somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ না দেওয়া জবা ফুল !

১১ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-বিয়ে করেছো ?
আমি স্যারের দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছু সময় ! স্যার ফাইল সই করতে করতে আমার দিকে তাকিয়ে কথাটা জানতে চাইলো । আমি ঠিক বুঝলাম না, একটু আগে আমি আমাদের সামনের সপ্তাহের টেন্ডারের কথা বলছিলাম এর সাথে আমার বিয়ের কি সম্পর্ক !
আমি বললাম
-না স্যার !
-তাহলে বুঝবে না ! শুনো ঐ টেন্ডার টা ড্রপ করার দরকার নেই !
-স্যার সহজ একটা কাজ ! আপনার একটু ইন্সট্রাকশান পেলেই কাজ টা হয়ে যেত ! দুদিন বসলেই হয়ে যাবে !
-এই জন্যই তো বললাম বিয়ে করেছো ?
-স্যার আমি ঠিক বুঝলাম না আপনি কি বলতে চাইছেন ? টেন্ডারের সাথে আমার বিয়ের কি সম্পর্ক ?
-আছে ? অনেক বড় সম্পর্ক ! বিয়ে করা যে কত বড় একটা প্যারারে কাজ !

স্যার মুখে এই ধরনের শব্দ শুনে একটু অবাকই হলাম ! বয়সে স্যার কম করে হলেও আমার দ্বিগুন হবে ! প্রায় ৫০ এর কাছাকাছি তো বয়স হবেই । স্যার যে এই রকম শব্দ ব্যবহার করবে আমার ঠিক ধারনাই ছিল না !
স্যার বলল
-তার উপর যদি প্রেম করে বিয়ে কর তাহলে তো কথাই নাই !
-স্যার আমি আসলেই ঠিক বুঝতে পারছি না আপনি কি বলতে চাইছেন !
-বলছি । কারন টা হল আমার বউ ! আগামী কাল তাদের নিয়ে আমার কক্সবাজার যাওয়ার কথা ! কোন ভাবেই টলানো যাবে না ! বুঝছো ? বিয়ে তো কর নি তাই এই প্যারা তুমি বুঝবে না !
-তাহলে ?
-তাহলে আর কি ! পরের বার দেখা যাবে !

আমি স্যারের রুম থেকে বের হয়ে নিজের ডেস্কে ফেরত এলাম ! যাক, স্যার না থাকলে কাজ থাকবে না ! বাঁচা গেল । দুদিন শান্তিতে থাকা যাবে !
কিন্তু আমার আর শান্তিতে থাকা হল না ।
রাতের বেলা স্যার ফোন দিয়ে বলল
-শুনো রাফায়েত !
-জি স্যার !
-এক কাজ কর ! কাজটা হাত ছাড়া করা ঠিক হবে না মনে হচ্ছে !
-আপনার যাওয়া কি ক্যান্সেল ?
-মাথা খারাপ নাকি ! শুনো ! তিন দিনের মত জামা কাপড় নিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে ফেল ! কালকে তুমি ও আমাদের সাথে যাচ্ছো ?
-জি স্যার !!
-হুম ! ল্যাপটপ নিয়ে নাও ! কাজ চলবে ! ওরা ঘুরবে ! সাথে ফাঁকে ফাঁকে আমি তোমাকে বলে দোবো কি কি করতে হবে ! ঠিক আছে ?
জি স্যার বলে ফোন রেখে দিলাম ।
অনেক দিন পরে আবার কক্সবাজার যেতে হবে দেখে মন টা খানিকটা উদাস হয়ে গেল । কত দিন যাওয়া হয় না ওদিক না !
সেই শেষ কবে গিয়েছিলাম ! কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে !


যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ততটা খারাপ লাগলো না । কারন স্যারের যে দুজন সুন্দরী মেয়েও স্যারের সাথে যাচ্ছে এটা জানা ছিল না !
পিচ্ছি মেয়েটার নাম নিলি । বয়স ১০/১২ । চোখে চশমা ! দেখা হওয়ার পর আমার দিকে তাকিয়ে চোখ ঠান্ডা করে বলল
-আপনিও কি আমাদের সাথে যাবেন ?
-হুম !
-আব্বু বলেছে ?
-হুম !
-কি কাজ ?
-না আসলে স্যার এবং ম্যাডাম অনেক দিন একা একা একটু ঘরবেন ঠিক করেছেন ! আর তোমাদের দুজনকে সিকিউরিটি দেওয়ার জন্য আমাকে নিয়ে যাচ্ছেন !

নিলি কিছু বলার আগেই পেছন থেকে নিলির বড় বোন নিহিন বলল
-আপনি কি বডিগার্ড ?
-বলতে পারেন !
-তাই ?
-হুম !
-দেখে তো মনে হচ্ছে না !
দেখে তো কত কিছুই মনে হয় না ! কাজের সময় হলে দেখবেন !
দেখলাম দুজন মুখ বাকিয়ে গিয়ে গাড়ির পেছনে গিয়ে বসলো ! আমি বসলাম পাজেরোটার সামনের সিটে । স্যারেরা মাঝখানে !

সময়টা একেবারে খারাপ যাচ্ছিলো না । বস তার বউকে নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরতেছিল আর তার মেয়ে দুজন ঘুরতেছিল আমার সাথে । বিশেষ করে নিলির সাথে আমার বেশ ভাব হয়ে গেল ! ওর বড় বোন আমার সাথে খুব একটা কথা না বললেও নিলি চটপট করে কথা বলছিল !
আপনি এর আগে এসেছেন ?
একা একা ঘুরতে ভাল লাগে ?
জানেন আপুর না কথা কম বলার রোগ আছে !
আপনি গান গাইতে পারেন ?
আপনি এটা করেন নাই কেন ?
আপনি ওটা করেন !





সন্ধ্যার সময় হঠাৎ করে নিহিন আমার কাছে এসে বলল
-আপনি একটু আগে কি করছিলেন ?
-কোথায় ?
-ঐ যে সমুদ্রের পানিতে !
-আপনি দেখেছেন ?
-হুম ! কি করছিলেন ?
-কিছু না !
-আমি দেখেছি !
-দেখেছেন যখন আবার কেন জানতে চাইছেন ?
-আপনি কেন কাঁদছিলেন ? আমি আপনার চোখে পানি দেখেছি ! আপনি জবা ফুল গুলো সমুদ্রের পানিতে ভাসিয়ে দিচ্ছিলেন তখন আপনার চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল !
আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম !
-আপনি সারাটা ক্ষণ নিলির সাথে যেভাবে হই হোল্লর করে সময় পার করলেন তাই ব্যাপার টা আমার কাছে একটু অবাক লাগলো ! তাই জানতে চাইলাম আর কি ! বলতে না চাইলে থাক !



দুই

-জবা ফুল এনে দাও !
-জবা ফুল আমি কোথায় পাবো ?
-আমি জানি না ! আমি জানি না ! আমি জবা ফুল চাই । চাই !

বাচ্চা মেয়েরা কিছু না পেলে যেমন চিৎকার করে উঠে, আভা আচরন টা ঠিক তেমন মনে হল ! এই মেয়েটা কি কিছু বুঝে না নাকি ? আজিব ! এঅ বড় হয়েছে কিন্তু মন ছেলে মানুষী গেল না আর !
আমি আসে পাশে তাকিয়ে দেখি অনেকেই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে । আমি ওকে থামানোর জন্য বলল
-আচ্ছা ! আমি দেখি !
-কোন দেখা দেখি নেই ! নিয়ে আসতে হবে !
-আচ্ছা তুমি বস ! আমি দেখছি !
ওকে সমুদ্রের পাড়ে বসিয়ে রেখেই আমি জবা ফুল খুজতে বের হলাম !

গত কাল কে আভাকে নিয়ে কক্সবাজার এসেছি । কাউকে কিছু না বলেই । ওর বাসা থেকে নাকি ওকে জোর করে বিয়ে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিল । আর কোন পথ খোলা ছিল না বিধায় ওকে নিয়ে আসতে হল এখানে । মেয়ে বাসা থেকে পালিয়েছে শুনলে বিয়ে ঠিকই ভেঙ্গে যাবে ।তখন বাসায় গেলে চলবে ।

গত কালকে যখন ব্যাগ নিয়ে আমার হোস্টেলের সামনে এসে হাজির হল আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আমি পালিয়ে এসেছি !
-সে কি ?
-হুম !
-কেন ?
-আরে আমার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিল ! আমি কি করবো শুনি ?
-তাই বলে ....
-আমি কিছু জানি না ! আমি কিছু শুনতে চাই না ! তোমাকে ছাড়া আমি কাউকে বিয়ে করবো না !
-তা তো বুঝলাম ! কিন্তু এখন ?
আমি কিছু বলতে যাবো দেখি নিশি গ্রীন লাইনের বাসের একটা টিকিট বের করলো !
-এটা কি ?
-কক্সবাজারের টিকিট ! আমার কাছে ওখানে সাত দিন থাকার মত টাকা আছে ! তুমি আর কিছু নাও ! আমরা ওখান থেকে ঘুরে আসি !
-মানে কি !
-দেখো এতো মানে মানে করবা না ! বাস সন্ধ্যার সময় ! তাড়াতাড়ি তৈরি হও !


সকাল বেলা যখন কক্সবাজারে নামলাম তখন আসলেই মনে হচ্ছিল যেন অন্য জগতে আছি ! ওর হাত ধরে যখন হাটছিলাম তখন মনে হচ্ছিল যেন স্বপ্ন দেখছিলাম ! স্বপ্নের মানুষটার হাত ধরে হাটছিলাম সব কিছু কেমন স্বপ্নের মত মনে হচ্ছিল !


-কি হল মন কেন খারাপ ?
-না মানে তুমি জবা ফুল চাইলে কিন্তু আমি এনে দিতে পারলাম না ! খারাপ লাগছে !
-আচ্ছা বাবু ! মন কেন খারাপ করছো ? তুমি চেষ্টা তো করেছো ! আমার ওতেই চলবে !

বেশ রাত হয়ে গেছে । চারিপাশে । আমি আর আভা সমুদ্রের পাড়েই বসে ছিলাম । অনেক খোজা খুজি করেও আশে পাশে কোন জবা ফুল পাই নি !
আভা আমার কাধে মাথা রেখে আগামী দিনের স্বপ্ন দেখছিলো ।
আভা বলল
-শুনো ! এর পরে যখন তুমি এখানে আসবে তখন কিন্তু আমাকে জবা ফুল এনে দিবে ! মনে থাকবে তো ?
-হুম থাকবে !
-তুমি যখন চাকরী করবে টখন কিন্তু প্রত্যেক মাসে আমাকে নিয়ে আসতে হবে !
-প্রতি মাসে ? বস আমাকে ছুটি দিবে ?
-না দিলে এমন চাকরি করবা না !



তিন

নিহিন অনেক ক্ষন চুপ করে রইলো !
-তারপর ?
-তারপর আর কিছু না ! প্রতিবার যখন এখানে আসি ওর জন্য জবা ফুল নিয়ে আসি !
-আমি তার পরের ঘটনা জানতে চাচ্ছি !
-তারপরে আর কোন ঘটনা নেই । সাত দিনের প্লান ছিল ! দুদিনের মাথায় ধরা পরে গেলাম ! আভার বাবা মা কে ওকে বাসা নিয়ে গেল ! তারপর তিন দিনের মাথায় আভা ফিনাইল খেয়ে.....।

আমি লাইন টা শেষ করলাম না ! নিহিন চুপ করে আমার সামনে বসে রইলো কিছু টা সময় ! আমি বললাম
-তারপর থেকে যখন এখানে আসি ওর জন্য জবা ফুল নিয়ে আসি ! ওকে তো সেদিন দিতে পারি নি তো তাই !


সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:২১
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×