মহাখালী রেলগেট !
বর্ষাকালে যেমন কুত্তা বিলাইয়ে (ক্যাটস এন্ড ডগস) বৃষ্টি নামে ঠিক তেমনি এই আজকে এইখানে সেই রকমই কুত্তা বিলাইয়ের জ্যাম লেগেছে । অবশ্য এই জায়গাটা এমনই একটা স্থান যেখানে প্রতিদিনই জ্যাম লাগে । কোন দিন-কাল নেই, সব সময়ই কঠিন জ্যাম লেগেই থাকে ।
গাড়ির সারি রেলগেটের এদিক থেকে ওপাশে চলে গেছে । যতদুর চোখ যায় কেবলই নিশ্চল গাড়ির সারি ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না । গাড়ির ঢাকার সাথে যেন শিকড় গড়িয়েছে সেই কবে থেকে । আদিম যুগ থেকে কেবল গাড়ি গুলো দাড়িয়েই আছে । কোন প্রকার এগুনো কিংবা পেছানোর কোন নাম নিচ্ছে না ।
নীলার অবশ্য খুব একটা খারাপ লাগছে না । পাশের মানুষটা থাকলে নীলা যে কোন পরিস্থিতিতে ভাল থাকতে পারে । আর জ্যামের কারনে একটা ভাল কাজ হয়েছে । নীলা আর সুমন যে বাসটাতে করে গুলশান যাচ্ছিলো ফার্মগেটের পর থেকেই সেটাতে বেশ ভীড় ছিল । এখন জ্যামের কারনে সেই ভীড়টা অনেকটাই কমে গেছে । অনেকেই বাস থেকে নেমে গেছে । সুমন অনেকটা সময় বিরক্ত মুখে বসে আছে । নীলার কানে হেড ফোন । মৃদু ভলিউমে গান শুনছে রেডিওতে আর মাঝে মাঝে সুমনের সাথে কথা বলছে ।
সুমন আবারও বলল
-চল নেমে যাই !
-কেন ? এখনও কতদুর জানিস ? আমি এতো দুর হাটতে পারবো না ।
-তাই বলে সারাজীবন বসে থাকবি এখানে ? আমার তো মনে হচ্ছে এই জ্যাম এই জীবনে আর ছাড়বে না !
-আরে বেশি সময় লাগবে না । বসে থাক না ! নাকি আমার পাশে বসে থাকতে তোর ভাল লাগছে না ?
-সে কথা বলি নি আমি । কিন্তু ফরমটা ...
-আরে রাখ, চারটা পর্যন্ত সময় । চুপচাপ বসে থাক তো ! ইচ্ছে করলে আমার হাত ধরেও বসে থাকতে পারিস !!
সুমন নীলার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন অপরিচিত একটা মানুষ ওর কথায় খুব অবাক হয়েছে । নীলা সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করে বলল
-কি ব্যাপার এমন ভাবে তাকাচ্ছিস কেন ? শোন মেয়েদের একটা সহজাত সুপারপাওয়ার থাকে । তারা অনেক কিছু আগে থেকেই বুঝে ফেলে কিংবা না বলা অনেক কথাই বুঝতে পারে । বুঝেছিস ! এভাবে তাকাবি না !
সুমন আবারও কিছু না বলে কেবল চুপ করে তাকিয়ে রইলো । সেই অবাক হওয়ার জায়গায় এখন মৃদ্যু একটু হাসি দেখা যাচ্ছে !
নীলা ইচ্ছে করেই এবার সুমনের হাত ধরলো । অসম্ভব মোলায়েম কন্ঠে বলল
-ঐ দিন হাত ধরেছিলি মনে আছে । মনে হচ্ছিলো যে তোকে হয়তো আর কোন দিন দেখতে পাবো না !
