অফিসে পা রাখতেই বড় ঘড়ির টার দিকে চোখ গেল আমার । ১১.১৪ বাজে ! দুই ঘন্টা ১৪ মিনিট লেট !
অন্য সময় হলে আমি একটু চিন্তিত হতাম কিন্তু আজকে ব্যাপার টা অন্য ! আজকে ব্যাপার টা অন্য বলেই হয়তো আমি যখনই দরজা দিয়ে ভেতরে পা রাখলাম, বলতে গেলে যারা ছিল আশেপাশে সবার চোখই আমার দিকে ফিরে গেল । সবাই আমার দিকে বিশেষ অর্থপূর্ণ চোখ তাকিয়ে আছে । অবশ্য এই তাকানোর পেছনে যথেষ্ঠ কারনও আছে ।
আমি সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য দিলাম না ! এতো চিন্তা করারও কিছু নেই । আমি ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে নিজের কেবিনের দিকে হেটে গেলাম । আজকে কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কার করার দরকার নেই । অবশ্য আমি আগেও যে খুব একটা করতাম, সেরকম কিছু না !
আজকেই যেখানে এই অফিসে শেষ দিন সেখানে একটু নিয়ম নীতি না মানলে কি যায় আসে । নিজের ডেস্কে বসতে না বসতেই পিয়ন এসে হাজির ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কেমুন আছেন স্যার ?
-ভাল ! তোমার কি খবর ?
-ভাল স্যার ! তয় আপনের জন্য মনডা ভালা না !
-সে কি কেন ? আমি আবার কি করলাম !
-কালকা আপনে ছোট মেম সাহেবরে ...
পিয়ন কথাটা শেষ করলো না ! আমিও যেন গত কালকের ঘটনায় হারিয়ে গেলাম !
ছোট মেম সাহেব !!
নুসাবা রহমান !
এমডি সাহেবের এক মাত্র মেয়ে !
বারবার মনে হচ্ছিলো যে আরও কয়েকটা দিন সামলে চললে হয়তো মেয়েটাকে পটানো যেত কিন্তু কালকে যা ঘটলো তাতে আর কোন আশা নেই । আজকেই সম্ভবত আমার টারমিনেশন লেটার চলে আসবে । এতোক্ষনে সম্ভবত সেটা টাইপ করাও হয়ে গেছে ।
প্রথম যেদিন এই কোম্পানীতে যোগ দেই সেদিনই নুসাবার সাথে আমার দেখা হয় ! ইন্টারভিউ বোর্ডে সে ছিল না তাই তাকে চেনার কথা না ! আমি অফিসের সবার সাথে পরিচিত হচ্ছি এমন সময় নুসাবা দিকে চোখ গেল আমার । ছেলেদের মত নিখুত ভাতে প্যান্ট আর শার্ট পড়া ! কালো রংয়ের প্যান্ট আর সাদা রংয়ের শার্ট । উপরে লেডিস কোর্ট ! আমার দিকে সরাসরি এসে বলল
-ইউ আর দ্য নিউ গাই ?
-ইস ! আই থিংক সো !
-হোয়ার ইজ ইয়োর টাই ?
আমার টাই পরতে কখনই ভাল লাগে না ! কেমন যেন গলার দড়ি পরেছি মনে হয় ! আমি বললাম
-আমি টাই পরি না !
-পরি না বললে চলবে না ! পরতে হবে ! এখানে সবাই পরে !
-আপনি তো পরেন নি !
আমার এই কথাটা বলার সাথে সাথে আশে পাশে লক্ষ্য করলাম সবাই কেমন যেন নিশ্চুপ হয়ে গেল । যেন আসন্ন কোন ঝড়ের জন্য সবাই অপেক্ষা করছে ! নুসাবাও যেন খানিকটা অবাক হয়েই আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । মুখে একটু বিশ্ময়ের আভা এসেই আবার চলে গেল ! সামলে নিয়ে বলল
-লিসেন, মাইন্ড ইয়োর টাঙ ! যে টুকু করতে বলা হবে ঠিক সেটুকুই করবেন !
-জি আচ্ছা ! আর কিছু ?
আমার কেন নুসাবা কে সেই দেখাতেই ভাল লেগে গেল ! কঠিন মুখের মেয়েটি চট করে ভাল লাগার কোন কারন খুজে পেলাম না অবশ্য ! এর পর থেকে প্রায়ই প্রতিদিনই নুসাবার সাথে আমার টুকটাক বিষয় নিয়ে লাগতে শুরু করলো ! আমার কাজ করার ধরন তার মোটেই পছন্দ না ! সব থেকে বেশি যে তার বাবার অফিসে যে কঠিন নিয়ম ছিল তার কিছু কিছু আমি ঠিক নিয়মিত ভাঙ্গতাম আর সে টা নিয়ে আমার উপর প্রতিদিন চিৎকার করতো ! আমার অবশ্য মজাই লাগতো ওর বকা শুনতে !
