অনুগল্পঃ অপু আর অপু !
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
-অপু ?
বারান্দায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখছিলাম । বৃষ্টি থামলেই বাসার দিকে রওনা দিবো । আজকে কোন ক্লাস হবে বলে মনে হয় না । হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র এসেছে । আমার নিজের আসাটা মোটেও ঠিক হয় নি !
বারান্দায় দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখছিলাম তখন পাশ থেকে অপুর ডাকটা শুনলাম !
খানিকটা চমকে গিয়েই পাশে তাকালাম ! বৃষ্টি দেখায় এতোই তন্ময় হয়ে ছিলাম যে আচমকা ডাকটা আমাকে একটু ভড়কে দিল !
অবশ্য ভড়কে দেওয়ার পেছনে আরও একটা কারন আছে । কারন অপু আমাকে ডেকেছে । এইটাই একটা বিশেষ কারন ।
ছাত্র জীবনে যদি কোন ছেলের নামে কোন মেয়ে থাকে তাহলে সেই ছেলের জীবনে কতটা প্যারা সহ্য করতে হয় তা কেবল সেই ছেলেটাই জানে ! যেমন টা আমাকে সহ্য করছে হয়েছে । সহ্য করতে হচ্ছে ! সামনেও হবে ।
আমি অপুর দিকে তাকিয়ে রইলাম নির্বাক হয়ে । এমন না যে এর আগেও আমি ওকে দেখি নি কিন্তু আজকে মেয়েটাকে এমন কেন লাগছে । চোখ দুটি যেন আরও বেশি গভীর লাগছে । কেমন একটা অচেনা ভাব ! মেয়েটা এর আগে কোন দিন আমার সাথে কথা বলে নি, আজকেই প্রথম !
আমি বললাম
-বল !
-বৃষ্টিতো মনে হয় থামবে না ! আমাকে কি এক টা রিক্সা ডেকে দিবে ?
-রিক্সা ? আচ্ছা !
এই বলে আমি বৃষ্টির ভিতরেই নেমে পড়তে উদ্ধ্যত হলাম । তখনই অপু আবার আমাকে ডাকলো !
-আরে আরে এভাবে নামছো কেন ? ভিজে যাবা তো ?
-অ !
আমার কাছে কেন মনে হচ্ছে আমার ঠিক হুস নাই ! কেন নাই কে জানে ?
অপু নিজের ব্যাগ থেকে একটা ছাতা বের করে আমার হাতে দিয়ে বলল
-এটা নিয়ে যাও !
আমি রোবটের মত ছাতাটা হাতে নিলাম ! তারপর ঝুম বৃষ্টির ভিতর নেমে গেলাম !
আমার অপুর নাম টা একই বলে প্রথম প্রথম ক্লাসের ছেলেরা সবাই খুব খেপাতো । জানি মেয়েটার এতে কোন দোষ নাই কিন্তু কেন জানি মেয়েটার উপর প্রচন্ড রাগ জন্মাতো । থাপড়ায়া দাঁত ফেলে দিতে ইচ্ছে হত । বদ মেয়ে ! দুনিয়ার তুই আর অন্য কোন নাম পাস নাই ! তাই অন্য সবার সাথে কথা বললেও মেয়েটার থেকে দুরে দুরেই থাকতাম !
কিন্তু আজকে কি হল ? কেন হল ? মেয়েটা এর আগে কোন দিন আমাকে এমন কন্ঠে ডাকে নি ! আর নিজের নাম টা এতো দিন পর এতো মিষ্টিও লাগে নি এর আগে !
অনেক কষ্টে একটা রিক্সা পাওয়া গেল । আমি যখন রিক্সা নিয়ে বারান্দায় কাছে এলাম দেখি অপু ঠিক আগের মত করেই দাড়িয়ে আছে । আমি বললাম
-রিক্সা পাওয়া যাচ্ছিলো না ! বৃষ্টি তো !
কথা টা বলেই কথা হারিয়ে ফেললাম ! এর পর কি বলবো ? কি বলা উচিৎ আর !
অপু আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো ! আবারও আমার বুকের ভেতর টা ধক করে উঠলো ! এর আগে তো কোন দিন এমন করে ওকে হাসতে দেখি নি ! আমি ছাতা নিয়ে এগিয়ে যেতেই ও ছাতার তলে চলে এল । একবারে আমার গা ঘেষে দাড়িয়ে !
-কি বৃষ্টি দেখেছো ?
-হুম !
রিক্সায় উঠে ও রিক্সার পর্দা ঠিক করতে লাগলো ! আমি ওর ছাতাটা বন্ধ করে ওর দিকে এগিয়ে দিলাম । এদিকে আমার শার্ট ভিজে গেছে বৃষ্টির জলে ততক্ষনে !
আমাকে দেখে অপু কেমন চিৎকার করে উঠলো !
-আরে কি কর ? ভিজে যাচ্ছো তো !
-কি ? কি বললে ?
-আরে গাধা ভিজে যাচ্ছো তো ! আচ্ছা উঠে আসো ! রিক্সার ভিতরে উঠে আসো ! উঠে আসো !
আমি আবারও রোবটের মত রিক্সায় উঠে এলাম !
ওর পাশে বসতে বসতেই অপু বলল
-এই তোমার কি হয়েছে বল তো ?
-কি হবে ?
-কিছু একটা হয়েছে ? আজকে কেমন যেন আচরন করছো ? অন্য দিন আমার সাথে কথাই বল না আর আজকে আমার জন্য রিক্সা ডেকে নিয়ে এল !
-না ! কিছু না তো !
রিক্সা চলতে শুরু করতে করলে অনুভব করলাম বুকের ভেতর কেমন একটা শিরশিরে অনুভব করছে । কেন এই অনুভুতি আমি জানি না ! আমার কেন জানি মনে হল আমার মুখের দিকে এখন যে কেউ তাকালে আমার মনে অবস্থা ঠিক বুঝে ফেলবে ! কোন কিছু না ভেবেই রিক্সাওয়ালা কে থামতে বললাম !
রিক্সা থামতেই নেমে গেলাম বৃষ্টির ভিতর ! অপু আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন ! রিক্সাওয়ালা মাকে চালাতে বললাম ! রিক্সা চলতে শুরু করলেও দেখলাম অপু রিক্সার পেছন দিক দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে অবাক হয়ে ! আমি যেমন ভিজে গেছে ও নিজেও ভিজে গেছে অথচ কারো কোন ভ্রুক্ষেপ নেই ! যতক্ষন দেখা যায় একে অন্যে রদিকে তাকিয়ে রইলাম ! কেন তাকিয়ে রইলাম কে জানে ! মানুষের অদ্ভুদ মনের কাজ কারবার গুলো মাঝে মাঝে কোন ভাবেই কোন ব্যাখ্যা করা যায় না !
চোখের আড়ালো চলে যাওয়র পরেই অন্য রকম একটা অনুভুতি শুরু হল । মনে হল দৌড়ে রিক্সার পেছনে চলে যাই । ওকে ডেকে বলি তুমি কি আমার সাথে কিছুক্ষন বৃষ্টিতে ভিজবে ?
কিন্তু গেলাম না ! পাগলের মত বৃষ্টিটে ভিজতে লাগলাম । মন টা সেই রিক্সার ভিতরেই পরে রইলো !
বারবার আমার নিজের মনের এই আচরন ব্যাখ্যা করতে পারলাম না ! এমন কেন লাগছে । এমন তো কোন ভাবেই হওয়ার কথা না !
ঠিক তখনই আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার পেছনে একটা রিক্সা এসে থামলো ! তাকিয়ে দেখি অপু নামছে ছাতা মাথায় দিয়ে রিক্সা থেকে নেমে পড়লো বৃষ্টির ভেতরে ! আমার ডিকে তাকিয়ে খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল
-তোমার কাছে ২০ টাকা হবে ?
-কি ?
-২০ টাকা হবে ?
আমি কোন কথা না বলে টাকা বের করে দিলাম ! অপু টাকা রিক্সাওয়ালাকে দিয়ে আমার সামনে এসে দাড়ালো ! আমি তখনও অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি ! অপু একটা লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিয়ে বলল
-তুমি এভাবে নেমে গেলে কেন ?
-তার আগে বল তুমি কেন ফেরৎ এলে কেন ?
-জানি না !
আমি আর কোন কথা জানতে চাইলাম না এটা নিয়ে ! কেবল বললাম
-ভিজবে ?
-না ! তুমি ভিজো ! তোমার পাশে হাটি ! ঠিক আছে ?
-আচ্ছা !
অপু আমার পাশেই হাটতে লাগলো চুপচাপ ! মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকাচ্ছে, আবার চোখ সরিয়ে নিচ্ছে ! কোন কথা বললাম না আমরা কিন্তু ঐ চোখের চাহনিতেই অনেক কথা যেন বলে ফেললাম !
আসে পাশের মানুষ জন গুলো একটু বাঁকা চোখে আমাদেরকে দেখতে লাগলো ! একটা ছেলে প্রবল বৃষ্টিতে হেটে চলেছে, ঠিক তার পাশেই ছাতা মাথায় একটি মেয়ে হাটছে । কেউ কোন কথা বলছে না ! একটু পরপর কেবল একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছে !
অনুগল্প দুইঃ পাগলী
-এই তুই আমার ছবি মোবাইলের ওয়ালপেপারে কেন লাগিয়েছিস ?
নীলুর কন্ঠ দিয়ে যেন আগুন ঝড়ছে । আমি খুব বেশি চিন্তিত হলাম না । নীলু সব সময়ই আমার সাথে এরকম করেই কথা বলে । আমি অন্য দিকে তাকিয়ে বললাম
-তোকে কে বলল যে আমি তোর ছবি লাগিয়েছি ?
-আমি জানি ! তুই এখনই ছবি বদলা ! বলছি বদলা !
-শোন বেশি বকবি না ! আমার মোবাইল আমি যার ইচ্ছা তার ছবি লাগাবো তোর কি ?
-তোর কি মানে ? আমার ছবি লাগাবি আবার বড় বড় কথা বলবি !
আমি বললাম
-তা ! তুই যে আমার ছবি তোর ডেক্সটপে দিয়ে রেখেছিস আমি কিছু বলেছি ?
নীলু যেন আকাশ থেকে পড়লো আমার কথা শুনে ! প্রথমে কিছুটা সময় কথাই বলতে পারলো না ! তারপর আমতা আমতা করে বলল
-তো-তোকে কে বলেছে ? কে বলেছে তোকে আৈ তোর ছবি লাগিয়েছি !
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
-তুমি মামু নিজেকে যতটা বুদ্ধিমতি ভাবো ওতোটা তুমি নাও ! ঠিক আছে ।আগে আমার ছবি চেঞ্জ করে তারপর তোমার ছবির কথা ভাববো !
আর কিছু না বলতে পেরে নীলু আমার দিকে কিছুক্ষন তীব্র চোখে তাকিয়ে রইলো ! তারপর গটগট করে হাটা দিল ! আমি ওর চোলে পথে দিকে তাকিয়ে রইলাম !
পাগলি একটা !
রাতের বেলা ঘুমাতে যাবো এমন সময় আবার নীলুর ফোন ! আবার সেই রাগত কন্ঠে আমাকে বলল
-কোথায় তুই ?
-এই সময় আর কই থাকবো ? বাসায় ।
-তুই এখনই আমার বাসার সামনে আয় ! এক্ষুনি !
-এখন ? কয়টা বাজে হিসাব আছে ?
-আমি কিছু শুনতে চাই না ! এক্ষুনি আসবি !
-আচ্ছা বাবা শান্ত হ ! আসতেছি !
খানিটা চিন্তিত হলাম বটে ! এতো রাতে নীলুর আবার কি দরকার পড়লো !
ওদের বাসা আমাদের বাসা থেকে খুব বেশি দুরে না ! হেটে যেতে মিনিট পাঁচেকের মত লাগে । আমি ওর বাসার সামনে গিয়ে ফোন দিতেই নীলু বেড়িয়ে এল !
আমার সামনে এসে বলল
-তোর মোবাইল দে !
-কেন ?
-দিতে বলছি দে !
আমি কিছু না বলে ওকে মোবাইল দিলাম ! লক খোলাই ছিল ! মোবাইলটা নিয়ে কিছুক্ষন ওর নাড়া চাড়া করলো ! তারপর নিজের মোবাইল বের করে আরও কি যেন করলো ! তারপর আমার দিকে ফেরৎ দিয়ে বলল
-যা এবার বাড়ি যা !
-মা নে কি ?
-কোন মানে নেই !
আমি মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখি সেখানে নীলুর অন্য একটা ছবি শোভা পাচ্ছে ওয়ালপেপারে ! কিছুক্ষন ছবিটার দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম
-এই জন্য আমাকে এতো রাতে আসতে বললি ? এই ছবি তো অনলাইনেই দেওয়া যেত !
-যেত ! কিন্তু আমি কিভাবে বুঝতাম যে তুই আমার কেয়ার করিস ! আর ছবি নিবা একটু কষ্ট করবা না, তা তো হবে না !
আমি নীলুর কথা শুনে হাসি ! আসলেই পাগলী একটা !
আমি বললাম
-কেবল ছবিই ! আর কিছু না ?
-আর কিছু আবার কি ? যা ভাগ ! ফাজলামি করলে থাপ্পড় খাবি !
-ফাজলামি কোথায় করলাম ?
-মার খাবি ! যা ভাগ বলছি !
আমি হাসতে হাসতে বললাম
-আচ্ছা যাচ্ছি ! কাল ক্যাম্পাসে দেখা হবে !
-আর শোন ! এই ছবি যদি কাউকে দেখাস তোর খরব আছে কিন্তু ! একদম খুন করে ফেলবো !
আমি মনে মনে বললাম আমি তো খুন হয়ে আসি ! আর কত খুন করবি ?
আমার সামনেই নীলু গেট দিয়ে ভেতর ঢুকলো ! আমি বাড়ির দিকে হাটা দিলাম ! মেয়েটা আসলেই একটা পাগলি !
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?
স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন