গল্প এক
-না কাজল দিবো না ! লেপ্টে যাবে, আপনি জানেন না ?
-যাক ! তবুও !
ফাইযা কিছু সময় চুপ করে রইলো । ফোনের ওপাশ থেকেও কোন আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না ! ফাইযা বলল
-আপনি কেন এসব করছেন ?
-জানো না তুমি ?
-আমি আপনাকে ভালবাসি না !
-আমি জানি !
-তাহলে ? হোয়াটস দ্য পয়েন্ট ? আমাকে নিয়ে চিন্তা করার মানুষ আছে । আপনাকে না করলেও চলবে !
-আমি জানি ! তবুও ! প্লিজ !
-আমি আসবো না ! আপনি ফোন রেখে দিন !
অপুকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ফাইযা ফোন রেখে দিল । ফোন রাখার পরে আবার হুহু করে কেঁদে উঠলো ।
কি আশ্চর্য মানুষের জীবনটা । যে ছেলেটাকে সে নিজের প্রানের চেয়েও বেশি ভালবাসে সেই ইমন তাকে একবার ফোন করেই দেখে না । সে বেঁচে না নাকি মরে গেছে তাতে তার কোন কিছু যায় আসে না ! আর যাকে সে ভালবাসে না সেই ছেলেটা ওর জন্য কি না করে ! এমন কেন হয় ?
আজকেও কান্নার আরেকটা কারন রয়েছে । সকাল বেলা ফাইযার মন টা ভালই ছিল । ইমনের সাথে দেখা হওয়ার কথা ছিল । কাল রাতে অনেক কষ্টে ইমন কে রাজি করিয়েছিল । কিন্তু একটু আগে আবারও ওর সাথে যাচ্ছে তাই ব্যব হার করেছে ইমন । বলে দিয়েছে ফাইযা যেন ওকে আর ফোন না করে । তার মুখ সে আর দেখতে চায় না !
এই সব কথা ফাইযা কাউকে বলতে পারে না ! মাঝে মাঝে যখন খুব কাঁদতে ইচ্ছে করে তখন সে অপুকে ফোন দেয় ! ফোন দিয়ে কাঁদে । ছেলেটা চুপচাপ শুনে যায় ! ওকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করে ।
মাঝে মাঝে খুব মন খারাপের দিনে ওর সাথে দেখাও করে ! ওকে হাসানোর চেষ্টা করে । ফাইযার খারাপ লাগে না ! ছেলেটা এমন কেন সেটাও বুঝতে পারে কিন্তু ফাইযা চুপ থাকে ! কেন থাকে সে টা ওর কাছে নিশ্চিত না !
অনেক টা সময় পর ফাইযার কান্না থামলো ! চোখ ধুয়ে এসে চোখে যত্ন করে কাজল দিলো । পায়ে নুপুর পরলো ! অপুর পছন্দের পোসাকটাই পরলো বেছে বেছে । যতবার অপুর সাথে দেখা করতে গিয়েছে ততবারই সে এই পোষাক টাই পরে গিয়েছে । অপু চুড়িদাড় খুব পছন্দ করে । তার ভাষ্যমতে চুড়িদাড়ে নাকি ফাইযাকে অসম্ভব সুন্দর লাগে !
একে বারে তৈরি হয়ে যখন ফোন দিতে যাবে তখনই অপুর ফোন এসে হাজির !
-কি রেডি ?
-আপনি কিভাবে জানেন যে আমি রেডি হচ্ছি ?
-আমি জানি ! আই ক্যান ফিল !
-আমি সত্যি মাঝে মাঝে অবাক হই ! আর আফসোস হয় কেন আপনার সাথে আমার আরও আগে দেখা হয় নি ! তাহলে তো জীবনের একটা খারাপ অধ্যায় কোন দিন শুরু হতই না !
-তুমি চাইলে অধ্যায়টা শেষ হতে পারে !
ফাইযা কিছুটা সময় চুপ করে রইলো ! কি বলবে ঠিক ভেবে পাচ্ছে না !
ওপাশ থেকে অপু বলল
-আচ্ছা এই প্রসঙ্গে আমরা পরে কথা বলি ! আমি তোমার বাসার নিচে চলে এসেছি ! নামো !
-নামছি !
সিড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় ফাইযার মনে অদ্ভুদ কিছু কথা মনে হচ্ছিলো ! নিজের মন কে শক্ত করতে চাইলো সে ! কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাকে । আজকেই ! ভাল থাকা বা না থাকা তার নিজের কাছে ! নিজের মনের কাছে !
গল্প দুই
আমি কোন কথা না বলে কেবল ফাইযার দিকে কিছু সময় ধরে তাকিয়ে রইলাম । এই মেয়েটা আর বড় হল না ছোটও রয়ে গেল । অন্তত কথা বার্তা শুনে তো তাই মনে হয় ! এতো বড় হয়ে গেছে কিন্তু কথা বার্তা এখনও বাচ্চাদের মতই রয়ে গেল । আমি আবারও অবাক হয়ে বললাম
-এখন বাজে রাত দুইটা ! তুমি এখন আমাকে গোছল করতে বলতেছো কেন ?
-আমার গরম লাগতেছে ।
-ভাল ! গরম পরেছে গরম তো লাগবেই । তা তোমার গরম লাগছে তুমি গোসল করবে আমি কেন ?
-শুনো বেশি বুঝবা না ! যা বলছি তাই কর !
এই বলে তোয়ালে টা আমার দিকে বাড়িয়ে দিল ! যাও গোসল করে এস !
অবশ্য একেবারে খারাপ কিছু বলে নি । আগে একটা সময় ছিল যখন আমার শীত বেশি ছিল আর গরম কম । কিন্তু এখন প্রচুর গরম লাগে । যেই আমি ঘামতাম না একদমই এখন একটু গরমেই ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে পড়ি ।
আজকে গরম পড়েছেও তেমন । ফ্যানে তো কাজই হচ্ছে না ! মনে হচ্ছে আমি যেন এমন একটা ঘরে শুয়ে আছি যার আসে পাশে আগুন জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে ।
যখন গোসল করে বের হলাম দেখি ফাইযা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে কি যেন দেখছে । এরকম টা মাঝে মাঝেই ও করে । এর আগেও দেখেছি । হঠাৎ হঠাৎ কোথায় যেন হারিয়ে যায় ! আমি বললাম
-কি দেখো !
ও চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকালো । তারপর হাসলো ! ওর হাসির সব থেকে বড় গুন টা হল মানুষ তো কেবল মুখ দিয়ে হাসে আর ও হাসে চোখ দিয়ে ! ফাইযার চোখ গুলো এমনিতেই একটু বড় বড় ! সেই হাসিটা ফুটে ওঠে আরও পরিস্কার ভাবে ! বলল
-ভাল লাগছে ?
-হুম !
-কেমন হাঁসফাঁস করছিলে গরমে ! কতবার বলেছি একটা এসি কেন, তা তো শুনবা না !
-আচ্ছা বাবা কিনবো ! সামনের বার ! এসো ঘুমানো যাব !
-এখনও মাথা মুছা হয় নি ভাল করে !
-হয়েছে । আর কত মুছবো !
-আবার ? শুনো তোমাকে না বলেছি কথার পিঠে কথা বলবা না ! এই ভেজা মাথা নিয়ে শুলে জ্বর চলে আসবে তখন ঝামেলা হবে আমার ! আমাকে ঝামেলায় ফেলতে খুব ভাল লাগে, তাই না ?
আমি কিছু না বলে হাসলাম কেবল !
-এদিকে এসো !
এর পর ফাইযা নিজে তোয়ালেটা নিয়ে আমার মাথা মুছে দিয়ে লাগলো ! যখন মনে হল আমার মাথায় আর পানি নেই তখন বলল
-এবার শুয়ে পড় ! আর নড়াচড়া করবা না !
আমি মাহারানীর হুকুম মত শুয়ে পড়লাম ! লাইট অফ করে দিতেই ফাইযা আমাকে জাপটে ধরে শুলো ! তারপর খুব মৃদু স্ব রে বলল
-আমি তোমাকে অনেক জ্বালাতন দেই, না ?
-হুম ! অনেক !
-কি !! সত্যি দেই ?
-হুম ! সত্যি তো !
-বেশ করি ! আরও দিবো ! দিয়ে দিয়ে একেবারে মেরেই ফেলবো !
আমাকে আরও জোড়ে জড়িয়ে ধরলো ! ফাইযার এই স্বভাব টা সেই ছোট বেলা থেকেই । কাউকে জড়িয়ে না ধরলে নাকি ওর ঘুম আসে না ! আগে ওর মাকে জড়িয়ে ঘুমাতো এখন আমি !
আজকে গরম পড়াতে আমাকে জড়িয়ে ধরতে মনে হয় ওর একটু দ্বিধা হচ্ছিলো ! ও জানে আমার গরম বেশি ! তাই আমাকে গোসল করে আসতে বলল যাতে আমার কষ্ট না হয় !
বললাম
-সেই মরনেই আমার সুখ গো সখি ! তুমি কি জানো না !
গল্প তিন
বলতে গেলে ক্লাসের সবার চোখে একে বারে আমার দিকে ঘুরে গেল । এমন করে সবাই আমার দিকে তাকাতে লাগলো আমি একটু ভরকে গেলাম । আসলে এমন ভাবে ঘটনা আমার দিকে টার্ন নিবে ভাবতে পারি নাই !
বুকের ভেতরে ধকধকটা টের পাচ্ছিলাম খুব ভাল ভাবেই । বুঝতে পারছিলাম যে কিছু একটা ঘটতে চলেছে । মিমিও ততক্ষনে আমার দিকে তাকিয়ে আছে অন্য সবার মত ! সেই দুষ্টামীর ভরা হাসি ওর চোখে !
আল্লাহ মেয়েদের মাথার ভেতরে এতো প্যাঁচ কেনু ?
----
----
ভার্সিটির প্রথম ক্লাসে প্রত্যেকটা ছেলেরই কেবল এই লক্ষ্য থাকে এইটা দেখার যে ক্লাসে মোট কয়টা সুন্দরী মেয়ে আছে । আমরাও ঠিক সেইটা কাজটাই করছিলাম । যুক্তি সংগত কারনেই মিমির দিকে প্রথমে নজর পরলো না কারো ।
মিমিকে আমি দেখলাম আরও কয়েকটা ক্লাস পরে । ক্লাস পার্ফমেন্সের জন্য স্যার যখন দুজন দুজন করে গ্রুপ করে দিচ্ছিলো তখন ওর আমার রোল নাম্বার এক সাথে করে জুড়ে দেওয়া হল ! পরপর রোল নাম্বার হওয়ার জন্য এমন টা হচ্ছিলো ! অবাক হয়ে দেখলাম ক্লাসের সব থেকে সুদর্শন ছেলে রোমেল কিভাবে যেন সব থেকে সুন্দর মেয়েটার সাথে গ্রুপ করে ফেলেছে স্যারের কথা বলে । তখন কেন জানি ওকে খুব হিংসে হচ্ছিলো ! ক্লাসের অন্য সবাইও রোমেল কে খুব হিংসের চোখে দেখছিলো !
কেনই বা দেখবে না ! ভার্সিটির নতুন জীবনের শুরুতেই শ্লা এমন একটা সুযোগ পেয়ে গেল ! আর আমরা চেয়ে চেয়ে দেখলাম কেবল ! কিন্তু কি আর করা ! সেই দিনই মিমিকে দেখলাম ভাল করে ।
পায়ে মোজা পরা একটা মেয়ে ! সবার আগে কেবল এই জিনিসটাই আমার চোখে পড়লো ! এতো বড় হয়ে কেউ পায়ে মোজা পরে ! মাথাটা একেবারে স্কার্ফ দিয়ে ঢাকা । কেবল মুখটাই দেখা যাচ্ছে । চোখে মোটা চশমা ! গায়ের রং সত্যি বলতে আমার থেকেও ময়লা ! তবে চশমার ফাঁক ফিয়েও মিমির চোখ টা দেখা যাচ্ছিলো ।
আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আমাদের এক সাথে কাজ করতে হবে !
-হুম ! তাই তো !
-আমি কিন্তু ফিল্ড সার্ভে করতে পারবো না ! এটা তুমি দেখবে । লেখালেখি সব আমি করবো ! ঠিক আছে সেটা ?
আমি রাজি হয়ে গেলাম ! ফিল্ড সার্ভে থেকে লেখা লেখিই ঝামেলা বেশি ! মেয়েটা যখন নিজের থেকেই কাজটা করতে যাচ্ছে তখন খারাপ কি !
মিমির সাথে পরিচিত হলাম ! প্রথম কয়দিন লক্ষ্য না করলেও পরে লক্ষ্য করলাম যে মেয়েটা ঠিক মত কারো সাথে কথা বলে না ! কিংবা ক্লাসের অন্য সবাই ওকে এড়িয়ে চলে ।
কেন ?
দেখতে কালো বলে ?
মেয়ে গুলার সাথে টুকটাক মেশে কিন্তু কোন ছেলের সাথে ঠিক মত মেশে না ! কিংবা একটু বেশি কনজার্ভেটিভ পরিবারের মেয়ে । যাই হোক আস্তে ক্লাসে রকাজে আমার একটু বসতে হল । কথা বার্তা শুরু হল !
প্রথম এসাইনমেন্টে আমাদের গ্রুপটা সবার থেকে বেশি নাম্বার পেল । আর সব থেকে কম পেল রোমেল দের গ্রুপ ! মনে মনে হাসলাম ! কেবল সৌন্দর্য্য দিয়ে কি আর পেটের ভাত হজম হয় !
এরপর থেকেই মিমির সাথে আসলেই আমার সম্পর্ক ভাল হতে শুরু করলো । ক্লাসে পরেও অর সাথে দেখা করতে শুরু করলাম ! ও যদিও বলেছিল ফিল্ড-ওয়ার্ক ও করতে পাবে না তবুও আমার সাথে ও সাথে মাঝে মাঝে যেত সার্ভে করতে ।
একদিন এরকম একটা সার্ভে শেষ করে ফিরছি । ওকে বাসায় পৌছে দিয়ে আমি হলে ফেরৎ যাবো । ও আসলে হলে থাকতো না । ধানমন্ডির কোথায় যেন থাকতো ! বাংলামোটরে এসে হঠাৎই বৃষ্টি নেমে এল খুব । যদিও একটু একটু শীত পরা শুরু করেছে কিন্তু ঢাকা শহরে আবার শীত বলে কিছু আছে নাকি ! এই সময়ে বৃষ্টি নামার কথা না অবশ্য ! কোন মতে একটা দোকানের নিচে দাড়ালাম ! কিন্তু আমার মন পরে ছিল বৃষ্টির ভেতরে । আমি মিমিকে বললাম
-চল বৃষ্টিতে ভিজি !
-কি ! না !
-আরে চল না ! কিছু হবে না !
-না !
-প্লিজ চল ! দেখ এতো চমৎকার বৃষ্টি আর পাওয়া যাবে না !
মিমিকে কিছুতেই রাজি করানো গেল না ! শেষে না পেরে আমিই একাই ভিজতে লাগলাম ! মিমি আমার বৃষ্টিতে ভেজার দিকে তাকিয়ে রইলো ! ওর চোখ দেখেই মনে হচ্ছিলো ওর নিজেরও ভিজতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কোন কারনে পারছে না ।
রাতে আমাকে ফোন দিয়ে সরি বলল ! আমি খানিকটা অবাক হয়ে বললাম
-সরি কেন ?
-না মানে তুমি এতো করে বললে যে ! আসলে আমারও খুব ইচ্ছে করছিলো তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজি !
-তাহলে কেন ভিজলে না ?
কিছু সময় চুপ থেকে মিমি বলল
-একদিন তোমার সাথে আমি ঠিক ঠিক বৃষ্টিতে ভিজবো কথা দিলাম । আর আজকে কেন ভিজি নি এটাও একদিন তুমি বুঝতে পারবে !
দিন দিন মিমির সাথে মেলামেশা বাড়তে থাকলো । সেই সাথে কেন জানি মনে হল আমি মেয়েটার প্রতি একটু দুর্বল হয়ে পরছি ! বিশেষ করে ওর চোখের প্রতি ! চশমা খুলে মাঝে মাঝে ও আমার সাথে গল্প করতো ! তখন ওর চোখ দুটো আমার কাছে অদ্ভুদ লাগতো ! কেমন একটা ঘোর লাগা ! বড় বেশি আপন মনে হত ।
শীতের ছুটির আগে তাই ওকে কথাটা বলেই ফেললাম ! বললাম
-তোমাকে পছন্দ করি !
-কিন্তু তোমার মা তো করবে না !
কথায় কথায় ওকে একদিন বলেছিলাম যে আমার ভাবী দেখতে খুব সুন্দর । মায়ের তাই ইচ্ছে ছোট বউও তিনি ফর্সা আর সুন্দর নিবেন ! মিমি ঠিক সেই কথা মনে রেখেছে । ভুলে যায় নি !
আমি বললাম
-মা তো আর বিয়ে কবে না ! আমি করবো !
-ব্যাপার টা এতো সহজ না !
-তুমি চাইলেও সহজ ! দেখ আমি এসব ভাবতে চাচ্ছি না ! আমি কেবল জানি তোমার সাথে থাকলে আমার ভাল লাগে ! ব্যস । মানষিক ভাবে শান্তিতে থাকি ! বুঝেছো ! যদি কেবল চেহারা দেখতাম তাহলে তো তোমার সাথে মিশতাম না !
-তা হয় না ! আমার সাথে মেশা বন্ধ করে দাও দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে !
-কিন্তু ....
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মিমি উল্টো দিকে হাটা দিল ! আমি ভাবতেই পারলাম না মিমি আমাকে রিজেক্ট করে দিয়ে চলে গেল ! আমি একে বারে নিশ্চিত ছিলাম যে মিমি আমার প্রোপোজে রাজি হয়ে যাবেই । কারন ওর আচরনেও আমার খানিকটা মনে হত যে ও নিজেও আমাকে পছন্দ করে ! কিন্তু এভাবে ছ্যাকা খেয়ে যাবো ভাবি নি !
পরদিনই শীতের ছুটি হয়ে গেল । ১০ দিন বলতে গেলে আমি মিমিকে একটা বারো ফোন দিলাম না ! ও নিজেও দিলো না ! প্রথম প্রথম একটু খারাপ লাগলেও ঠিক হয়ে গেল । ছুটির পরে আবার ক্লাস শুরু হল ।
প্রথম দিন ক্লাসে গিয়ে দেখি আমাদের ক্লাসের এক কোনে একটা সুন্দর মত মেয়ে বসে আছে । রোমেল আর ওর সাঙ্গ পাঙ্গরা মেয়েটার আসে পাশে ঘোরাঘুরি করছে । অন্য ক্লাসের মেয়ে হবে হয়তো , কারো সাথে এখানে এসেছে !
আমার চোখে সারা ক্লাস রুমের দিকে মিমিকে খুজতে লাগলো । কিন্তু কোথাও তার দেখা পেলাম না ।
মেয়েটা কি তাহলে আসে নাই এখনও ছুটি শেষ করে ? ফোন দিবো একবার ?
নাহ ! কি দরকার আমার এতো ! না আসলে না আসবে !
ঠিক তখনই আমি মিমির গলার আওয়াজ পেলাম । চোখ গেল আবারও সেই কর্ণারে । সুন্দর মত মেয়েটার দিকে । ঠিক তখনই মেয়েটা আমার দিকে ঘুরে তাকালো !
বলা চলে ধাক্কাটা তখনই খেলাম !
আরে এই তো মিমি !
কিন্তু এই মেয়ে তো .....
আমার মুখের কথা আটকে গেল !
এই মেয়ে এতো ফর্সা হল কিভাবে !
মিমির গায়ের রং একে বারে ফর্সা হয়ে গেছে । তাও আবার যেন তেন ফর্সা না, দুধ ফর্সা ! আগের মত এতো স্কার্ফ পরে নাই । একটা সেলোয়ার কামিজ পরে এসেছে । উপরে সাদা রংয়ের সোয়েটার । পায়ে মোজাও নেই ! আমি কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম মিমির দিকে । আমার তখনও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে আসলেই এই সেই মিমি !
মিমি আমার দিকে ফিরে তাকালো । ওর চোখে একটা দুষ্টামীর হাসি দেখতে পেলাম । সেখানে ওর চোখ যেন স্পষ্টই বলছে কি জনাব অবাক হয়েছেন ?
কেবল আমি না ক্লাসের যে দেখছে সেই অবাক হচ্ছে । অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে রয়েছে মিমির দিকে । মিমি কেবল হাসছে । কিছু বলছে না ! এমন কি স্যারেরাও অবাক হয়েছে ।
আরও কদিন পরে জানতে পারলাম যে মিমি ইচ্ছে করেই নাকি গায়ে মেকাপ করে আসতো আর নিজেক কালো করে রাখতো । কেন করতো কে জানে ! এই জন্যই সেদিন আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে চায় নি ।
তারপর থেকে মিমির জীবন থেকে আমি যেন গায়েব হয়ে গেলাম । মিমি ক্লাসের অনেক ছেলের সাথেই ক্যাফেটরিয়াতে দেখা যেতে লাগলো ! আমি চুপচাপ দেখতে লাগলাম আর আপন মনেই জ্বলে পুড়ে মরতে লাগলাম !
ঠিক সেই সময়ই কানে একটা খবর এল । আসছে প্রোপোজ ডে তে নাকি রোমেল সবার সামনেই মিমিকে প্রোপোজ করতে যাচ্ছে ।
আমাদের প্রথম সেমিস্টার শেষ হওয়া উপলক্ষ্য সেদিন নাকি কি একটা অনুষ্ঠান হবে । সব কিছু নাকি রোমেল দের গ্রুপই করছে । প্রধান উদ্দেশ্য টা হচ্ছে মিমিকে প্রোপোজ করা !
একবার ভাবলাম সেদিন আসবো না ! কিন্তু খনিকটা কৌতুহল থেকে না এসে পারলাম না ! হাজার হলেও মেয়েটাকে এক সময় আমি বেশ পছন্দ করতাম ! চার/পাঁচ মাস মিমির সাথে আমার কত ভাল সময় কেটেছে !
প্রোপজডের দিন আমি তাই ক্লাস রুমের সবার শেষে বসে ছিলাম । অনুষ্ঠান শুরু হল । নাচ গান আবৃতি সবই হল ! কিন্তু আমার এসব কিছুই ভাল লাগছিলো না ! আমার চোখ বারবার কেবল চলে যাচ্ছিলো মিমির দিকে । ওকে দেখে মনে হল ও খুব মজে আসে । কি হতে যাচ্ছে এটা যেমন আমার কানে গেছে তেমনি ওর কানেও নিশ্চয়ই গেছে । এই জন্যই কি এতো খুশি !
সবার শেষে রোমেল স্টেজে উঠলো । তারপর ডাক দিল মিমিকে । মিমি প্রথমে যেতে না চাইলো শেষে সবার অনুরোধে । রোমেল একেবারে ফিল্মি কায়দায় হাটু গেড়ে ওকে প্রোপোজ করে বসলো !
সবাই এখন চুপ করে আছে মিমির জবাব শোনার অপেক্ষায় ! মিমি আস্তে করে মাইক টা হাতে নিলো । কি যেন ভাবলো । তারপর বলল
-তুমি একটু দেরি করে ফেলেছো ?
-মেল যেন শক খেয়েছে এমন ভাবে উঠে দাড়ালো । তারপর বলল
-মানে ?
মিমি হেসে বলল
-মানে হচ্ছে আমাকে অলরেডি একজন প্রোপোজ করে বসে আছে আর আমি তাতে রাজিও হয়ে বসে আছি !
ঠিক তখনই বলতে গেলে ক্লাসের সবার চোখে একে বারে আমার দিকে ঘুরে গেল । এমন করে সবাই আমার দিকে তাকাতে লাগলো আমি একটু ভরকে গেলাম । আসলে এমন ভাবে ঘটনা আমার দিকে টার্ন নিবে ভাবতে পারি নাই !
বুকের ভেতরে ধকধক টা টের পাচ্ছিলাম খুব ভাল ভাবেই । বুঝতে পারছিলাম যে কিছু একটা ঘটতে চলেছে । মিমিও ততক্ষনে আমার দিকে তাকিয়ে আছে অন্য সবার মত !
আল্লাহ মেয়েদের মাথার ভেতরে এতো প্যাঁচ কেনু ?
এই মেয়ের মাথায় এতু প্যাঁচ কেনু ?
আমার কেন জানি সবার মত মনে হচ্ছে মিমি আমার কথাই বলছে ! একবার তো মনে হল মিমি সবার সামনে আমার নামটাই বলে ফেলবে কিন্তু বলল না !
মিমি আর কিছু না বলে কেবল স্টেজ থেকে নেমে এল ।
অনুষ্ঠান শেষে আস্তে আস্তে হাটছি মিমি পেছন থেকে এসে আমার পাশে পাশে হাটতে লাগলো ! তারপর বলল
-সবার এতো আগ্রহ তোমার আগ্রহ নেই জানার ?
-না !
-কেন ?
-কারন আমি জানি কে তোমাকে প্রোপোজ করেছে ?
-তা জানেন যখন জনাবের মন কেন খারাপ ?
-মন খারাপ না তো !
-তাহলে ? একা একা হাটছেন যে !
-হাটছি না অপেক্ষা করছি !
-কিসের ?
-বৃষ্টির জন্য ! একজন আমাকে বলেছিল আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবে । সেই একজন তো চলে এসেছে কিন্তু বৃষ্টি এখনও আসে নি !
মিমির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও হাসছে মৃদ্যু স্বরে ....। আরেকটু সরে এল আমার দিকে । সামনের দিকে হাটতে হাটতে আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে হল বৃষ্টি শুরু হতে এখনও অনেক বাকি ! এই মৌসুমে বৃষ্টি নামবে না !
সমস্যা নেই । অপেক্ষা করা যাবে !
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৩৪