-আচ্ছা বাদ দে । যা হয়েছে হয়েছে । কিন্তু এই জ্যামে আর কতক্ষন
কথা টা বলেই সুমন চুপ করে গেল কিছুটা সময় । নীলার কেবল মনে হল কিছু একটা সমস্যা হয়েছে । কোথাও কোন কিছু একটা সমস্যা হয়েছে । সুমনের উঠে দাড়ানোটা সেটা আরও বেশি করেই সেটা প্রমান করে দিল ।
নীলা বলল
-কি হয়েছে ?
-কিছু না । তুই এখানে বসে থাক । আমি আসছি !
-কোথায় যাচ্ছিস ?
-কোথাও না । তুই বসে থাক ।
এই বলেই সুমন হাটা দিল । কয়েক পা এগিয়ে আবার ফিরে এল । নীলার দিকে তাকিয়ে বলল
-তোর কাছে ডাস্ট-মাস্ক আছে না ?
-হুম !
-দে দেখি !
নীলার ওর ব্যাগ থেকে ডাস্ট মাস্কটা বের করে সুমনের হাতে দিল । সুমন মাস্কটা হাতে নিয়ে বলল
-চিন্তা করিস না ! আমি ঠিক থাকবো ! ঠিক আছে !
নীলা কেবল হাসলো । নীলা জানে ও ঠিকই থাকবে । ওর কিছু হওয়ার নয় !
দুই
সার্জেন্ট হাফিজের সকাল থেকেই মনে হচ্ছিলো আজকে দিন টা তার ভাল যাবে না । কোন একটা দুর্ঘটনা ঘটবেই ঠিক ঠিক । তার চাকরীর জীবনে তিনি যেই যেই দিন সকালে এমন টা মনে হয়েছে ঠিক সেই সেই দিন এমন কোন না কোন ঝামেলা ঠিকই বেঁধেছে । শেষ যখন মনে হয়েছি সেদিন তিনি পায়ে গুলি খেয়েছিলো । যদিও খুব একটা বড় ক্ষতি হয় নি কিন্তু একটু ক্ষুড়িয়ে চলতে হয় । এবং তারপরই তার পোস্টিং তারপর এই ট্রাফিক বিভাগে হয়েছে । অবশ্য এতে তিনি খুব একটা অখুশি নন । আগের থেকে এখন বলতে গেছে ভালই আছেন ।
আজকে সকাল থেকেই এই রেলক্রসিং রয়েছেন এবং এর আসে পাশের সব জায়গায় অসম্ভব জ্যাম লেগে আছে । কিছুতেই ছুটছে চাচ্ছে না । গাড়ি এগোচ্ছে না, এক জাগয়াই দাড়িয়ে আছে তো আছেই । যদিও চলতে মাঝে মাঝে তাও শামুকের গতিতে । একটু দুরে গিয়ে আবারও থেমে যাচ্ছে ।
সার্জেন্ট হাফিজ এবং তার সাথের আরও সাত জন ট্রাফিক পুলিশ এই এলাকায় রয়েছে । তারাও কেবল অসহায়ের মত এদিক ওদিক তাকাচ্ছে । শত চেষ্টা করেও কোন লাভ হচ্ছে না । জ্যাম যে ছুটতেই চাইছে না । সার্জেন্ট হাফিজের কেবল মনে হচ্ছে আজকে যেন ঢাকা শহরের সব গাড়ি এই রাস্তায় এসে পরেছে । তাদের কেবল এই রাস্তা দিয়েই যেতে হবে । অন্য সব পথ আটকে দেওয়া হয়েছে ।
অবশ্য ঢাকা শহরে এই জ্যামটা নতুন কোন ব্যাপার না । এটা মানুষের গাঁ সয়া হয়ে গেছে । সবাই এটা মেনেই নেয় । কোন সমস্যা নেই এমন একটা ভাব করে বসে থাকে । সেই হিসাবে সার্জেন্ট হাফিজের খুব একটা চিন্তা করার কথা না । কিন্তু তার চিন্তা হচ্ছে অন্য কারনে । ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছেন বারবার ।
অলরেডি তিনি ওদিকটার রেলগেট তিনি ফেলে দিয়েছেন । কিন্তু এদিকটার গেট এখনও ফেলতে পারেন নি । অবশ্য না ফেলেও খুব একটা লাভ নেই । আগে যাওয়ার জন্য কয়েকটা গাড়ি এখানে এসে ভিড় করে আছে । জ্যামটা আরও বেশি আকারে বেঁধে গেছে সেখানে । কিন্তু সব থেকে সমস্যার কথা হচ্ছে এখনও একটা বাস ঠিক রেল লাইনেই উপরে দাড়িয়ে আছে । সামনে এগুলোতে পারছেন না কারন এর আগেও একটা কার গাড়ি দাড়িয়ে আছে । পেছন দিকেও আসতে পারছে না ঠিক একই কারনে !
