মনজু একটি রাজনৈতিক দলের সব থেকে বড় অনলাইন এ্যাকটিভিটিস্ট । যে কোন ঘটনায় সব কিছু তাদের দিকে টেনে পোস্ট লেখায় তার জুড়ি নাই । অবশ্য এই সব সে এমনি এমনি করে না । তার জন্য মাস শেষে মোটা অংকের টাকা তার ব্যাংক একাউন্টে যোগ হয় । অবশ্য কোথা থেকে এই টাকা আসে সেটার কোন বৈধ কাগজ পত্র নেই । বলা চলে অজানা এক জায়গা থেকে এই টাকা এসে হাজির হয় । অবশ্য সেটা নিয়ে মজনু খুব বেশি চিন্তিত নয় । টাকা আসাটাই বড় কথা ! কোথা থেকে আসলো সেটা খুব বেশি দরকারি নয় !
তার পোস্টে সব সময় কয়েক হাজার লাইক আর শেয়ার সাথে কমেন্টের তো হিসাব নেই । যত লাইক আর কমেন্ট বাড়তে থাকে ততটা পরিমান অর্থের যোগান বাড়তে থাকে । সে সারাদিন কেবল এই কাজই করে ! অন্য কিছু করার অবশ্য তার দরকারও পড়ে না ।
মনজু সকাল থেকেই একটু চিন্তিত বোধ করছে । কাল রাত থেকে তার স্ত্রী বাসায় নাই । রাগ করে কোথায় যেন চলে গেছে । অবশ্য মনজু এইটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করছে না । চলে গেছে আবার চলে আসবে । হয় বাপের বাড়ি যাবে নয়তো কোন বান্ধবীর বাড়ি । কিন্তু এখন মনজুর সামনে চিন্তার যে প্রধান কারন যেটা হচ্ছে গত রাতে একটা ঘটনা ঘটেছে । তাদের দলের একজন নাকি কোন মেয়েকে রেপ করেছে ।
রেপ করেছে সেটা খুব বেশি ব্যাপার না । কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সে হাতে না হাতে ধরা পরেছে । সেই সাথে অনলাইনেও ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপার টা । যদি অনলাইনে না আসতো তাহলে ব্যাপার টা নিয়ে তার খুব বেশি চিন্তার কারন ছিল না কিন্তু এখন সেটা তার মাথা ব্যাথার কারন ।
যদি অনলাইনে ঠিক ঠাক মত ব্যাপার টা সামাল দেওয়া যায় তাহলে উপর মহলে তার চাহিদা আরও বেড়ে যাবে ! তার ব্যাংক একাউন্টে জমা কৃত টাকার পরিমানও বেড়ে যাবে ।
মনজু তার সব থেকে কাছের সাগরেত সবীরকে করে ফোন দিল ! সবীরও তার মত একজন অনলাইন একটিভিষ্ট । তবে তার মত এতো বড় নয় ।
-বস কি খবর ?
-খবর তো তোর কাছে ?
-হুম ! একটু ঝামেলায় পইড়া গেছি ।
-যেই টা সমস্যা না । তোকে যে মেয়েটা সম্পর্কে কয়েকটা কথা জানতে কইছিলাম, জানছিস ?
-হুম ! কিন্তু মাইয়া তো একদম ক্লিন । কোন দাগ নাই ।
-আরে বেকুবের বাচ্চা, দাগ নাই দাগ বানা ! এই টা কোন কথা । শোন মেয়েটার গ্রামের বাড়ির কিংবা যে হোম টাইনের খোজ লাগা । তারপর দেখ সেই খানে আমাদের কোন লোক আছে নাকি । তারপর একটা গল্প বানা ! শোন মনে রাখবি মেয়ে মানুষকে নিয়ে ছড়ানো গল্প মানুষ তাড়াতাড়ি খায় ! আর সব থেকে বড় পয়েন্ট তো আমাদের হাতে আছেই ।
-কোন টা বস ?
-তুই শালা গাধাই রয়ে গেলি । মেয়েটা রাত্রে বাইরে ছিল আর এই তো শিওর । তাই না ?
-হ !
-আর আমাদের দেশের মানুষ রাত্রে বাইরে থাকা মেয়েদের ব্যাপারে কথা বার্তা বেশি বিশ্বাস করে । শোন যা বললাম তাই কর !
-আচ্ছা বস !
মনজুর মাথার মধ্য এখন পুরো গল্প টা খেতে শুরু করতেছে । মেয়েটাকে কি কি অপবাদ দিবে সে আগে থেকেই ঠিক করে নিল । ভাবতেই তার মাথার ভেতরে উত্তেজনায় একটা ধারা বয়ে গেল ।
কদিন আগেও সে এই কাজ টা করেছে । তবে সেটা ছিল ঠিক এই ঘটনার উল্টা টা । বিপক্ষ দলের একজন একটা মেয়ের সাথে কিছুটা খারাপ আচরন করেছিল । এক একটা পাব্লিক মিটিং থেকে কয়েকটা মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছিল । কিন্তু কপাল টা খারাপ ছিল তার । ঠিক সেই মুহুর্তের ছবি একজন তার ক্যামেরায় তুলে ফেলে । ছেড়ে দেয় অনলাইনে । আর যায় কোথায় ।
সেইবার উপর মহল থেকে বেশ সুনাম পেয়েছিল সে । দেখা যাক এইবার কি করা যায় । যদিও এইবারও ভিট টিম মেয়ে কিন্তু এইবার একটু অন্য ভাবে জিনিস টা সামলাতে হবে । কদিন পরেই দেখে নির্বাচন চলে আসবে । নেতার নামে কোন বদনাম যেন না লাগে সেই ব্যাপারে কঠিন লক্ষ্য রাখতে হবে ।
সকাল দশটার ভিতরেই অনলাইনে মনজুর নিজেস্ব থিউরী আর গল্প ছড়িয়ে পড়লো ! বলতে গেলে এতোক্ষন যারা মেয়েটাকে সাপোর্ট দিচ্ছিলো তারাও কোন কথা বলতে পারলো না । আর অনলাইনের সুশীল রা এরকমই একটা বিষয় নিয়ে খুব বেশি সময় তারা আগ্রহ পায় না । তারা খোজে নতুন নতুন ইস্যু ।
যখন দেখলো ইস্যুতে ঝামেলা শুরু হয়েছে তখন অনেকেই আবার নিজেদের প্রতিবাদী পোস্ট হাইড করা শুরু করে দিল । মনজু সব চুপচাপ দেখছিল আর হাসছিল । তার প্লান কাজ করছে । তিনি আরেকটা বাহবা মূলক ফোনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো । ঠিক তখনই তকটা ফেসবুক পোস্ট তার এক ছোট ভাই তার ইনবক্সে দিয়ে গেল ।
সেটা দেখার পর মনজুর কোন কথা বলতে পারলো না । একে বারে "থ" হয়ে গেল । কি করবে কিছুই বুঝতে পারলো না ।
মনজু কি করবে ঠিক মট সিদ্ধান্ত পারছিল না । যখন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না ঠিক তখনই তার কাঙ্খিত ফোন টা এসে হাজির !
-হ্যালো স্যার !
-কি খবর তোমার ?
-জি জি ! ভাল স্যার !
-ভালই তো সামলেছো দেখছি !
-জি স্যার ! কিন্তু ....
-আমি জানি কি কিন্তু ! দেখো তুমি দলের একনিষ্ঠ কর্মী ! তাই এই সব ছোট খাটো কিন্তু সামনে না আনাই ভাল !
-কিন্তু স্যার !
-আর কোন কথা শুনতে চাই না ! তোমার একাউন্ট টা চেক কর ! সেখানে আগের থেকে বেশি এমাউন্ট জমা হয়েছে । আশা করি এই পরিমান অর্থ তোমার ওয়াইফের ক্ষতির জন্য যথেষ্ঠ হবে !
মনজুর আর কোন কথা বলল না । ফোন লাইন কেটে গেল । মনে মনে ভাবলো এখন পরিবারের লোক জনের সামনে যাবে কিভাবে ।
চিন্তাটা মাথা থেকে বের করে দিল । নিজের একাউন্টটা চেক করে সেই চিন্তাটা আরও দ্রুত গায়েব হয়ে গেল ! অর্থের পরিমানটা এক্সপেক্টেশন থেকেও অনেক বেশি ।
এবার আরও শক্ত ভাবে নেতাকে বাঁচানো যাবে । যখন একজনের স্বামী তার বউয়ের সম্পর্কে কোন কথা বলবে সেই কথা সবাই চোখ বুঝে বিশ্বাস করবে ! মনজুর কিবোর্ড টা হাতে নিল আবার ! কিবোর্ডের উপর ঝড়ের বেগে বয়ে চলতে লাগলো তার আঙ্গুল !
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৫ রাত ৮:১৪