এক ছুটির বিকেলে ......
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
ভালবাসার মানুষকে ঘৃণা করা যায় কখনও ! হ্যা অভিমান করা যায়, তার উপর রাগ করে থাকা যায়, খুব বেশি হলে ঘৃণা করার অভিনয় করা যায় কিন্তু ঘৃণা করা যায় না । তাই তো জাবিনকে এতো দিন পরে দেখেও মনের ভিতর কেমন একটা উতলা ভাব সৃষ্টি হল । যদিও অনেক কিছুই বদলে গেছে, তবুও ।
জাবিনের মুখটা আর আগের মত নেই । বয়সের ছাপ পরেছে স্পষ্ট ! তবুও আমার কাছে যেন সেই তেমনটিই মনে হল । হাসলে ওর গালে একটা টোল পড়তো ! এখনও নিশ্চই পড়ে ।
আমার মনের কথা বুঝতে পেরেই মনে হয় জাবিন হেসে উঠলো । আমি এতো দুর থেকেও হাসিটা যেন স্পষ্ট দেখতে পেলাম । এক ভদ্রলোকের সাথে হেসে কথা বলছে । নিশ্চই ওর হাজব্যান্ড হবে । বিয়ে করে সুখে শান্তিতে বসবাস করছে নিশ্চই !
বুকের ভেতরের সেই কষ্ট খানা আবারও জেগে উঠলো ! আমার কেন জানি মনে হল এখানে থাকাটা আর উচিৎ হবে না । জাবিনের সাথে চোখাচোখি হলে আবার অন্য ঝামেলায় পড়তে হবে । কষ্ট টা আরও বেশি জানান দিবে । এদিকে নিম্মি তো রয়েছেই । এই দুইজন যদি সামনা সমানি এসে হাজির হয় তাহলে এদের সংঘর্ষে আমি ধ্বংস হয়ে যাবো । জীবনের স্বাভাবিক সুখ টুকু হারিয়ে যাবে নিমিষেই !
আমি পেছনে ঘরতে যাবো ঠিক তখনই নিম্মি এসে হাজির । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি কোথায় যাচ্ছো ?
-রুমে যাচ্ছি ! ভাল লাগছে না !
আমার কথায় যেন হায় হায় করে উঠলো নিম্মি ! বলল
-কি বল এই সব ? একটু পরে ফানুশ উড়ানো হবে আর তুমি এখন রুমে যাবো ! এখনও তো ঠিক মত সন্ধ্যাও হয় নি !
-আমার ভাল লাগছে না । শরীরটাও কেমন জানি করছে
-কই দেখি
এই বলে নিম্মি আমার কপালে হাত দিল !
-কই কিছু না তো ! শরীর তো ঠান্ডা !
-আরে জ্বর হয়েছে নাকি যে শরীর গরম হবে ? এমনি ভাল লাগছে না । তুমি দেখো অনুষ্ঠান ! আমি গেলাম ।
নিম্মিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাটা দিলাম হোটেলের দিকে । পেছন ফিরে চাইলে হয়তো নিম্মির অশ্রুভাজা চোখ দেখতে পাবো । আমার কাছ থেকে একটুও গরম কথা সে শুনতে পারে না । এখন নিশ্চই কেঁদে কেটে একাকার করবে ।
সমস্যা নেই । ওর সাথে ওর ছোট বোন আছে । খাালা-খালুও এসেছে আমাদের সাথে । কিছুটা সময় ওকে সঙ্গ দিতে পারবে । আমার এখন কিছুটা সময় একা থাকা উচিৎ ! এতোদিন পরে জেগে ওঠে কষ্টা টা ভুলার জন্য কিছুটা সময় একা পার উচিৎ !
ফানুষ উৎসব হোটেল থেকে একটু দুরে আয়োজন করা হয়েছে । হোটেলের করিডোরে হাটতে হাটতে হঠাৎ করেই লক্ষ্য করলাম কেউ একজন আমার রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে । আরেকটু এগিয়ে যেতেই অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম সেটা আর কেউ স্বয়ং জাবিন ! ওখানে ওকে একটা নীল রংয়ের শাড়ি পড়ে থাকতে দেখেছিলাম । হোটেলের পরিস্কার আলোতে দেখলাম রংটা ঠিক তেমন নীল নয় ! কি রং কে জানে !!
আর যাই হোক ওকে এখানে আশা করি নি !
আমাকে দাড়িয়ে পড়তে দেখে জাবিন বলল
-কি হল ? অবাক হলে খুব ?
-তুমি এখানে ?
-কেন আসতে পারি না ? এখন ছুটি মৌসুম চলছে । যে কেউই আসতে পারে এখানে । পারে না ?
-না মানে এখন, এই খানে ? তোমার না বীচে থাকার কথা ?
-ও ! তোমারও তো ঐ খানেই থাকার কথা ! চলে এলে যে !
আমি কি বলবো ঠিক বুঝতে পারলাম না । ওকে দেখেই যে চলে এসেছি এই কথাটা বলতে মন চাইলো না ।
জাবিন বলল
-আমাকে দেখে চলে এসেছো ?
-হুম !
জাবিনও দেখলাম চুপ করে গেল ! পুরো করিডোরে কেবল মাত্র আমরা দুজন । আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না ! দুজন মানুষ একটা দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে চুপ করে । কারও সাথে কেউ কথা বলছে না আবার কাউকে কেউ ছেড়ে কেউ চলেও যাচ্ছে না !
জাবিন কোন দিনই আমার প্রেমিকা ছিল না । কিন্তু হয়তো প্রেমিকা হতে পারতো । যখন প্রথম বার ওকে ভালবাসার আমন্ত্রন জানিয়েছিলাম খুব যত্ন করে সেটা সে ফিরিয়ে দিয়েছিল । কি কারনে ফিরিয়ে দিয়েছিল সেটা অবশ্য আমার কাছে তখনও স্পষ্ট ছিল না । আজও হয় নি ! তখন আমার মনে কষ্ট দিতে চায় নি বলেই হয়তো আমার সাথে ওর সম্পর্কটা নষ্ট হয় নি । স্বাভাবিক ভাবে আমাদের দেখা হত, কথা হত । মাঝে মাঝে ঘোরাঘুরই হত ! এবং একটা সময় আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করতে শুরু করলাম যে ওর ভিতর একটা প্রেমিকা সুলভ আচরন দেখা যাচ্ছে । দেখতে শুরু করেছিলাম নতুন করে আশার আলো ! আমার উপর একটা নির্ভরশীলতার দৃষ্টি আমাকে খুব শান্তি দিত ! রাত জেগে চ্যাটিং কিংবা ফোনালাপ গুলোর কথা এখনও আমার মনে পড়ে । কেবল মুখ ফুটে ভালবাসি বলা বাকি ছিল মনে হয় ।
আমি নিশ্চিত ছিলাম এখন না বললেও একদিন সে ঠিকই বলে ফেলবে ! ফেলবেই ! কিন্তু যেমন টি ভেবেছিলাম তেমন টি হল না । আমার নিশ্চিত জানায় কিছুটা ভুল ছিল !
এক ছুটির বিকেলে ওর গম্ভীর মুখ দেখে আমার নিজের মাঝে কেমন একটা অনিশ্চয়তা দেখা দিল ! আমার উপর নির্ভরশীলতার জায়গায় সেদিন আমি অন্য কিছু দেখেছিলাম সেখানে !
জাবিন আমাকে ওর মোবাইল বের করে কয়েকটা ছবি দেখিয়ে বলল
-তোমার কাছ থেকে এটা আশা করি নি ।
ছবি গুলো আমার সাথে একটা মেয়ের রিক্সা চড়ার ছবি ছিল । আমার পরিচিত একটা মেয়ের ! আমি অবাক হওয়ারও সময় পেলাম না । এমন কি কিছু বলারও না । জাবিন বলল
-আমার কাছে মানুষটা আমার কাছে মিথ্যা বলেবে এটা আমি কোন ভাবতেও পারি না ! সত্য বলে কেউ আমার জানটা কেড়ে নিলেও আমার কোন আপত্তি নেই তবে মিথ্যা বলার মানুষটির সাথে এক মুহুর্ত নয় !
আমি বলার চেষ্টা করলাম
-শুনবে তো আমার কথা !
কিন্তু জাবিন কিছু শুনলো না ! সেই ছুটির বিকেলে আমাকে রেখে চলে গেল ! সেই শেষ দেখা ওর সাথে । তারপর আর দেখা হয় নি । আমি কয়েকবার চেষ্টা করেও আর যোগাযোগ করতে পারি নি ।
পরে একদিন শুনেছিলাম কোন এক ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে নাকি আমার আর সেই মেয়েটার ছবি পেয়েছিল । সেই ছোট ভাই কেন এমন টা করলো আমি নিশ্চিত ছিলাম না । তবে জাবিনের উপর ঠিকই অভিমান জন্মেছিল । আমার উপর যদি ওর এতুটুকু বিশ্বাস না জন্মে তাহলে আমাকে কেমন করে ভালবসাবে সে আমাকে । অন্য কারো কথা শুনে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে যাওয়াটা আমি কিছুতে মেনে নিতে পারছিলাম না ।
সিদ্ধান্ত নিলাম ওর কাছে দুরে চলে যাবো !
তারপর আর দেখা হয় নি । কয়েক বছর পরে নিম্মির সাথে পরিচয় । পারিবারিক ভাবে বিয়ের পরে সুখেই ছিলাম । তাহলে আজকে কেন আবার নতুন করে পুরানো কষ্টটা অনুভব করলাম ! আসলেই কি সুখে ছিলাম !
আমি জাবিন কে বললাম
-এখানে এভাবে দাড়িয়ে থাকাটা উচিৎ হচ্ছে না ।
-চলে যেতে বলছো ?
-আমার স্ত্রী চলে এলে ঝামেলা হবে । ও আমার সাথে অন্য কোন মেয়েকে একদম সহ্য করতে পারে না ! আর তাছাড়া তোমার হাজব্যান্ডও নিশ্চই ব্যাপার টা সহজ ভাবে নিবে না !
জাবিন কিছুিটা সময় চুপ করে থেকে বলল
-আমি এখনও বিয়ে করি নি ! যাকে দেখেছো সে আমার বড় দুলাভাই ! আপার সাথে এসেছি !
কেন জানি বুকের ভেতর কষ্টের অনুভুতিটা আরেকটু বেড়ে গেল !
জাবিন বলল
-আমি আসলে তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম । কিন্তু যখন ভুল বুঝতে পারলাম তখন তুমি অনেক দুরে । কোন ভাবেই তোমার কাছে ফেরৎ যেতে পারি নি আর । এবং তখনই বুঝতে পারলাম তোমনাকে আসলে কত টা ভালবাসি ! কিন্তু ...।
কিছুটা নিরবতা ! তারপর আবার জাবিন বলল
-এখানে তোমাকে গতকালই দেখেছিলাম । জানি এখন কিছুই করার নেই তবুও তোমাকে যে ভালবাসি এই টুকু বলতে এসেছিলাম । সে দিন আমি ভুল ছিলাম এটুকুই বলতে এসেছি !
আমি চুপ করে তাকিয়ে থাকি জাবিনের দিকে । অনুভব করলাম যে বুকের ভেতরের কষ্ট টা একটু একটু করে যেন বাড়ছেই !
-তোমার বউটা অনেক সুইট ! তোমাকে অনেক ভালোবাসে বোঝা যায় ! ওকে কষ্ট দিও না, কেমন ? যে মানুষ গুলো তোমাকে ভালবাসে সেই মানুষ গুলোকে কষ্ট দিলে জীবনে ভাল থাকা যায় না ! আর ভাল থেকো !
-আর তুমি ?
-ভুল করেছি । সেটার কষ্ট তো ভোগ করতেই হবে । নাকি ?
জাবিন আর কোন কথা বলল না । পেছন ঘুরে হাটতে লাগলো ! আমি তাকিয়ে তার চলে যাওয়া দেখলাম !
এক ছুটির বিকেলে জাবিন আমাকে ভুল বুঝে চলে গিয়েছিল । আর এই ছুটি বিকেলেও ও আমার কাছ থেকে দুরে চলে যাচ্ছে ! আমি কেবল তাকিয়ে তাকিয়ে তার চলে যাওয়া দেখেছি !
অতিদির লেখা তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রনে অবলম্বনে....
১৪টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?
স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন