নিজের রাগ করার ক্ষমতা দেখে আমি নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছি । রীতিমত কাঁপছি আমি রাগে কারনে ! বারবার মনে হচ্ছে আমি কি আসলেই আমি ! এই রাগের উৎস কোথায় আমি ঠিক বলতে পারবো না তবে কেবল এই মুহুর্তে আমার মনে আর কিছু আসছে না । আমার কেবল মনে হচ্ছে সামনে বসা ঐ হারামজাদাকে মেরে হাত পা ভেঙ্গে দিতে ! এরিসার মুখোমুখি বসা বদমাস টাকে কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না !
আমি নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালাম । সোজা হাটতে লাগলাম ওদের দুজনের দিকে ! রেস্টুরেন্টটা এমনিতেই একটু অন্ধকার অন্ধকার । এই জন্য ওরা আমাকে ঠিক লক্ষ্য করে নি । কিন্তু একটু কাছে যেতেই এরিসা আমাকে দেখতে পেল । আমাকে দেখেই ওর মুখ থেকে রক্ত সরে গেল ! সামনে বসা বদমাইশটাও এরিসার এই পরিবর্তন লক্ষ্য করে চট করে আমার দিকে তাকিয়ে ফেলল ! কিন্তু ততক্ষনে দেরি হয়ে গেছে ! আমি একেবারে ওদের কাছে চলে এসেছি ! ওর বসা অবস্থায় আমি ঠিক ওর কোমর বরাবর জোড়ে একটা লাথি মারলাম ! তাল সামলাতে না পেরে সোজা সামনের দিকে চেয়ার নিয়ে পড়তো ! এতো জোরে আওয়াজ হল যে রেস্টুরেন্টের সব কয়টা চোখ আমাদের দিকে ঘুরে গেছে ! এরিসা উঠে এসে আমাকে বলার চেষ্টা করলো
-প্লিজ এখানে কোন সিন ক্রিয়েট কর না !
আমি কোন কথা না বলে কেবল এরিসার দিকে তাকালাম ! অনেক কষ্টে এরিসাকে চড় মারার ইচ্ছেটা সংবরন করলাম ! কিন্তু আমার চোখ দিয়ে সেই রাগ বেরুচ্ছিলো ! এরিসা আর কোন কথা বলতে সাহস পেল না ! কেবল অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ! আমার এই রূপ ও আগে আর কোন দিন দেখে নি ।
আমি আবার মাটি পড়ে থাকা বদমাইশটার দিকে ফিরলাম ! আমার মনে সমস্ত রাগ গিয়ে পড়লো ওর উপর ! ও ততক্ষনে উঠার চেষ্টা করছে । এবার লাথিটা মারলাম কাধের কাছে । যতটুকু উঠেছিল আবার পড়ে গেল ! ততক্ষনে চারপাশে ভীড় জমে গেছে । ম্যানেজার ছুটে এল । আমাদের থামানোর জন্য ! আমি কিছু না বলে কেবল বদমাইশটার কলার চেপে ধরে টানতে টানতে রেস্টুরেন্টের বাইরে নিয়ে গেলাম ! আমার হাত ছাড়ানোর জন্য ততক্ষনে সে জোড়াজুড়ি শুরু করে দিয়েছে । দরজার কাছেই গায়ের সব শক্তি দিয়ে একটা চড় মারলাম ! এতো জোরেই চড়টা মেরেছি যে আমার নিজের হাতই জ্বলাপোড়া শুরু করে দিল ! চড়টা খেয়ে সোজা উল্টে গিয়ে পড়লো রাস্তার পাশে ! কিছুক্ষন পরেই রইলো ! ততক্ষনে চারিপাশে মানুষ জড় হয়ে গেছে । রেস্টুরেন্ট থেকেও অনেকে উকি ঝুকি মারছে ! আমি ওকে আবার তুলতে যাবো তখনই বেটা উঠে সোজা দৌড় মাড়লো ! চোখ পলকে হারিয়ে গেল ভীড়ের ভেতরে ! আমি এরিসা দিকে তাকিয়ে দেখি ও কেমন মুখ করে দরজার কাছে দাড়িয়ে আছে ! আমার রাগ তখনও কমে ননি ! একবার ইচ্ছে হল দুটো থাপ্পড় মারি । তখন হয়তো মেজাজ টা একটু শান্ত হবে ! এতো বড় সাহস আমার পিছে অন্য ছেলের সাথে টাংকি মারে !
আমি ওর চারিদিকে তাকিয়ে কেবল বললাম
-চাবি কোথায় ?
ও ব্যাগ থেকে গাড়ির চাবি বের করে দিল ! আর কোন কথা না বলে কেবল গাড়ি গিয়ে বসলাম ! পেছন পেছন ও নিজেও এল, নিজেই দরজা খুলে গাড়িতে উঠে বসলো ! যখন বাসায় আসলাম তখনও এরিসা কোন কথা বলে নি ! বসার ঘরে এসে প্রথম কথা টা বলল
-তুমি এমন টা না করলেও পারতে ?
খুব কষ্টে নিজের রাগ টা কে নিয়ন্ত্রন করলাম ।
ডাইনিং টেবিলে উপরে কয়েকটা গ্লাস ছিল এক টানে ফেলেদিলাম ! চারিদিকে ভাঙ্গা কাঁচ ছড়িয়ে পড়লো ! এরিসা আর কোন কথা বলতে সাহস পেল না ! আসলে ও নিজে যতটা না আমার এই রূপ দেখে অবাক হচ্ছে আমি নিজেও তার থেকেও বেশি অবাক হচ্ছি ! বারবার মনে হচ্ছে আমার নিজের ভেতরে এতো রাগ কোথায় ছিল ?
আমি বললাম
-কেন গিয়েছিলে ? বল কেন গিয়ে ছিলে ?
এরিসা আবারও চুপ করেই রইলো ।
-কি আমাকে দিয়ে হয় না ? একজন পুরুষে মন ভরে না ?
লাইন গুলোর ভেতরে এমন কিছু ছিল যে এরিসা আমার দিকে তাকিয়ে আবার নিজের দিকে তাকিয়ে ফেলল । ওর চেহারার দিকে তাকিয়েই মনে হল ও এমন কথা জীবনে আর কোন দিন শোনে নি ! আমার রাগ তখনও কমে নি ! বললাম
-কত দিন থেকে চলছে ? বল
এবার একটু ধমকে উঠলাম !
-বল কদিন থেকে চলছে ?
আমার ধমক শুনে একটু যেন কেঁপে উঠলো ! তারপর বলল
-মাস খানেক ধরে যোগাযোগ হচ্ছে ! ও মেসেজ দেয় আমাকে ! আমি প্রথমে গাঁ করি নি !
-কেন শুনলে ওর কথা ? বল কেন শুনলে ? আমার তোমার প্রতি কোন অবহেলা করেছি ? কোন দিন করেছি ? তোমাকে সময় দেই নি ! নাকি খুব বেশি এভেইলএবল হয়ে গেছি এই জন্য ?
এরিসা কোন কথা বলল না !
-বল ? অন্য কোন মেয়ের দিকে ইন্টারেস্ট দেখিয়েছি কোন দিন ? তোমাকে ঘরের ভেতরে বন্দী করে রেখেছি ? স্বাধীনতা দেই নি ? কি করি নি বল আমাকে তুমি বল আমি কি করি ? নাকি তোমার জন্য রান্না করি বলে তোমার ব্যাপার টা পছন্দ না !
অনেক টা সময় চুপ থাকার পর এরিসা বলল
-আসলে আজকে এমন ভাবে রিকোয়েস্ট করলো যে আমি মানা করতে পারি নি !
-আচ্ছা ! ভাল ! খুব ! এবার থেকে ওর হামবল রিকোয়েস্টে সাড়া দিও ! ঠিক আছে ! আমার কোন আপত্তি নাই ! কিন্তু আমার বউ থাকা অবস্থায়, না ! কালকেই তোমার লইয়ার কাজিন কে ডাক দিবা ! তাকে বলবা তুমি কি করেছো ! আর তারপর ঝামেলা মিটিয়ে ফেলবা ! এমন বউ আমার ঘরে দরকার নাই ! বিন্দু মাত্র দরকার নেই !
আমি আর কোন কথা না বলে নিজের ঘরের দিকে রওনা দিলাম ! ওর সামনে থাকলে হয়তো আমি আমার নিজের রাগ কে নিয়ন্ত্রন করতে পারবো না ! শেষে ঘটনা অন্য দিকে যাবে ! পুরো ডাইনিং রুমে তখনও ভাঙ্গা কাঁচ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে !
শোবার ঘরে গেলাম না ! নিজের স্টাডি রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলাম !
ভেবেছিলাম রাতে হয়তো ঘুম আসবে না ! কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম শোয়া মাত্রই আমার ঘুম চলে এল ! সকালে ঘুম ভাঙ্গলো একটু বেলা করেই ! আমি স্বাধারনত এতো সকাল পর্যন্ত ঘুমাই না ! ম্যানেজার কে ফোন করে বলে দিলাম আজকে রেস্টুরেন্টে আসতে আমার একটু দেরি হবে ! কাল রাতের কাঁচ দেখলাম আর পরে নেই । নিশ্চয়ই এরিসা পরিস্কার করে ফেলেছে ! সকালের নাস্তার জন্য আলু কাটছি এমন সময় দেখহি এরিসা আমার পাশে এসে দাড়ালো ।
আমি খুব স্বাভাবিক ভাবে বললাম
-অফিস যাবে না ?
-না !
-যাক ভাল ! তোমার ঐ কাজিন কে খবর দাও !
-অপু প্লিজ ! আই এম সরি !
-সরি হওয়ার তো কিছু নেই ! তাই না ! তুমার পছন্দ বদলাতেই পারে ! আমার সাথে থাকতে তোমার ভাল নাই লাগতে পারে ! তাই !
ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও মুখটা কেমন অন্ধকার হয়ে গেছে । আসলে ও হয়তো ভেবেছিল যে রাতের ঘটনার পর সকাল বেলা আমি হয়তো ঠিক হয়ে যাবো ! আগেকার ভাল স্বামী হয়ে যাবো যে কখনই ওর উপর রাগ করে না !
আমি বললাম
-শুনো আমি জীবনে সব কিছু সহ্য করে নিবো কিন্তু আমার বউ অন্য কোন ছেলের সাথে টাংকি মেরে বেড়াবে এটা আমি সহ্য করবো না ! এমন বউয়ের সাথে ঘর করার কোন ইচ্ছা আমার নেই ! পরিস্কার হয়েছে ব্যাপার টা ?
-প্লিজ এইবারের মত ভুলে যাও ! আমি তো কেবল দেখা করতে গিয়ে ছিলাম ! আর কিছু না ! বিশ্বাস কর !
-কেন গিয়েছিলে ? কেন গিয়ে ছিলে ? তোমার ভাল বন্ধু সে ? বল বন্ধু ! তোমার সব বন্ধুদের তো তুমি ঠিকই আমার রেস্টুরেন্টে নিয়ে এসেছো ? দেখাই যখন করবে তখন আমার রেস্টুরেন্টে কেন আনো নি ? অন্য খানে কেন গেলে ? তোমার মনে যদি সৎ সাহসই থাকবে তাহলে কেন আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দাও নি !
এরিসা কোন কথা না বলে চুপ করে দাড়িয়ে রইলো মাথা নীচ করে ! আমি আলু ভাসি টা কড়াই ছেড়ে দিলাম ! এখন পরোটা ভাজা বাকি ! তারপর বেশ কিছু কাজ করতে হবে ! এরিসা বলল
-আমি চাকরী ছেলে দেব !
-তোকে তো চাকরী ছাড়তে বলি নি আমি ! বলেছি ? অনলি আই আস্ক টু বি লয়্যাল ! নাথিং এলস !
আমি আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলাম তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো ! আমি এরিসা কে বললাম
-ভাজিটা একটু দেখো আমি দেখি দরজায় কে আসছে ?
দরজা খুলতে দেখি দুজন পুলিশ সেখানে দাড়িয়ে ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-মিস্টার অপু হাসান ?
-জি !
-আপনার নামে আমাদের কাছে অভিযোগ আছে !
-কিসের অভিযোগ ?
-আপনি গতকাল একজন কে বেদম পিটিয়েছেন !
মুহর্তেই আমার মেজাজ টা আরও খারাপ হয়ে গেল ! আমি বললাম
-সুযোগ পেলে হারাম জাদাকে আমি আবারও পেটাবো ! হাত পা ভেঙ্গে দেব !
পুলিশ দুজন আমার দিকে অর্থ পূর্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
-ভেতরে এসে কথা বলি আমরা ?
-আসুন !
বসতে বসতে বলল
-আসলে অভিযোগ করলেও আমরা এখনও তার অভিযোগ নেই নি ! আগে ব্যাপার টা খতিয়ে দেখতে এসেছি !
আমি বললাম
-ঐ বদমাশ টা আমার ওয়াইফ কে মাস খানেক ধরে ডিস্টার্ব করছে ! কয়েকবার মানা করা সত্ত্বেও শোনি ! কাল কে পালিয়ে গিয়ে বেঁচে গেছে ! নয়তো ওর হাত পে ভেঙ্গে দিতাম ! এতো বড় সাহস !
-দেখুন অভোযোগ কারী কিন্তু বেশ ভাল ঘরের ছেলে !
-আপনার কি মনে হচ্ছে আমরা খারাপ ঘরের ছেলে ?
-না । তা বলি নি ! আমি কেবল জানতে চাই আপনার ওয়াইফ কাল ওখানে গেল কেন ?
আমি কিছুতে যাব তার আগেই এরিসা পেছন থেকে বলল
-ঐ অভি বেশ কয়েকদিন থেকে আমার পেছনে লেগেছিল ! আমি মানা করার সত্ত্বেও ! কত বার নিষেধ করেচি কি্তু শুনে নি ! আমার কাছে ওকে পাঠানো মেসেজ গুলো সে কথা প্রমান করবে ! কাজ গিয়ে ছিলাম ওকে সামনা সামনি মানা করতে ! আমার হাসব্যন্ডকেও নিয়ে গিয়ে ছিলাম ! কিন্তু এক সময় অভি আমার সাথে বেয়াদবী শুরু করে ! আমার হাত ধরার চেষ্টা করে ! এটা অপু দেখে আমাকে বাঁচাতে আসে ! আপনার কি মনে হচ্ছে এটা সে অন্যায় করেছে ? নিজের স্ত্রীকে বখাটের হাত থেকে বাচানো নিশ্চয় অন্যায় না ! আর যদি অন্যায় মনে করেন তাহলে ওকে ধরে নিয়ে যান । আমি এই টুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি যে থানা নিয়ে যাওয়ার আগেই আমি জামিন করিয়ে ফেলবো ! তারপর আপনার অভিযোগকারীকে বলে দিবে অপুকে ছাড়িয়ে আনার পর আমি ওর নামে প্রথমে ইভটিজিং তারপর সেক্সুয়্যাল হ্যারাজমেন্ট এরপর এটেম্ট টু রেপের কেইস করবো ! পরিস্কার হয়েছে ব্যাপার টা ?
আমি কি বলবো আমার সামনে বসা অফিসার দুজন এরিসার কথা শুনে থ হয়ে গেল ! কোন মেয়ে এভাবে দঢ়তার সাথে কথা বলতে পারে তাদের মনে হয় ধারনার বাইরে ছিল ! একজন উঠে দারিয়ে বলল
-আমরা কেবল এই জন্যই এসেছিলাম ! থেঙ্কিউ ম্যান ! আমরা আসি !
ওরা চলে যাওয়ার পর আমার মনে হল চুলায় আলু ভাজি রেখে এসেছি ! আমি সেদিকে গেলাম ! আমার পেছন পেছনই এরিসা এল ! আমি ভাজি নাড়তে নাড়তে বললাম
-সকালে আর কি খাবে ?
এরিসা বেশ আদুরে গলায় বলল
-চুম খাবো !
তাকিয়ে দেখি এরিসা আমার দিকে অন্য চোখে তাকিয়ে আছে ! এতোটা সময় যে রাগ টা ধরে রেখেছিলাম সেটা কেন জানি আর ধরে রাখা সম্ভব হল না ! আমার মুখ দিয়ে একটু হাসি বের হতেই এরিসা যেন উড়ে এসে আমার কে জড়িোয়ে ধরলো !
তারপর ......।
তারপরের কাহিনী আর নাই বা শুনলেন !!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:৩৬