somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতিপ্রাকৃত গল্পঃ বিড়ালী

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৫:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




এক
কদিন থেকেই একটা ব্যাপার লক্ষ্য করছি । রাত হলেই আমাদের বাড়ির সামনে কিছু বিড়াল এসে জড় হয় । তারপর অদ্ভুদ সুরে ডাকতে থাকে । শুনলে মনে হয় তাদের মনে হঠাৎ কোন দুঃখ এসে যুক্ত হয়েছে । তারা সবাই এক সাথে কাঁদছে । কিছুক্ষন কান্নার পরেই তারা যেন কোন কিছুর প্রতিবাদ করে উঠছে ।

ইভার সাথে সংসার শুরুর কদিন পরেই এই বাসাটায় উঠেছি । মাস খানেক হয়েছে । এখানে আসার কয়েক দিন পর থেকেই এই সমস্যা শুরু হয়েছে । আশে পাশে জিজ্ঞেস করে দেখেছি । তারাও ব্যাপার টা লক্ষ্য করেছে । তবে ঠিক কবে থেকে এমনটা শুরু হয়েছে এটা তারা বলতে পারবে না !
আরেকটা জিনিস আমার এখানে খানিকটা একটু অন্য রকম লেগেছে । সেটা হল আমাদের বাড়ির আসে পাশে প্রায়ই কোন মরা বেড়াল দেখা যায় ! আমি নিজে কয়েকটা দেখেছি । সব থেকে অবাক করে দেওয়ার বিষয় হচ্ছে প্রত্যেকটা বিড়ালের ঠিক পেটের কাছে একটা গর্ত থাকে । যেন কেউ সেখানে গর্ত করে কিছু বের করে নিয়েছে । সেই জন্য বিড়াল গুলো মারা গেছে !

মনেহয় এই জন্যই রাতের বেলার বিড়াল গুলো কাঁদে । যেহেতু বিড়াল গুলো আমাদের বাড়ির আসে পাশে মরে পড়ে থাকে এই জন্যই হয়তো বিড়াল গুলো কাঁদে এখানে এসে ।
প্রতি রাতে বিড়াল গুলো ডাকাডাকি করে আজকেও তেমন টা শুরু করেছে এমন সময় ইভা আমার দরজার কাছে এসে বলল
-এই !
আমি তখন পিসিতে বসে কাজ করছি । রাত জেগে থাকার অভ্যাস আমার অনেক দিনের । আমি পিসি থেকে মুখ তুলে বললাম
-হুম !
-ঘুমাবা না ?
-ঘুমাবো তো ! তুমি জেগে উঠলে কেন ?
-আমার ভয় করছে !
আমি হেসে উঠে বললাম
-কিসের ভয় ?
-দেখছো না বিড়াল গুলো কেমন করে ডাকছে ?
ইভার কিন্তু হাসলো না ! তার চোখে আমি ভয়ই দেখতে পেলাম । ঠিক বুঝলাম না কেন ইভা এতো ভয় পাচ্ছে !! আমি ওকে সাহস দেওয়ার জন্য বললাম
-আরে ভয় পাওয়ার কিছু নেই । ভয় পাওয়ার কি আছে ?

যখনই আমি কথাটা বললাম তখনই বাইরের বিড়াল গুলোর সুর যেন পাল্টে গেল । একটু আগেই যারা ছিল কান্নার সুরে শোকাহত এখন তারা প্রতিবাদী । যেন সামনের কোন শত্রুকে তারা দেখতে পেয়েছে । এখন তারা সবাই মিলে সেটার সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত !
ওদের আওয়াজের সুর পাল্টাতে দেখে ইভার ভয় যেন আরও একটু বেড়ে গেল ।
-এই, আমার ভয় করছে !
-আরে ! ভয় নেই ! আমি আছি না ? চিন্তা কর কেন ?

মেয়েটা এমন ভয় কেন পায় কেন কে জানে ? এতো বড় হয়েও মেয়ে কেমন বাচ্চা মেয়ের মত আচরন করছে । আমার অবশ্য মজাই লাগে । এমন করে ভয় পেলে ইভাকে কাছে ডেকে আদর করার একটা সুযোগ পাওয়া যায় ! আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় ইভা ইচ্ছে করেই এমনটা করে মাঝে মাঝে । আমার আদর পাওয়ার জন্য ।
আমি বললাম
-আচ্ছা, তুমি আমার কাছে এসে বস !
যেন এই কথা শোনার জন্যই অপেক্ষা করছিল । দরজা থেকে একেবারে যেন আমার কোলের উপর এসে বসলো !
-অনেক কাজ করেছো ! আর না ! এখন চল । আমার বুঝি ভয় করে না একা একা !

আমার মন টা এমনিতেই ভাল হয়ে গেল । এই মেয়েটাকে আমি মাস দুয়েক আগেও ঠিক মত চিনতাম না । আর এখন এই মেয়েটা ছাড়া আমি অন্য কিছু চিন্তাই করতে পারি না ।


দুই
মাঝে মাঝে অফিসের কাছে আমাকে ঢাকার বাইরে যেতে হয় । তখন বাসায় আসতে একটু বেশি দেরি হয় ! আমার নিজের জন্য অবশ্য কোন ভয় নেই । ভয়টা ইভার জন্য ! যদিও বাসায় একজন কাজের মেয়ে আছে তবুও মনটা ওর জন্য কেমন করে থাকে । বারবার মনে হয় ও একা একা বাসায় কি করছে কে জানে ?
বিড়ালের ডাকে কি আবারও ভয় পাবে ! কে জানে ।

গাড়ি নিয়ে যখন এলাকায় ঢুকলাম তখন ঘড়িতে প্রায় দুইটা বেজে গেছে । নিজের বাড়ি থেকে কিছুটা দুরে আসতেই কোন কারন ছাড়াই গাড়িটা বন্ধ হয়ে গেল । এমন একটা ভাব যেন কেউ ইচ্ছে করে গাড়ি থেকে গাড়ির চাবিটা বন্ধ করে দিয়েছে । এতোটা পথ আমি এলাম কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই কিন্তু বাড়ির কাছে আসতেই গাড়িটা বন্ধ হয়ে গেল ।

গাড়িটা আবার স্টার্ট দিতে গিয়ে আমার চোখটা সামনের দিকে গেল ! গাড়ির ভেতর থেকেই আমার বাড়িটা সম্পূর্ন দেখা না গেলেও বাড়ির সামনের বড় ওক গাছটা বেশ ভাল করেই দেখা যায় ।
গাছের নিচটা কেমন অন্ধকার মত । কিন্তু তার চারিপাশে একটা ফ্যাকাসে রকমের আলো ছড়িয়ে আছে । আমি গাড়িতে চাবি দিয়ে আরেকবার চালু করার চেষ্টা করলাম । ঠিক তখনই আমার চোখটা বড় গাছের কাছে । একটা ছায়া যেন আস্তে করে সরে গেল বাড়ি দিকে ।
একবার মনে হল আমি ঠিক মত দেখি নি । হয়তো আমার মনে ভুল ! কিন্তু অবচেতন মন বলল ইভার কোন বিপদ হল না তো ? নাকি হতে পারে !

আমি গাড়িটা যেখানে ছিল সেখানেই রেখে বাড়ির দিকে দৌড় দিলাম । গাড়ির দরজাটা ঠিক মত লেগেছে কি না সেদিকে আমার ঠিক লক্ষ্য নেই । যখন বাড়ির বাইরের গেটের কাছে পৌছলাম দেখি গেট খোলা । সন্দেহটা আরও দৃঢ় হল । কেউ নিশ্চই বাড়িট ভেতর ঢুকেছে । বাইরের গেটটার পরেই একটা বড় উঠান । উঠানের বাঁ দিকে রান্না ঘর ! তার পাশেই কল পাড় । তার পরেই বাড়ির সদর দরজা ! সেটা অবশ্য বন্ধ ! একটা ২৫ পাওয়ার লাইট সদর দরজার সামনে জ্বলছে ।

এখন যা ঘটেছে যেখানে দুইটা ঘটনা ঘটতে পারে । এক, যে গেট দিয়ে ঢুকেছে সে এই দরজা দিয়ে ঘরের ভেতরে ঘুকেছে । কারন গেট দিয়ে ঢুকলে বাড়ির দরজা দিয়ে না ঢুকে বাইরে যাওয়ার উপায় নেই । সব দিকে দেওয়াল দেওয়া ! আর দুই আমি যা দেখেছি সেটা ভুল । কেউ এদিকে আসে নি ।
আমি দরজায় জোরে ধাক্কা দিলাম । কলিংবেলে চাপ দেওয়ার কথা মনে এল না । দ্বিতীয়বার ধাক্কা দেওয়ার আগেই দরজা খুলে গেল । তাকিয়ে দেখি ইভা ভীত মুখে দাড়িয়ে !
-তুমি !
-কি হয়েছে ? ভয় পেয়েছো ? আমি এই আমি বাবু !
এই বলে ইভাকে জড়িয়ে ধরলাম ! ওর বুকের ধড়ফড়ানিটা আমি এখনও টের পাচ্ছিলাম ! আমি আবার বললাম
-কি হয়েছে ? ভয় পেয়েছো ?
-হুম !
-আর কোন ভয় নেই । আমি চলে এসেছি তো !
তবে একটা জিনিস দেখলাম যে আজকে বাইরে কোন বিড়াল ডাকছে না ! যেন আজকে তারা ছুটিতে গেছে ।


তিন
সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গলো ইভার উদ্দিগ্ন কন্ঠ শুনে ।
-কি হয়েছে ?
-পুলিশ এসেছে ?
-পুলিশ ? এখানে ? আমার কাছে ?
-হুম !
-কেন ?
-তুমি কাল রাত করে বাসায় এসেছো না ?
-তো !
-আমি জানি না । তুমি নিজেই গিয়ে দেখো ! আমার ভয় করছে ।

হাত মুখ ধুয়ে বসায় এসে দেখি দুজন পুলিশ বসে আছে । আমার পেছন পেছন ইভাও এসে দরজার এক কোনায় দাড়ালো । আমাদের ঘর ঢুকতে দেখেই দুজন উঠে দাড়ালো ।
-আপনি মিস্টার সাফিক রায়হান ?
-জি ! কোন সমস্যা ?
-আমি ইন্সপেক্টর রাসাত আহমেদ । আপনার সাথে কিছু কথা ছিল ।
-জি বলুন !
-আসলে গত কাল রাতে আপনাদের বাড়ির পাশে একটা মার্ডার হয়েছে ! সেই ব্যাপারে !
-তাই নাকি ? কখন ?
-এই আনুমানিক তিন টার দিকে । কিছু আগে পড়ে হবে !

আমি একটু চিন্তায় পরে গেলাম । আমার বাসায় আসার সময়ও তিনটার দিকেই ।
রাসাত আহমেদ বলল
-মার্ডারটা ঠিক স্বাভাবিক না ।
-কি রকম ?
-মানে ভিট্টিমকে কেন হত্যা করার পেছনে কোন কারন নেই । পাড়ার একজন সাধারন ফকির ! রাস্তায় থাকে । আর সব থেকে অস্বাভাবিক ব্যাপার হচ্ছে ভিট্টিমের ঠিক পেটের কাছে একটা ছিদ্র হয়ে আছে । কেউ যেন ধারালো আর গোল পাইপ জাতীয় কিছু দিয়ে তার পেটে আঘাত করেছে । এবং কিছু একটা বের করে নিয়েছে ।

আমি কি বলবো ঠিক বুঝতে পারলাম না ! আমার কেন জানি আমার বাড়ির সামনের মরে পড়ে থাকা বিড়াল গুলোর কথা মনে পড়লো । ওগুলোও পেটের দিকেও ঠিক একই ভাবে ফুটো ছিল ! কোন ভাবে কি এই দুইটার ভিতরে কোন সম্পর্ক আছে ?
রাসাত আহমেদ বলল
-আপনি কাল রাতে দেরি করে বাসায় এসেছেন । তাই না ?

আমার দেরি করে আসার খবে পুলিশ কোথা থেকে পেয়েছে কে জানে ! অবশ্য পুলিশ চাইলে কি না বের করতে পারে !
আমি বললাম
-জি !
-ওয়েল, যখন এসেছেন তখন কি অস্বাভাবিক কিছু দেখেছেন ?

একবার মনে হল সব কিছু চেপে যাই । কি দরকার ঝামেলা বাড়িয়ে ! কিন্তু তারপর মনে হল পুলিশের কাছে লুকিয়ে লাভ নেই । কোন না কোন ভাবে হয়তো তারা জেনে যাবেই । তখন আমি ঝামেলায় পড়বো ! গতকাল রাতে আমার সাথে যা যা হয়েছে তাই বললাম । আমার কথা শুনে দুজনের মুখই কেমন গম্ভীর হয়ে গেল !
যাওয়ার সময় রাসাত আহমেদ বলল
-আচ্ছা সাবধানে থাকবেন ! আপনি যেমন তাকে দেখেছেন সেও নিশ্চই আপনাকে কিংবা আপনার ওয়াইফকে দেখে থাকবে । সুতরাং আবার যে আসবে না তার কোন গ্যারান্টি নেই ।


চার
এই ঘটনার পরে ইভা যেন আরও বেশি আমার কোল ঘেষা হয়ে এল । প্রতিদিন আমাকে সন্ধ্যার আগে আগেই বাসায় আসতে হয় । ও সারাক্ষন আমার সাথে সাথে থাকে । ওর নাকি ভয় করে একা একা থাকতে ।
আমি মাঝে মাঝে আসলেই বেশ খানিকটা অবাক হয়ে যাই এই ভেবে যে এই মেয়েটা এতো দিন কই ছিল !! আমাকে ছাড়া যার একদিনও চলে না মাস দুয়েক আগে সে আমাকে ঠিক মত চিনতো না !

চট করে ফাগুনের উৎসবে ওর সাথে দেখা । সর্বমোট তিনবার দেখা হয়েছিল । চতুর্থ দিনে আমার মনে এই মেয়ের সাথে আমার বিয়ে না হলে আমি আর বেঁচে থাকবো না !

ঠিক যেন মেয়েটাও আমার মনের কথাটাই অনুভব করতে পেরেছিল । আত্মীয় স্বজনের ঝামেলা নেই আমার মত সেও বড় হয়েছে এতিম খানায় ! এই জন্যই বোধহয় ওর সাথে আমার মনের মিলন টা আরও বেশি হয়েছিল চট করেই ।

যাক ঘটনা আরও খারাপের দিকে গেল । পরবর্তি সাত দিনে আরও চারটা খুন হল এবং একই ভাবে পেটে ফুটোওয়ালা ।

কয়েক জন আমার কিছু দেখতে পেলো ! সাইজে একটু বেটে টাইপের । লম্বা চুল গায়ে কালো লোমে ঢাকা ! সবাই অন্ধকারে এরকম কাউকে চলে যেতে দেখলো । কিন্তু পুলিশ কাউকে খুজে পেল না !


ইভা তো আর এই এলাকায় থাকবে না বলে দিল । তার একই কথা যে সে কিছুতেই এই এলাকায় আর থাকবে না । কিন্তু চাইলেই তো চলে যাওয়া যায় না । ওকে কোন মতে বলে কয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে পুলিশ তাদের পাহারা বাড়িয়ে দিয়েছে । এখন আর কোন সমস্যা হবে না ! আর নতুন পছন্দ মত বাড়ি পাওয়াও মুশকিলের ব্যাপার !


কিন্তু পরিস্থিতি আরও বেশি খারাপ হয়ে গেল যখন পাহারারত পুলিশদের একজন মারা পড়লো । পত্রিকার হেড লাইন হল । সারাদিন সাংবাদিক পুলিশ আরও কত রকমের মানুষ এলাকায় ঘুরতে দেখা গেল কিন্তু রাত হলেও সবাই একদম চুপ । আগে পাড়ার মোড়ে মোড়ে বকাটে ছেলেদের যে আড্ডা বসতো সেটাও উঠে গেল । সন্ধ্যা হতেই সবাই যে যার আস্তানায় ! কেবল পুলিশের আনা গোনা বেড়ে গেল !


ইভার সারা দিন ভয়ে কুকড়ে থাকতো ! কারো সাথে ঠিক মত কথা বলতো না । কেমন যেন একটু একটু মন মরা হয়ে থাকতো । সব কিছুর উপরে সেই বিড়ালের কান্না যেন দিন দিন বেড়েই চলল ! আস্তে আস্তে বিড়ালের সংখ্যা যেন বেড়েই চলেছে !

অফিস থেকে সপ্তাহ খানের জন্য ছুটি নিয়ে নতুন বাসা খুজতে শুরু করে দিলাম । সারা দিন বাসা খুজি আর সন্ধ্যার আগে আগেই ফিরে আসি । ইভা সব টা সময় আমাকে জড়িয়ে বসে থাকে ।

যখন মনে হল পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যাবে ঠিক তখনই আরেকটা বড় দুর্ঘটনা ঘটলো । বড় ধরনেই দূর্ঘটনা !


পাঁচ
প্রতিদিনের মত আমি সেদিন ইভাকে জড়িয়ে ঘুমাচ্ছিলাম । ঠিক কখন যে ঘুম ভেঙ্গে গেল ঠিক মত বলতে পারবো না । ঘুম ভেঙ্গে দেখি ইভা পাশে নেই । একবার মনে হল ও মনে হয় বাধরুমে গেছে কিন্তু বেশ কিছু সময় পার হওয়ার পরেও যখন ইভা এল না আমি বাধরুমের দরজা ধাক্কা দিলাম আলতো করে ! ধাক্কা দিতেই দেখি সেটা খোলা । ভিতরে কেউ নেই !

একটু চিন্তা হল ওর জন্য ! যখন সারা ঘর খুজেও ওকে পেলাম না তখন আসলেই চিন্তাটা বেড়ে গেল ! রান্না ঘরে কাজের মেয়েটা শুয়ে ছিল সেও নেই । ঠিক তখনই একটা বিড়াল ডেকে উঠলো ! কেউ যখন কোন বিড়ালকে কোন কিছু দিয়ে বাড়ি দিলে বিড়ালটা যেরকম আওয়াজ করে ঠিক তেমন করে ! একটা আওয়াজ করেই চুপ ! আমার মনে কুঁ ডেকে উঠলো ।

আমার কেন জানি মনে হল আমাদের উঠানের বাইরে কেউ আছে । একটা আওয়াজ আসতেছে বাইরে থেকে । কেউ যেন খুব ধীরে ধীরে কিছু খাচ্ছে !
আমি ধীরে ধীরে সদর দরজার দিকে পা বাড়ালাম । সেটাও বন্ধ নয় ! বাতাসে আস্তে আস্তে দোল খাচ্ছে । আস্তে করে ধাক্কা দিতেই সেটাও খুলে গেল ।
দরজার উপরে ২৫ পাওয়ার লাইট জ্বলছে । সেই আলোতেই আমি পরিস্কার দেখলাম তা যদি আমি না দেখতাম তাহলেই মনে হয় ভাল হত !

আমাদের কাজের মেয়েটা উঠানে পড়ে আছে । ওর সারা শরীর দিয়ে রক্ত ভেসে যাচ্ছে । আঘাতের চিহ্নটা দেখা না গেলেও আমার মনে হল আমি জানি ওর শরীরের আঘাত টা কোন জায়গাটায় আছে । সেই একই জায়গায় ফুটো ! এবং স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে তার দেহে কোন প্রাণ নেই ।

ইভা ঠিক তার সেই ফুটোর ভিতর হাত ঢুকিয়ে দিয়ে কিছু বের করছে আর খাচ্ছে ! সেই খাওয়ার আওয়াজই আমি রান্না ঘর থেকে শুনতে পেয়েছিলাম ।
আমি কিছুটা সময় কোন কথা বলতে পারলাম না ! নিজের চোখটাকে যেন আমার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিলো না । চোখ দুটো যেন আমার কোটর থেকে বের হয়ে আসতে চাইছিল !

-ইভা !
একটু অস্ফুট আওয়াজ টা বের হয়ে এল মুখ থেকে । কিছুতেই আটকে রাখতে পারলাম !

ঝট করে ইভা আমার দিকে চোখ তুলে তাকালো । ওর মুখের নিচ থেকে রক্তের ধারা তখনই বয়ে যাচ্ছে ! ওর চোখ টা যেন আগুনের কোন গোলা !

ঘোরটা কাটতে একটু সময় লাগলো । ঘোর কাটতেই আমার মনে আমি এখানে নিরাপদ নই ! দরজার ভেতরে একটা পা দিয়েছি তখনই ইভার কেমন করুন কন্ঠে বলল
-আমি কি করবো ? আমার খুব ক্ষুদা লেগেছিল ! তুমি রাগ করো না । প্লিজ ! তুমি রাগ কর না ! বিড়ালের কলিজা আমার আর খেতে ভাল লাগে না ! লাগে না.....

কন্ঠটা ঠিক সেই আগের মত কিন্তু ওর চেহারাটা ...... ওফ! আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না ! আমার আদরের ইভার এই চেহারা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারলাম না !


আমি কি করবো কিছুই মাথায় এল না । ইভা আমার দিকে কয়েক পা এগিয়েছে ঠিক তখনই গুলির আওয়াজ শুনতে পেলাম !
ইভার আমার দিকে এগিয়ে আসাটা থমকে গেল ! ওক গাছের অন্ধকার থেকে আবছায়া আলোতে ইন্সপেক্টর রাসাত আহমেদকে চিন্তে আমার কষ্ট হল না ! দেখতে দেখতে বড় ওক গাছ টার পেছন থেকে বেরিয়ে এল হাতে উদ্ধত রিভালবার হাতে । তার পেছনে আরও কয়েকজন পুলিশ ! সবার হাতের অস্ত্রটা ইভার দিকে তাক করা !

কয়েক মুহুর্ত মাত্র । ইভার শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল ! সে বাঘের মত ক্ষিপ্ত গতিতে বাঁ দিকের দেওয়ালটা এক লাফে টপকে চলে গেল !

আমি রাসাত আহমেদ সহ বাকি সবাই কেবল বোকার মত কেবল তাকিয়ে রইলাম ওর চলে যাওয়ার দিকে । এতো দ্রুততার সাথে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া কোন মানুষের পক্ষে কোন ভাবেই সম্ভব না ! এবং এতো উচু দেওয়ালও টপকানো খুব একটা স্বাভাবিক ব্যাপার না !



পরিশিষ্টঃ
ইভাকে আর খুজে পাওয়া যায় নি । ও যে দেওয়াল টপকে সেই রাতে সেই যে চলে গিল আর ফিরে এল না । রাসাত আহমেদের মতে তার ছোড়া গুলিটা তার গায়ে লেগেছিল এবং এই গুলো খেয়ে তার বেঁচে থাকার কথা না !
সে ইভা সম্পর্কে আমার কাছে আরও কিছু জানতে চেয়েছিল কিন্তু অবাক করার কথা আমি নিজে ইভার সম্পর্কে কিছুই জানি না । কোন দিন জানার আগ্রহ হয় নি ! ওর সাথে সেই ফাল্গুলের উৎসবে দেখা । তারপর আরও কয়েক জায়গায় ঘন ঘন দেখা । ব্যস ! এই টুকুই জানি ! ও এতিম খানায় বড় হয়েছিল কেবল ইটুকুই জানতাম ! আর কিছু জানার আগ্রহ হয় নি ।

আমি এলাকা ছেড়ে অন্য কোথাও যায় নি । ইভা চলে যাওয়ার পরে বিড়ালের কান্নাটও কমে গেল আস্তে আস্তে । পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এল ধীরে ধীরে ।
তবে এখনও মাঝে মাঝে রাতের বেলা আমি বিড়ালের কান্না শুনতে পেতাম মাঝে মাঝে । তখন মনে হত কোথা থেকে কোন এক জোড়া আগুন চোখ আমাকে লক্ষ্য করছে ! বড় পরিচিত সেই চোখ জোড়া !





২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×