গল্পঃ অপাত্রে অনুভুতি !!
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
তিথির আম্মু এখন তিথির সাথে খুব মেজাজ গরম করে কথা বলার চেষ্টা করছেন কিন্তু কিছুতেই পারছেন না ! তবুও গলার যথা সম্ভব কঠিন করে বলেন
-তুই আর ঐ ছেলের সাথে মিশবি না ! এটাই আমার শেষ কথা !
শেষ কথা বলে তিথির আম্মু উঠে চলে গেল ! সে যদি আর কয়েকটা সেকেন্ড বেশি থাকতো থাকতো তাহলে ঠিকই টের পেয়ে যেত যে বকা শুনে তিথি যে মন খারাপ করে ছিল সেটা অভিনয় ! তিথির পক্ষে বেশিক্ষন মন খারাপের অভিনয় করে থাকা কষ্টের । মাঝে খানে খুব কষ্টে সে হাসি সামলেছে । যদি বকা খাওয়ার মাঝেখানেই তিথি ফিক করে হেসে দিত তাহলে ব্যাপারটা কেমন হাস্যকর হয়ে যেত !
তিথির আম্মু রুম থেকে বের হতেই আমি আয়নায় দিকে তাকিয়ে ফিক করে তিথি হেসে দেয় !
মনে মনে বলে আম্মু টা এমন কেন হয়েছে ? কিচ্ছু বুঝে না । বললেই কি একজনের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া যায় ! তাও আবার আবীরের মত একজন সাথে !
যখন তিথি এমন কিছু ভাবছে ঠিক তখনই তিথির ফোন টা বেজে উঠে ! রিং টোন টা শুনেই বুঝে গেল কে ফোন করেছে । আবারও মনে মনে বলে ছেলেটা কি ওর মনে কথা বুঝতে পারে ? কোন প্রকার টেলিপ্যাথি ব্যাপার স্যাপার কি আছে নাকি !
এর আগেও তিথি ব্যাপার টা লক্ষ্য করেছে । যখনই তিথির আবীরের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে কিংবা ওর কন্ঠ শুনতে ইচ্ছে করে ঠিক তখনই আবীরের ফোন চলে আসে । কেমন করে কে জানে !
তিথি আবীরের ফোন টা কেটে দিয়ে ফোন ব্যাক করে ! সব সময় এমনটাই করে ।
-হ্যালো !
তিথি হ্যালো বলবে, তার আগেই ওর মনে হল যেন আবীরের কোন কারনে মন খারাপ । ওর কন্ঠ এমন কেন শোনাচ্ছে ! কিছু কি হল ? হঠাৎ একটা অজানা আশংকায় ওর মন টা কেমন অস্থির হয়ে ওঠল !
-কি হয়েছে ?
ওপাশ থেকে কিছুটা সময় নিরবতা ! তারপর আবীর বলে
-না কিছু হয় নি তো !
-না ! অবশ্যই কিছু হয়েছে । তোমার কন্ঠ এমন কেন শোনাচ্ছে ? নিশ্চই কিছু একটা হয়েছে !
-আরে বাবা ! এতো চিন্তা কেন কর ? কিছু হয় নি ! আমাকে নিয়ে এতো চিন্তা কর কেন ? মাঝে মাঝে ভাল লাগে না !
তিথি কি বলবে ঠিক বুঝতে পারে না ! আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর চোখে পানি জমতে শুরু করেছে । এমন টা বারবার হয় । বাবা মায়ের কিংবা পরিচিত মানুষের কাছ থেকে কঠিন কথা শুনলে সেটা সহ্য করার ক্ষমতা ওর ভিতর খুব ভাল করেই আছে । কিন্তু এই ছেলেটাস কাছে একটু কঠিন কথা শুনলে কেমন জানি মনের ভিতর ঝড় শুরু হয় । মনে হয় সব কিছু ছেড়ে দিয়ে কোথায় চলে যায় !
