আফিসা খাতুন দরজায় টোকা দিবেন কি না আরেকবার চিন্তা করলেন । দরজারটা যদিও বন্ধ না তবুও রনক দরজায় টোকা না দিয়ে ঢুকলে খুব রাগ করে । চিৎকার চেঁচামিচি শুরু করে দেয় ! আবার যখন তখন টোকা দিলেও সে খুব বিরক্ত হয় । সারাদিন কম্পিটারের সামনে কি কে জানে ! আসিফা খাতুন কিছু বুঝতে পারেন না । কি ফেসবুক না কি চালায় সারা দিন ।
আসিফা খাতুন টোকা দিয়ে অপেক্ষা করলেন । কোন আওয়াজ এল না ! আরেকবার টোকা দিলেন । হাতের চায়ের কাপ টা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে । আর আরেক বার টোকা দিয়ে তিনি আস্তে করে দরজায় ধাক্কা দিলেন !
ঘরে কেউ নেই । বাথরুম থেকে পানি পড়ার আওয়াজ আসছে । তিনি আস্তে করে রনকের টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলেন !
চায়ের কাপ টা নামিয়ে রাখলেন টেবিলের এ পাশে । রনকের কম্পিউটারটা এখনও চালানো আছে । টেবিলের উপর সব কিছু কেমন অগোছালো ভাবে আছে । একটু যে গোছাতে যাবে তার উপায় নেই । রনক আবার কাজের জিনিস হাতের না পেলে আবার অনেক রাগ করে । আসিফা খাতুন সব সময় কেবল ভয়ে ভয়ে থাকে ।
তিনি চা রেখে ঘুরতে যাবেন তখনই তার চোখ চলে গেল মনিটরের দিকে । সেখান কিছু একটা আছে ।
আসিফা খাতুন জানেন রনক সারা দিন কি যেন লেখালেখি করে । অনেক জ্ঞানীগুনি কথা লেখে শুনেছে । পাশের বাসার সমীর নাকি কিভাবে কিভাবে এসব জানে । সমীরের মা সেদিন গল্প করছিল । শুনে আসিফা খাতুনের বেশ ভাল লেগেছিল ।
আসিফা খাতুন খুব বেশি পড়া লেখা জানে না । তো কি হয়েছে, তার ছেলে তো অনেক পড়া লেখা জানে । অনেক কিছু জানে । অনেক জ্ঞানের কথা লেখে । মানুষ সেগুলো পড়ে অনেক জ্ঞান পায় !
আসিফা খাতুনের লেখাটার দিকে চোখ যেত না যদি না সেখানে একটা শব্দ তার চোখে পড়তো !
উপরে লেখা
"মা"
রনক নিশ্চয় মা নিয়ে কিছু লিখছে । আসিমা বেগম পড়তে শুরু করলেন !
"মা"
এমন একটা শব্দ যেটা একবার শুনলেই সব কিছু অন্য রকম হয়ে যায় ! যতই মন খারাপ থাকুক না কেন কিংবা আমি যতই বিপদের সম্মুখিন হইনা কে মায়ের কথা মনে হলে আমার জীবনে আর কোন সমস্যা থাকে না !
বারবার কেবল বলতে ইচ্ছা করে "মা" "মা" "মা".......
এই টুকু পড়েই আসিফা বেগমের চোখে পানি চলে আসলো ! তার ছেলে মা নিয়ে এতো সুন্দর কথা .....।
ঠিক তখনই পেছন থেকে রনক কঠিন কন্ঠে বলে উঠলো
-তুমি কি কর এখানে ?
আসিফা খাতুন চট করে ঘুরে গেলেন !
-না মানে !
রনক আবার চিৎকার করে উঠলো
-তোমাকে না কত দিন বলেছি আমার ঘরে ঢুকবে না বলে ! যাও এখানে ! এক্ষুনি বের হও । বের হও বলছি ! যত্ত্বসব ! যাও !
আসিফা বেগম চোখের পানি লুকিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল ! মনে মনে বলল তার জ্ঞানী ছেলে । একটু বদ মেজাজী এই যা ! তবে মা নিয়ে ভাল ভাল কথা তো লিখেছে ! এটাই কম কিসের !
রনকের মেজাজ টা খারাপ হয়ে আছে । বারবার একরম ঝামেলা তার ভাল লাগে না ! নিজের ঘরে অন্যের ঢুকা তার একদম পছন্দ না ! বিশেষ করে তার মায়ের হুঠাট করে ঘরে ঢোকাটা সে খুব অপছন্দ করে !
সে আবার পিসির সামনে বসলো ! সামনে রাখা চায়ের কাপে চুমু দিয়ে মা দিবস নিয়ে লেখা টা শেষ করলো টান দিল ! লেখা শেষ করেই বাধরুমে গিয়েছিল !
বেশ একটা আবেগী লেখা হয়েছে মা দিবস নিয়ে ! মানুষ খাবে বেশ !
ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দিল ! মা দিবসের বিশেষ পোস্ট !