somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রিফাত আর জারিনের গল্প

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টেবিলে দুইটা প্লেটে ভাত দেখে দেখে রিফাত একটু অবাক হয়ে তার কাজের ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলো
-দুইটা প্লেট কেন ?
-আফাও খাইবো !
রিফাত এবার বেশ খানিকটা অবাক হয়ে বলে
-তোর আপা বাসায় ?
-হ !
-কখন এসেছে ?
-আজকা আফা বাসা থাইকাই বাইর হয় নাই !


রিফাতের মনের ভেতর একটু চাঞ্চল্য দেখা দেয় । এমন তো সাধারনত হয় না । জারিন তো এমনি এমনি বাসায় বসে থাকার মানুষ না । তাহলে কি ওর শরীর খারাপ হল নাকি ?
কাজের ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলো
-তোর আপার শরীর ভালো আছে তো ?
-জে !

কাজের ছেলেটি আর কোন কথা না বলে ভাত বেড়ে দিয়ে চলে যায় রান্না ঘরের দিকে । তার একটু পরে জারিন ওর স্টাডি রুম থেকে বের হয়ে আসে ।
রিফাতের প্রশ্ন জাগে জারিন ওর স্টাডি রুমে কি করে হঠাৎ ! ওখানে ওর কাজের তো তেমন কিছুই নেই । কিছু বই আছে । সাথে অফিসের কিছু ফাইল পত্র আর ওর কম্পিউটার । একটা ছোট্ট খাট আর বারান্দায় একটা রকিং চেয়ার । বিগত ছয় মাসে জারিন ওর স্টাডি রুমে ঢুকেছে কি না রিফাত মনে করতে পারে না !

রিফাতের দিকে তাকিয়ে জারিন মৃদু ভাবে হাসলো ! এমন হাসি দেখে যে কোন স্বামীর সারা দিনের ক্লান্তি সব কিছু দুর হয়ে যাওয়া কথা । কিন্তু নিজের বউয়ের এমন হাসি দেখে রিফাতের মনে হল কিছু একটা যেন ঠিক নেই কোথায় ! কিন্তু কি ঠিক নেই !

জারিন আজকে শাড়ি পরেছে । খুব সাধারনত ও শাড়ি পরে না । বড় কোন পার্টিতে না গেলে ওর জিন্স টিশার্ট কিংবা টপসই পরে সব সময় আজকে শাড়িতে জারিনকে অন্য রকম লাগছে ।
রিফাত বলল
-তোমার শরীর ঠিক আছে ?
-হুম ! কেন ?
-না মানে এই সময়ে বাসায় যে !
-কেন ? আমি কি বাসায় থাকতে পারি না ?
-না ! তা না ! রুটিনের ব্যতিক্রম তো ! তাই ! আর শাড়ি পরেছ দেখছি !

প্রথম কথা শুনে জারিনে মুখ টা একটু মলিন হয়ে উঠলো । দ্বিতীয় কথা টা শুনে মুখে একটা আনন্দের আলো দেখা গেল । রিফাতের কাছে জানতে চাইলো
-কেন ভাল লাগছে না ?
-আরে না না ! কি যে বল !
রিফাত তাড়াতাড়ি করে উত্তর দিল ! তারপর খাবার টেবিলে বসতে বসতে বলল
-তোমাকে শাড়িতে অনেক সুন্দর লাগছে ! তুমি তো শাড়ি পরই না তাই দেখাও হয় না আজকাল ! তাই জানতে চাইলাম আর কি !

জারিন ঠিক যেন এই কথা টাই শুনতে চাচ্ছিল রিফাতের কাছ থেকে । ওর মুখের হাসিটা আরও একটু বিস্তৃত হল । খাবার টেবিলের ঠিক রিফাতের মুখোমুখি বসতে বসতে বলল
-আচ্ছা এবার থেকে শাড়ি পরবো ! সব সময় । হবে ?

রিফাত আসলেই কিছু বুঝতে পারছে না ! কিছু একটা সমস্যা কি হয়েছে ! কোন প্রকার ঝামেলা ! গত সপ্তাহের কথা কাটাকাটির পরে জারিন ঠিকমত ওর সাথে এই কদিন কথাও বলে নি । আর আজকে হঠাৎ এমন আচরন কেন করছে !

আর এদিকে জারিনের কেন জানি খুব বেশি মজা লাগছে । বিশেষ করে রিফাতের অবাক হওয়া চেহারা টা দেখতে ভাল লাগছে । বেচারা কিছু বুঝতেও পারছে না ।
হঠাৎ করে কেন জারিন ওর সাথে এমন আচরন করছে । যে মানুষ টা ওর সাথে ঠিক মত কথাও বলতো না সপ্তাহ খানেক আগে আজকে সারাটা দিন সে ওর জন্য অপেক্ষা করেছে বাসায় ! এটা একটু অবাক করে দেওয়ার মত বিষয়ই বটে !


জারিনের সাথে রিফাতের বিয়েটা অনেক টা বিয়ে না বলে ব্যবসায়িক ডিল বলা চলে । বড় লোক বাপের উৎশৃঙ্খল মেয়ে বলতে যা বোঝায় জারিন ঠিক তাই । আগেও একবার বিয়ে হয়েছিল কিন্তু সেই বিয়েটা টেকে নি । স্বামীর সাথে বনিবনা হয় নি । মাস ছয়েকের মাথায় তাকে ছেড়ে চলে আসে জারিন !

এদিকে যতই বড়লোক আর আধুনিক হোক না কেন, এদেশে মেয়েদের বিয়ে না হওয়া কিংবা বিয়ের স্বামীর ঘর করতে না পারাটা মেয়েদের জন্য একটা কলংকই বটে । জারিনের বাবার মান সম্মানের প্রশ্নও আছে এখানে । সামনে কিছু না বললেও পিছনে অনেক কথাই বলে সেটা তার ভাল করেই জানা আছে ।
এই কারনে মেয়ের জন্য একটা গৃহপালিত স্বামীর ব্যবস্থা করলেন । ওনার নিজের অফিসেই ছোটখাটো চাকরি করে রিফাতের সাথে জারিনের বিয়ে দিয়ে দিলেন ।

কথা ছিল রিফাত যেন জারিনের কাজ-কারবারে সে খুব একটা নাক না গলায় ! রিফাতও সেটা মেনে নিল । উজ্জল আর নিশ্চিত ভবিষ্যতের কাছে এইটুকু ওর কাছে ছোটই মনে হল !

সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল ! জারিন চলছিল নিজের মত । রিফাতও চলছিল তার মত । প্রতিদিন অফিস সাথে প্রায় বিকেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা ! এভাবেই দিন চলে যাচ্ছিল !

কিন্তু গত সপ্তাহে রাতে বাসায় এসে দেখলো জারিন গম্ভীর মুখে সোফার উপর বসে আছে । ছুটির দিন গুলোতে রিফাতও একটু রাত পর্যন্তই বাইরে থাকে । নিজের ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দেয় বন্ধুদের সাথে ।
-কোথায় ছিলে তুমি ?
রিফাত একটা অবাক হয়ে জানতে চাইলো
-হঠাৎ এই প্রশ্ন ?
-জানতে চাইতে পারি না ?
-জানতে চাইতে পারো কিন্তু কেন জানতে চাইছো আমি ঠিক বুঝতে পারছি না ! জানতে চাওয়ার তো কথা না !

জারিন আর কিছু জানতে চায় নি । ও আসলে জানতে চাইতো না কিন্তু ঠিক তার আগের দিন গাড়িতে করে যাওয়ার সময় জারিন ওকে একটা মেয়ের সাথে রিক্সায় করে যেতে দেখেছিল । দুজন এমন ভাবে হেসে হেসে কথা বলছিল যেটা দেখে জারিনের কেন যেন মোটেই ভাল লাগে নি । এই কেন ভাল লাগে নি এই ভাবটা প্রথমে জারিন মোটেই ধরতে পারে নি । এমন তো হওয়ার কথা না ! জোর করে চিন্তা টা মাথা থেকে দুর করে দিতে চাইলেও কাজটা করতে পারলো না । শেষে একটা সময় আবিষ্কার করলো যে নিজের স্বামীর সাথে অন্য অন মেয়েকে দেখে জারিনের কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না ।



-তুমি ব্লগ লেখো ?
রিফাত চুপ চাপ ভাত খাচ্ছিল । জারিনের কথা শুনে খানিকটা চমকে উঠলো । তারপর বলল
-কি !
-বললাম তুমি ব্লগ লেখ ?
-তুমি কিভাবে জানলে ?
-জেনেছি যেভাবেই হোক ! লেখ, তাই না ?
-হুম !
-তোমার স্টাডি রুমে বসে তোমার ব্লগ পড়ছিলাম । সরি তোমার অনুমুতি না নিয়েই !

একটা অস্বস্থি রিফাতের মন জুড়ে প্রবাহিত হল । তবে সেটা খারাপ লাগার অস্বস্থি না ! একটা ভাল লাগার অস্বস্থি ! কিন্তু এর পরে জারিন যে প্রশ্ন টা করলো সেটা শুনে আসলেই জারিন একটু অবাক হয়ে গেল । সাথে সাথে একটু যেন লজ্জাও পেল !

জারিন বলল
-চারুলতা কে ?
রিফাত কোন রকমে বললল
-কেউ না ! এই লেখার একটা চরিত্র আর কি !
ওর মুখ দেখে যে কারো মনে হবে যে ও আসলেই একটু লজ্জা পাচ্ছে । যেন অনেক দিনের লুকানো কোন কথা কারো সাথে ধরা পরে গেছে ! জারিন কিছুটা সময় ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-আমি ?
যেটার ভয় ছিল জারিন ঠিক সেই কথা টাই বলে ফেলল । রিফাত ঠিক কি বলবে খুজে পেল না !
জারিন বলল
-আমি যখন ঘুমিয়ে থাকি তখন তুমি প্রায়ই আমার বিছানায় উঠে আমার দিকে তাকিয়ে থাকো, তাই না ? থাকো ?

রিফাত কোন কথা না বলে চুপ করে রইলো !



কিন্তু জারিনের তখন কোন কিছু করার ছিল না । বিয়ের প্রথম দিনই জারিন রিফাতকে বলে দিয়েছিল যেন ও কোথায় যায় কার সাথে মেশে এটা যেন তাকে প্রশ্ন না করা হয় । নিজের স্বাধীনতার বিষয়ে কারো কাছে জবাব দিতে সে পছন্দ করে না । এখন সে কিভাবে রিফাতের কাছে তার ঘোরাফেরার ব্যপারে প্রশ্ন করবে !

কিন্তু কোন ভাবেই শান্তি পাচ্ছিলো না মনে । শেষে আর উপায় না দেখে একটা প্রাইভেট ডিটেকটিভ লাগিয়ে দিল রিফাতের পেছনে ! রিফাত কোথায় যায় কার সাথে মেশে, বিশেষ করে ওর বন্ধুদের সাথে কি টাইপের কথা বার্তা বলে এসব খোজ খবর নেওয়ার জন্য ।
কিন্তু কোন খবর নিতে গিয়ে কোন খবর বেরিয়ে আসবে সেটা জারিন কোন দিন ভাবে নি । এমন কি প্রথমে ঠিক মত বিশ্বাসও করে নি । যখন প্রাইভেট ডিকেটিভ বন্ধুদের সাথে আড্ডার কিছু রেকর্ডেড অংশ শোনালো তারপর জারিন রিফাতের ব্লগটা পড়লো তখন ওর অবিশ্বাসের কোন কারন রইলো না । সেই সাথে এক অজানা অনুভুতিতে সারা দেহমন আছন্ন করে ফেলল !
জারিন নিজের ভেতরের এই পরিবর্তন টা ঠিক ঠিক বুঝতে পারছিল ! সেই সাথে অবাকও হচ্ছিল খুব ! অবাক হচ্ছিল এই ভেবে যে রিফাত এতো টা সময় চুপি চুপি ওকে কি পরিমান ভালবেসে এসেছে । বন্ধুদের সাথেও কথা বার্তায় ওর প্রসঙ্গে সব সময় পজেটিজ ছিল ।


রিফাত খাওয়া বন্ধ করে চুপ করে বসে আছে ।
জারিন বলল
-খাচ্ছো না কেন ?
-খাওয়া শেষ !
-মোটেই না ! পুরো প্লেট শেষ করবে ! তারপর উঠবে ! আর তুমি যদি মনে কর খাবার শেষ না করেই উঠে গেলে তুমি আমার কাছ থেকে বেঁচে যাবে তাহলে ভুল ভাবছো ! আজকে তোমার খবর আছে । আমাকে নিয়ে নিয়ে কি কি ভেবেছো আর আমাকে না জানিয়ে কি কি করেছো আজকে সব কিছু আমাকে বলতে হবে ! আমার চোখের দিকে তাকিয়ে !

রিফাত কি বলবে খুজে পেল না ! চুপচাপ ভাত মুখে দিতে লাগলো ! জারিন আবার বলল
-না ! চোখ লুকিয়ে লাভ নেই ! তোমার খবর আছে আজকে বুঝছো ! লুকিয়ে লুকিয়ে ভালবাসা তোমাকে দেখাচ্ছি মজা ! তোমাকে আজকে মজা বুঝাবো !! এই তাকাও আমার দিকে ! তাকাও বলছি !!





---------------]
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৪৪
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×