আমি প্রথমে ঠিক বুঝতে পারলাম না আসলে নিশি কি বলার চেষ্টা করছে । একবার মনে হল ও মনে হয় আমার সাথে ফান করছে । কিন্তু ওর মুখ দেখে সেটা মনে হল না । আমি কেবল অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম । নিশি আবারও আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি ঐ কথা কেন লিখেছো ?
-কোন কথা ?
-আহা ! এখন কঁচি খোকা ! কিছু বুঝে না ! তুমি তাহসান কে নিয়ে আজেবাজে কথা কেন লিখছো ?
আমার বিশ্ময়ের সীমা রইলো না । মানুষ এতো নির্বোধ কেমন করে হতে পারে ? আমি নিশির সেই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বললাম
-তুমি আমার সাথে এই ছোট্ট বিষয় নিয়ে এতো সিরিয়াস মুডে ঝগড়া করতে এসেছো ?
নিশির মুখ দেখে মনে হল পারলে সে আমাকে চিবিয়ে খায় । মুখ লাল করে নিশি বলল
-তুমি খবরদার ওকে নিয়ে আর একটা বাজে কথা বলবা না আর কোন কোন দিন ! তোমাকে আমি সাবধান করে দিলাম !
নিশি এমন ভাবে কথা বলছে যেন সে তাহসান না সে তার নিজের ঘরের বিয়ে করা জামাই ! আদরের জামাই । আজিব ! আমি বললাম
-তুমি আমাকে সাবধান করে দিলা ? কোথাকার কোন তাহসান তার জন্য তুমি আমার সাথে ঝগড়া করতে এসেছো ? আচ্ছা ওর সাথে কি তোমার যোগাযোগ হয় ? নিয়মিত কথা হয় ? তোমার আত্মীয় ?
-বাজে কথা বলবা না বললাম ? খবরদার বললাম ?
-ও তাহলে যোগাযোগ হয় না ? আচ্ছা ভাল ? আচ্ছা আমার সাথে তোমার গত তিন বছরে কত বার যোগাযোগ হয়েছে বল তো ?
-কেন ?
-না জানতে চাইছি ?
-হিসাব নেই !
-ভাল ! তোমার দরকার কে এগিয়ে আসে ? আমি নাকি তোমার ঐ তাহসান ? তোমার যখন মন খারাপ হয়, তখন তোমার মন ভাল করতে কে হাস্যকর কাজ গুলো করে ? আমি না কি তাহসান ? কে রাত জেগে তোমার বকবক শুনে ?
নিশি কোন কথা না বলে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ! আমি বললাম
-আর আজকে আমি তাকে নিয়ে কি না কি বলেছি তার জন্য তুমি আমার সাথে ঝগড়া করতে এসেছো ?
-তুমি কেন ওকে নিয়ে বাজে কথা বলবা ?
-আমি তো বাজা কথা বলি নি। যা সত্য তাই বলেছি !
-আহা ! নিজে আমার কি অভিনয় পারে রে সে আবার তাহসানের অভিনয় নিয়ে কথা বলে !
-ও আচ্ছা তার মানে বারেক ওবামার সমালোচনা করতে গেলে আমাকে এখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে হবে ?
-শোন তোমার সাথে আমি এখানে তর্ক করতে আসি নি ! তুমি তাহসান কে নিয়ে বলা কথা ফিরিয়ে নিবে কি না বল ?
-কোন কথা ? এই যে তাহসানের অভিনয় প্রতিভা নিয়ে ?
-হ্যা !
-না !
-ফিরিয়ে নিবা না ?
-না ! কোন ভাবেই না ! আমি তো মনে করি ওর অভিনয় করাই ঠিক না ! আগের কয়েকটা নাটকের গল্প গুলো ভাল ছিল, ঠিক ঠাক তাই উত্রে গেছে এইবার ঈদের নাটক গুলোতে তার অভিনয় দেখেছো তো ?
-শোন সাফায়েত ! তোমার সাথে আজকের পরে আমার আর কোন সম্পর্ক নাই ! যে আমার তাহসান কে নিয়ে আজেবাজে কথা বলে তার সাথে আমার কোন কথা থাকতে পারে না !
-আমার তাহসান ? আমার তাহসান ?
আমি অট্টাহাসিতে ফেটে পড়লাম ! আসলেই এই বলদ টাইপের মেয়েটা এমন বেকুবের মত আচরন কেমন করে করতে পারে ?
একটা অবিবাহিত ছেলে হলেও না হয়, বিবাহিত একটা লোক তার উপর এক বাচ্চার বাপের জন্য একটা মেয়ে তার প্রেমিকের সাথে ঝগড়া করছে ! তাও আবার ঝগড়া করছে এমন একজন মানুষের জন্য যার সাথে যে তাকে চিনে পর্যন্ত না !
নিশি বলল
-শুনো তোমার মানুষের বলাতে তাহসানের কিছু যাবে আসবে না । বুঝেছো !
-তা তো বুঝলামই ! তবে তোমার বেকুবদের "আমার তাহসান" কথা বার্তায়ও ভদ্রলোকের কিছু যাবে না আসবেও না ! তোমাদের দিকে কোন দিন ফিরেও তাকাবে না সে ! বুঝছো ?
নিশির আমার দিকে তার কোন কথা না বলে পেছন ফিরে চলে গেল ! আমি কেবল কিছুক্ষন বদনা হয়ে বসে রইলাম ! এই মেয়ের তো চিকিৎসা দরকার ! অতি জরূরী চিকিৎসা দরকার !
গতকাল কে নিজের ফেসবুক স্টাটাসে সংগীত শিল্পী তাহসানের অভিনয় দেখে একটা স্টাটাস লিখেছিলাম । আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়েছে তাহসান সংগীত শিল্পী হিসাবেই ঠিক আছে । তার অভিনয় করা ঠিক না ! এই স্টাটাসের পর থেকে আমার ফ্রেন্ড লিস্টের কিছু মেয়ে দেখলাম আমার উপর বেজায় চটেছে । কয়েজন তো আমাকে বেশ কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিল । একটু পরে দেখলাম করেকজন আবার আমাকে আনফ্রেন্ডও করে দিল ! আমি কিছু মনে করলাম না ! তারকা জগতের একজন মানুষের জন্য যে আমার সাথে বন্ধুত্ব্য নষ্ট করতে পারে এমন কোন মানুষের বন্ধুত্ব্য আমার দরকার নেই ! এদের অভাব আমি কোন দিন বিন্দু মাত্র অনুভব করবো না !
হ্যা এমন হলে কথা ছিল যে তাহসান তাদের খুব কাছের বন্ধু, তাদের সাথে নিয়মিত কথা বার্তা হয় কিংবা ফ্যামমিলি ফ্রেন্ড তাহলে তাকে নিয়ে কিছু বলতে আমার সাথে তারা ঝগড়া করতেই পারে কিংবা আমাকে দুকথা শুনিয়ে দিতেই পারে । আমার বন্ধু কে নিয়ে কেউ যদি বাজে কথা বলে আমিও নিশ্চিয় তার সাথে ভাল ব্যবহার করবো না । কিন্তু যে মানুষটার সাথে কোন দিন তার দেখা হয় নাই কোন দিন দেখা হওয়ার সম্ভাবনাও নাই, যে মানুষ কোন দিন ফিরেও দেখবে না তারা কি করলো না করলো, সেই মানুষটার জন্য যদি বাস্তবের কাছের মানুষ গুলোর সাথে সম্পর্ক নষ্ট করে কেউ তাহলে কি তাদের দিকে আবার দ্বিতীয়বার ফিরে তাকানো উচিৎ ?
তবে শেষ পর্যন্ত নিশিও এমন টা করবে আমি ভাবতে পারি নি ! কিছু সময় নিজের কাছে খারাপ লাগলো । তবে এই ভেবে খারাপ লাগলো না যে নিশি আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, বরং এই ভেবে খারাপ লাগলো যে আমি এমন একটা মানুষ কে পছন্দ করতাম যার কাছে আমার থেকেও দুরের একটা মানুষের গুরুত্ব বেশি !
থাক তুই তোর তাহসান কে নিয়ে ! তোর মত মেয়ের আমার দরকার নাই । আমিও দেখবো তুই তাহসান নিয়া একলা একলা কদিন থাকতে পারিস !
এবার এমন একজনের সাথে বন্ধুত্ব্য করলাম যে আমাকে গুরুত্ব দিবে অন্তত অনলাইন কিংবা তারকা জগতের কারো থেকে আমার গুরুত্ব তার কাছে বেশি হবে । এবং দেখলাম আসলেই এমন মানুষের সংখ্যাটাই বেশি যারা বাস্তবের বন্ধুত্বকে বেশি দাম দেয় !
দিন কাটতে লাগলো ! আমি জানতাম নিশি নিজের ভুল ঠিকই বুঝতে পারবে । বিশেষ করে আমি যখন ওর সামনে দিয়ে আরেক জনের সাথে গল্প করি, ওর দিকে ফিরেও তাকাই না কিংবা মাঠে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারি ফুচকা খাই, তখন সে তাহসানের গান শুনে !
শুন বেটি, দেখি এক গান কত দিন শুনতে পারিস !
কিন্তু মামা, জীবন তো আর তাহসানের গান শুনে কাটবে না ! তুমি যখন রাস্তায় হোচট খাবা তোমার তাহসান এসে তোমার হাত ধরবে না ! তোমার বাস্তবের কোন বন্ধু এসেই তোমার হাট ধরবে ! এখন তুমি যদি তোমার ঐ বাস্তবের বন্ধু থেকে তোমার ঐ তাহসানরে বেশি গুরুত্ব দাও তাহলে তোমার মত বলদ আর কয়ডা আছে ।
এক সপ্তাহও পার হল না নিশির ফোন এসে হাজির ! রাতের বেলা ঘুমানোর আয়োজন করছিলাম দেখলাম অনেক দিনের পরিচিত রিংটোন বেঁজে উঠলো ! একবার ভাবলাম ফোন টা না ধরি । দু তিনবার বাজুক তারপর ধরি ! কিন্তু প্রথম বারের ধরলাম ।
ওপাশে কোন কথা হল না । আমিও কোন কথা বললাম না । এক সময় নিশি নিজেই বলল
-কথা বল না কেন ?
-তুমি ফোন দিয়েছো, দরকার তোমার, আমার তো না !
-তাই না ? এখন আমার সাথে কথা বলার আর দরকার নেই না ?
-যে আমার থেকে অন্য একটা হাস্যকর সম্পর্কের মানুষের জন্য আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে তার সাথে আমার কোন দরকার থাকতে পারে না !
কথা টা বলেই মনে হল একটু যেন কঠিন কথাই বলা হয়ে গেল । হাজার হোক মেয়েটাকে ভাল তো বাসি । একটু না হয় হয় বলদামী করেছে তাই বলে এমন করে বলা ঠিক না !
নিশি ওপাশ থেকে কোন কথা বলল না । তবে দেখলাম একটু পরেই ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে । এই কান্নার কেবল আমি থামাতে পারবো, কোন তাহসানের গান থামাতে পারবে না !
বেকুব মেয়েটা কবে বুঝবে এটা কে জানে ?
আমি বললাম
-কাঁদছো কেন ?
-এমনি কাঁদছি ? তোমার কি ?
-আমার তো কিছু একটা আছেই ! বোকা টাইপের একটা মেয়ে কাঁদলে তো আমার খারাপ লাগেই !
-তাহলে কাঁদাও কেন শুনি ? কেন কাঁদাও ?
-কি করবো ? বেকুব মেয়েদের মাঝে সাঝে একটু টাইট না দিলে হয় না !
-কি ? কে বেকুব ? কে ? তোমাকে ফোন করাই আমার ভুল হয়েছে । তোমাকে তোমাকে ....।
-হাহাহহাহাহা ! আমাকে কি ? আমাকে একটা চুম খাওয়া দরকার ?
-থাপ্পড় লাগানো দরকার । বদ ছেলে কোথাকার !
-আচ্ছা কাল লাগিও একটা থাপ্পড় ! তোমার তাহসান কে তো আর থাপ্পড় লাগাতে পারবা না ! চুমোর ইমো গুলো তাকে দিয়ে সত্যিকারের চুমো টা না হয় আমাকে দিও । মানে হাত দিয়ে আর কি !
ওপাশ থেকে কোন কথা বলল না সে !
আমি কেবল মনে মনে হাসালম !
সম্পর্ক গুলোর মূল্য দিতে শিখো, কেমন মেয়ে ! সম্পর্কের গুরুত্ব গুলো বোঝো ! তোমার জীবনে কে বেশি গুরুত্ব বহন করে সেটা যদি ঠিক মত নির্নয় না করতে পারো তাহলে সারা জীবন কষ্ট পেতে হবে ! কোন হাস্যকর সম্পর্কের মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ন সম্পর্কের মানুষকে দুরে ঠেলে দিও না !
উৎসর্গঃ নিশির মত সকল বেকুব টাইপের মেয়েগুলা কে ...
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০৫