এদেরও দোষ দিয়ে কোন লাভ নেই । সামনের পুরো রাস্তাটা আটকে আছে । এক চুল সামনে এগোনোর কোন উপায় নেই । সার্জেন্ট তার অধিন্যাস্তের দিকে তাকালো । ব্যাচারা এরই ভেতরে ঘেমে একাকার হয়ে হয়ে গেছে । কিন্তু এখনও একটা গাড়িকে সরাতে পারছে না । সার্জেন্ট আরেকবার ঘড়ি দেখতে যাবেন তখনই ট্রেনের হুইসেল শুনতে পেলেন । ঘুরে গেলেন সাথে সাথেই । দুরে থেকে আওয়াজটা আসছে ।
ট্রেন আসছে ।
এখানে পৌছাতে আর খুব বেশি হলে মিনিট দুইয়েক কিংবা তার থেকে কিছু বেশি সময় লাগবে ।
সার্জেন্ট তাকিয়ে দেখলো এখনওলাইনের উপর দুইটা গাড়ি আছে । একটা বড় বাস আর একটা কার । যদি এভাবেও ট্রেনটা আসে তাহলে কার গাড়িটাটা হালকা ধাক্কা দিলেও বাস টা কে সরাসরি ধাক্কা মারবে । তিনি দৌড়ে পেছনে চলে গেলেব বাসটার । সেখানে এমন জায়গা নেই যে বাস টা পেছনে সরবে । এদিকে সামনেও যাবার মত কোন অবস্থা নেই ।
এখন কি করবেন তিনি ।
ততক্ষনে বাস থেকে যাত্রীরা সব নামতে শুরু করে দিয়েছে । চিৎকার চেঁচামিচিও শুরু হয়ে গেছে চারিদিকে । সবাই বুঝতে পারছে সামনে বড় রকমের একটা দুর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে । সার্জেন্ট কেবল কিছু সময় চুপ করে দাড়িয়ে রইলো । বাসের যাত্রী হিসেব করে দেখলেন তিনি । ট্রেন টা যে গড়িতে এগিয়ে আসছে কোন ভাবেই বাসের সব যাত্রী নামতে পারবে না । একটা মাত্র গেট দিয়ে সবাই বের হতে গিয়েই সমস্যা বেঁধে যাচ্ছে । কেউ ঠিক মত বের হতে পারছে না ।
সার্জেন্ট মনে মনে প্রার্থনা করলেন । এটা ছাড়া তার এখন আর কোন কিছুই করার নেই । এদিকে তার অধিন্যাস্ত হাবিলদার তার হাতের রুল লাঠিটা দিয়ে বাসের গায়ে বাড়ি মেরেই যাচ্ছে । সবাইকে বের হতে বলছে । তিনি এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলেন আসে পাশের মানুষ গুলোও তার মত উপরওয়ালার কাছে প্রার্থনা করছে । সবাই তাকিয়ে আছে আসন্ন দুর্ঘটনার দিকে ।
তিন
ইশানার বিরক্তিটা এবার ভয়ে রূপান্তরিত হয়েছে । বাইরের জ্যামটার দিকে এতক্ষন সে খুবই বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে ছিল এখন সেটা ভয়ের দিকে টার্ন নিয়েছে । ট্রেনের হুইসেলটা শোনার পর থেকেই । ওদের পেছনের বাস টা এখনও রেল লাইনের উপর । কোন সন্দেহ নেই ট্রেন সরাসরি ওটার গায়ে আঘাত মারবে । এখনও বাস টা ভেতরে মানুষজন দেখে যাচ্ছে ।
-আফা !
বাস থেকে নজর সরিয়ে ড্রাইভার দিকে তাকালো ইশানা ।
-কি হয়েছে ?
-আপনে নাইমা খাড়ান !
-কেন ?
-আমাগো গাড়িটাও লাইনের উপরে একটু আছে । জোড়ে ধাক্কা না মারলেও ঢাক্কা লাগতে পারে । আপনে নাইমা যান ! আমি এটার ভেতরে আছি !
-আরে আপনি কেন থাকবেন ? আপনিও নামুন !
-না আফা ! বড় সাবে বিশ্বাস কইরা এইটা গাড়ি আমার কাছে দিছে । আমি ভালা থাকুম আর এইটা নস্ট হইবো এইটা আমি পারুম না । আপনে নাইমা যান !
-আরে কি আশ্চর্য কি বলছে না আপনি । নামুন বলছি ! নামুন !
-না আফা ! আপনে নামেন !
ইশানা কি করবে কিছু বুঝতে পারলো না । কোন ভাবেই এই বুড়ো ড্রাইভার কে নামানো যাবে না দেখতে পাচ্ছে । যদিও খুব একটা ভয়ে নেই সে কিন্তু ট্রেনটার ধাক্কা ঠিকই লাগবে ওর গাড়িটার গায়ে । এই সময়ে এখানে বসে থাকাটা কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে ?
এদিকে ট্রেনটার হুইসেল আরেকবার কানে এল । আর কত সময়ের ভেতরেই ট্রেনটা চলে আসবে ।
ইশানা গাড়িতে থেকে নামতে যাবে তখনই একটা অবাক করা বিষয় ঘটলো ওর সামনে । ওর গাড়িটা হঠাৎ করেই খুব জোরে নড়ে উঠলো । যেন কেউ হাত দিয়ে নড়িয়ে দিয়েছে । তারপরই গাড়িটা দুলে উঠলো ।
আরে !!
ইশানা কয়েক মুহুর্ত বুঝতেই পারলো না কি হচ্ছে । কেবল অনুভব করলো যেন কেউ ওদের গাড়িটা হাত দিয়ে উচু করেছে । ইশানা সেটা খুব ভাল করেই বুঝতে পারছে । তারপর সেটা এক পাশে সরিয়ে দিচ্ছে আস্তে আস্তে । কয়েক সেকেন্ড লাগলো সেটা করতে ।
গাড়িটা যখন আবারও নিচে নামিয়ে রাখলো তখন ইশানার হুস ফিরলো । একটু আগে ওর গাড়িটা যেখানে রাস্তা বরাবর ছিল, রেল লাইনের সাথে উলম্ব আকারে ছিল এখন সেটা রাস্তার উপর আড়াআড়ি ভাবে রয়েছে । রেললাইন থেকে বেশ খানিকটা দুরে !
চোখে অবিশ্বাস নিয়ে ইশানা গাড়ি থেকে নেমে এল । বুড়ো ড্রাইভারও নেমে এসেছে । তাকিয়ে আছে রাস্তার দিকে ! তার চোখেও অবিশ্বাস ! ইশানা গাড়ির পেছনে তাকিয়ে ছেলেটাকে দেখতে পেল । কোন সন্দেহ নেই এই ছেলেটাই একটু আগে ওদের গাড়িটা উচু করে এক পাশে সরিয়ে দিয়েছে ।
ছেলেটার মুখে একটা ডাস্ট মাস্ক পরা । চুপ গুলো একটা বড় করে রাখা । গায়ের রং শ্যামলা ফর্সা ! গায়ে নীল রংয়ের একটা শার্ট আর কালো জিন্স ! পায়ে চপ্পল !
ইশানা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ছেলেটার দিকে । কেবল ওই নয় আসে পাশেই সবাই যারা একটু আগে চিৎকার চেঁচামিচি করছিল এখন চুপ করে আছে । গাড়ির হর্ন গুলো থেমে গেছে । কেবল ট্রেনের হুইসেল শুনা যাচ্ছে !
বাস !
ইশানার মনে পড়লো এখনও বাসটা রয়ে গেছে রেল লাইনের উপরেই !
ইশানা আবারও ছেলেটার দিকে তাকয়ে আছে । চোখাচোখি হল দুজনের । ইশানার কেবল মনে হল ছেলেটা হাসলো । সেই হাসিতে ভরশা দেওয়া দৃষ্টি !
যেন বলছে
ভয়নেই আমি আছি !
শার্টের হাতা গুটিয়ে ছেলেটা এবার বাসটার সামনে চলে এল । আরেকবার তাকিয়ে দেখলো ট্রেনের দিকে । খুব বেশি সময় নেই আর হাতে ।
সার্জেন্ট হাফিজ অবিশ্বাস চোখে তাকিয়ে আছে । একটু এই পিচকি ছেলেটা এমন ভাবে সামনে থাকা কার গাড়িটা তুলে এক পাশে সরিয়ে রাখলো যেন কোন গাড়ি নয় একটা খেলনা গাড়ি তুলে ধরেছে । এখন এতো বড় বাসরার সামনে দিয়ে তুলে দুই চাকা তুলে ধরেছে ।বাসে ভেতরে যে মানুষ গুলো এখনও বের হতে পারে নি তারাও চুপ করে গেছে । নড়াচড়া করছে না ।
মনে হল ছেলেটা সম্ভব বাসটা তুলে ধরতেই ক্লান্ত হয়ে গেছে । আরও কয়েক মূহুর্ত নিশ্চল ভাবেই দাড়িয়েই রইলো এক জায়গায় ! তারপরেও আস্তে আস্তে নড়তে শুরু করলো বাসটা ।
আস্তে আস্তে সরতে লাগলো বাসটা রেল লাইনের উপর থেকে ।
ইশানা কেবল তাকিয়েই আছে । কখন যেন ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে ভিডিও করা শুরু করেছে ও নিজেই জানে না । ছেলেটা তখনও বাসটা কে তুলে নিয়ে একপাশে সরিয়ে দিতে ঠিক যেমন করে ওদের গাড়িটা লাইন সোজাসোজি সরিয়ে আড়াআড়ি ভাবে রেখে দিয়েছিল ।
ইশানা তাকিয়ে দেকখো ট্রেনটা অনেক কাছে চলে এসেছে । এখনও বেশ কিছু টা বাকি !
ছেলেটা পারবে তো ?
পারবে ?
পারবেই !
আর একটু এই তো হয়ে গেছে ।
ঠিক যখন ট্রেনটা চলে তার কয়েক মুহুর্ত আগে বাস টা সম্পর্ন ভাবে লাইন থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে রাখলো । একটু যেন ছুয়েও গেলে বাসটাকে । মৃদু ধাক্কা খেলো তবে সেটা বড় কোন কিছু না !
ট্রেনটা দ্রুত গতিতে পার হয়ে গেল । তারপর সব চুপচাপ । কেউ কোন কথা বলছে না । আরও ভাল করে বললে কেউ কোন কথা বলতে পারছে না । একটু আগে তাদের চোখের সামনে যে অবিশ্বাস ঘটনা ঘটে গেল তা কোন ভাবেই বিশ্বাস করছে না । আবার না বিশ্বাস করে পারছেও না । নিশ্চিত দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে যাওয়া বাসের যাত্রী গুলোও কোন কথা বলতে পারছে না । নতুন জীবন ফিরে পাওয়ার মত আনন্দে তারা কিছু সময়ের জন্য কথা হারিয়ে ফেলেছে ।
ট্রেন টা চলে যাওয়ার পরে তখনও সেই ছেলেটা সেখানেই দাড়িয়ে আছে । মুখে এখনও ডাস্ট মাস্ক পরা !
সবার আগে ইশানাই ছেলেটার দিকে দৌড় দিল । তারপরই সার্জেন্ট হাফিজ ! এর পর আরও মানুষ কেবল ছেলেটার কাছে পৌছাতে চায় । ছেলেকে একটা ছুয়ে দেখতে চায় সবাই ।
তারা একটু আগে যা দেখলো তা কি আসলেই সম্ভব । সত্যি ? না কি সব চোখের ভুল !
ইশানা প্রায় পৌছে গেছে তখনই আবার ছেলেটার সাথে আবারও চোখাচোখি হয়ে গেল । আবারও সেই হাসি । ছেলেটা চোখ দিয়ে হাসতে পারে খুব ভাল । এবার আর ভরশা দেওয়ার হাসি নয় বরং ছেলে মানুষী হাসি ! যখনই ইশানা ছেলেটাকে স্পর্শ করতে যাবে তখনই ছেলেটা একটু নড়ে উঠলো । একটু নিচের দিকে ঝুকে লাফ দিলো উপরের দিকে ।
ঠিক ঠিক সবাই ধরা ছোয়ার বাইরে গিয়ে সোজা গিয়ে পৌছালো ফ্লাইওভারের ওপারে । তারপর আরেকবার সবার দিকে হাত দিলে হারিয়ে গেল ।
ইশানা কেবল তাকিয়ে রইলো ছেলেটার চলে যাওয়ার দিকে । ওর ক্যামেরার ভিডিও ক্যামেরা তখনও চালু হয়ে আছে ।
পরিশিষ্টঃ
-কি ফরম জমা দেওয়া শেষ ?
নীলা তাকিয়ে দেখে সুমনের ভেতরে কি একটা যেন একটু অন্য রকম লাগছে ।
ওকে জ্যামের ভেতরে রেখে সে যে সেই গায়েব হয়ে আর তার দেখা নেই । সামনে কিছু একটা সমস্যা হচ্ছিলো নীলার মনে হয়েছে । অবশ্য নীলা সেদিকে খুব একটা লক্ষ্য করে নি । হেড ফোনের আওয়াজ বাড়িয়ে দিয়ে চুপ চাপ ছিল । তারপর কখন যে ঘুম চলে এসেছিল সে নিজেই বলতে পারবে না । যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন ও প্রায়ই পৌছে গেছে গুলশান একের কাছে । আজকে এখানে দুজনের একটা স্কলার্শীপের ফরম জমার দেওয়ার কথা ছিল ।
কাজ শেষ করে নীলা যখন বের হয়ে এল তখনই সামনে সুমন দাড়িয়ে ।
নীলা আর কিছুক্ষন পরেই ব্যাপার টা ধরতে পারলো ।
-চুল কেটেছিস কেন ? এরই ভেতরে !
সুমন কোন কথা না বলে কেবল হাসলো একটু !
নীলা আবার বলল
-তোকে নিয়ে আর পারি না !
-আরে আমি কি করলাম ?
-কিছু একটা তো করেছিসই ! কি করেছিস ?
-বাসায় গিয়ে দেখবি । এখন চল । খুব ক্ষুধা লেগেছে । আজকে না তোর আমার খাওয়ার কথা ছিল ! মনে আছে ?
-----------------------------
------------------------------
এর আগেও আমি ঢাকাইয়া সুপারম্যান নিয়ে দুইটা পর্ব লিখেছি ! যদিও এটা থার্ড স্টেজ তবুও চলা চলে গল্পটা সেকেন্ড স্টেজের আগের কোন একটা পর্ব । অনেকেই গল্পটা ফানি মনে করতে পারে কন্তু আমি সব সময়ই সুপারহিরোদের খুবই পছন্দ করি । এদের মুভি দেখতে বই পড়তে এনিম্যাশন সব কিছুই আমি পছন্দ করি । তাহলে কেন নিজের একটা গল্পই থাকবে না কেন ? যেমনই হোক তেমনই সই । নিজের জিনিস নিজের লেখা ! ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ !
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:২৭