ছেলেটা কি একটুও বুঝতে পারে না ওর এই অনুভুতির কথা গুলো ! আর ইদানিং ওর ব্যবহার গুলোও যেমন কেমন হয়ে গেছে । আর আগের মত নাই !
তিথির কিছুটা সময় লাগলো নিজেকে সামলানোর জন্য ! তারপর বলে
-আচ্ছা ! ঠিক আছে ! তোমাকে যে বসুন্ধারায় যেতে বলেছিলাম গিয়ে ছিলে ?
-হুম !
-হুম কি কথা ! তারপর ?
-তার আর পর নাই ! ওখানে কি আমাদের মত ছা-পোষা মানুষ গুলোর যাওয়া মানায় ?
-শুনো প্রতি দিন এক কথা শুনতে ভাল লাগে না ! যা দেখে আসতে বলেছিলাম দেখেছ ?
-আচ্ছা বাদ দাও তো !
-বুঝেছি ! তোমাকে বলে কোন লাভ নেই !
-আরে বাবা ! জিনিস পত্রের যা দাম ! ব্লেজার একটা পছন্দ হয়েছিল ! দাম কত জানো ? ৪২৩৫ টাকা ! এতো টাকা দিয়ে কেনা সম্ভব !
-হুম ! বুঝলাম ! আর ?
-আর কিছু না ! আচ্ছা বিকেলে দেখা হবে ! কেমন ! এখন রাখি !
তিথির ফোন রাখার পরেও আরও বেশ কিছুটা সময় কানে ফোন ধরে রাখলো । এমন একটা ভাব যেন ওপাশ থেকে ওর সুন্ধ পাচ্ছে ! ও যেন সেটা বুঝতে পারছে ।
ফোন রেখে তিঠির সবার আগে জারিন কে ফোন দেয় । ওর আর আবীরের সব থেকে কাছের বন্ধুদের একজন । জারিন নিশ্চই জানবে আবীরের কি হয়েছে ।
-কি হল রে তিথি ?
-এই আবীরের কি হয়েছে ?
-কেন ? ও তোকে কিছু বলে নি !
-না । কিছু বলে নি ! কি হয়েছে বল তো !
-আরে আর বলিস না ! একটু আগে ওর ফোন এসেছিল । ছিনকারীর খপ্পরে পরেছিল !
-সে কি কি বলিস ! তারপর ?
-তারপর আর কি !
-তারপর আর কি মানে ? ওকে কিছু করে নি ?
-তেমন কিছু করে নি । কেবল পকেটে যা ছিল নিয়ে গেছে । মোবাইল টাও নিয়ে গেছে ।
তিথি বুঝতে পারে কেন আবীরের মুড কেন অফ ছিল ! একটু সাবধান হবে না ! ভাগ্য ভাল যে কেবল জিনিস পত্রের উপর দিয়ে গেছে । যদি ছুরি টুরি মেরে দিতো তাহলে ? তিথি আর কিছু ভাবতে পারে না । কেবল চিন্তা টা মাথা থেকে বের দেওয়ার চেষ্টা করে ! কিন্তু কোন কাজ হয় না । কল্পনায় দেখতে পায় একজন কালো লোক আবীরের পেট বরারবর একটা ছুরি মেয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে । আবীর পেটে হাত দিয়ে রাস্তায় পরে আছে । একটু সাহায্যের জন্য চিৎকার করছে কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছে না ।
তিথি খানিকটা অসুস্থ্য বোধ করতে থাকে । এই ছেলেটার জন্য ওর এতো টেনশন হয় ও জানে না !
কেন এমন হয় ?
নাকি জানে ?
এসব কথা ভাবার মাঝে তিথির তার মাথায় অন্য একটা চিন্তা আসে ! যদি ওর সব কিছু ছিনতাই কারী নিয়ে যায় তাহলে সামনের পুরো টা মাস ও কিভাবে চলবে !