আমি আস্তে আস্তে আকারে ইঙ্গিতে বোঝাতে শুরু করলাম যে আমি তাকে পছন্দ করি ! এবং সে যতই আমার উপর চিৎকার করুক না কেন আমি তাতে কিছুই মনে করবো না ! কিন্তু ঝামেলা বাঁধলো কালকে ! আমি অফিসে আসার সময় ওর জন্য ফুল কিনে আনলাম কিছু ! তারপর সেটা পিয়নের হাত দিয়ে পাঠিয়ে দিলাম ওর ক্যাবিনে !
ভেবেছিলাম তখনই ডাক আসবে । আসলো না ! আসলো লাঞ্চের কিছু পরে ! আমি ওর ক্যাবিনে গিয়ে নক না করেই ঢুকে পড়লাম ! অবশ্য এটা প্রায়ই করতাম ! আজকে অবশ্য সে আমাকে কিছু বলল না ! আমি চেয়ারে বসতে বসতে বলল
-এটা আপনি কি শুরু করেছেন ?
-কি শুরু করেছি ?
-আপনি কি ভেবেছেন আপনাদের মত ছেলেদের আমি চিনি না ?
-আরে চেনেন নাকি ! তাহলে ভাল তো ! আমাকে আর নিজে থেকে নিজের সম্পর্কে কিছু বলা লাগবে না !
-শুনুন আপনাদের মত লোভে আর চালু ছেলেদের কে আমি খুব ভাল করে চিনি ! যেখানে দেখেছেন বড় লোকের মেয়ে সেখানে মুখ ঢুকিয়েছিয়েছেন ! ভেবেছেন কি আপনি ? এতো সহজ ! কি যোগ্যতা আছে আপনার ?
যোগ্যতা !
লোভী !
চালু
সিরিয়াসলী !
আর কোন শব্দ পেল না ! মেজাজ টা সত্যি সত্যিই খারাপ হয়ে গেল ! এতো দিন সহ্য করেছি । আজকে তার জন্য আমি পছন্দ করে ফুল নিয়ে এলাম আর এই মেয়ে কি বলছে লোভী !
আমি বলল
-কি বললে তুমি ?
তুমি বলার পরেই মনে হল কি করলাম ? আরে যা বলে ফেলেছি বলেছে । গলার আওয়াজটাও বেশ চড়া এতে আপনি বললে ঠিক মানাতো না ! আমি নিশ্চিত বাইরে অনেকেই আমার গলার আওয়াজ শুনেছে ! নুসাবা নিজেও খানিকটা চমকে গেল আমার কথা শুনে । এমন কি আমি নিজেও চমকে গেছি নিজের গলার আওয়াজ শুনে !
-কি ভাব কি তুমি নিজে ? কি আছে তোমার শুনে ? এই যে যে চেয়ারে তুমি বসে আছো সেটার কি নিজের যোগ্যতায় পেয়েছ ? পাও নি ! যা কিছু তোমার বাবা । তোমার কি আছে ? এতো দেমাগ কোথা থেকে আসে ? আগে নিজের জোরে কিছু করে দেখাও তারপর ভাব নিও ! আমাকে বলে যোগ্যতা !
এই বলে উঠে দাড়ালাম ! তারপর টেবিলের উপর সকালের কেনা ফুল গুলো পড়ে থাকতে দেখলাম । সেগুলো হাতে নিয়ে বললাম
-ইউ ডোন্ট ডিজার্ভ ইট !
যখন নুসাবার কেবিন থেকে বের হলাম তখন দেখি প্রত্যেকটা কেবিন থেকে মুখ বের করে এদিকে তাকিয়ে আছে ! কেবিনে আসার পর মনে হল গেসে এই চাকরি ! রাগের মাথায় কি করে আসলাম ! নতুন চাকরী তখনই খোজা শুরু করলাম । অফিসের কাজ বাদ দিয়ে বিডি জবসে সিভি দিতে শুরু করে দিলাম
পিয়ন তখনও আমার সামনেই দাড়িয়ে । আমি পিয়নের দিকে তাকিয়ে বললাম
-আরেক কাপ চা নিয়ে এস দেখি ! তুমি চা ভাল বানাও । আর হয়তো খাওয়া হবে না ! আর শুনো আসার সময় দেখে এসোতো নুসাবা এসেছে কি না !
আমার কথা শোনা মাত্র পিয়ন দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল । ফিরে এল কিছু সময় বাদেই । সম্ভবত চা আগে থেকেই বানানো ছিল । কেবল গিয়েছে আর নিয়ে এসেছে । আমি চায়ে চুমুক দিতে দিতে আরেকটু গা এলিয়ে বসলাম ! তারপর বলল
-কি এসেছে তোমাদের ম্যাডাম ?
-জে না স্যার ! কালকা আপনার সাথে বকা শুইনার একটু পরেই গেছে গা ! আর আহে নাই !
বকা !!
আমি বকেছি !
ঝাড়ি মেরেছি !
ব্যাপার টা নিজের কাছেই শুনতেই কেমন যেন ভাল লাগলো । এতোদিন মানুষ কেবল নিজের থেকে নিচের কাউকে ঝাড়ি দিত এখন আমি তাদের থেকে আলাদা ! আমার থেকে উপরের পোস্টের একজন কে সেই বকা দিয়েছি । ঝাড়ি শুনে সেই অফিসে আসা বন্ধ করে দিয়েছে !
হাহাহাহা !
পিয়ন চলে গেলে আমি চা খেতে খেতে আবারও বিডি জবসের ওয়েব সাইট দেখতে শুরু করলাম ! কি চাকরী করা যায় সেটা ভাবছি এমন সময় আবারও পিয়ন এসে হাজির !
-স্যার !
-হুম !
-বড় সাহেব আপনেরে বুলায় !
খাইছে ! বুঝলাম ডাক চলে এসেছে । চাকরীটা তাহলে সত্যি সত্যি চলে গেল ! এখন সমস্যা হচ্ছে বড় স্যার যদি আমাকে ঝাড়ি দেয় তাহলে তো সমস্যা ! চাকরী খাবে খাক তাই বলে ঝাড়ি দিবে ! অবশ্য দিতে পারে ! তার এক মাত্র মেয়েকে আমি যেই ঝাড়ি দিয়েছি ! সেটার অবশ্য একটা শোধ তুলতে হবে ! তবে আমি স্যার কে যতদুর চিনি তিনি বেশ রসিক মানুষ ! আমাকে বেশ পছন্দ করেন !
দরজা ঠেলে ঢুকলাম ! আমাকে দেখে এমডি স্যার একটু হাসলেন ! বললেন
-এসো ! তোমার সাথে কথা বলার জন্যই বসে আছি !
তারপর ইন্টারকমে দুইকাপ কফির অর্ডার দিলেন ! একবার ইচ্ছে হল বলি স্যার আমি একটু আগেই চা খেয়েছি এখন আর খাবো না ! আর চাকরী থেকে তাড়িয়ে দিবেন দেন চা কফির কি দরকার !
আমি এমডি স্যারের সামনে বসতে বসতে অপেক্ষা করছি তিনি আমাকে কি কি কথা বলবেন আর কিভাবে বললেন ! আধা মিনিটের ভেতরেই কফি এসে হাজির !
আমি কাপে চুমু দিতে দিতে ভাবছি কি বলবো আর কি শুনবো ! একবার মনে হল স্যার কে বলি যে স্যার আমার আসলে কাল মাথা একটু গরম ছিল তাই কি বলতে গিয়ে কি বলে ফেলেছি ! আপনি কিছু মনে করেন না ! ম্যাম কেও কিছু মনে রাখতে বলেন না !
আরেকবার মনে হল নাহ থাক এই কথা বলে নিজের ওজন কমানোর কি দরকার ! থাকুক যেমন টা চলতে চলুক ! যা হয় হবে !
হঠাৎই এমডি স্যার আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললেন । তারপর বললেন
-সত্যি তুমি ওকে এই কথা গুলো বলেছো ?
একটু অবাক না হয়ে পারলাম না । এমন হাসি তো দেওয়ার কথা না ! বরং আমাকে খানিকটা ধকম দেওয়ার কথা কিন্তু তার বদলে এমন মধুর কথা বলছে !
আমি একটু দ্বিধা নিয়ে বললাম
-জি স্যার !
এমডি স্যার আরও যেন হা হা হা করে হেসে ফেলল । অনেক টা সময় হাসার পরে হাসি থামিয়ে বলল
-সত্যি আমি বেশ অবাক হয়েছি যে আমার মেয়ে সাইজ করার মতও কেউ আছে জেনে !
সাইজ !
স্যার এই কি কথা বলছে ! এই ভাবে !
সাইজ !
এমডি স্যার যে এমন কথা বলতে পারে আমি সেটা ভাবতেও পারি নি !
-কি অবাক হচ্ছ ?
-জি স্যার !
-আরে বল না ! অফিসে আমি কেবল নামেই বস ! আমার মেয়ে কেবল আমাকে না বাড়ির সবাইকে দৌড়ের উপরে রাখে ! মাঝে মাঝে তো মনে হয় আমি নয় বরং সেই আমাদের বস !
আমি বললাম
-স্যার সে আমাকে চাকরী থেকে বের করে দিতে বলে নাই ?
-বলে নাই আবার । অবশ্যই বলছে ! কিন্তু আমি কি বলছি জানো ? বলছি ছেলে তো টেলেন্টেড ! আমাদের এখান থেকে চলে গেলে অন্য কোথায় চাকরী করবে ! কোন সমস্যা হবে না ! কিন্তু তোর হাতের বাইরে চলে যাবে ! তুই তখন ওকে কিছু করতে পারবি না ! কিন্তু যদি চাকরি না ছাড়ে তাহলে সে তোর আন্ডারে থাকবে তোর আওতায় মাঝে থাকবে ! তাই তোর উচিৎ হবে ওর চাকরী না খাওয়া ! আস্তে আস্তে জাল বিছাবী তারপর টান দিবি !
আমি এমডি স্যারের দিকে তাকিয়ে বললাম
-আপনি এই কথা বলেছেন ?
-হুম !
-নুশাবা মেনে নিয়েছে ?
-হুম ! মনে হচ্ছে ! আসলে আমি ওকে চিনি তো তোমাকে টাইট না দিয়ে সে তোমাকে ছাড়বে না !
-ও !
এমডি স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কেবল ও বলে লাভ নেই ! তোমার দিকে কঠিন ঝড় এগিয়ে আসছে ! যদি ঝড়ে হারিয়ে যাও তাহলে তো গেলেই ! কিন্তু যদি টিকে যেতে পারো তাহলে .......
-তাহলে ?
-রাজ্যসহ রাজকন্যা সব পাবে !
-রাজ্যের দরকার নেই ! কেবল রাজকন্যা হলেই চলবে !
এমডি স্যার আবারও হেসে ফেলল ! হাহা করে হাসতে হাসতে বলল
-তোমার ইচ্ছে !
আমি উঠে এলাম এমডি স্যার রুম থেকে । স্যার বলেছে ঝড় আসছে । আমাকে সেই ঝড় সাইভাইভ করে করতে হবে । রাজ্য সহ রাজকন্যা অপেক্ষা করতেছে তাহলে !
এরপর থেকে আসলেই বলতে গেলে আমার উপর ঝড় আসা শুরু করলো ! বলতে গেলে অফিসের যত রকমের প্যারার কাজ আছে সব এসে জমা হতে লাগলো আমাে টেবিলে !
একদিন দুপুরে কেবল লাঞ্চ খেতে বসেছি এমন সময় পিয়ন নিয়ে এল নুসাবার অর্ডার ! আমাকে এখনই যেতে হবে যাত্রবাড়ির অফিসে !
এই দুপুর বেলা এখনও ঠিক মত খাই নি গুলশান থেকে যাত্রবাড়ি !
ও মাই গড !
এই মেয়ে আমাকে শেষ করে ফেলবে !
আমি না খেয়েই উঠে গেলাম নুসাবার রুমে ! ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-মানুষের সহ্যের সীমা আছে !
নুসাবা হাসলো একটু !
-আছে । আমি জানি ।
-তাহলে ?
কোন কথা না বলে কেবল আমার দিকে অর্থপূর্ন চোখে তাকালো ! আমি কোন কথা না বলে বের হয়ে এলাম ! মনে মনে ভাবলাম যে অন্য পথ বের করতে হবে ।
দুই
একটা মেয়েকে ঘায়েল করার সব থেকে সব থেকে সহজ উপায় কি ?
এমন একটা প্রশ্ন কে জানি করেছিল একদিন । সহজ উপায় টা হল প্রথম কিছু দিন সেই মেয়েটার উপর খুব বেশি আগ্রহ দেখিয়ে তারপর তার দিক থেকে একে বারে মুখ ঘুরিয়ে ফেলা । এমন একটা ভাব দেখানো যেন তোমার জীবনে মেয়েটার কোন অস্তিত্ব নেই । দেখবে মেয়েটা মানষিক ভাবে এমনিতেই ঘায়েল হয়ে যাবে !
ঠিক এই কাজটাই করা শুরু করলাম ! পরের সপ্তাহ থেকে এমন একটা ভাব শুরু করলাম যেন আমি নুসাবাকে চিনিই না । তার সাথে যখনই দেখা হয় মুখে এমন একটা ভাব করে থাকি যেন মনে হয় কে এই নুসাবা, আমি তো চিনি না !! আরও কয়দিন নুসাবা খুব চেষ্টা করলো আমার উপর ঝড়ি মারার জন্য কিন্তু আমি ঠিক ঠিক সব কাজ করতে লাগলাম ! এমন কি ওর কথা মত টাই পরা শুরু করে দিলাম ! তারপর থেকে সে তার কাজ করতে লাগলো আর আমি আমার নিজের !
পরের একটা মাস আমি বলতে গেলে মুছে ফেললাম যে আমার জীবনে নুসাবা নামের কোন মেয়ে আছে । এরই ভেতরে আমার অফিসের অন্যান্য মেয়েদের সাথে খুব ভাল সম্পর্ক গড় উঠলো ! মেয়েদের সাথে লাঞ্চ আওয়ার তো বটেই অফিস টাইমেও ঠিক ঠিক আড্ডা দিতে শুরু করলাম ! এমন কি অফিসের পরেও তাদের সাথে সময় কাটানো চলল অফিস ক্যান্টিনে এবং এমন একটা ভাবে তাদের সাথে মিশতাম যেন নুসাবা ঠিক ঠিক আমাদেরকে লক্ষ্য করে । এবং আমার কেন জানি মনে হচ্ছিলো সে ঠিক ঠিকই দেখছে !
