-স্যর আপনার এখানে আসাটা জরুরী !
ডিআইজি প্রিজন আরাম করে ঘুমাচ্ছিলেন । তখনই বিছানার পাশে রাখা টেলিফোনটা বেসুরো ভাবে বেজে উঠলো ! খান খান করে রাতের নিরবতা ভেঙ্গে দিল । সাথে সাথে প্রিজন ডিআইজির ঘুম থেকে জেগে উঠলো ।
হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে নিজের পরিচিত জুনিয়র অফিসারের কন্ঠস্বর শুনতে পেলো ।
-স্যর আপনার এখানে আসাটা জরুরী !
-এখন ?
-জি স্যর !
-কটা বাজে তোমার হিসেব আছে ?
-স্যর প্লিজ আপনি যতদ্রুত সম্ভব এখানে আসুন ! কিছু আর্মি কর্পোরাল কারাগারে ঢুকার চেষ্টা করছে । তাদের সাথে সর্বোচ্চ পর্যায়ের আদেশ আছে । কিন্তু কোন প্রকার কাগজ পত্র দেখাচ্ছে না তারা ! আমরা তাদের কে গেটের কাছে আটকে রেখেছি ।
ডিআইজি প্রিজনের ঘম ছুটে গেল মুহুর্তেই । তিনি জামা কাপড় পরে দ্রুত কারাগারের দিকে রওনা দিলেন ! সেখানে পৌছে গিয়ে দেখেন অবস্থা বেশ খারাপের দিকে । কালো পোষাক পরা কিছু অস্ত্রধারী গেটের কাছে অপেক্ষা করছে অধীর হয়ে । তাদের মুখে এক অধৈর্য্য এবং বেপরোয়া ভাব !
ডিআইজি তাদের কাছে যেতে একজন সামনে এগিয়ে এল !
-আমি মুসলেহউদ্দিন ! দেশের সর্বোচ্চ স্থান থেকে আমাকে এখানে পাঠানো হয়েছে । আশাকরি আপনি আমাদের কাজে বাঁধা হয়ে দাড়াবেন না !
ডি আইজি কি বলবেন ঠিক বুঝতে পারলেন না । এমনিতেও দেশের অবস্থা খুব বেশি ভাল না ! ক্যান্টোর্মেন্টের ভিতরের অবস্থা নাকি আজকাল ভালো যাচ্ছে না !
মুসলেহউদ্দিন আবার বলল
-আপনি পিএমের সাথে কথা বলুন ! দ্রুত ! আমাদের হাতে সময় কম !
ডিআইজি কি করবেন কিছুক্ষন চিন্তা করলেন । এদের কে এখানে উনি আটকে রাখতে পারবেন বলে মনে হয় না । তিনি নিজের অফিস থেকে পিএমের কাছে ফোন দিলেন !
-আমি ডিআইজি কেন্দ্রীয় কারা গার থেকে বলছি ! মাহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে একটু কথা বলতে চাই !
অপাশ থেকে একজন বলল
-একটু ধরুন !
ঠিক ৪৫ সেকেন্ড পরে রাষ্টপতি মোশতাক ফোন ধরলেন ! তিনি এতো রাতে ফোন করার কারন জানতে চাইলে ডিআইজি বললেন
-স্যর কয়েকজন আপনার রেফারেন্স কারাগারে প্রবেশ করতে চাইছে ! আমি কি তাদের প্রবেশ করতে দিবো ?
ফোনের ওপাশ টা কিছুটা সময় নিরবতা ! তারপর রাষ্ট্রপতি মোশাতাক বললেন
-Let them do whatever they want.
-স্যার আপনি কি নিশ্চিত ?
-শুনুন আপনাকে যা করতে বলা হয়েছে আপনি তাই করুন !
ডিআইজি জুনিয়র অফিসার টিকে কেন্দ্রীয় কারাগারের দরজা খুলে দিতে বলল । সাথে সাথে এও বলল যেন ওদের কাজে কোন প্রকার বাধা না দেওয়া হয় । প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে অর্ডার এসেছে ।
খুলে গেল কারাগারের মূল ফটক। চত্বরে প্রবেশ করে কালো পোশাকধারীর নেতৃত্বে অস্ত্রধারী ৪ জন সৈন্য। তাদের মধ্য নেতা রিসালদার মুসলেহউদ্দিন পায়ে পায়ে এগিয়ে চলল একটি বিশেষ প্রিজন সেলের দিকে ।
বিশেষ প্রিজন সেলটির কাছে মুসলেহ উদ্দিন দেখেন তাদের যে চার জনের খোজে তারা এসেছিলেন দুটি পৃথক সেলে তাদের রাখা হয়েছে । তাদের কে দেখেই মুখে একটা কুটিল হাসি দেখা দিল মুসলেহউদ্দিনের । পাহাড়াদার কে বলে দুটি সেলের তালা খোলা হল । তারপর চার জন একটি সেল একত্র করতে নির্দেশ দিল !
এর আগেও এরকম কাজ কাজ করে সে অভ্যস্ত কিন্তু আজকের এই কেন্দ্রীয় কারাগারের ভিতর এই বিশেষ মিশনে এসে মুসনেহউদ্দিনের যেন তার আসল পৈশাচিক রুপ টা দেখা প্রস্তুতি নিল !
মুসলেহউদ্দিন এবং তার সঙ্গের বাকি কালো পোষাক পরা সৈন্যরা নিজেদের অস্ত্র চার জনের দিকে দিকে তাক করলো ! সামনের চার জন যেন কিছু বুঝতে পারছিলনো না । পৃথিবীর কোথাও বন্দী হিসাবে কোন মানুষ কে রাতের আধারে হত্যা করাটা চরম কাপুরুষতার প্রতীক হিসাবে ধরা হয় ! কিন্তু মুসলেহউদ্দিনের সেদিনে লক্ষ্য নেই !
মুসলেহউদ্দিনের প্রথম শব্দ উচ্চারণের সাথে সাথে গর্জে ওঠে ঘাতকের হাতের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র। ৬০ রাউন্ড গুলির পর সব কিছু স্তব্ধ।
সুনশান ।
নীরব ।
যাওয়ার সময় প্রিজন সেলের গেট টি তালা মেরে চাবি নিয়ে চলে গেল তারা !
পাশের বন্দীটি এতোক্ষন ভয়ে দেওয়ালের সাথে কান দিয়ে চুপ শুয়ে ছিল । ভয় ছিল ঘাতকেরা না আবার তার সেলেও প্রবেশ করে তার উপর গুলি চালায় ! কিন্তু ভারী বুটেও আওয়াজ দুরে সরে যেতেও মুখ তাকায় ! তার মত অনেকেই নিজেদের প্রিজন সেল থেকে উকি ঝুকি দেওয়া শুরু করেছে ।
ওদের সামনের গার্ড টি নিশ্চল মুখে দাড়িয়ে আছে সেলের সামনে ! সেও পাশের সেলটির সামনে যেতে সাহস পাচ্ছে না !
হঠাৎই সবাই শুনতে পেল কেউ যেন ব্যাথায় কাতর হয়ে পানি পানি বলে আওয়াজ করছে । আওয়াজ টি ভেসে আসছে পাশে সেল থেকে । কিন্তু সেখানে পানি দেওয়ার মত কেউ ছিল না । আস্তে আস্তে কন্ঠটি নিস্তেজ হয়ে নিশ্চুপ হয়ে যায় !