গল্পঃ নামিলা আর আমার গল্প
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
-একটু বাইরে বের হবা ?
-বাইরে মানে ?
-বারান্দায় আর কি ! যদি সমস্যা না থাকে !
নামিলা বলল
-বারান্দায় বের হওয়া সমস্যা না কিন্তু কেন ?
-আসলে তোমার এলাকায় এসেছিলাম । ভাবলাম তোমার সাথে দেখা করে যাই । মানে তোমাকে একটু দেখে যাই আর কি ! বের হবা ?
নামিলার উত্তরের জন্য আমি অপেক্ষা করি । ও হয়তো একটু রাগ করতে পারে । অথবা একটু বিরক্তও হতে পারে । তবুও আমি একটু অপেক্ষা করি । আর তাকিয়ে থাকি ওর বারান্দাটার দিকে ।
বেশি সময় অপেক্ষা করতে হল না । নামিলাকে বারান্দায় বেরিয়ে আসতে দেখলাম । পরনে একটা সাদা রংয়ের টিশার্ট আর জিন্স ! আমার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়লো । আমিও হাত নাড়লাম ।
তখনও ও ফোনেই আছে । আমি বললাম
-আচ্ছা, আমি যাই । কেমন ?
-কি কাজে এসেছিলে এদিকে ?
-এই, একটা কাজ ছিল !
আসলে কোন কাজ ছিল না । আমি এতো দুর এসেছি কেবল ওকে একটু দেখার জন্য । কোন কারন নেই । হয়তো কোন আশাও নেই । নামিলা আমার ভালবাসার আহবান প্রত্যাখান করেছে । আমার ভালবাসা গ্রহন করে নি । ওকে একটু দেখতে আসার হয়তো কোন মানে নেই । তবুও আসলাম । কেন আসলাম আমি জানি না ।
এই যুগের মতামত হল যে তোমাকে পাত্তা দিবে না তার পিছনে সময় নষ্ট করার কোন মানে নেই । বরং এই সময় টা অন্য কারো পেছনে কাজে লাগাও, নতুন কারো পেছনে সময় দাও ! কিন্তু আমার কেন জানি অন্য কারো পেছনে সময় দিতে মন চায় নি ।
নামিলাকে চিনি এক অন-লাইনেই । একটা স্কেন্ডেল ঘিরে । অনলাইনের বেশ কয়েকজন সেলেব্রেটি ওর পেছনে বেশ কিছুদিন লেগেছিল । অনেক কথা ছড়িয়েছিল ওর নামের । তার অনেকটাই হয়তো সত্যি ! অনেকের সাথে নাকি ওর রিলেশন ছিল আরও কত কিছু ! হয়তো অনেক কিছুই সত্যি ! তবুও মেয়েটাকে সত্যিই ভাল লেগে গেল ।
কেন লেগে গেল কে জানে !
মেয়েটার সাথে টুকটাক কথা বলতাম প্রথমে ! তারপর নিয়মিত কথা হত । প্রায়ই ওর নামে কিংবা ওকে ইঙ্গিত করে কথা বলতে দেখতাম । মানুষ সেটা নিয়ে মজাও করতো ।
দিনে দিনে নামিলার ফ্রেন্ড লিস্ট ছোট হয়ে আসতে লাগলো ! আমার ভয় ছিল আমি আবার না কোন দিন বাদ পড়ি ! এভাবেই চলতে থাকলো । এক সময় আবিষ্কার করলাম যে মেয়েটাকে আমি বেশ পছন্দ করতে শুরু করেছি । কয়েকদিন দেখাও হয়ে গেল । বেশ হাসি খুশি আর মিশুক টাইমের মেয়ে !
এরপর একদিন বলেই ফেললাম মনের কথা । যখন বললাম ওকে ভালোবাসি নামিলা বলল
-তুমি কি আমার সাথে ঠাট্টা করছো ?
-না মোটেই না !
-বাজারে আমার নামে যে কথা গুলো ছড়ানো আছে সে গুলো তুমি শোনো নাই ?
-হুম শুনেছি ?
-তাহলে ?
-তাহলে আবার কি ?
-ও গুলো কিন্তু মিথ্যা না ! আমার কিন্তু আসলেই অনেক গুলো বয়ফ্রেন্ড ছিল ! আরও যে সব কথা আছে অনেক গুলোই কিন্তু সত্য ! তুমি বুঝতে পেরেছো আমি কি বলতে চাইছি !
আমি জানি নামিলা কোন অর্থে কথাটা বলেছে । আমি কোন কথা না বলে কেবল চুপ করে রইলাম । কেন জানি বুকের ভেতর একটা অচেনা কষ্ট হতে লাগলো । কল্পনার নামিলার সাথে অন্য কাউকে আনতেই একটা চিনচিনে ব্যাথা সারা মন জুরে ছড়িয়ে পড়লো ! অন্য কোন ছেলের হাত ধরে কিংবা অন্তরঙ্গ.....।
উফ ! আমি আর কিছু ভাবতে পারলাম না ! মাথা থেকে চিন্তাটা বাদ দিতে চাইলাম !
আমি আর কোন কথা না বলে ফোন রেখে দিলাম ! প্রায় সপ্তাহ খানেক পরে আজকে কি মনে ওকে একটু দেখে আসি । তাই হুট করে চলে এলাম ওর বাড়ির সামনে ! এভাবে আসা টা হয়তো ঠিক হয় নাই আমার !
নামিলা আবারও জানতে চাইলো কথা টা ?
-কি কাজে এসেছিলে ?
-একটা কাজ ছিল !
-তোমার কোন কাজ ছিল না । তুমি কেবল এতো দুর এসেছিলে আমার সাথে দেখা করার জন্যই ! তাই না ?
কিছুটা সময় চুপ করে থেকে বললাম
-হুম !
-কেন ?
-জানি না ! আচ্ছা আমি যাই কেমন ! বারান্দায় আসার জন্য ধন্যবাদ !
আর কিছু না বলে ফোন টা রেখে দিলাম । তারপর হাটতে শুরু করলাম যেদিক থেকে এসেছিলাম সে দিকে । বেশ কয়েকবার ইচ্ছে করছিল একটু ফিরে তাকাই । তাকিয়ে দেখি নামিলা বারান্দায় দাড়িয়ে কি করছে ?
এখনও কি আমার দিকে তাকিয়ে আছে নাকি ভিতরে চলে গেছে !!
কিন্তু নিজেকে খানিকটা শাসন করলাম । এমনিতেও আজকে অনেক বেশি দুর চলে এসেছি । এতো দুর আমার আসা মোটেও ঠিক হয় নি । মেয়েটার কাছ থেকে দুরে থাকতে হবে । দুরেই থাকা উচিৎ !
হঠাৎ কে যেন আমার কাঁধে হাত রাখলো ! ফিরে তাকিয়ে নামিলা হাপাচ্ছে । মনে হল ও একটু দৌড়ে এসেছে । আমি খানিকটা অবাক হয়ে বললাম
-তুমি ?
নামিলা আমাকে ধমক দিয়ে বলল
-ঢং কর ! কত বার ফোন দিয়েছি ?
হুম, ফোন রাখার পরে নামিলা বেশ কয়েকবারই ফোন দিয়েছে । আমি ফোন ধরি নি । কেন ধরি নি আমি বলতে পারবো না !
আমি বললাম
-ঢং না !
-তাহলে ? এতো দুর আসতে পারো আর ফোন ধরতে সমস্যা কি ?
আমি চুপ করে রইলাম ! এরপর নামিলা আমাকে খানিকটা অবাক করে দিয়ে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে চলল । সোজাসুজি ওদের বাসায় !
একটু যে আনন্দ হচ্ছিলো না তা কিন্তু না, সাথে সাথে একটু অস্বস্থিও লাগছিলো মনে মনে । এরকম ভাবে কারো বাসায় যাওয়াটা আমার কাছে যেন কেমন লাগছিল । তাও আবার একটা মেয়ের বাসায় !
কিন্তু ওকে যে বলব যে আমি যাবো না তোমার সাথে এইটুকু আমি বলতে পারলাম না । কিংবা বলতে চাইও না হয়তো !
বাসয়া ঢুকে আমার সোফার উপর বসিয়ে বলল
-তুমি এখানে চুপ করে বস ! আর টিভি দেখো আমি আসছি ।
পাঁচ সাত মিনিট পরে নামিলা এল । এরই ভিতর দেখলাম পরনের পোশাকটা বদলেছে । চুল করে আচড়েছে ।
আমার সাথে কথা বলার জন্য জন্য এতো আয়োজন ? আমার অস্বস্থি যেন আরও একটু বেড়ে গেল ! তাছাড়া আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল যে বাসায় কেউ নেই ! আমি প্রশ্ন টা করবো না করেও প্রশ্ন টা করেই ফেললাম !
বললাম
-বাসায় কেউ নেই ?
নামিলা যেন এই প্রশ্নটা শোনার জন্যই অপেক্ষা করছিল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কেন সবাই জানে তুমি জানো না ?
-মানে ?
-এই সময় আমার বাসায় কেউ থাকে না । বাবা মা দুজনেই অফিসে ! আমি একা । কেন অনেক কয়বারই তো এসব কথা অনেকের স্টাটাসে প্রকাশ পেয়েছে । দেখো নি ?
-হুম !
-তো এখন ?
-এখন কি ?
নামিলা হঠাৎ হাসতে শুরু করলো । আমি ওর ঠিক হাসার কারন টা ধরতে পারলাম না ।
নামিলা বলল
-খবরদার তুমি যে আমার বাসায় এসেছো এই কথা কিন্তু আবার কাউকে বল না । তাহলে আবার নতুন গল্প শুরু হবে !
-মানে কি ?
-তুমি এতো মানে মানে কি কর কেন ? সহজ কথা সহজ ভাবে বুঝো না ? নাকি বুঝেও না বোঝাও ভান কর ! ভেজা বেড়াল টাইপের !
-আমি ভেজা বেড়াল ?
-না তুমি শুকনা বেড়াল ! ম্যাও ম্যাও !
আমি বললাম
-যদি মানুষকে জানাই তাহলে সমস্যা ?
-আমার সমস্যা নেই । তোমার সমস্যা হবে না তো ?
-যদি বলে নেই তাহলে ?
-লোকে অনেক কথা বলবে !
-অনেকেই তো অনেক কথা বলে । সবার কথা শুনলে আজকে এখানে কেন আসতাম ! ।
-তাও একটা কথা ! আচ্ছা যা ইচ্ছা কর তোমার । কিছু খাবে তুমি ? দাড়াও তোমার জন্য কিছু বানিয়ে আনি ?
-না না কিছু লাগবে না !
-আরে লাগবে না মানে কি ? অবশ্যই লাগবে ! তুমি এখানে বস ! আমি আসছি !
নামিলা আমাকে রেখে আবার ভিতরে চলে গেল । রান্না ঘরের দিকে । কারন ওদিক থেকে টুকটাক আওয়াজ ভেসে আসতে লাগলো ! কি বানাচ্ছে কে জানে ? একবার মনে হল আমি নিজেই ওর সা থে রান্না ঘরে যাই ! কিন্তু ও আবার ব্যাপার টা কেমন করে নেবে কে জানে ? আমি ঠিক বুঝলাম না ! চুপচাপ টিভি দেখতে লাগলাম ।
এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো । সঙ্গে সঙ্গে আমার মন টা কেমন করে যেন করে উঠলো । কে এল ?
আমাকে এখানে দেখে আবার কি মনে করবে ?
এরকম হাজার টা চিন্তা যখন মাথায় কাজ করছে তখন রান্না ঘর থেমে নামিলা বলল
-এই দেখো তো কে এসেছে ?
-আমি দেখবো ?
-আর কেউ আছে ?
আমি ভয়ে ভয়ে দরজা খুলতেই দেখলাম চশমা পরা এক মহিলা দরজার সামনে দাড়িয়ে । চেহারা দেখে আমার একটুও বুঝতে কষ্ট হল না যে ইনি নামিলার আম্মু !
আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি কে ?
তাই তো আমি কে ? কি বলবো ? কি উত্তর দিবো ?
-আমি !!! ! আমি নামিলার....
-বন্ধু ?
-জি !
-আচ্ছা ভাল ! এই ব্যাগ গুলো ভেতরে ঢুকাও তো ! বাব্বাহ ! হাপিয়ে গেছি !
এই বলে নামিলার আম্মু ঘরের ভিতর ঢুকে পরলো আমাকে পাশ কাটিয়ে ! আমি খানিকটা অবাক হলাম । নিজের মেয়ের বাসায় অন্য কোন ছেলেকে দেখলে যে কোন মা বাবার ব্যাপার টা স্বাভাবিক ভাবে নেওয়ার কথা না । কিন্তু নামিলার আম্মু এখন স্বাভাবিক ভাবে নিল যে এটা কোন ব্যাপারই না !
আমি ব্যাগ নিয়ে যখন ঘরের তিতর ঢুকলাম দেখি নামিলার আম্মু সোফার উপর বসে বিশ্রাম নিচ্ছে । এদিকে নামিলাও রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে । আমার হাতে ব্যাগ গুলো দেখে নামিলা বলল
-আম্মু ! তুমি আমার বন্ধুকে কাজের ছেলে বানিয়ে দিলে ?
-আরে কাজের ছেলে কেন হবে ? মেয়ের বন্ধু তো ছেলের মতই নাকি ? মায়ের জন্য এটুকু করবে না ?
-ও প্রথমবারে মত এসেছে আমি তুমি !
আমি তাড়াতাড়ি করে বলল
-আরে সমস্যা নেই তো ! এটা কোন ব্যাপার না !
আমি খানিকটা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম নামিলার আম্মু আমার সাথে এমন ভাবে কথা বলতে লাগলেন যেন তিনি আমাকে কত দিন ধরে চিনেন ! আমার কত টা পরিচিত ! আমি সত্যই অবাক না হয়ে পারলাম না । কোন প্রকার সংকোচ দেখলাম না !
বিকেল টা অনেক বেশি চমৎকার কাটলো ! যখন বাইরে বের যাবো আন্টি বলল যেন আমি সময় পেলেই ওনাদের বাসায় আসি ! নিচের গেট পর্যন্ত নামিলা আমাকে এগিয়ে দিতে এল !
আমি যখন দরজা দিয়ে বের হয়ে যাবো তখন নামিলা আমাকে বলল
-সাবধানে যেও, ঠিক আছে ?
-হুম !
-আর বাসায় গিয়ে ফোন দিও !
-আচ্ছা ! একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ?
-হুম !
-আমার প্রস্তাব টা কি আরেকবার ভেবে দেখবে ?
-দেখতেই হবে !
-হুম !
-আচ্ছা ! ভেবে দেখি !
আমি হাটা দিলাম নিজের পথে । এবার আর নিজেকে সংবরন করলাম না পেছন ফিরে তাকানোর থেকে । যতবার সম্ভব পেছনে ফিরে তাকালাম । ততবারই দেখি নামিলা গেটের কাছে দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে !
হাসি মুখে....
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?
স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন