-এতো রাইতে এই খানে কি করেন ?
আমি এক মনেই একটা দিকে তাকিয়ে ছিলাম । ঘড়িতে রাত একটার কিছু বেশি বাজবে হয়তো । পকেটে মোবাইল রয়েছে, বের করতে ইচ্ছে করছে না । প্রশ্ন কর্তার দিকে ফিরে চাইলাম । ফিরে তাকিয়ে দেখি প্রশ্ন কর্তা একা নন । তার সাথে আরও একজন আছে । পরনে খাকি পোষাক তবে পুলিশের না, নাইট গার্ডের । সাথের জনের এক হাতে বড় একটা চায়ের ফ্লাক্স অন্য হাতে একটা বালতি ! যে হাতে ফ্লাক্স ধরা সেই হাতেই একটা পলিথিনের প্যাকেকে সিগারেটের অনেক গুলো প্যাকেট !
আমার পরনে অনামিকার দেওয়া কালো রংয়ের একটা পাঞ্জাবী ! মোটামুটি বেশ ভাল দামী ! এই পোশাকে আমাকে মোটামুটি নিরীহ আর ভদ্র মনে হয় ! আমি মোটামুটি মুখটা নীরিহ করে বললাম
-কিছু না বসে আছি !
-এইখানে কি !
-দেখছেন না বসে আছি ! হাটছিলাম । হাটতে হাটতে ক্লান্ত হয়ে গেছি তাই বসে জিরিয়ে নিচ্ছি !
আমার কথা শুনে মনে হল না নাইটগার্ড সাহেব খুব একটা বিশ্বাস করলেন ! আমার দিকে সন্দেহের দিকে তাকাতে লাগলেন । নিশ্চয়ই আমাকে নেশা খোর মনে করছে । যদিও তা মনে করার কথা না !
-কতক্ষন বইবেন !
-সেই তো বলা মুশকিল ! যতক্ষন ভাল লাগে !
ভ্রাম্যমান চাওয়ালার সাথে কি যেন আলোচনা করে নিল সে । মনে হয় আমার দিকে তাকিয়ে একটু দ্বিধায় পরে গেছে । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-এইটা ভদ্দোর লোকের এলাকা !
-আপনার কি মনে হয় ? আমি কি অভদ্রলোক ?
-ভদ্দোর লোকেরা এতো রাতে বাইরে থাকে না ! যান যান !
এইকথা বলেই নাইট গার্ড হাটা দিতে উদ্ধত হলেই আমি বললাম
-আচ্ছা ! যাচ্ছি ! আগে এক কাপ চা খেয়ে নেই তারপর যাই ! !
তারপর চাও্য়ালার দিকে তাকিয়ে বললাম
-চা সাহেব, তিন কাপ চা বানান ! ভাল করে !
তিন কাপ শুনে দুজনেই আবারও আমার দিকে তাকিয়ে একটু অবাক হয়ে ! সোডিয়াম লাইটে আমি সেই চেহারা দেখতে পাচ্ছি স্পষ্ট ! চা ওয়ালার মনে স্পষ্ট দ্বিধা ! আমি মানুষ একজন চা বানাতে বললাম তিন কাপ ! ঘটনা কি !
আমি বললাম
-আরে আমি এক কাপই খাবো !
-তাহলে বাকি দুইকাপ ?
চাওয়ালার প্রশ্ন !
-একটা এই গার্ড সাহেবের জন্য ! সারা রাত এতো কষ্ট করে মানুষ কে পাহারা দেয় ! আমি কি তাকে এক কাপ চা খাওয়া তে পারি না ! আর অন্য কাপ আপনার জন্য চা সাহেব !
চা চলে এল আধা মিনিটের ভেতরেই ! দেখলাম দুজনেই এক সাথে বসে চা খেতে শুরু করেছে । বসেছে আমার থেকে একটু দুরে ! আসলে অনেকের সাথেই নাইট গার্ডের নিশ্চই দেখা হয় ! কেউ মনে হয় এতো রাতে এদের কে এমন ভাবে চা খাওয়াই নাই !
আমি নাইট গার্ডের দিকে তাকিয়ে বললাম
-দেশ কোথায় গার্ড সাহেব ?
-বিক্রমপুর !
-আরে সর্বনাশ ! তাই নাকি ! আপনি দেখি দেশি লোক ! আসেন পাশে এসে বসে ! নাম কি আপনের ?
-সোলাইমান ইসলাম !
-আরে সোলাইমান ভাই ! এই ইট কাঠের শহরে বিশেষ করে এই রাতের বেলা নিজ লোক পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার ! আসেন আসেন !
আমার দেশ বিক্রমপুর, এই জন্যই মনে হয় গার্ড সাহেব আমার পাশে এসে বসল ! আমি বললাম
-আপনে দেশী লোক তাই আপনেরে বলি কথাটা ! মনটা বিশেষ খারাপ !
-ক্যান ?
-আজকে আমার বিয়ে ছিল !
-বিয়া !
-হুম! বিয়ে ! একটা মেয়ে কে বিয়ে করার কথা ছিল !
-হয় নাই ?
-নাহ !
-বাইচ্চা গেছেন ! বিয়া বড় ঝামেলার কাজ ! যারা করছে তারা বড়ই ঝামেলায় আছে !
বোঝা গেল গার্ড সাহেবের বিয়ে বিষয়ক খুব ভাল অভিজ্ঞতা নেই । আমি চাওয়ালার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনারও কি তাই মনে হয় চা সাহেব ?
চাওয়ালা কিছু বলল না ! তবে কেমন মিষ্টি করে হেসে দিল ! যেন জবাব দিতে লজ্জা পাচ্ছে !
গার্ড সোলাইমান বলল
-ওর কথা কইয়েন না ! আস্তা বউ পাগলা ! বউ যা কয় তাই শুনে ! বউয়ের কথায় নাচে ! নতুন বিয়া করছে না এইজন্য এতো মজে আছে । কদিন কাজ না, তারপর টের পাইবো !
চাওয়ালা প্রতিবাদ করে বলল
-মোটেই টা না ! আমি মেলা দিন বিয়া করছি । ভাইজান কন আমার বিয়ে হইছে সেই ভাদ্র মাসে ! আরেক ভাদ্রমাস আইলো বইলা ! এইডা কি নতুন হইলো কন !
--না মোটেই না !
-তাইলে !!
গার্ড সাহেব কিছু না বলে চায়ে চুমুক দিতে লাগলো ! আমি গার্ডকে বলল
-সিগারেট চলে নাকি !
মুখে কিছু না বললেও মনে হল সে সিগারেট খায় ! আমি চাওয়ালার দিকে তাকিয়ে বলল
-গার্ড সাহেব কে একটা সিগারেট দেন ! আপনেও একটা নেন ! আজকে আমার বিয়ে হয়নি তো এই খুশিটা সেলিব্রেট করা যাক কি বলেন !
সিগারেট মুখে নিয়েই সোলাইমান মিয়া বলল
-বিয়া ক্যান হইলো না ? মইয়া বাইকা বসছে ?
-নাহ ! মাইয়া সোজাই ছিল !
-তাইলে ?
-আমি বাইকা বসলাম !
-মানে কি ? ক্যান ?
-আরে কি বলেন ? একটু আগেই না আপনে কইলেন বাইচ্চা গেছি এখন আবার ক্যান কন ক্যান ?
-আরে আমি কইবার চাইছি আপনে মানা করলেন ক্যান ?
কিছুটা সময় চুপ করে রইলাম !
-কোন কারন নেই । বিয়ে করতে ইচ্ছে করে নি তাই ! একবার না । এই নিয়া ৬ বার মানা করছি । ভাবতে পারেন একটা মেয়ে ছয় ছয়বার আপনাকে বিয়ে করার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে এসেছে এবং আবার ফিরে গেছে শূন্য হাতে ।
আমি কথাটা বলে শূন্য দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকালাম । আমাশে যেন আজকে খুব বেশি ঝলমল করছ । চারিদিকে তারার মেলা ! একটা ব্যাপার আমি বেশ ভাল করে দেখেছি প্রতিবার অনামিকা আমাকে যকন বিয়ে করতে আসে আর ফিরে যায় সেদিন রাতে খুব ভাল জ্যোঁছনা থাকে । যেন জ্যোঁছনার বন্যা বয়ে যায় ! এমন কি ঘন বর্ষার সময়ও অনামিকা একবার আমাকে বিয়ে করার জন্য বাসা থেকে চলে এসেছিল । সেদিন রাতেও আকাশে উজ্জল জ্যোঁছনা ছিল । আর ছিল হাজারও তারার মেলা !
কিছু সময় কেউ কোন কথা বলল না ! সামনের রাস্তা দিয়ে ভুস করে একটা গাড়ি চলে গেল । সোলাইমান মিয়া বলল
-আপনেই সেই মাইয়া কি এই এলাকায় থাকে ?
আমি জবাব না দিয়ে অনামিকাদের বাড়ির দিকে তাকালাম ! বেশ রাত হয়েছে অথচ এখন ওদের বাসার সব গুলো লাইট জ্বলছে । এমন সাধারনত হয় না ! অনামিকা রাত জাগলেও ওর বাবা জলদি জলদিই ঘুমিয়ে পড়ে । আজকে কি সবাই জেগে রয়েছে !
কেন ?
এমন কথা ভাবতে ভাবতেই ফোন বেজে উঠলো । রিংটোন শুনে বুঝে গেলাম অনামিকা ফোন করেছে ।
অনামিকা সাধারনত এতো জলদি রাগ ফেলে আমাকে ফোন করে না ! আমি তো ভেবেছিলাম ও অন্তত দুই তিন দিনের আগে ফোন করবে না !
-হ্যালো !
-হুম !
-এখনও ঘুমাও নাই ?
-দেখতে পাচ্ছো না ?
-আচ্ছা । আচ্ছা ! রাগ কর না প্লিজ ! আমি আসলে তোমাকে এখন আশা করি নি ! আমি তো ভেবেছিলাম যে তুমি হয়তো আমাকে আর ফোনই দিবে না !
-আমিও তাই চাইছিলাম ! আজকে বিকেল বেলা যখন চলে এলাম আমি ভেবেছিলাম তোমাকে আর ফোন দিবো না !
-এতো জলদি দিলে ?
-খুব মজা লাগছে তোমার ?
-না না কি বল !
তারপরই কিছু সময় কোন কথা না ! কিছু সময়ে পরেই আনামিকা বলল
-তোমার মন ভাল ?
-আমার মনের কথা থাক ! তোমার মন ভাল ? আসলে আমি তোমাকে কিভাবে বলব ! তুমি তো আমার অবস্থা জানো তো ? আমি কিভাবে.....
-আচ্ছা বাদ দাও ! কই তুমি ? বাইরে না বাসায় ?
-আরে এতো রাতে কি কেউ ভদ্রলোকের ছেলেরা বাইরে থাকে ? বল ?
-হুম । বুঝলাম । তা তোমার পাশের ঐ দুজন কে ? খুব তো দেখি গল্প জুড়ে দিয়েছো !
আমি কি বলব ঠিক খুজে পেলাম না ! আনামিকা কে বারান্দায় দেখলাম ! আমার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়লো !
সোলাইমান মিয়া আমার পাশেই ছিল ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-এই বাড়ির আফা ?
-হুম !
-আপনে করছেন কি ?
-কেন ?
-হায় হায় ! আপনে জানেন এই বাড়িয়ে কেডা থাকে ? এই বাড়ির মালিকের কত টেকা ? আর আপনে কি করছেন ?
আমি হাসলাম কেবল ! অনামিকা তখনও বারান্দায় দাড়িয়ে ! ফোনে বলল
-কি বলে তোমার পাশে জন !
-তোমার আব্বার অনেক টাকা তাই ! আমি তোমাকে বিয়ে না করে ভুল করেছি সেটা !
-কেন ? তোমার মনে হচ্ছে না যে তুমি ভুল করেছো ?
-হুম মনে হচ্ছে !
-তাহলে ? করবে বিয়ে আমাকে ?
-করবো তো ! তোমাকে ছাড়া আর কাকে বিয়ে করবো বল ?
-সত্যি তো ! একদম সত্যি !
-আচ্ছা আমি এখন আসবো তোমার এখানে !
-আরে মাথা খারাপ নাকি ? তোমার বাবা জানলে উপায় আছে !
-সেটা তোমার চিন্তা করা লাগবে না ! আমি এখন তোমার ওখানে আসবো ফুটপাতে বসে চা তোমার সাথে ! ঠিক আছে ! আমি আসছি !
-আরে শুনো ...... আরে..
-বল !
-হাতে করে ১০০ টাকা নিয়ে এসে তো ! পকেটে টাকা নেই চা সিগারেট খেয়ে ফেলেছি ! এখন বিল দিতে পারছি না !
অনামিকা ফোন রেখে দিল !
আমি ফোন রেখে সেলিম মিয়ার দিকে তাকালম !
-কি ? আফা আইতাছে ?
-হুম !
ঠিক মিনিট সাতেকের মাথায় অনামিকা গেট দিয়ে বেরিয়ে এল । সোলাইমান মিয়া আমার পাশ থেকে দুরে সরে গিয়ে বসলো ! চাওয়ালা বলল
-চা দিতাম ?
-হুম ! আরও চার কাপ হয়ে যাক !
অনামিকা আমার পাশে বসে বসে চায়ে চুমুক দিচ্ছে আর ওদের বাসার দিকে তাকিয়ে আছে । এখনও আমার হাত ধরে নি তবে খুব শীঘ্রই আমার হাট ধরবে বলে আমি আশা করছি ! আমাদের থেকে একটু দুরে সোলাইমান মিয়া আর চাওয়ালা বসে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে । মাঝে মাঝে নিজেদের মাঝে কি যেন কথা বলছে ! মুখের ভাব দেখে মনে হচ্ছে কোন একটা বিষয় নিয়ে তারা খুব চিন্তিত ! অনামিকা চা রেখে আমার হাত ধরলো !
সোডিয়াম আলোতেও ওর হাতের মেহেদীর রংটা বোঝা যাচ্ছে বেশ ভাল করেই । প্রত্যেকবার বিয়ের করার ভুত মাথায় আসলেই ওখুব যত্ন করে হাতে মেহেদী দেয় ! আমি মেহেদী রাঙ্গা হাত পছন্দ করি তাই !
আমি উল্টে পাল্টে ওর হাত টা দেখতে লাগলাম ! অনামিকা বলল
-একটা কথা বলবে ?
-হুম !
-তুমি প্রত্যেকবারই এখানে আসতে তাই না ? আমাকে মানা করার পর এখানে এসে আমার জানলার দিকে তাকিয়ে থাকতে ! যতক্ষন আমার ঘরের লাইট অফ না হয় ?
আমি কথার জবাব না দিয়ে ওর হাতের দিকেই তাকিয়ে রইলাম ! মেহেদীর ডিজাইন টা বেশ চমৎকার হয়েছে । নিশ্চয় ইউটিউব দেখে দেখে শিখেছে !
অনামিকা বলল
-লাইট বন্ধ করার পরে তুমি চলে যেতে । কোথায় যেতে ? মেসে ?
-না !
-তাহলে !
-হাটাহাটি করতাম ! বিসন্ন সময়ে রাতে ঘুম আসতো না ! তোমার মুখটা কেন জানি বারবার মনে পড়তো বেশি ! শুয়ে থাকলে সেই অস্তিরতা বাড়তো বেশি ! মাঝে মাঝে আমার কি মনে হয় জানো ?
-কি ?
কিছু বলতে গিয়েও বললাম না ! চুপ করে রইলাম । তাকিয়ে দেখি অনামিকার চোখে পানি টলমল করছে । চাদের আলোতে মনে হচ্ছে যেন কোন অপ্সরী দীঘির মত চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । সেই চোখে এক রাশ ভালবাসা আমার জন্য ! এখনই টুপ করে হল গড়িয়ে পড়বে ! হঠাৎই ইচ্ছে হল সব বাস্তবতার শিকল ছিড়ে ফেলে ওকে বলি চল এখনই তোমাকে বিয়ে করবো ! আজকে কেউ আমাকে আটকাতে পারবে না ! আমি কালকের কথা চিন্তা করবো না ! চিন্তা করবো কাল কোথায় নিয়ে তোমাকে উঠবো কি খায়াবো ! কেবল আজকের কথা চিন্তা করবো ! আজকে আমাদের সংসার হবে !
অনামিকা বলল
-কি ভাবছো ? বিয়ে করবো আমাকে ?
-করবো !
-সত্যি তো !
-হুম !
-সোলাইমান সাহেব !
সোলাইমান মিয়া বলে উঠলো
-জে আফা !
-শুনলেন তো ! কি বলল !
-জে ! আপনারা সাক্ষী থাকলেন !
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আজকে আমাদের বাসার সব গুলো লাইট এখনও জ্বলছে । তোমার কৌতুহল হচ্ছে না ?
-আরে হ্যা তো ! আমি সেই কখন থেকে ভাবছি ! কেন বল তো !
অনামিকা হাসলো ! চোখের পানি ততক্ষনে মুছে ফেলেছে । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-এতোক্ষন আমি বাবার সাথে আর্গিউ করছিলাম !
-কি বিষয়ে ?
-তোমার আমার বিয়ে বিষয়ে !
-কি !
-হুম !
তারপর আমার দিকে রহস্যময় চোখে তাকিয়ে থেকে তারপর বলল
-এখনই তোমার সাথে আমার বিয়ে হবে ! বাবা কাজীকে খবর দিয়েছে । অল্প কিছু ক্ষনের ভেতরেই তিনি চলে আসবে !
-মানে কি ! কি বলছো এসব ! দেখো এরকম ভাবে হয় না তো !
-আজকে হবে ! আজকে তুমি আমাকে মানা করতে পারবে না ! কেন বল তো ?
-কেন ?
-ঠিক যে করনে বাবা রাজি হয়েছে তুমি হবে !
আমি অনামিকার কন্ঠের দৃঢ়তা দেখে সত্যি একটু সংকিত বোধ করলাম ! এই মেয়ে তার বাবাকে এমন কি বলেছে !
অনামিকা জামার পকেট থেকে একটা সিসি বের করলো ! আমাকে দেখিয়ে বলল
-এটা কি জানো ?
-কি !
-পটাশিয়াম সায়ানাইড !
খাইছে আমারে ! এই মেয়ে করছে কি !
-বাবা এটা দেখে আর কিছু বলে নি । সোজা কাজীকে ফোন করেছে । কাজী আসলে তুমি আমার সাথে আমাদের বাড়িতে ঢুকবে ! যদি না ঢুকো তাহলে .....।
তাহলে কি হবে সেটা আমার বলে দিতে হল না ! তাকিয়ে দেখি সোলাইমান সাহেব আর চাওয়ালা আমাদের দিকে গভীর মনযোগ দিয়ে তাকিয়ে আছে । কি হবে সেটার অপেক্ষায় আছে তারা !
আমি বললাম
-বিয়ে তো সাক্ষী লাগে ! আমার সাথে তো কেউ নেই !
-সাক্ষী লাগবে না !
-আরে তা কি করে হয় ! একবারই তো বিয়ে হয় !
আমি আরও কিছু বলতে যাবো সোলাইমান মিয়া বলল
-আফা আমি ভাইজানের দেশের লোক ! আমি সাক্ষী হমু !
অনামিকা বলল
-সি ! প্রব্লেম সলভ !
আমি তখনও অনামিকার হাত ধরে রেখেছি ! এবার সত্যি সত্যিই মনে হচ্ছে বিয়েটা হয়ে যাবে ! কোন ভাবেই আটকানো যাবে না !
মিনিট পাঁচেক পরেই দেখলাম একটা কালো রংয়ের গাড়ী ঢুকছে অনামিকাদের বাড়িতে ! অনামিকা উঠে দাড়াতে দাড়াতে বলল
-আমি ভেতরে যাচ্ছি ! ঠিক ৩০ মিনিট পরে তুমি আসবে ! ঠিক আছে ! আর যদি না আসো তাহলে ৪০ মিনিট পার হওয়ার সাথে সাথে আমি ......।
-ঠিক আছে বাবা আমি আসছি ! আর বলতে হবে না !
অনামিকা চলে গেল ! চাওয়ালা আমাকে আরও এক কাপ চা দিল । আমি চায়ে চুমুক দিতে দিতে সোলাইমান মিয়া বলল
-ভাইজান আপনে এইখানে বসেন ! আমি যামু আর আমু !
-কোথায় যাচ্ছেন !
-আরে বিয়াতে যাইতেছি । একটা প্রস্তুতির ব্যাপার আছে না ! এই গার্ডের পোষাক পরে কি বিয়াতে যাওন যায় নাকি ! জামাডা বদলাইয়া আসি !
-আচ্ছা আসেন !
চাওয়ালাও বলল
-তাইলে আমিও যাই ! বদলাইয়া আসি কি বলেন ! জিনিস পাত্তি এইখানেি থাকলো ! আমি যামু আর আমু !
-যান !
দুজনেই বলতে গেলে দৌড়ে চলে গেল ! আমি চায়ে চুমুক দিতে লাগলাম ! সত্যি সত্যি তাহলে বিয়ে হতে যাচ্ছে আজকে !!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৩