প্রতিদিন মিশুর সাথে রিক্সা করে বের হতাম অফিস থেকে । দুই দিন নুসাবার কেবিনের দিকে চোখ যেতে লক্ষ্য করেছি কেউ যেন ওখান থেকে সরে গেল ! আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে সেখানে সেই ছিল ! আমাদের কে দেখছিল ! তবুও মনে হচ্ছিলো যে নুসাবার নিশ্চয়ই একটু কিছু প্রতিক্রিয়া দেখানো দরকার । যদি না দেখায় তাহলে আমাকে আবার অন্য পথ দেখতে হবে ! এমন করে তো বেশি দিন চলা যাবে না !
আবার একটা সময় মনে হচ্ছিলো যেন নুসাবা হয়তো এইটাই চাচ্ছে । আমি যেন ওর জীবন থেকে চলে যাই ! এবং আমি যেখানে নিজেই চলে গেছি তাই সেটাতে সে খুশিই ! তাহলে কি পদ্ধতিতে একটু ভুল হল ! ভুল কি হল না এমন ভাবে যখন আমি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি তখনই নুসাবা আমাকে খুব চমৎকার একটা সবুজ ইংগিত দিল !
পিয়নকে দিয়ে আমাকে তার কেবিনে ডেকে পাঠালো ! বলতে গেলে এই দেড় মাসের ভেতর এইপ্রথম বারের মত সে এই কাজটা করলো ! আমি গিয়ে দেখি তার কেবিনে একটা বোকা বোকা চেহারার একজন বসে আছে ! আকাশী রংয়ের শার্ট ইন করে পড়া ! চোখে চশমা !
-আসুন
আমি একটু হাসলাম কেবল ! সৌজন্যবোধের হাসি !
নুসাবা বলল
-ইনি সাখাওয়াত ! আমি একে বিয়ে করতে যাচ্ছি !
বিয়ে করতে যাচ্ছি এই শব্দটা বলতে গিয়ে নুসাবার কন্ঠটা মনে একটু যেন অন্য রকম হয়ে উঠলো ।
লজ্জা ?
না ! নুসাবা লজ্জা পাওয়ার মেয়ে না !
আর লজ্জা পেলে সে আমাকে ডেকে এই কথা বলতো না !
তাহলে ?
তখনই চট করে আমার মাথায় সব কিছু চলে এল ! আসলে নুসাবা আমাকে তার হবু বরের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে কারন হচ্ছে সে আমাকে জেলাস ফিল করাতে চায় ! ঠিক যেমন টা আমি ওকে করিয়েছি অফিসের অন্য মেয়েদের সাথে মিশে এবং ওকে সম্পুর্ন ভাবে এড়িয়ে চলি !
সত্যি কি এটা ?
নিজের মনের কাছে আরেকবার প্রশ্ন করি !
আর কোন কারন কি আছে ?
নাহ ! অবশ্যই না !
আমি কেবল হাসলাম ! মনে মনে ভাবলাম এইবার কিছু একটা বলা দরকার ! আর যদি সত্যি সত্যিই বিয়ে করতে যায় তাহলে ?
বললাম
-তাই নাকি ? ভাল তো ! তা দাওয়াত কবে পাচ্ছি ?
আমার প্রতিক্রিয়া এমন দেখে নুসাবার মুখ কালো হয়ে গেল ! আসলে ও ভেবেছিল আমি হয়তো মুখ টুখ অন্ধকার করে ফেলবো ওর কথা শুনে ! সেখানে আমি হাসছি ! যদিও আমার মনে এখনও একটু ভয়ভয় করছে আসলেই সে বিয়ে করতে যাচ্ছে কি না !
কিন্তু পুলার চেহারার ভাব দেখে মনে হচ্ছে এই ছেলেকে নুসাবা আসলেই বিয়ে করবে !
আমি সাখাওয়াত সাহেবের দিকে এগিয়ে গেলাম । তার মুখোমুখি বসে বললাম
-সত্যি বিয়ে করবেন আপনি ?
সাখাওয়াত সাহেবের চোখে কেমন একটা কনফিউশন দেখতে পেলাম ! তখনই আমার ধারনা আরও বদ্ধমূল ধারনাতে পরিনত হল ! না হতেই পারে না !
-আপনি নুসাবার সম্পর্কে জানেন তো ?
নুসাবা এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-এক্সকিউজ মি ! কি বলতে চাও !
আপনি থেকে তুমি তে নেমে এসেছে ! এটা একটা ভাল লক্ষন ! আমি সেদিকে খেয়াল না দিয়ে আবারও সাখাওয়াত সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললাম
-সামলাতে পারবেন এই এটমবোম কে ?
এক ঝলক তাকিয়ে দেখি নুসাবা যেন বাক্যহারা হয়ে গেছে । তেমনি ভাবে সাখাওয়াত সাহেবও কোন কথা খুজে পাচ্ছে না ! আমি বললাম
-দেখুন ! আপনাকে দেখে গোবেচারা ভদ্রলোক মনে হচ্ছে ! যদিও আমার ধারনা নুসাবার সাথে আপনার বিয়ে হওয়ার সম্ভবনা নেই, ও কেবল আমাকে জ্বালানোর জন্য আপনাকে সাজিয়ে নিয়ে এসেছে তবুও বলি জীবনে সবাই কে বিয়ে করবেন, দরকার হলে এক দুইটা এমনি কি চারটা বিয়ে করবেন কিন্তু খবরদার ঐ দিকে যাবেন না ! জীবন একে বারে ত্যাশপাতা হয়ে যাবে ! আর আরেক টা কথা ! নুসাবার বাবা কিন্তু সত্যি সত্যিই ছেলে খুজছে । যদি জনাতে পারে তাহলে কিন্তু সত্যি সত্যি বিয়ে দিয়ে দিবে ! তখন বুঝবেন ! এখনও সময় আছে !
কথা গুলো বলে তাকালাম নুসাবার দিকে ! একটু হাসলাম ! ও আমার দিকে কঠিন চোখেই তাকিয়ে রইলো !
তারপর আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম ! তখনই রুমের ভেতর থেকে ধমকের আওয়াজ শুনতে পেলাম ! নুসাবা সামনে বসা ছেলেটা কে ধমকাতে শুরু করেছে ! এতো দুর থেকে আওয়াজ আসছে ! আমি নিশ্চিত পুরো অফিসের লোকজন সেটা শুনতে পাচ্ছে !
লাঞ্চের পরে আবারও নুসাবার কেবিনে ডাক পড়লো ! গিয়ে দেখি সে ঠিক নিজের চেয়ার ছেড়ে টেবিলের উপরে হেলান দিয়ে বসে আছে ! আমি যেতেই আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনার সাহস তো কম না ?
আবার আপনি !
এই মেয়ে আমাকে কনফিউজ করে দেয় !
কখন আপনি আবার কখন তুমি !
আমি বললাম
-কেন ?
-আপনি কি বললেন সাখাওয়াত কে ? কেন বললেন ?
-আপনি কেন আমাকে ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন ! আমি এমন কোন ইমপর্টেন্ট মানুষ না আপনার জন্য ! নাকি আমি ইমপর্টেন্ট ?
লাইন টা বলেই আমি ওর দিকে তাকালাম ! সেই চোখে তখনই কেমন একটা দ্বিধা দেখতে পেলাম আমি !
নিজেকে সামলে নিয়ে নুসাবা বলল
-অবশ্য না !
-তাহলে ? হোয়াই !
নুসাবা উত্তর দিলো না ! আরও ভাল করে বলতে গেলে দিতে পারলো না !
-আপনি যান এখান থেকে !
-যদি না যাই ?
-মানে ? আমি বলছি ....।
তখন আবারও আমি সেদিনের মত একটা খুব সাহসের কাজ করে ফেললাম ! নুসাবা ঠিক আমরা সামনে দাড়িয়ে ছিল ! আমি চট করে আরও একটু কাছে এগিয়ে গেলাম ! ও বাধা দেওয়া আগেই ওর দুই হাত চেপে ধরলাম ! তারপর হাত দুটো পেছনের দিকে নিয়ে এমন ভাবে জড়িয়ে ধরলাম যে ওর ঠোট দুটো আমার ঠোটের খুব কাছে চলে এল !
এতো কাছ থেকে ওর শরীর থেকে মিষ্টি পারফিউমের গন্ধ এসে আমার নামে লাফলো আর ওর ঠোটের কাপঁন আমি পরিস্কার দেখতে পাচ্ছিলাম !
আমি নিজে যেমন ভাবি নি আমি এরকম একটা কাজ করবো ঠিক ও নিজেো কল্পনাও করতে পারি নি আমি এমন কিছু করবো ! এবং আমি মোটামুটি নিশ্চিত ও এটা নিয়ে কাউকে কিছু বলতেও পারবে না ! ও নিশ্চয়ই ওর বাবাকে বলবে না যে আমি ওকে চুম খেয়েছি কিংবা খেতে গেছি ! অবশ্য বলতেও পারে ! চাকরীও খেয়ে ফেলতে পারে ! আমি আর কিছু ভাবলাম না ! ততক্ষনে দেরি হয়ে গেছে !
চাইলেই ওর ঠোঁটে এখন চুম খাওয়া যায় !
প্রথমে একটু জোড়াজুড়ি করে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও কিছু সময় পরে বুঝে গেল আমি না ছাড়লে সে আমার হাত থেকে মুক্তি পাবে না ! ওর চোখ গেল দরজার দিকে ! আমি বলল
-তুমি চাচ্ছো কেউ দরজা দিয়ে ঢুকে তোমাকে বাঁচাবে ! আসলে আমিও তাই চাচ্ছি ! কেউ আসুসক ! আমাদের এভাবে দেখুক ! আই উইল লাভ দ্যাট !
তারপর আমি ওর ঠোঁটের কাছে গিয়েও থেমে গেলাম ! ওর ঠোঁট তখনও কাঁপছে ! ঠোটে চুম না খেয়ে নাকে ছোট্ট করে একটা চুম খেলাম ! তারপর ওর হাত ছেতে দিলাম ! ছাড়ার পরেও আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কেবল ! কথা যেন হারিয়ে ফেলেছে !
আমি কেবল বললাম
-সেদিন তুমি কি বলেছিলে তোমার বাবা সম্পত্তির হাতানোর জন্য তোমার পিছে ঘুরছি ? মনে রেখো সেটা তো হাতিয়ে নেবই ! বাই প্রোডাক্ট হিসাবে ! আর আগে তোমাকে ......
লাইন টা শেষ না করে বের হয়ে এলাম মিষ্টি করে হেসে !
আমি মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম যে নুসাবা কিছু করবে না । যদি ও কাউকে বলে যে আমি ওকে জড়িয়ে ধরে চুম খেয়েছি তাহলে সেটা আমার থেকে ওর নিজের রেপুটেশনের ক্ষতি হবে ! বিশেষ করে এই অফিসে ওকে সবাই যেমন করে চিনে সেটার হিসাবে ! আমি তাই খুব একটা চিন্তিত হলাম না ! আর ওর বাবার ব্যকআপ তো আছেই !
ঐদিন সন্ধ্যায় আমার ক্যাবিনে পিয়ন একটা খাম দিয়ে গেল ! খাম খুলে দেখি সেখানে কিছু নির্দেশনা ! আমাকে আজকে রাতের গাড়িতে যেতে হবে চট্টগ্রাম । সেখানে একটু কাজ শেষ করে রাঙ্গামাটিতে আমাদের নতুন যে প্রজেক্ট চলতেছে সেখানে ! বুঝলাম আজকের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য নুসাবা আমাকে পাঠাচ্ছে ! রাতের ঘুম কামাই দিয়ে দিনে কাজ !
যাক সমস্যা নাই ! এই মাইয়াকে আমি এসে তারপর দেখে নেব ! তখনই বাসায় রওনা দিলাম । টুকটাক কিছু প্রয়োজনী জিনিস পত্র নিয়েই হাজির হয়ে গেলাম কাউন্টারে । সারা রাত জার্নি করে হাজির চট্টগ্রামে । সেখানে সাইট দেখে আসলেই মেজাজটা একটু খারাপ হল ! যে কাজের জন্য আমাকে একখানে পাঠানো হয়েছে সেটা এখানকার পিয়নও করতে পারবে কিন্তু না আমাকেই আসা লাগবে মোট কথা আমাকে প্যারা সহ্য করতে হবে ! অবশ্য যা করেছি তার কাছে এটা তো সমান্যই !
এবার আরও ভাল কিছু ভাবতে হবে ! দুপুরে খেয়ে রওনা দিতে হবে রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে ! আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে সেখানেও আমার যা কাজ সেটাও তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না ! আমাকে কেবল প্যারা দেওয়ার জন্যই এই কাজটা করতে দেওয়া ! সামনে আরও কত কিছু করবে কে জানে !
বাস স্ট্যান্ডের উদ্দেশ্য রওনা দেওয়ার জন্য পা বাড়াতে যাবো তখনই আমাকে জানানো হল যে বাসে করে নয় আমাকে যেতে হবে অফিসের গাড়িতে করে । সব কিছু রেডি ! যার সাথে আমার যাওয়ার কথা সে চলে আসবে আর আধা ঘন্টার মধ্যে !
সত্যি বলতে কি আমার জন্য এতো বড় সার প্রাইজ অপেক্ষা করছিলো আমি জানতাম না ! মিনিট পনেরোর ভেতরেই স্বয়ং নুসাবা এসে হাজির ! ও নাকি আজকে ফ্ল্যাইট ধরে এসেছে ! আমার সাথে যাবে রাঙ্গামাটি ! সত্যি সত্যি এটা আমার জন্য চমক ছিল ! আমি এটার জন্য তৈরি ছিলাম না !
বার বার কেবল মনে হল এই মেয়ে এখানে কেন ?
আমার সাথে যাওয়া জন্য !
গাড়ির আসতেই নুসাবা গাড়ির পেছনের সিটে গিয়ে বসলো ! আমার খানিকটা ইচ্ছে হচ্ছিলো যে আমিও ওর সাথে পিছনের সিটে গিয়ে বসি ! কিন্তু বসলাম না ! ড্রাইভারের সাথে বসলাম সামনের সিটে । যাত্রা শুরু হতেই নুসাবা ওর ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো !
গাড়ির মমিউজিক প্লেয়ারে গান শুনতে শুরু করলাম । আর আস্তে আস্তে নুসাবার দিকে তাকাতে লাগলাম লুকিং গ্লাসে !
আজে নুসাবাকে একটু অন্য রকম লাগছে । অফিসে ও সব সময় ছেলেদের মত করে ফরমাল পোষাক পরে থাকে । কিন্তু আজকে পরে রয়েছে নীল জিন্সের সাথে সাদা টপ ! প্রথম বার দেখে একটু চমকে গেছিলাম ! বারবার চোখ চলে যাচ্ছে ওর দিকে ।
-ড্রাইভার সাহেব থামেন দেখি !
-জে !
-গাড়ি থামান !
পেছন থেকে নুসাবা বলে উঠলো
-কেন ? কি দরকার !
-চা খাবো ! ঐ যে দোকান টা দেখা যাচ্ছে ! ড্রাইভার সাহেব আপনিও আসেন ! পাহাড়ি এলাকার চায়ের তুলনা হয় না ! আসেন আসেন !
ড্রাইভার গাড়ির গতি কমিয়ে আনলো তবে থামালো না ! নুসাবার জন্য ভয় করছে ! আমি তাকে অভয় দিয়ে বললাম
-আরে থামান তো ! চা ই তো খাবো ! অন্য কিছু না ! খুব বেশি হলে ১০ মিনিট ! আসেন !
নির্জন পাহাড়ি রাস্তার পাশে একটা চায়ের দোকান ! অবস্থা খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছে না ! কেউ এখানে আসে কি না কে জানে ! তবুও একটা যে চায়ের দোকান পাওয়া গেছে এখন এটাতেই চলবে ! গাড়িটা থামলো একটু দুরে । রাস্তার এক পাশে থামতেই আমি নেমে গেলাম । চায়ের দোকানের একটা কাঠের বেঞ্চে বসলাম ! দেখি আমার পেছন পেছন ড্রাইভারও এল । চায়ের অর্ডার দিয়ে আমি অপেক্ষা করছি !
আমি জানতাম নুসাবা নিজেও আসবে ! আমি চাইছিলাম ও নিজ থেকে আসবে । আমি ওকে ডাকবো না । ডাকবোই না !
ঠিক ঠিক অর্ধেক চা খাওয়ার পরেই দেখি দরজা খুলে বেরিয়ে আসছে । আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে বসলো পাশের কাঠের বেঞ্চে ! আমি চায়ের দোকানদার কে বললাম
-চাচা আরেক কাপ চা দেন ! ভাল করে পানি দিয়ে ধুয়ে দেন ! আমার ম্যাডাম ! যদি চা খারাপ হয় তাহলে কিন্তু আপনার নামে কেস করে দিবে ! খুব কড়া ম্যাডাম !
আমার কন্ঠে একটা কৌতুক ভাব ছিল দেখলাম চাওয়ালা দাঁত বের করে হাসলো ! ড্রাইভারও হাসতে চাচ্ছে কিন্তু ভয়তে হাসতে পারছে না ! নুসাবার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে মোটেই রাগ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে নেই । অন্য দিকে তাকিয়ে আছে । চায়ের কাপে চুমুক দিতে লাগলো আস্তে আস্তে ! চা খাওয়া শেষে বলল
-যাওয়া যাক !
-এখনই ?
-আর কি !
-আমার আসলে কেন জানি মনে হচ্ছে আমাকে এখানে তুমি ইচ্ছে করে নিয়ে এসেছো ? কোন বিশেষ কারনে !
-তাই মনে হচ্ছে ?
-সব কিছু তাই তো ইংগিত দিচ্ছে !
বসে থাকো তুমি তোমার ইংগিত নিয়ে । এখন চল । দেরি হয়ে যাচ্ছে !
এবার অবশ্য যাওয়ার সময় আমি নুসাবার পাশেই বসলাম !
পরিশিষ্টঃ
-কি হাসতেছো কেন ?
-কেন হাসলে সমস্যা কি ?
-তুমি যা ভাবছো তার কিছুই হয় নি ! কোন দিন হবেও না !
-তাই ? তা আমি কি ভাবছি শুনি ? আর আমার ভাবনা নিয়ে তুমি এতো চিন্তা কেন করতেছো শুনি ?
নুসাবা কোন কথা না বলে আমার তাকিয়ে রইলো ! মেয়েটার চোখ বলছে সেটা পরিবর্তিত হয়েছে । কেবল নিজের ইগোর কারনে কিছু বলতে পারছে না । হয়তো আমার বলার জন্য অপেক্ষা করছে । আমিও ঠিক করেছি আমি কিছু বলবো না ! যেই প্যারা এই মেয়ে আমাকে দিয়েছে সেটার শোধ তুলতে হবে না !!
নির্জন পাহাড়ি রাস্তা ধরে টুকটাক কথা বলতে এগিয়ে চলল আমাদের গাড়ি । সেই সাথে আমাদের সম্ভাব্য প্রেমের গল্পটাও এগিয়ে চলছে ! আমি এমডি স্যারের কথা ভাবতে লাগলাম মনে মনে । স্যারের ভাষ্যমতে রাজ্যসহ রাজকন্যা আস্তে আস্তে আমার হাতে চলে আসছে !
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩১