somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ শেষ হুইসেল

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




সাজ্জাদ সাহেব আমার দিকে কিছুক্ষন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন । একবার হাতে ধরা কাগজটার দিকে আরেক বার আমার দিকে তাকালেন বার কয়েক ! তারপর বলল
-আপনি কি সিরিয়াস ?
-জি !
-কিন্তু কেন ?

একবার মনে হল বেটার কলার চেপে ধরে বলি বেটা বদের বদ ! আসল দোষ তোর ! তোরে তো তাড়াইতে পারতাছি না তাই নিজেই চলে যাচ্ছি !
কিন্তু চাইলেই তো সব কথা বলা যায় না ! আমি হাসি মুখে বললাম
-ভাল লাগছে না এখানে কাজ করতে !
-ভাল লাগছে না ! কোন সমস্যা হলে বলুন ! আমি দেখছি সেটা !
-না সেটা কোন সমস্যা না , কদিন ব্রেক নেব ভাবছি ! ব্যস্ততা থেকে দুরে !
-তা নিন ! কিন্তু চাকরী ছাড়ার দরকার কি ! এক মাসের ছুটি নিয়ে নিন ! আমি ছুটি দিয়ে দিচ্ছি !
-না । স্যার ! থ্যাঙ্কিউ !

আমি অফিস থেকে চলে যেতে পারলে বাঁচি কিন্তু সাজ্জাদ সাহেব আমাকে ছাড়বে বলে মনে হচ্ছে না ! আরও কয়েকটা কথা বলতে যাবেন ঠিক তখনই ঈশিতা এসে ঢুকলো রুমে !
সাজ্জাদ সাহেব সেদিকে তাকিয়ে বলল
-ঈশি দেখো সুমন সাহেব কি করছে ?
-কি করছে ?
-চাকরি ছেড়ে দিচ্ছে !

ঈশিতার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও বেশি চমকালো না ! আমার কেন জানি মনে হল ইশিতা আগে থেকেই এমন কিছু একটা ধারনা করে রেখেছিল যে আমি মনে হয় আর এখানে থাকবো না ! তবে এটো জলদি চাকরী ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিবো এটা মনে হয় ঈশিতা ভাবতে পারে নাই ! মুখটা একটু বিষন্ন হল ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-মানুষজন আর ভাল লাগছে না ? নাকি চাকরি ?
-না অন্য কারন !

অন্য কেউ হলে হয়তো জিজ্ঞেস করতো কিন্তু ঈশিতা করনটা জিজ্ঞেস করলো না ! কারনটা সে জানে ! খুব ভাল করেই জানে । কারন টা সে নিজে !


গত সপ্তাহে লাঞ্চ আওয়ারে হঠাৎ করেই ঈশিতাকে বললাম
-আজকে কি আমার সাথে বের হওয়া যাবে ?
একটু অবাক হলেও ঈশিতা বলল
-কোথায় যাবেন বলুন ?
-কোথায় না ! সামনের পার্কে ! কয়েকটা কথা বলতাম ! ১০/১৫ মিনিট !
-হুম ! চলুন !
-সাজ্জাস সাহবে রাগ করবে না তো ?
-না ! রাগ করবে কেন ?
-না মানে তার হবু বউকে নিয়ে পার্কে যাচ্ছি ! রাগ তো করতেই পারে !
-জি না ! ভয় নেই ! ও কিছু মনে করবে না !

পার্কের বেঞ্চে বসে নিজ নিজে প্রথমে গুছিয়ে নিলাম কি বলবো !
-কই কি বলবেন বলছিলেন ?
-আসলে ? আপনাকে অনেক দিন থেকেই কথাটা বলবো বলবো ভালছিলাম ! কিন্ত শেষে দেরি হয়েই গেল !
-দেরি ?
-আজ বলবো কাল বলবো করে প্রায় বছর পার হয়ে গেল ! আমরা তো প্রায় বছর খানেক হল কলিগ, তাই না ?
-হুম । বছর খানেক তো হবেই !
-এক বছর এগারো দিন সাড়ে বারো ঘন্টার মত !

এই কথা শুনে ঈশিতা একটু যেন অবাক হল ! আমার চোখের দিকে তাকিয়ে একটু চমকে উঠলো ! চোখ সরিয়ে নিল পরক্ষনেই !

আমি বললাম
-একবার ভেবেছিলাম যে আপনাকে কথা টা কোন দিন বলবোই না আর । কিন্তু নিজের কাছে শান্তি পাচ্ছিলাম না কিছুতেই ! তাই বলতে এলাম !
-বলুন !
-প্লিজ আপনি সিরিয়াস নেবেন না ! এখানে আপনার কোন হাত নেই আমার দোষ সম্পূর্ন ! আমি যে আপনাকে ভালবাসি এই কথাটা আমি বলতে পারি নি অন্য কেউ বলেছে এটা আমার ব্যর্থতা !

ঈশিতা আবারও আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ! আমি আবার বললাম
-সেই শুরু থেকেই আপনাক এতো পছন্দ করি যে বলে বোঝাতে পারবো না ! আমি আমি....

কিছুক্ষন নিরবতা !

-এই কয়দিনে আমি সারা সময় কেবল ভেবেছি যে এমন একটা দিন আসবে যখন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই আপনার ঘুমন্ত মুখ দেখতে পাবো ! বলতে গেলে এই স্বপ্ন টা আস্তে আস্তে গড়ে তুলেচিলাম ! কিন্তু ...।
ঈশিতা কোন কথা বলল না ! আমিও কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললাম !
-চলুন যাওয়া যাক !
-হুম চলুন ! চুপচাপ হেটে চলে এলাম !

গত দিন দিন গুলোতে ভেবেছি কেবল এই কথা ! একই অফিসে চাকরী করা কিছুতেই সম্ভব না ! ঠিক করেছি চাকরী ছেড়ে দিবো ! আজকে সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চাকরী ছাড়লাম ! ঈশিতার মুখ দেখে একটু খারাঐ লাগছিল । এই মুখটা আর দেখতে পাবো ভেবেই খারাপ লাগছে !


-আপনি চাকরি টা না ছাড়লেও পারতেন !
-হুম ! হয়তো ! কিন্তু ....
ঈশিতা বলল
-কিন্তু কি ?
-কিছু না !
-কোথায় যাবেন এখন ? অন্য কোন অফিস ?
-আপাতত না ! ঢাকা ছাড়বো ভাবছি ! এখানে কেমন দম বন্ধ হয়ে আসতেছে ! চোখের সামনে আপনি অন্য কারো হয়ে যাবেন ভাবতে পারছি না ! তাই চলে যাবো ভাবছি !
ঈশিতা আর কথা বলল না ! চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে আমি বললাম
-ঈশিতা !
-হুম !
-এই শহরে আমার কাছের মানুষ বলতে কেউ নেই ! আমার একটা ইচ্ছা কি রাখবেন ?
-কি বলুন ?
-কালকে কি একটু স্টেশনে আসবেন ? আমি চাই যে ঢাকা ছাড়ার আগে শেষ যে পরিচিত মুখ টা দেখি সেটা আপনার হোক ! আসবেন ?





-ট্রেন ছাড়তে কত বাকী ?
-এই ৫/১৫ মিনিট !
-চলে যাবেনই তাহলে ?
-হুম ! আপনি যাবেন আমার সাথে ?
ঈশিতা কিছু না বলে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো ! আমি বললাম
-একটা কথা বলি ?
-বলুন ?
-ঐ দিনের পর আপনি আমার কথা কতবার ভেবে ছেন ?
-জানি না !
-জানি না নাকি জানতে চান না !
-দেখুন আপনি রিকোয়েস্ট করেছিলেন বলে আমি এসেছি ! এমন কথা বললে কিন্তু চলে যাবো !
-আপনি প্লিজ বলেন না আমার কথা কত টুকু ভেবেছেন ?
-জানি না !
-আমার কি মনে হয় জানেন ? আপনি ঐদিনের পর একটা মুহুর্তও আমার কথা না ভেবে থাকতে পারেন নি !
-জি না এমন কিছু না !

আমি আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলাম তখনই ট্রেনের হুইসেল দিয়ে দিল ! ঈশিতা উঠে দাড়াতে দাড়াতে বলল
-এবার যেতে হয় !
-চলে যাবেনই !
-জি । যেতে হবে !
-আমার এই পাশের সি টার টাকা দিয়ে যান তাহলে !
খনিকটা অবাক হয়ে ঈশিতা বলল
-মানে ?
-৩৫০ টাকা !
-কি বলছেন এসব ?
আমি বললাম
-আমি ভেবেছিলাম আপনি শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে যাবে আমার সাথে যাওয়ার জন্য ! তাই আগে থেকে ট্রেনের টিকেট কেটে রেখেছিলাম ! কিন্তু আপনি তো চলে যাচ্ছেন !
-জি আমি চলেই যাবো ! থাকবো নাকি ? আর আমি আপনাকে ট্রেনর টিকেট কাটতে বলি নি !
-সত্যি চলে যাবেন ?
-যেতে হবে !
-দেখুন আমি জানি সাজ্জাদ সাহেবের সাথে বিয়ে হলে আপনি সারা জীবন আমাকে মনে রাখবেন । সাজ্জাদের ঘর করবেন ঠিকই কিন্তু আমি জানি আপনি আমাকে ভুলতে পারবেন না ! কিন্তু আমার আমার সাথে আসলে সাজ্জাদের কথা কোন দিন মনেও করবেন না !

ঈশিতা দরজার কাছে গিয়ে থেমে গেল ! ফিরে তাকিয়ে বলল
-হয়তো !
-তাহলে ?
-মেয়েদের অনেক কিছু চিন্তা করতে হয় ! আপনি ভাল থাকবেন !


আপনি ভাল থাকবেন বলেও ঈশিতা চট করে নেমে গেল না ! তখনই ট্রেন টা ঝাকিয়ে চলতে শুরু করলো ! আমি আশা করে আছি ঈশিতা হয়তো শেষ পর্যন্ত নামবে না !
একবার মনে হল ঈশিতা শেষ পর্যন্ত নামবে না ! আরেকবার মনে হল নেমে যাবে । নেমে গিয়ে হাটা শুরু করবে ! একবারও পিছনে ফিরে তাকাবে না ! আর মাত্র কয়েক মুহুর্ত ! আমি সেই মুহুর্তটার জন্য অপেক্ষা করে থাকি !
ট্রেনটা আরেক বার হুইসেল দিয়ে উঠলো !


১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×