এমন কেন ছেলেটা !
বিপদে পড়েছে একটু বললে কি হয় ? সে কি তার একটুও কাছের মানুষ না ?
তিথির চোখে আবারও পানি আসতে থাকে !! সে সেটা আটকানোর চেষ্টাও করে না !
দুই
-কই তোমার মোবাইল টা দেখি ?
-কেন ?
-আহা ! দেখি !
আবীর কিছুক্ষন চুপ করে থাকে ! তারপর বলে
-মোবাইল নেই !
-মোবাইল কোথায় ? দুপুরে না আমার সাথে কথা বলেছিলে ?
-ম্যাচের একজন কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে কথা বলেছিলাম !
-তোমার নিজের মোবাইল কোথায় ?
আবীর আবারও এদিক ওদিক তাকাতে থাকে ! এই প্রশ্নের উত্তরটা সে ঠিক দিতে চায় না যেন !
তিথি বলে
-আচ্ছা আমি তোমার কাছে কেউ না ? আমাকে কেন বল নি যে তোমাকে ছিনতাই কারী ধরেছিল ?
আবীর আরও খানিকটা ইতস্তঃ করে বলে
-তুমি একটু বেশি চিন্তা কর ! তাই বলতে চাই নি ! এতো চিন্তা কেন কর ?
-তুমি বোঝো না আমি কেন এতো চিন্তা করি ! কেন এতো কেয়ার করি ?
আবীর কোন কথা না অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে ! তিথি কঠিন কন্ঠে বলে
-অন্য দিকে তাকাচ্ছ কেন ? আমার দিকে তাকাও ! আমার চোখের দিকে !
তারপর আবীর হাত ধরে শক্ত করে !
-এখন তুমি আমার সাথে যাবে !
-কোথায় ?
-জাহান্নামে ! আমার সাথে জাহান্নামে যেতে কোন সমস্যা আছে ?
-না ! আপাতত নেই !
আবার যখন আবীরকে ওর বাসায় সামনে নামিয়ে দিল তখন ১০ টা বেজে গেছে !
-এতো গুলো কেনা কাটা না করলেও কিন্তু চলতো !
-চুপ ! আর একবার বলেছো এই কথা তাহলে কিন্তু খবর আছে !
আবীর কেবল হাসে !
তিথির মন টা হঠাৎ করেই আরও ভাল হয়ে যায় । এমতেও আবীরের আসপাশে থাকলে ওর মন ভাল থাকে । আর যখন ও কোন কারনে হাসে তখন মন টা যেন আরও ভাল হয়ে ওঠে ! মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় যেন ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে ! কিন্তু লজ্জার কারনে পারে না !
আবীর বলে
-আমি কিভাবে তোমার ঋণ শোধ করবো বুঝতে পারছি না !
-আচ্ছা বাবা হয়েছে ! এখন চুপ থাকো !
এই বলে তিথি আবীরের হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিল !
-এটা কি আবার ?
-সামনে যে পুরো মাস পরে আছে সে দিকে লক্ষ্য আছে ! মাস যাবে কিভাবে ?
-আচ্ছা ব্যবস্থা করে নিবো !
-কি ব্যাবস্থা করে নিবেন শুনি ?
-ও আমি দেখবো ! তুমি রাখো তো !
-ঐ তো ! এর ওর কাছ থেইকা ধার নিবেন তো ! তা আমিই না হয় টাকা টা দিলাম ! ঠিক আছে !
আবীরের মুখ দেখে মনে হয় ও যেন কোন কথা খুজে পায় না !
-আর শুনো ! এর ভিতর থেকে ৩০০ টাকা আলাদা করে রাখা আছে । ওটা দিয়ে বাধরুমের জন্য একটা পঞ্জ কিনবে !
আবীর খানিকটা অবাক হয়ে বলে
-তোমার এইটাও মনে আছে ?
কদিন আগে কথায় কথায় আবীর তিথিকে বলেছিল ওর বাধরুমের পঞ্জের কথা ! সেটার ছিড়ে যাওরার কথা ! তিথি সেই কথাটাই ঠিক মনে রেখেছে !
তিথি কোন কথা বলে না ! কেবল মনে মনে বলে তুমি যদি জানতে আমি আরও কত কিছু মনে রেখেছি ! যদি তুমি একটু বোঝায় চেষ্টা করতে। কিন্তু তেমন কিছু বলে না !
-আচ্ছা রাত হচ্ছে ! যাই কেমন !
-সাবধানে যেও !
আবীর কয়েক কদম হেটেছে ঠিক তখই আবারও পেছন থেকে তিথির ডাক শুনতে পায় । তিথির গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে এসেছে ততক্ষনে !
-কি হল আবার ?
-এই টা নাও !
তিথি ওর আইপড টা আবীর দিকে দিকে বাড়িয়ে দিল !
-আরে ! কেন ?
-আহা ! নাও না কেন ? তুমি সেদিন বলছিলে না তোমার এমপি ফোর টা নস্ট হয়ে গেছে !
-দেখ..... আরে যে মোবাইলটা কিনে দিয়েছো এটাতে গান শোনা যায় ! বাড়তি করে আই পডের দরকার নেই !
-আমি বলছি আছে !
-না নেই !
-মাইর খাবা ! বলেছি না ! আছে !
-আচ্ছা ! মানুষ জন শুনলে কি বলবে বল তো ?
-মানুষ জনের কেয়ার কবে থেকে কর শুনি ? তোমার কাছে কে বেশি গুরুত্বপূর্ন ? আমি নাকি মানুষ জন ?
-তুমি !
-তাহলেই হয়েছে ! এই নাই ! এখানে আমার পছন্দের কিছু গান ভরে দিয়েছি ! রাতে শুনো ! কেমন !
তিথি আবীরের হাতে ওর আইপড টা তুলে দিয়ে আবারও গাড়ির দিকে রওনা দিল ! দরজা বন্ধ করে যখন গাড়ি জানালা দিয়ে মাথা বের করলো তখন হঠাৎ করেই ওর মন খারাপ হল খানিকটা !
আবীর ততক্ষনে গেট দিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে পরেছে । তিথি ভেবেছিল জানলা দিয়ে মুখ বের করলেও ও ঠিকই দেখতে পারে যে আবীর ওর দিকে তাকিয়ে আছে । যতদুর পর্যন্ত ওর গাড়ি দেখা যাবে আবীর ঠিক ওর দিকে তাকিয়ে থাকবে !
পরিশিষ্টঃ
-মামা, এই নাও তোমার মোবাইল !
-লাগবে না !
-লাগবে না মানে কি ?
-এই দেখ !
-একি মাম্মা নতুন মোবাইল ! কবে কিনলা ? কত নিলো ! আজকে দুপুরে তোমার মোবাইল খানা নিয়ে একটু বাইরে গেলাম আর এরই ভেতরে নতুন মোবাইল !!
-বুঝতে হবে !
-আইপড ও দেখি কিনছো ?
আবীর কোন কথা না বলে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় ! আগামী কাল ওর জন্য একটা বিশেষ দিন । অনেক দিনের পরে নামিলার সাথে দেখা হতে যাচ্ছে । আজকের আগেও একটু টেনশনে ছিল । ওর সাথে কিভাবে দেখা করতে যাবে কি নিয়ে যাবে । কি পরে যাবে ।
আপাতত সব সমস্যার সমাধান হয়েছে । হাতেও টাকাও এসেছে বেশ কিছু ! মেয়ে গুলো এটো বোকা কেন হয় ! আবীর মনে মনে হাসে !
এখন আগামী দিন টা সব প্লান মোতাবেক গেলেই হয় !
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?
স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন