-কই তুই ।
-শুয়ে আছি !
-কেন ?
-আরে আজিব, মানুষ শুয়ে থাকে কেন ?
-বাইরে বের হবি না ?
-না !
-সেকি ! আজকে আমাদের বাইরে বের হওয়ার কথা ! কালই না কথা হল !
আমি কিছুটা সময় দম নিলাম । কিছু কথা এখনই বলা দরকার নয়তো পরে আর বলা হবে না !
আমি বলল
-শোন ! আমি তোর নকল বয়ফ্রেন্ড হতে হতে ক্লান্ত হয়ে গেছি । আর না ! তুই বুঝতে পারছিস না যে এমন ভাবে তোর সাথে মিশতে থাকলে তোর উপর আমি আমার ইমোশনকে কন্ট্রল করতে পারবো না ?
ওপাশ থেকে কোন কথা শোনা গেল না ! আমি আবার বললাম
-রাখি ! পরে কথা বলবো !
আমি ফোন রেখে আমার ঘুমাতে গেলাম । ঘড়িতে প্রায় ১১ টা বাজে । অন্য দিনে এই সময়ে ক্যাম্পাসে থাকি কিন্তু আজকে বাইরে বের হব না বলে ঠিক করেছি । নিজের সাথে কিছু বোঝাপড়া দরকার !
সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল কিন্তু আসল ঝামেলা টা শুরু হল যখন নিশির ব্রেকআপ হল সাহেদ ভাইয়ের সাথে । প্রথম কয়েকদিন ঠিকই ছিল সব । আমরা বন্ধুরা মিলে ঠিক করলাম ওদের আবার মিল করিয়ে দেওয়া যায় নাকি সেই চেষ্টা করবো ।
কিন্তু সেই পথে যাওয়ার আগেই একদিন নিশি আমার কাছে এসে বলল
-আমার জন্য তোকে একটা কাজ করতে হবে !
-কি কাজ ?
-আমার বয়ফ্রেন্ড হতে হবে !
আমি আকাশ থেকে পড়ার ভান করে বললাম
-মানে কি ? কি বলতে চাস তুই ?
-কোন কিছু বলতে চাই না । কেবল বলতে চাই আজকে থেকে তুই আমার বয়ফ্রেন্ডের ভূমিকায় !
আমি প্রথমে ভেবেছিলাম ও মনে হয় আমার সাথে ঠট্টা করছে । কিন্তু না, ভুলটা ভাংলো আরও দুদিন পরে । হঠাৎ করেই নিশি আমাদের বাসায় এসে হাজির । এর আগেও ও আমাদের বাসায় এসেছে তবে সেটা আড্ডার সময় ! সাথে আরও কয়েকজন ছিল । একা একা এই প্রথম নিশি আমাদের বাসায় এসে হাজির !
এবং একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম নিশি আজকে একটু অন্য রকম ভাবে এসেছে । একটু যেন বেশিই সাজগোজ দিয়েছে । চোখের কাজলটাও স্পষ্ট চোখে পড়ছে । আবার হাতে মেহেদীও দিয়েছে ।
আমি কিছুটা সময় ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম । তাকাতে যে খারাপ লাগছিল না সেটা স্বীকার করতে কোন দ্বিধা নেই ।
মায়ের সাথে কিছু টা সময় গল্প করে আমার ঘরে চলে এল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কি এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন ?
-তোকে দেখছি ! সুন্দর লাগছে ।
-যাক ! তোর চোখে ভাল লেগেছে তার মানে অন্যের চোখেও লাগবে !
-মানে কি !
-কোন মানে নেই ! দেখি খাটের উপর সব তো ভাল করে !
তারপর নিশিও আমার পাশে বসলো । একটু বেশি কোল ঘেসে ! ওর শরীরের মিষ্টি গন্ধ আমার নাকে এসে লাগলো ! সত্যি বলতে কি এই অনুভুতির কোন ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই !
আমার বুকটা কেমন ঢক করে উঠলো ! তারপর নিশি আমার মুখের কাছে নিজের মুখ টা এনে বেশ কয়েকটা সেলফি তুলল ! অন-লাইনে হারহামেসাই কাপলদের যেমন করে সেলফি তুলতে দেখা যায় ঠিক তেমনি ভাবে !
আমি কোন রকমে জানতে চাইলাম
-কি করছিস ?
-দেখছিস না !
-কিন্তু কেন ?
-ফেসবুকে দেব !
আমি আবারও আকাশ থেকে পরলাম । এই মেয়ে বলে কি ?
-তুই কি সত্যি সিরিয়াস !
আমার আসলে আসলে বুঝতে বাকি রইলো না যে নিশি কত খানি সিরিয়াস ! আসলে নিশি আমার সাথে এরকম একটা ছবি দিতে চাচ্ছে যাতে করে সাহেদ ভাই এইটা দেখে হিংসায় জ্বলে ওঠে !
তা না হয় বুঝলাম প্রাক্তন প্রেমিককে জ্বালাক কিন্তু আমার পেটে লাথি কেন ?
ক্যাম্পাসে একটা ইরিন কে বেশ কিছু দিন ধরে পটানোর চেষ্টা করছি যদিও মেয়েটা খুব বেশি পাত্তা দিচ্ছে না তবুও আশায় আছি কিছু একটা ঘটে যাবে ! এখন যদি এই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে ইরিন আর রাজি হবে না! কেবল ইরিন কেন অন্য কোন মেয়েই তো রাজি হবে না ।
খাইছে !
আমি কিছু বলতে মুখ খুলতেই নিশি বলল
-শোন, ইরিন না ফিরিন ঐ মেয়ে কোন দিন তোর বাগে আসবে না । বুঝলি ! ঐ মেয়ের আরও দুইটা বয়ফ্রেন্ড আছে ! আমি খোজ নিয়েছি !
-কিন্তু .......
-কোন কিন্তু না ! তুই ছাড়া আপাতত আর কেউ নেই । আমি কিছু শুনতে চাই না !
গবেষণায় দেখা গেছে প্রক্তন প্রেমিক প্রেমিকারা তাদের প্রাক্তন প্রেমিকা প্রেমিক দের সাথে অন্য কাউকে দেখলে ঠিক মত সহ্য করতে পারে না । নিজেই সরিটরি বলে আমার সম্পর্ক জোড়া লাগানোর চেষ্টা করে । নিশিও সম্ভবত এরকম কিছু চাইছে যেন সাহেদ ভাই নিজে এসে নিশির কাছে সরি বলে !
যাক বন্ধুর জন্য এই টুকু করাই যায় ! আমি আর না করলাম না । রাজি হয়ে গেলাম !
তারপর থেকেই ফেসবুকে আমার আর নিশির ছবিতে ভরে গেল । আমাদের এক সাথে ঘোরাঘুরির পরিমানটাও হঠাৎ করে বেড়ে গেল । যেখানেই যাই দুজের এক সাথের ছবি । ক্লাসের সবাই তো বটেই যারা আমাদের বন্ধু তারাও ভেবে বসলো যে আসলেই নিশির সাথে আমার কিছু একটা চলছে । নিশি অন্য কারো কাছে ব্যাপার টা গোপন রাখতে বলেছিল ।
কিন্তু আসল সমস্যায় পড়লাম আমি । একদিনের কথা । নিশি বলল
-আচ্ছা একটা কাজ করি !
-কি !
এই বলে ও ক্যামেরা বের করে আবার দিকে ঘেসে বসলো আরও ! আমার মনে হল আবার মনে হয় সেলফি তুলবে ! কিন্তু সে কেবল ছবি তোলাতেই সন্তুষ্ট নয়, নিশি আমার গালে আলতো করে একটা চুম খেল এবং সেটার ছবি তুলল !
ঘটনা যে এই দিকে যাবে আমি ভাবতেই পারি নি ! কিছু সময়ে ধরে আমি কোন কথাই বলতে পারলাম না । অনুভুব করলাম আমার বুকের ভেতর একটা অদ্ভুদ রকমের অুনুভুতি হচ্ছে ! এই অনুভুতির কোন তুলনা আমি কোন কিছুর সাথে করতে পারলাম না ।
পরদিনই সাহেদ ভাই আমার কাছে এসে প্রথমে খনিকটা হুমকির সুরে বলল আমরা যেটা করছি সেটা ঠিক না । আমি তার গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে এরকম ছবি দিতেছি মানুষ জন অন্য কিছু বলতেছে । তারপর এক পর্যায়ে নরম সুরে বলল যে সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে । সে এটাও বুঝতে পারছে আমরা যা করছি সেটা ওনাকে জ্বালানোর জন্য ! সে সরি বলতে প্রস্তুত !
মনে মনে বললাম যাক ঝামেলা তাহলে শেষ হল ! আমার এখন খুশি হওয়ার কথা । কিন্তু যখনই মনে হল নিশি আবারও সাহেদ ভাইয়ের কাছে চলে যাবে এই কথা মনে হতে আমার খুশি হওয়াটা কেন জানি মিলিয়ে গেল ! এর কারন আমি ঠিক মত বুঝতে পারলাম না !
নিশির কাছে সাহেদ ভাইয়ের ব্যাপার টা বলতেই ও যেন একদম তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো ! তারপর আমাকে বলল
-তুই কি ভেবেছিস আমি আর কোন দিন ওর কাছে ফেরৎ যাবো ? ফেরৎ যাওয়ার জন্য এসব করছি ?
-তাহলে ?
-শোন, সাহেদ আমাকে ছাড়ে নি আমি ওকে ছেড়েছি !
-মানে কি ?
-এটাই মানে ! আমি ও কাছে আর কোন দিন ফিরে যাবো না ! বুঝেছিস !
আমি কোন কথা বলতে পারলাম না । অনুভব করলাম যে নিশির যে সাহেদের কাছে আর যাবে না সেটা আমার কাছে বেশ খানিকটা আনন্দের সংবাদ ! তবে তাহলে নিশি আমার সাথে কেন এমন টা করছে !
কেন ?
কোন কারন কি আছে ।
আমি নিজের কাছেই কোন উত্তর খুজে পেলাম না ! একবার মনে হল যেমন চলছে চলুক । সময় তো খারাপ কাটছে । আসলেই কীন্তু সময়টা খারাপ কাটছে না !
আবার মনে হল এই ভাবে দিন যেতে পারে না ! একটা কিছুর বিহিত হওয়া ভাল । এভাবে আর কত দিন !
---
-শোন আমি তোর বাসার নিচে ! যদি ১০ মিনিট সময় দিলাম । এর ভিতর না এলে কিন্তু আমি উপরে আসবো !
-আমি যাবো না কোথাও !
-তুই যাবি তোর......
আমি কোন কথা বলে চুপ করে রইলাম !
নিশি আবার বলল
-প্লিজ আয় ! আমি অপেক্ষা করে আছি !
আমি তবুও চুপ !
নিশি আবার বলল
-তুই যদি না আসিস তাহলে আজকে সারাদিন আমি এখানে দাড়িয়ে থাকবো কিন্তু !
-আচ্ছা আসছি !
-তোকে যে নীল শার্ট টা কিনে দিয়েছিলাম সেটা পরে আসিস !
-আচ্ছা !
রিক্সা ক্যাম্পাসের আসেপাশে উদ্দেশ্যহীন ভাবে চলছে । ঘন্টা হিসাবে ভাড়া করা হয়েছে । আমি রিক্সা চড়া পর্যন্ত কোন কথা বলি নি ! নিশিও খনিকটা চুপ করেি রয়েছে ।
-তুই কি বললি সকাল বেলা !
কিছু বলি নি !
-সত্যি করে বল ! তুই কি আমার প্রেমে পড়তে শুরু করেছিস ?
-জানি না !
-তাহলে ঐ কথা কেন বললি ?
-এমনি !
-তাকা আমার দিকে ! আমার দিকে তাকিয়ে বল ! অন্য দিকে কেন তাকিয়ে আছিস কেন ?
আমি অন্য দিকেই তাকিয়ে রইলাম । জানি ওর দিকে তাকালে ও ঠিকই ধরে ফেলবে আমার মনে কথা ! নিশি দুহাত দিয়ে আমার মুখের দুদিকে ধরে ওর দিকে ফেরালো । কয়েক মুহুর্ত তাকিয়ে রইলো আমার দিকে !
আমি ঠিকই বুঝে গেলাম যা বোঝার ঠিকই বুঝে গিয়েছে !
নিশি বলল
-আসলে আমিই গাধা ! তা হলে এমন কেউ করে ! আমার আরও আগে বোঝা উচিৎ ছিল ! কবে থেকে ?
একবার ভাবলাম না বলি কবে থেকে । তারপর বললাম
-তুই যেদিন আমার গালে চুম খেলি তখন থেকে ......
-হুম ! বুঝলাম ! আমার আরও একটু সাবধান হওয়া উচিৎ ছিল !
-হুম ! তোর দোষ !
-আমার দোষ ? আমার ?
-তা নয়তো কি ? আমার দোষ !
-হ্যা ! এখন তো আমার দোষ দিবাই ! তোমরা ছেলেরা তো এই পারো ! এখনও পুরিপুরি প্রেমিকা হই নাই তার আগেই দোষারোপ করা শুরু করে দিয়েছো প্রেমিকা হয়ে গেলে তখন তো উঠতে বসতে দোষ ধরবা ! তোমাদের আমি চিনি না ! না !
এই বলে নিশি আরও চিৎকার করতে লাগলো ! রিক্সাওয়ালা কয়েকবার পেছন ফিরে তাকালো ! তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে নিশির কথাতে সে বেশ মজা পাচ্ছে !
রিক্সা যখন ক্যম্পাসে দিকে যাচ্ছিলো তখন হঠাৎ করেই দেখি সাহেদ ভাই রাস্তারপাশে একা একা বসে কি যেন ভাবছে ! নিশিই আমাকে দেখালো ! আমাকে দেখি বলল
-তোর সাহেদ কে একটা ধন্যবাদ দেওয়া উচিৎ !
-কেন ?
-না ও যদি সেদিন আমাকে সেই কথা গুলো না বলতো তাহলে আমি ওর আসল চেহারাটা দেখতে পারতাম না ! আর ওর সাথে ব্রেকআপ করতাম । আর ওর সাথে ব্রেক আপ না করলে তোর সাথে এভাবে রিক্সায় করে ঘুরতেও পারতাম না ! তাই না ?
-তাই না ? তা কি বলেছিলো সে ? আমাকে তো বললি না !
-বলবো না ! যদি তুই কোন দিন ঐ কথা বলিস তাহলে তোকেই ছেড়ে চলে যাবো ! মনে রাখিস !
আমি কেবল হাসলাম ! আমি জানি সাহেদ ভাই নিশিকে কি বলেছিল ! কি চেয়েছিল তার কাছে । সেদিন সাহেদ ভাই আমার কাছে দুঃখের কথা বলছিল সেদিনই আমি জেনেছি ।
আমি কোন কথা না বলে রিক্সাওয়ালাকে বা দাড়াতে বললাম ! আসলেই সাহেদ ভাইকে একটা ধন্যবাদ দেওয়াই যায় !