গল্পঃ ম্যাক সেলিব্রেটি কোচিং সেন্টার
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
যাওয়ার পথে যে ভয়টা পাচ্ছিলাম ঠিক সেই টাই হল । আমি আর সবুজ যখন মোড়ের মাথায় এলাম তখন দেখি রনি আমাদের দিকে আসছে । আমি অন্য দিকে যেতে চাইলেও কাজ হল না । রনি আমাদের দেখেই ফেলল !
-এই কই যাস ?
সবুজ এমন একটা মুখের ভাব করলো যেন রনির কোন কথা শুনতেই পাই নাই । আমিও তেমন না শোনার একটা ভাব করার চেষ্টা করলাম । কিন্তু তাতে লাভ হল না । রনি আমাদের কাছে এসে বলল
-কি রে ! তোলা এমন লুকাচ্ছিস কই ?
-না না ! কিছু না ! কিছু না তো !
-চল ! আজকে না খেলা আছে ! চল দেখবি না ?
সবুজ বলল
-তুই যা ! আমরা আসতেছি ! আসতেছি !
-এক সাথে যাই ?
-না না ! তুই যা ! আমরা আসতেছি !
রনি আমাদের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে মাঠের দিকে হাটা দিল । আমরাও হাটা দিলাম । তবে মাঠের দিকে না । ম্যাক সেলিব্রেটি কোচিং সেন্টারের দিকে ।
আমাদের মকবুল ভাইয়ের সেলিব্রেটি হওয়ার স হজ উপায় বিষয়ক কোচিং সেন্টার । আমরা কোচিং সেন্টারের সামনে এসে দাড়ালাম । একটা চাটাই দিয়ে ঘেরা উপরে টিন শেডের ঘর । দরজার পাশে একটা সাইনবোর্ড লাগানো রয়েছে । সেখানে লেখা
ম্যাক সেলিব্রেটি কোচিং সেন্টার ।
নিচে লেখা,
আপনি কি চান না আপনার পোস্টেও লাইক পড়ুক হাজার হাজার ? আপনি কি চান না অনলাইনে আপনার হাজার হাজার ফলোয়ার হোউক ! লোকে আপনাকে ফেসবুক ফেলিব্রেটি বলুক ? তাহলে আর দেরি কেন ? মাত্র সাত দিনে হয়ে উঠুন ফেসবুক সেলিব্রেটি ।
তারপর নিচে এই কোচিং সেন্টারের সুযোগ সুবিধা লেখা !
১. প্রতি ক্লাসে লেকচার শীট দেওয়া হয় !
২. ক্লাস নিবেন ফেসবুকের ১০০০ লাইকের উপরে পাওয়া ফেলিব্রেটি গন
৩. প্রতিষ্ঠিত ফেসবুক সেলিব্রেটিদের ফ্রেন্ড লিস্টে ঢুকার সুযোগ !
৪. কোচিং শেষে প্রতি পোস্টে নূন্যতম ৫০০ লাইক পাওয়ার নিশ্চয়তা
৫. পুরো ক্লাসরুম ওয়াইফাই জোন করা
৬. সঠিক ভাবে সেলফি তোলার টেকনিক
আমরা আর কিছু চিন্তা না করে ক্লাস রুমে ঢুকে গেলাম । ততক্ষনে দেখি ক্লাস শুরু হয়ে গেছে । ক্লাস নিচ্ছেন আমাদের ম্যাকবুল ভাই ! সামনে গোটা বিশ জন বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থী মানে ফেসবুকার বসে আছে ।
মকবুল ভাই আমাদের দিকে তাকিয়ে কিছু টা সময় তিনি কি যেন ভাবলেন । কিন্তু সামনে বসে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু বললেন না । সেই দিনের পর মকবুল ভাই আমাদের সাথে ঠিক মত কথা বলেন নাই । আমাদের কাছ থেকে দুরে দুরে থেকেছেন ।
আমরা পিছনের দিক কার একটা বেঞ্চে গিয়ে বসলাম ।
ততক্ষনে ম্যাকবুল ভাই আমারও নিজের কথায় ফিরে গেছেন !
-তো কি বলছিলাম আমরা ? পরিচয় টা আগে সেরে নেওয়া যাক ! আমরা আগে জানবো কার নাম কি এবং সে কি কারনে একজন ফেসবুক সেলিব্রেটি হতে চায় ! ঠিক আছে ?
এই যে আপু আপনি শুরু করুন !
দেখলাম সামনে বসা এক চিকন মত আপু উঠে দাড়ালো !
-আমি নায়া ! আমি ফেসবুক ফেলিব্রেটি হতে চাই কারন আমার বয়ফ্রেন্ড একজন ফেসবুক সেলিব্রেটি । সে আমাকে ঠিক মত পাত্তা দেয় না ! আমি তাকে দেখিয়ে দিতে চাই আমিও হতে পারি একজন ১০০০ লাইক ওয়ালা ফেসবুকার !
আরেকজন উঠে দাড়ালো !
-আমি জাসিম । ফেসবুক নাম জ্যাক ! আমি হতে চাই কারন অনেক মেয়ের সাথে প্রেম করতে চাই ! মেয়েরা ফেলিব্রেটিদের জন্য পাগল !
-আমি সেলিব্রেটি হতে চাই, কারন লোকে অনলাইনে খুব দাম দেয় ! ফ্রেন্ড লিস্টে ঢুকটে চায় ! কমেন্টে এড মি এড মি লিখতে লিখতে আমি ক্লান্ত !
দেখা গেল এই ইচ্ছে অনেকেরই ! অর্ধেকই এমন কথা বলল ! বাকি অর্ধেক কেন হতে চায় এটা বলতেই পারলো না । পোস্টে লাইক পড়লে ভাল লাগে তাই তারা সেলিব্রেটি হউতে চায় !
মকবুল ভাই বলল
-আপনারা কোন চিন্তা করবেন না । আজক থেকে ৭ দিন পরে আপনারা যখন এখান থেকে আমার সার্টিফিকে নিয়ে বের হবেন এবং সেটা যখন আপনাদের কাভার ফটোতে ঝুলাবেন তখন দেখবেন শত শত ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এসে হাজির হচ্ছে । সাথে সাথে পোস্ট লাইক আসছে হাজার হাজার !
মকবুল সবার দিকে তাকিয়ে নিলেন একবার । তারপর বললেন
লাইক পাওয়া যায় দুই ভাবে । এক হচ্ছে কিছু লিখা আর ফটো আপডেট করা । কিছু লেখার থেকে ফটো তোলা সহজ ! ফটোর ভিতর আবার রকমফের আছে । এখন আবার সেলফি ট্রেন্ড চলছে ! আজকে শুরু করবো একটি সঠিক সেলফি তোলার টেকনিক ! এই জন্য আমাদের মাঝে উপস্থিত আছে বিশিষ্ঠ সেলফিয়ার মাহজাবিন !
সবুজ এতোক্ষন চুপ করে আমার পাশেই বসে ছিল । সে কি কারনে সেলিব্রেটি হইতে চায় এইটা বলতে পারে নি বলে বেশ কিছুটা সময় চিন্তায় ছিল ! মকবুল ভাইয়ের নামে মাহজাবিনের নাম শুনে মুখ তুলে তাকালো ।
আমার কানে কানে বলল
সেলফিয়ার কি জিনিস ?
-আরে গাধা যারা সেলফি তোলে তাদের কে সেলফিয়ার বলে
-সত্যি নাকি ?
-আবার প্রশ্ন করিস ? দেখছিস না মকবুল ভাই বলেছে । উনার কথা কি মিথ্যা হতে পারে !
-তাও ঠিক ।
যাই হোক আমরা মাহজাবিনের আসার পথ চেয়ে রইলাম ! আমরা ভেবেছিলা মডেল মেহজাবিন হবে হয় তো । কিন্তু কোথায় কি ? এতো দেখছি অন্য কেউ । আরেকটু ভাল করে লক্ষ্য করেই দেখলাম আরে এতো আমাদের পাশের বাড়ির মারজিনা ! ফেসবুকে এসে মাহজবাবিন হয়ে গেছে । এ নাকি আবার বিশিষ্ট সেলফিয়ার !
খাইছে রে !
মাহজাবিন প্রথম দিন আমাদের কে কেবল মোবাইলের ক্যামেরা ধরা শিখালো ! কিভাবে দুই আঙ্গুলের ভিতর আরেক টা আঙ্গুল দিয়ে অন্য হাত দিয়ে সেলফির তোলার প্রস্তুতি নিতে হয়,সেটা! আমরা তো ভাবতেই পারি নি এক সেলফি তুলতেও এতো ঝামেলা পোহাতে হবে !
মকবুল ভাই পেছনেই ছিল ! মাহজাবিন কে বলল
-আজকে এই পর্যন্তই থাক ! আগামীকাল বাকীটুকু হবে !
মাহজাবিন চলে গেল !
এর পরেই এসে হাজির হলে আবেগ খান ! একেও আমি চিনি । মকবুল ভাইয়ের বিশিষ্ট শিশ্য । তার সব লেখায় আবেগ ঝড়ে ঝড়ে পড়ে । সিম্পল একটা লাইন যদি হয় "আমার ক্ষুদা লেগেছে" সেখানে এমন ভাবে লিখবে যেন মনে হবে আবেগ ঝড়ে ঝড়ে পড়ছে ।
আবেগ খানও বেশ কিছু আবেগময় কথা শুনালেন । কথা শুনে দেখলাম সামনের কয়েকটা আপু কেঁদেই দিল । আমার সামনে বসা কয়েকজন ছেলে দারিয়ে বলল
-বস ! স্যালুট বস ! স্যালুট !
-কেমনে পারেন বস ! কেমনে !! স্যালুট বস !
মকবুল ভাই আমাদের সবার কাছে একটা করে লেকচার শীট ধরিয়ে দিল । বলল
-এই লেখা গুলো মন দিয়ে পড়বেন আজকে । এবং ফলো করার চেষ্টা করবেন !
আমি হাতে নিয়ে দেখলাম ১৬ পেইজের লেকচার শীট ! এতো কথা মনে করার চেষ্টা করতে হবে ! খাইছে, সেলিব্রেটি হওয়া তো সহজ না !
কোচিং সেন্টার থেকে বের হয়ে আমরা দুজন কেএফসি তে বসলাম । মানে গতদিনের কাদের ফুড কর্নারে আর কি !
মনযোগ দিয়ে প্রথম পাতা পড়তে শুরু করেছি আমি আর সবুজ !
বোল্ট করে বেশ কয়েকটা পয়েন্ট লেখা ! একজন সেলিব্রেটির সাধারন বেশিষ্ট্য ! কোন ভাবেই এই নিয়মের বাইরে যাওয়া যাবে না ! সেখানে লেখা "যে সাধারন নিয়ম গুলো সব সময় পালন করতে হবে ফেলিব্রেটিদেরঃ"
১. অখ্যাত মানুষের পোস্ট কোন ভাবেই কমেন্ট করা যাবে না ।
২. দিনে কোন ভাবেই দু তিনটার উপরে পোস্ট দেওয়া চলবে না । যারা কেবল সেলফি সেলিব্রটি হইতে চায় তাদের কথা আলাদা !
৩. অবশ্যই সব সময় সচেতনা মূলক পোস্ট দিতে হবে ।
৪. অন্যান্য সেলিব্রেটিদের সাথে ভাল ব্যবহার করে চলতে হবে । কারো সাথে স্ল্যাং করা যাবে না ।
৫.কোন সেলিব্রেটি বিপদে পড়লে কিংবা কোন কেলেঙ্কারী ধরা পড়লে চোখ কান বুঝে তাকে বাচাঁনোর জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে !
৬. কোন ভাবেই সহজ কথা সহজ ভাবে বলা যাবে না । ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে আবেগ মিশিয়ে বলতে হবে !
৭. ভিনদেশী পত্র পত্রিকা পড়তে হবে । মাঝে মাঝে সেখান থেকে আইডিয়া নিজের নামে মেরে দিতে হবে ! এতে দোষের কিছু হবে না
৮. সব সময়...
লাইনটা শেষ করতে পারলাম না ।
দেখি রনি এসে হাজির ! আমরা দুইজনেই লেকচার শীট লুকানোর চেষ্টা করলাম ! আমাদের চেহারার ভাব দেখে রনি বলল
-তোরা কি পড়ছসি রে !
-কই কিছু না !
-দেখি !
-না কিছু না !
-দেখা বলতেছি ! কতক্ষন তোদের জন্য অপেক্ষা করলাম !
রনি আমার কাছ থেকে লেকচার শীটটা কেড়ে নিল । কয়েক লাইন পড়ার পরেই দেখলাম ওর মুখের ভাব বদলে গেল !
আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল
-তোরা ওখানে গেছিলি ?
সবুজ আমতা আমতা করে বলল
-নাম মানে তুই .......
রনি বলল
-দাড়া ! ঐ ব্যাটার খবর আছ ! সত্যই খবর আছে......
আমাদের কে রেখেই রনি আবার চলে গেল । আমরা অবশ্য আজকে ওর পেছন পেছন গেলাম না ! আমাদের সামনে এখন সেলিব্রেটি হওয়ার নেশা ! আমরা কেবল সেলিব্রেটির পেছনে ঘুরবো ! অন্য কারো পেছনে নয় !
পরদিন বিকেল বেলা কোচিং সেন্টারে এসে দেখি পুলিশ ম্যাকবুল ভাইকে অবৈধ কোচিং সেন্টার চালানোর জন্য ধরে নিয়ে গেছে । আমাদের কোটিং মাঝ পথ এভাবে আটকে গেল !
গল্পঃ ফেসবুক সেলিব্রেটি
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?
স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন