মেয়েটি একা একা সমুদ্রের পানিতে পা ভিজিয়ে হাটছে । অনেকক্ষন ধরে । কারও হয়তো পাশে থাকার কথা ছিল এখন কিন্তু সে নেই দেখে খানিকটা মন বিষন্ন । যদিও অল্প কিছুক্ষনের ভিতরেই তার চলে আসার কথা ! মেয়েটি একা একাই হাটতে থাকে পানিতে পা ভিজিয়ে !
আরেকটু কাছ থেকে দেখলে হয়তো তেমন কিছু মনে নাও হতে পারে । বিশাল সমুদ্র মাঝে মাঝে মানুষকে বিষন্ন করে তোলে । হয়তো এই বিশাল সমুদ্রের কাছে নিজের ক্ষুদ্রতা দেখে মেয়েটির মন সহসাই বিষন্ন হয়ে ওঠে ।
সন্ধ্যার আগের আলো চারিদিকের বিষন্নতা যেন আরও একটু বাড়িয়ে দেয় । নিজের কাছের মানুষটির পাশে থাকাটা বড় বেশি অনুভত হয় !
সমুদ্রের নরম বালিতে পা রেখে মেয়েটি এগিয়ে চলে সামনে । হয়তো তার বিষন্নতা কাটানোর উপকরন আরও সামনে রয়েছে । ছেলেটির এই দিকেই আসার কথা । মাত্র কিছুক্ষন সময় আগে গিয়েছে কিন্তু মেয়েটার মনে হচ্ছে কতক্ষন হল তাকে ছেড়ে গিয়েছে সে ।
নরম ভেজা বালির উপর দিয়ে হেটে চলে মেয়েটি !
এতোক্ষনে মেয়েটিকে ভাল করে দেখা যায় । এতোক্ষনে যেখানে মনে হচ্ছিলো বিষন্নতার ঘনঘটা আসলে সেখানে দেখা গেছে এক চিলতে হাসির রৌদ্রছায়া ! তার প্রিয় মানুষটির হাত ধরে মেয়েটি হাটছে সমুদ্রের পাড়ে রাখা বড় বড় পাথরের মসৃন পাটাতনের উপর । একটু পরপর বড় বড় ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে সেই বড় পাথরের পাটাতনের উপর ! হাত ধরে হাটছে দুজন !
দুর থেকে দেখলে যে কারো মনে হতে পারে পৃথিবীর সব থেকে সুখী একটা কাপল হাটছে একে অন্যের হাত ধরে । নিজেদের মাঝেই কথা বলায় ব্যস্ত । অন্য কোন দিকে দেখার সময় কোথায় তাদের !
-আর পাথরের উপর দিয়ে হাটবো না !
-তাহলে ?
-চল ঐ বালির উপর দিয়ে হাটি । তুমি আসার আগে আমি একা একা ওদিক দিয়ে হাটছিলাম ।
-একা একা !
-হুম ! জনাবের তো কত কাজ ! আমাকে সময় দেওয়ার সময় কি আছে ?
-আরে কাজ কোথায় ? একজনের সাথে একটু দেখা করতে গিয়েছিলাম । তাও মাত্র আধা ঘন্টার জন্য !
-হুম ! জানি তো ! তোমার ঐ সুন্দরী বান্ধরীর সাথে না ?
-আরে কিসের ভিতর কি ? এর ভিতর জিনিয়ার কথা কেন আসলো ?
-বাহ ! আমি তো কারো নাম নেই নাই তাইলে তুমি কিভাবে বুঝলে জিনিয়ার কথা বলছি !
-না মানে ...। আর কি ..
-তোমরা ছেলেরা না ! যাও তোমার সাথে কোন কথা নেই । যে ছেলে নতুন বউ রেখে পুরানো বান্ধবীর সাথে দেখা করতে যেতে পারে তার সাথে কোন কথা নেই !
-আরে শুনবা তো .
-কোন শুনা শুনি নাই । তুই সর এখান থেকে !
মেয়েটি রাগ করে হাটা দেয় । ছেলেটি তার পিছন পিছন হাটতে থাকে । মেয়েটি হাটতে হাটতে দুর সমুদ্রের দিকে রওনা দেয় । ছেলেটি তখনও এক ভাবে ডাকতেই থাকে মেয়েটিকে !
হাটতে হাটতে যখন দুজনেই ক্লান্ত মেয়েটি তখন সমুদ্র সৈকতে রাখা একটা গাছের গুড়ির উপরে গিয়ে বসে । ছেলেটিও বসে গুড়িটার আরেক পাসে !
-আচ্ছা এরকম ভাবে রাগ করার কোন মানে আছে ?
-হুম ! এখন আমার রাগ তো তোমার কাছে অর্থহীনই মনে হবে । যাও তোমার বান্ধবীর কাছে ।
-আরে ও কাছে যাবো কেন ?
-তাহলে কেন গিয়েছিলে শুনি ?
-আরে বাবা ওর কাছে যাই নি তো ! আর ও এখন এখানে থাকে না ।
-আচ্ছা খোজ খবর তো খুব ভাল রাখো দেখছি !
-ক্ষমা কর ! আর কোন দিন খোক খবর রাখব না ! এই কথা দিলাম !
-সত্যি তো !
-একদম সত্যি ! এখন থেকে আমার বউ ছাড়া দুনিয়ার আর কোন মেয়ের কোন খোজই আমি রাখবো না ! হল ?
ছেলেটির কথা শুনে মেয়েটির মুখে হাসি ফোটে । মেয়েটি আবারও ছেলেটির হাত ধরে হাটতে থাকে !
-এই এই কি কর ? একটু এদিকে সরে এসো না ?
-কেন ?
-আরে দেখছো না ভিজে যাচ্ছো !
-তো ?
-তো মানে ?
-আরে এই সমুদ্রের কাছে এসে যদি একটু নাই ভিজলাম তাহলে এখানে আসার মানে কি শুনি ?
-তাই না ?
-হুম তাই ! জানো না আমি সারাটা জীবন কেবল এই একটা স্বপ্ন দেখেছি । তোমার হাত ধরে সমুদ্রের তীরে হাটবো । মাঝে মাঝে সমুদ্রের বড় ঢেউ এসে আমাদের ভিজিয়ে দিবে । তুমি জানো না আমার স্বপ্নের কথা ?
মেয়েটি খুব ভাল করেই জানে ছেলেটির এই স্বপ্নের কথা ! কেবল মাত্র মেয়েটির হাত ধরে এই বিশাল সমুদ্র দেখবে বলে ছেলেটি কোন দিন এই সমুদ্রের তীরে আসে নি । স্কুল কলেজ আর ভার্সিটিতে থাকতে ছেলেটির বন্ধুরা মিলে কত বার এখানে এসে অথচ ছেলেটা আসে নি ! কেবল মাত্র মেয়েটির হাত ধরে প্রথম বারের মত এই বিশাল সমুদ্রটা দেখবে বলে !
-আচ্ছা অনেক হয়েছে । এবার একটু পাড়ে এসো ।
মেয়েটি ছেলেটাকে ধরে একটু উপরে নিয়ে এল । মুখো মুখি হয়ে দাড়ালো । পেছনে বিশাল সমুদ্রের জল বারবার ওদের পায়ের কাছ পর্যন্ত এসে চলে যাচ্ছে । মেয়েটি এক ভাবে কেবল ছেলেটির দিকে তাকিয়ে আছে !
-কি দেখো এমন করে ?
-আজকে তুমি খুশি তো ?
-হুম ! জীবনের অন্যতম চাওয়া টা পূর্ন হয়ে যাচ্ছে । খুশি হব না ?
-শুনেছি চাওয়া পুর্ন হলে মানুষ সেটার প্রতি আকর্ষন হারিয়ে ফেলে, আমার প্রতি আকর্ষন হারাবে না তো ?
-তোমার তাই মনে হয় ?
মেয়েটা কিছু বলতে পারে না । কথাটা বলা মনে হয় ঠিক হয়নি ।
ছেলেটা আবার বলল
-তোমার সত্যি কি তাই মনে হয় ? আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল তোমার তাই মনে হয় নাকি ?
মেয়েটি কিছু বলতে পারে না । কেবল তাকিয়ে থাকে ছেলেটির দিকে
-এই আর একটু কাছে আসো । ভিজে যাচ্ছো তো ?
-হুম ! কাছে আসতে আসতে তোমার কোলের উপর উঠে পড়ি !
-হুম উঠো ! কে মানা করেছে ?
মেয়েটি চোখ কপালে তুলে বলে
-তুমি এতো অসভ্য হয়েছো না ! ঘরে তো শয়তানী কর এখন পথে ঘাটেও ।
-শুনুন মিসেস রহমান আপনি এখন আমার বিয়ে করা বউ । আমার কোলে আপনি উঠতেই পারেন । বুঝছেন !
-বুঝলাম মিস্টার রহমান ! বউ তো কেবল আপনার একারই আছে ।
-হুম ! এমন বউ আমার একারই !
সেই কখন থেকে এক ভাবে বৃষ্টি পড়তে থাকে । এক ছাতার নিচে দুজন হাটতে থাকে একভাবে ।
-আচ্ছা এমন হলে কেমন হয় বল তো ?
-কেমন হয় ? কি কেমন হয় ?
-মনে কর এমন ভাবে সারা দিন বৃষ্টি হল । তুমি আর আমি সারাটা দিন এভাবে হাটতে লাগলাম এক ছাতার নিচে ।
-হুম ! বুঝেছি ! এই ছিপছিপে বৃষ্টি তোমার ভাল লাগছে ?
-লাগবে না কেন ? এই যে তুমি আমার গা ঘেষে হাটছো এখন যেখানেই যাই না কেন আমার কাছে সব স্বর্গীও মনে হবে !
-চল ওখান টাতে গিয়ে বসি !
-আবার ?
-হুম ! বৃষ্টি থেমে গিয়েছে তো ! আর এতো জলদি রুমে গিয়ে কি করবো শুনি ?
মেয়েটির কাছে থেকে ছেলেটি একটু দুরে বসে । কেন জানি আজকে তার অনেক বেশি ভাল লাগছে । কত দিন ধরে এমন একটা দিনের জন্য অপেক্ষা করছিল । নিজেকে আজকে অনেক বেশি সুখী মনে হচ্ছে । এমন একটা দিনের জন্য কতটা সময় ধরে অপেক্ষা করছিল সে !
এই লেখাটা কোন মানে নেই । এলিটা আর মাহদির নিঝুম রাত গানটা দেখতে দেখতে মনে হল আচ্ছা এমন একটা স্বপ্ন তো আমার নিজেরও আছে । গানের ভিডিওর কয়েকটা ছবি নিয়ে এই কথা গুলো লিখলাম ! তবে বাস্তবে ছেলেটির স্বপ্ন কোন দিন পূর্ন হয় না । পৃথিবীর সব থেকে বড় সমুদ্র সৈকত টা তার অদেখাই রয়ে যায় !