেন ভালবো । তারপর বলল
-চল ।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো ।
-আমার সত্যিই বিশ্বাস হচ্ছে না আমি তোমার সাথে আবারও যাচ্ছি । বারবার মনে হচ্ছিলো কেন কেবল আমি এমন হচ্ছে । তোমার তো কিছু হচ্ছে না । এখন শুনি দুজনেরই একই অবস্থা !
আমি জেরিনের কথা শুনে কেবল হাসলাম । তারপর ওর হাত ধরে রিক্সায় উঠে পরলাম ।
গন্তব্য মগবাজার কাজী অফিস !!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৮