গল্পঃ বাবা কেন ঘটক !!
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
-তোমার বাবা ঘটকালি করে ?
ইরার মুখ দেখে মনে হল কিছু একটা হয়েছে । গম্ভীর কিছু একটা । আমি ভয়ে ভয়ে বললাম
-কি বল ? ঘটকালি কেন করবে ? বাবা তো সরকারি চাকরি করে ।
আমার কথা শুনে ইরার মুখটা বিরক্তিতে ভরে গেল । বিরক্তি নিয়েই বলল
-সরকারি চাকরী করে সেটা আমিও জানি ।
-ও ! আসলে বাবা অনেক মানুষের সাথে জানা শুনা আছে তো তাই মাঝে মধ্যে মানুষ ভাল পাত্র-পাত্রীর সন্ধান চায় বাবা কাছে । কেন কি হয়েছে ?
আমি আসলে ঠিক কি ঘটছে বুঝতে পারছিলাম না । ইরার এমন রেগে যাওয়ার কারন কি ? ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে মনে হল কোন কারনে বেশ বিরক্ত কিছু একটার উপরে । না জানি আমার বাবার পার্ট টাইম ঘটকালি আবার কি দোষ করলো কে জানে ?
-আজকে তোমার বাবা আমাদের বাসায় গিয়েছিল বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ।
-মানে কি ?
-মানে বোঝো না ? উনি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে আমাদের বাসায় ?
আমি সত্যি সত্যি আকাশ থেকে পড়লাম । আমি বাবাকে কিছু বলি নাই । বাবা কি কোন ভাবে জেনে গেছে যে ইরার সাথে আমার কিছু চলছে ? হঠাত আমাকে কিছু না জানিয়েই একেবারে বিয়ের প্রস্তাব ।
আমি বললাম
-আমার বিয়ে প্রস্তাব নিয়ে ?
-সজিব গাধার মত কথা বলবা না ? তোমার সাথে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এলে আমি এভাবে রিএক্ট করতাম ?
কথা সত্য ! আর আমার বাবা তো এখন জীবনেও আমার বিয়ের কথা বলবে না । সবে মাত্র চাকরীতে ঢুকলাম । এখনও দু তিন বছর তো বিয়ের নামও আনবে না সে !
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম
-কার বিয়ে নিয়ে গেছে ?
-কোন এক ছেলে , ইঞ্জিনিয়ার না কি ? খুব নাকি ভাল ছেলে । বাবা তো শুনে একেবারে গলে গেছে !
-গলে গেছে ?
-হুম !
-এখন ?
-আমি কি জানি ? তোমার বাবা ঝামেলা বাঁধিয়েছে । সে ঠিক করবে । আমি কিছু জানি না ।
-তা তুমি তোমার বাবাকে বলবা না ?
-তুমি বল তোমার বাবা কে ?
-আরে আমি এখন কি বলবো ? বাবা তো এতো জলদি আমার বিয়ের জন্য রাজি হবে না ।
-তাই না ? শুনো সজিব !
ইরা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে হুমকি দেওয়ার ভংগি করে বলল
-যদি তুমি কিছু না করতে পারো, যদি তুমি তোমার বাবাকে না বলতে পারো তাহলে আমি এখানে বিয়ে করে ফেলব । তখন বুঝবা !
ইরা আর বসল না । ব্যাগ নিয়ে উঠে চলে গেল । আমি বোকার মত বসে রইলাম ।
কি এক ঝামেলায় পড়া গেল । সব কিছু ঠিক মতই চলছিল । চাকরীটা সবে মাত্র পেয়েছি । ইরার পড়া লেখা চলছিল ঠিকঠাক । ওর পড়া লেখা শেষ করতে করতে আমি নিজেও ততদিনে গুছিয়ে নিতে পারবো । কিন্তু মাঝখানে বাবা আবার কি একঝামে বাধিয়ে দিল । বাবা তুমি কেন ঘটকালি করতে গেলা ? আর গেলাই যখন ঐ বাড়িতে গেন গেলা ?
দুনিয়ার মেয়ে নাই নাকি ?
রাতের খাওয়ার সময় বাবাকে ঘটকালির কথাটা বললাম । বাবা ভাত খেতে খেতে বলল
-হ্যা ! মেয়েতা বেশ ভাল ।
-তো ! ভাল তাই বলে কি তোমার কি ঠ্যাকা পড়েছে তার বিয়ে ঠিক করার ?
-আরে এমন করে কেন বলতেছিল ? তুই কি জানি স না আজকাল একটা ভাল মেয়ে পাওয়া কত ঝামেলা । সফিক বলল ওর ছেলের জন্য একটা ভাল মেয়ে খুজতে । আরিফ কে তুই তো চিনিস খুব ভাল ছেলে ।
-ভাই ছেলে বুঝলাম । তাই বলে ঐ মেয়ের সাথে ?
-কেন সমস্যা কি ? তুমি মেয়ে কে চিনিস নাকি ?
-আমি ! ইয়ে মানে হ্যা চিনি ।
-কেন মেয়ে কি ভাল না ? আমি তো খোজ নিয়ে জানলাম ভাল মেয়ে !
-না মানে মেয়ে ভাল । তবে ......
-তবে কি ? এতো ভাল একটা মেয়ে ...।।
এখন বাবাকে কিভাবে বলি তবে কি ? ইচ্ছে হল চিৎকার করে বলি মেয়ে যখন এতোই ভাল তা নিজের ছেলে চোখে দেখো না ? নাকি নিজের ছেলের সাথে ভাল মেয়ের বিয়ে দিবা না ? কিন্তু কিছুই বলা হয় না । অর্ধেক ভাত রেখেই উঠি পড়লাম ।
ইরার আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিল । ওই দিন খাওয়ার পরে ইরা ফোন দিয়ে জানতে চাইলো আমি বলেছি কি না ? বললাম যে বলতে পারি নাই । ইরা রাগ করে ফোন রেখে দিয়েছে । আর আমার সাথে কথা বলছে না ।
এদিকে প্রতিদিন খাবার টেবিলে বাবা বিয়ের অগ্রগতি নিয়ে কথা বলে । আমি দাঁতে দাঁত চেপে তা শুনি । গলা দিয়ে ভাত নামতে চায় না । বারবার চোখের সামনে দেখি ইরার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে । আরিফ ভাইয়ের সাথে ইরা হানিমুনে যাচ্ছে । মনে হয় বাড়ির ছাদের থেকে অরিফ বেটা কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই । বিয়ে করার আর সময় পেলি না ?
একদিন গেলাম আরিফ ভাইয়ের কাছে । আমাকে দেখে আরিফ ভাই খাতির করে বসালেন নিজের অফিসে ।
এটা ওটা বলতে গিয়ে বিয়ের কথা তুললাম ।
দেখলাম আরিফ ভাইয়ের মুখ কেমন লাল হয়ে গেল । বললাম
-মেয়ে দেখেছেন ?
-হুম !
-দেখেছেন ?
-আঙ্কেলের সাথে গিয়েছিলাম সেদিন বাবাকে নিয়ে । আঙ্কেল মানে তোমার বাবা তো মেয়ের প্রসং৬শায় পঞ্চমুখ ।
-তারপর ? মেয়ে পছন্দ হয়েছে ?
-হ্যা ! তবে মনে হচ্ছে মেয়ে কোথায় রিলেশন ছিল বুঝলে !
-কিভাবে বুঝলেন ?
-আরে আজকাল রিলেশন ছাড়া মেয়ে কোথায় ? আর এসব দেখলেই বোঝা যায় বুঝলে ! তবে মেয়ে ভাল ! আমার পছন্দ হয়েছে ।
-অন্য জায়গায় রিলেশন আছে জেনেও বিয়ে করবেন ?
-আরে সমস্যা নেই । ওর সাথে সামনের সপ্তাহে দেখা করার কথা আছে । ওই দিনই সব ঠিক করে নেব । ফাইনাল কথা আর কি ! প্রেম তো আমিও করেছি ভার্সিটি লাইফে, তাই না ? এটা ত মেনে নিতেই হবে ! হাহাহা !
আমি বিরস মুখে উনার অফিস থেকে চলে আসি । কি করবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না । ইরা এদিকে আমার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছে । মেয়েটা এমন জেদ ধরে । কোথায় এখন দুজন মিলে একটু আলাপ আলোচনা করে ঠিক করে বের করবো কি করা যায় তা না উনি এখন রাগ করে বসে আছে ।
বাবা তুমি কেন ঘটকালী করতে গেলে ? আর মানুষ খুজে পেলে না ?
আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না ।
আকারে ইংগিতে বাবাকে কিছু বোঝানোর চেষ্টাও করতে লাগলাম । কিন্তু কোন কাজ হল না । বাবার মনোযোগ এখন সব তার ঐ বন্ধুর ছেলের বিয়ের দিকে । এদিকে তার নিজের ছেলে যে বিয়ে করার জন্য বসে আছে সে দিক কোন লক্ষ্য নাই ।
এটা কোন কথা হল !
ঠিক করলাম ইরা নিয়ে পালিয়ে যাই । কিন্তু কোথায় যাবো ? ও কি রাজি হবে ? রাজি না হোক ওকে রাজি করাতে হবে । যে ভাবেই হোক রাজি করাতে হবে ।
আমার কথা শুনে প্রথমে ইরা কিছুটা সময় আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল
-সত্যি পালাবে ?
-হুম ! চল । এখনই চল !
আমার কথায় এমন কিছু হয়তো ছিল যে ইরার মুখে হাসি ফুটলো । ও বলল
-আচ্ছা আমি দেখছি ।
-কি দেখছি ?
-তোমার বাবাকে আর ঐ বেটা কে !
-তাহলে এতো দিন কেন দেখো নাই !
-এতো দিন তো আর তুমি আমাকে এই ভরশা দাও নাই, তাই না ?
ইরা হাসলো । হাসি দেখে জানে একটু পানি এল । কিন্তু তবুও পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারলাম না !
পরের শুক্রবারে বিকেলে ইরা ফোন দিয়ে বলল
-তোমার পালানোর কথা মনে আছে তো ?
-হুম ! আছে তো !
-ওকে ওটা মাথায় রেখো । ওটা শেষ উপায় ! তবে আজকেই কাজ হয়ে যাবে আশা করি !
-মানে কি ?
-রাতে তোমার বাবার কাছ থেকেই জানতে পারবা !
আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম । রাতে খাবার টেবিলে বাবার মুখ কেমন গম্ভীর দেখলাম। এখন অবশ্য আমি খাওয়ার টেবিলে খুব বেশি কথা বলি না । যা বলার আব্বা নিজেই বলে । আজকে গম্ভীর মুখে খেতে দেখে মনে হল কিছু বলি । কিছু একটা কাজ হয়েছে মনে হয় ! কিন্তু কিছু জানতে চাওয়ার আগেই বাবা বলল
-তুই ঠিকই বলেছিলি !
-কি ঠিক বলেছিলাম ?
-আসলে নিজের খেয়ে অন্যের মোষ তাড়ানোর কোন মানে নেই ।
-মানে কি ?
-আরে ঐ মেয়ের কথা বলেছিলাম না ?
-হুম !
-বিয়ে টা মনে হয় হচ্ছে না !
আমি অবাক হয়ে বললাম
-কেন ?
-আরে মেয়ে একটা ফাজিলের ফাজিল । কোন বদ ছেলের সাথে মেয়ের রিলেশন আছে !
আমি কেশে উঠলাম ।
-কি হল ?
-না মানে গলায় ভাত আটকে গেছে ।
-পানি খা !
আমি পানির গ্লাস চুমুক দিলাম । কিন্তু কান বাবার দিকে । বাবা বিড় বিড় করে বলল
-আজকাল বিয়ের আগে সম্পর্ক থাকতেই পারে । মেয়েটার সাথে আজকে আরিফের দেখা হওয়ার কথা ছিল ।
-দেখা হয় নাই ?
-না । মেয়ে নাকি আরিফ কে ফোন দিছে । তারপর যাচ্ছে তাই বলেছে । এও বলেছে তার একটা রিলেশন আছে এবং যদি সে বিয়ের থেকে সরে না দাঁড়ায় তাহলে বিয়ের পরেও নাকি সে ঐ বদ ছেলের সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যাবে । পালিয়েও নাকি যাবে বলেছে ! কত বড় বদের বদ মেয়ে দেখেছিস !
আমি হাসি আটকে বললাম
-আসলে এখন কার মেয়ে গুলা এমনই । একটু জেদি ! যা নিজে বুঝবে তাই করবে ।
বাবা আরও কিছু বলতে গিয়েও বলল না । বিরস মুখে ভাত খেতে লাগলো ! আর আমি অনেক দিন পর খুব আনন্দের সাথে ভাত খেতে লাগলাম ।
ঘরে গিয়েই ফোন দিলাম ইরা কে !
-কেমন আছো জান ?
-জান !!!
-তোমার বিয়ে ভেঙ্গে গেছে ?
-খুব আনন্দ হচ্ছে না ?
-আনন্দ হবে না । বউ হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছিল । আবার ফিরে পেয়েছি ।
-তুমি তো কিছু করলা না ?
-আরে তুমি থাকতে আমার চিন্তা কি !
-তাই না ? তা তোমার বাবা কি বলল !
বাবা যা যা বলল সব বললাম
ইরা হাসতে হাসতে বলল
-তা এখন আমার বিয়ে রকথা কিভাবে বলবে শুনি ?
-তাই তো ভাবছি ! পালানো ছাড়া তো কোন উপায় দেখছি না !
-আচ্ছা সময় আসুক ! আর তোমার যখন জানবে যে এই বদ মেয়েটা তার বদ ছেলেকে ভালবাসে তখন কিছু বলবে না বুঝেছো !
-হুম ! বলা যায় না !
যাক ঝামেলা একটা দুর হল শেষ পর্যন্ত ! এবার বাবাকে মানা করতে হবে । এই ঝামেলা যেন নিজের কাধে আর না নেন ! এই পরোপকারের জন্য কার না কার কপাল পুড়ে কে জানে !
শানে নূযুলঃ গল্পটা গল্প মনে হলেও এই গল্প আমার এক বন্ধুর জীবন থেকে নেওয়া । বন্ধু যে মেয়েকে বিয়ে করবে বলে ঠিক করে রেখছিল আজকে বন্ধুর বাবা সেই মেয়ের বাড়ি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেছে অন্য ছেলের জন্য । আমার গল্পে না হয় ঘটনা সুখের দিকে গেছে না জানি বন্ধুর জীবনে কি ঘটে । সবার কাছে দুয়া প্রার্থী আমার ঐ বন্ধুর জন্য !
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?
স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন