-বিয়ে করেছো ?
আমি স্যারের দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছু সময় ! স্যার ফাইল সই করতে করতে আমার দিকে তাকিয়ে কথাটা জানতে চাইলো । আমি ঠিক বুঝলাম না, একটু আগে আমি আমাদের সামনের সপ্তাহের টেন্ডারের কথা বলছিলাম এর সাথে আমার বিয়ের কি সম্পর্ক !
আমি বললাম
-না স্যার !
-তাহলে বুঝবে না ! শুনো ঐ টেন্ডার টা ড্রপ করার দরকার নেই !
-স্যার সহজ একটা কাজ ! আপনার একটু ইন্সট্রাকশান পেলেই কাজ টা হয়ে যেত ! দুদিন বসলেই হয়ে যাবে !
-এই জন্যই তো বললাম বিয়ে করেছো ?
-স্যার আমি ঠিক বুঝলাম না আপনি কি বলতে চাইছেন ? টেন্ডারের সাথে আমার বিয়ের কি সম্পর্ক ?
-আছে ? অনেক বড় সম্পর্ক ! বিয়ে করা যে কত বড় একটা প্যারারে কাজ !
স্যার মুখে এই ধরনের শব্দ শুনে একটু অবাকই হলাম ! বয়সে স্যার কম করে হলেও আমার দ্বিগুন হবে ! প্রায় ৫০ এর কাছাকাছি তো বয়স হবেই । স্যার যে এই রকম শব্দ ব্যবহার করবে আমার ঠিক ধারনাই ছিল না !
স্যার বলল
-তার উপর যদি প্রেম করে বিয়ে কর তাহলে তো কথাই নাই !
-স্যার আমি আসলেই ঠিক বুঝতে পারছি না আপনি কি বলতে চাইছেন !
-বলছি । কারন টা হল আমার বউ ! আগামী কাল তাদের নিয়ে আমার কক্সবাজার যাওয়ার কথা ! কোন ভাবেই টলানো যাবে না ! বুঝছো ? বিয়ে তো কর নি তাই এই প্যারা তুমি বুঝবে না !
-তাহলে ?
-তাহলে আর কি ! পরের বার দেখা যাবে !
আমি স্যারের রুম থেকে বের হয়ে নিজের ডেস্কে ফেরত এলাম ! যাক, স্যার না থাকলে কাজ থাকবে না ! বাঁচা গেল । দুদিন শান্তিতে থাকা যাবে !
কিন্তু আমার আর শান্তিতে থাকা হল না ।
রাতের বেলা স্যার ফোন দিয়ে বলল
-শুনো রাফায়েত !
-জি স্যার !
-এক কাজ কর ! কাজটা হাত ছাড়া করা ঠিক হবে না মনে হচ্ছে !
-আপনার যাওয়া কি ক্যান্সেল ?
-মাথা খারাপ নাকি ! শুনো ! তিন দিনের মত জামা কাপড় নিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে ফেল ! কালকে তুমি ও আমাদের সাথে যাচ্ছো ?
-জি স্যার !!
-হুম ! ল্যাপটপ নিয়ে নাও ! কাজ চলবে ! ওরা ঘুরবে ! সাথে ফাঁকে ফাঁকে আমি তোমাকে বলে দোবো কি কি করতে হবে ! ঠিক আছে ?
জি স্যার বলে ফোন রেখে দিলাম ।
অনেক দিন পরে আবার কক্সবাজার যেতে হবে দেখে মন টা খানিকটা উদাস হয়ে গেল । কত দিন যাওয়া হয় না ওদিক না !
সেই শেষ কবে গিয়েছিলাম ! কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে !
যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ততটা খারাপ লাগলো না । কারন স্যারের যে দুজন সুন্দরী মেয়েও স্যারের সাথে যাচ্ছে এটা জানা ছিল না !
পিচ্ছি মেয়েটার নাম নিলি । বয়স ১০/১২ । চোখে চশমা ! দেখা হওয়ার পর আমার দিকে তাকিয়ে চোখ ঠান্ডা করে বলল
-আপনিও কি আমাদের সাথে যাবেন ?
-হুম !
-আব্বু বলেছে ?
-হুম !
-কি কাজ ?
-না আসলে স্যার এবং ম্যাডাম অনেক দিন একা একা একটু ঘরবেন ঠিক করেছেন ! আর তোমাদের দুজনকে সিকিউরিটি দেওয়ার জন্য আমাকে নিয়ে যাচ্ছেন !
নিলি কিছু বলার আগেই পেছন থেকে নিলির বড় বোন নিহিন বলল
-আপনি কি বডিগার্ড ?
-বলতে পারেন !
-তাই ?
-হুম !
-দেখে তো মনে হচ্ছে না !
দেখে তো কত কিছুই মনে হয় না ! কাজের সময় হলে দেখবেন !
দেখলাম দুজন মুখ বাকিয়ে গিয়ে গাড়ির পেছনে গিয়ে বসলো ! আমি বসলাম পাজেরোটার সামনের সিটে । স্যারেরা মাঝখানে !
সময়টা একেবারে খারাপ যাচ্ছিলো না । বস তার বউকে নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরতেছিল আর তার মেয়ে দুজন ঘুরতেছিল আমার সাথে । বিশেষ করে নিলির সাথে আমার বেশ ভাব হয়ে গেল ! ওর বড় বোন আমার সাথে খুব একটা কথা না বললেও নিলি চটপট করে কথা বলছিল !
আপনি এর আগে এসেছেন ?
একা একা ঘুরতে ভাল লাগে ?
জানেন আপুর না কথা কম বলার রোগ আছে !
আপনি গান গাইতে পারেন ?
আপনি এটা করেন নাই কেন ?
আপনি ওটা করেন !
সন্ধ্যার সময় হঠাৎ করে নিহিন আমার কাছে এসে বলল
-আপনি একটু আগে কি করছিলেন ?
-কোথায় ?
-ঐ যে সমুদ্রের পানিতে !
-আপনি দেখেছেন ?
-হুম ! কি করছিলেন ?
-কিছু না !
-আমি দেখেছি !
-দেখেছেন যখন আবার কেন জানতে চাইছেন ?
-আপনি কেন কাঁদছিলেন ? আমি আপনার চোখে পানি দেখেছি ! আপনি জবা ফুল গুলো সমুদ্রের পানিতে ভাসিয়ে দিচ্ছিলেন তখন আপনার চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল !
আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম !
-আপনি সারাটা ক্ষণ নিলির সাথে যেভাবে হই হোল্লর করে সময় পার করলেন তাই ব্যাপার টা আমার কাছে একটু অবাক লাগলো ! তাই জানতে চাইলাম আর কি ! বলতে না চাইলে থাক !
দুই
-জবা ফুল এনে দাও !
-জবা ফুল আমি কোথায় পাবো ?
-আমি জানি না ! আমি জানি না ! আমি জবা ফুল চাই । চাই !
বাচ্চা মেয়েরা কিছু না পেলে যেমন চিৎকার করে উঠে, আভা আচরন টা ঠিক তেমন মনে হল ! এই মেয়েটা কি কিছু বুঝে না নাকি ? আজিব ! এঅ বড় হয়েছে কিন্তু মন ছেলে মানুষী গেল না আর !
আমি আসে পাশে তাকিয়ে দেখি অনেকেই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে । আমি ওকে থামানোর জন্য বলল
-আচ্ছা ! আমি দেখি !
-কোন দেখা দেখি নেই ! নিয়ে আসতে হবে !
-আচ্ছা তুমি বস ! আমি দেখছি !
ওকে সমুদ্রের পাড়ে বসিয়ে রেখেই আমি জবা ফুল খুজতে বের হলাম !
গত কাল কে আভাকে নিয়ে কক্সবাজার এসেছি । কাউকে কিছু না বলেই । ওর বাসা থেকে নাকি ওকে জোর করে বিয়ে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিল । আর কোন পথ খোলা ছিল না বিধায় ওকে নিয়ে আসতে হল এখানে । মেয়ে বাসা থেকে পালিয়েছে শুনলে বিয়ে ঠিকই ভেঙ্গে যাবে ।তখন বাসায় গেলে চলবে ।
গত কালকে যখন ব্যাগ নিয়ে আমার হোস্টেলের সামনে এসে হাজির হল আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আমি পালিয়ে এসেছি !
-সে কি ?
-হুম !
-কেন ?
-আরে আমার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিল ! আমি কি করবো শুনি ?
-তাই বলে ....
-আমি কিছু জানি না ! আমি কিছু শুনতে চাই না ! তোমাকে ছাড়া আমি কাউকে বিয়ে করবো না !
-তা তো বুঝলাম ! কিন্তু এখন ?
আমি কিছু বলতে যাবো দেখি নিশি গ্রীন লাইনের বাসের একটা টিকিট বের করলো !
-এটা কি ?
-কক্সবাজারের টিকিট ! আমার কাছে ওখানে সাত দিন থাকার মত টাকা আছে ! তুমি আর কিছু নাও ! আমরা ওখান থেকে ঘুরে আসি !
-মানে কি !
-দেখো এতো মানে মানে করবা না ! বাস সন্ধ্যার সময় ! তাড়াতাড়ি তৈরি হও !
সকাল বেলা যখন কক্সবাজারে নামলাম তখন আসলেই মনে হচ্ছিল যেন অন্য জগতে আছি ! ওর হাত ধরে যখন হাটছিলাম তখন মনে হচ্ছিল যেন স্বপ্ন দেখছিলাম ! স্বপ্নের মানুষটার হাত ধরে হাটছিলাম সব কিছু কেমন স্বপ্নের মত মনে হচ্ছিল !
-কি হল মন কেন খারাপ ?
-না মানে তুমি জবা ফুল চাইলে কিন্তু আমি এনে দিতে পারলাম না ! খারাপ লাগছে !
-আচ্ছা বাবু ! মন কেন খারাপ করছো ? তুমি চেষ্টা তো করেছো ! আমার ওতেই চলবে !
বেশ রাত হয়ে গেছে । চারিপাশে । আমি আর আভা সমুদ্রের পাড়েই বসে ছিলাম । অনেক খোজা খুজি করেও আশে পাশে কোন জবা ফুল পাই নি !
আভা আমার কাধে মাথা রেখে আগামী দিনের স্বপ্ন দেখছিলো ।
আভা বলল
-শুনো ! এর পরে যখন তুমি এখানে আসবে তখন কিন্তু আমাকে জবা ফুল এনে দিবে ! মনে থাকবে তো ?
-হুম থাকবে !
-তুমি যখন চাকরী করবে টখন কিন্তু প্রত্যেক মাসে আমাকে নিয়ে আসতে হবে !
-প্রতি মাসে ? বস আমাকে ছুটি দিবে ?
-না দিলে এমন চাকরি করবা না !
তিন
নিহিন অনেক ক্ষন চুপ করে রইলো !
-তারপর ?
-তারপর আর কিছু না ! প্রতিবার যখন এখানে আসি ওর জন্য জবা ফুল নিয়ে আসি !
-আমি তার পরের ঘটনা জানতে চাচ্ছি !
-তারপরে আর কোন ঘটনা নেই । সাত দিনের প্লান ছিল ! দুদিনের মাথায় ধরা পরে গেলাম ! আভার বাবা মা কে ওকে বাসা নিয়ে গেল ! তারপর তিন দিনের মাথায় আভা ফিনাইল খেয়ে.....।
আমি লাইন টা শেষ করলাম না ! নিহিন চুপ করে আমার সামনে বসে রইলো কিছু টা সময় ! আমি বললাম
-তারপর থেকে যখন এখানে আসি ওর জন্য জবা ফুল নিয়ে আসি ! ওকে তো সেদিন দিতে পারি নি তো তাই !
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:২১