somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক অপরিচিতার গল্প !

২৩ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


যতই শরীর ঠিক থাকুক একটা বয়সের পর মানুষ আর পরিশ্রম করতে চায় না । আফসার সাহেবের ইদানিং আর পরিশ্রম করতে ভাল লাগে না । একটু হাটলেই কেমন শরীর টা ক্লান্ত হয়ে যায় । স্ত্রীর জন্য সকালে ই মর্নিং ওয়াকে আসা নয়তো এখন আরাম করে শুয়ে থাকার মত আকর্ষনীয় কিছু হতে পারে না !
আজকেও একটু হাটার পরেই আফসার সাহেবের দম ফুরিয়ে গেল । আসে পাশে বসায় জায়গা খুজতে লাগলেন ।


এই সময়টাতে পার্কে মানুষের বেশ ভিড় থাকে । বসার বেঞ্চ ফাঁকা পাওয়া যায় না বললেই চলে । আফসার আহমেদ আরেকটু হেটে সামনে সামনে গেলেন । একটি প্রায় ফাকা বেঞ্চ দেখতে পেলেন বটে কিন্তু সেটার দুই দিকে দুইজন বসে আছে । মাঝ খান টা ফাঁকা ! এভাবে দুজনের মাঝখানে যেয়ে বসা ঠিক হবে কি ভাবতে গিয়ে দেখলেন
দুজনেই তার পরিচিত ! এক দিকে ফাইজা বসে অন্য দিকে রিমন ।

পার্কটা তাদের সরকারী কোয়াটারের পাশেই বিধায় এখানে পরিচিত মানুষরাই হাটতে আসে । কদিন থেকে তিনি লক্ষ্য করছেন এই দুজনও সকাল বেলা হাটতে আসে । হাটার থেকের নিজেদের ভিতর গল্প করার ব্যাপারে তাদের আগ্রহ বেশি । তিনি মনে মনে হাসেন ।
এই বয়স টাই তো এমন । তিনি নিজেও পার করে এসেছেন ! কিন্তু আজকে দুজন দুদিকে কেন বসে আছে ? মুখ দেখে মনে হচ্ছে দুজনই একে ওপরের উপর রাগ করেছে । কোন কারনে একে অন্যের উপর অভিমান করেছে হয়তো !
আফার সাহবে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য দুজনের মাঝখানে গিয়ে বসলেন !

-কি ব্যাপার ফাইজা ? সকাল সকাল হাটতে ভাল লাগে ?
আফসার সাহেবের কথা শুনে ফাইজা একটু নড়ে চড়ে বসলো ! তারপর বলল
-জি আঙ্কেল ! সকাল বেলা না হাটলে ঠিক ভাল লাগে না । মনে হয় যেন সকাল টা শুরুই হল না ঠিক মত !
-তা আজকে সকাল টা শুরু হয়েছে তো ঠিক মত !
-জি ? হ্যা ! ভাল শুরু হয়েছে
এই ফাইজা একটু ফ্যাকাসে ভাবে হাসার চেষ্টা করলো !

ফাইজার সাথে কথা বলে আফসার সাহবে রিমনের দিকে তাকালেন । ছেলেটা তখনও অন্য দিকে বসে আছে ।
-কি ব্যাপার রিমন ? তোমার মুখ গোমড়া কেন ?
-কিছু না ! আঙ্কেল !
ঐ দিক দিয়ে ফাইজা বলল
-আঙ্কেল বদ মানুষের মুখ গোমড়াই থাকে !
-কি আমি বদ ! তুমি বদ !
-তুই পাজি ! খালি .....।

দুজনে ঝগড়া শুরু করে দিল । আফসার সাহবে হাত নেড়ে দুজনকেই থামালেন ! বললেন
-আরে সকাল বেলা কি শুরু করেলে তোমরা ! থামো ! এই সুন্দর সকালে কেউ এমন করে ঝগড়া করে ?

ফাইজা বলল
-ও শুরু করেছে ।
-না ও শুরু করেছে !
আফসার সাহেব বললেন
-কে শুরু করেছে বড় কথা না । কে শেষ করবে সেইটা বড় কথা ! কি বোঝা গেছে আমার কথা ?

দুজনের কারো মুখে কোন কথা নেই । আফসার সাহেব বলল
-আচ্ছা একে অন্য কে সরি বল !
-বলবো না !
-আমিও বলবো না !

-বলবা না ! ঠিক আছে তাহলে আর কি করা ! তবে যদি মিলমিস করে নাও তাহলে তোমাদের একটা ইন্টারেস্টিং গল্প শোনাবো ! আমার জীবনের গল্প !

তবুও কারো মুখ কোন কথা নেই । আফসার সাহবে বললেন
-আচ্ছা ঠিক আছে । থাকো তোমরা মুখ কালো করে । আমি চললাম ! আমার তোমাদের আন্টির সাথে গিয়ে গল্প করি গিয়ে !

আফসার সাহবে উঠে যাবেন তখন ফাইজা বলল
-আচ্ছা ওকে আগে সরি বলতে বলেন ! তাহলে আমি বলবো !
এদিক দিয়ে রিমোন বলল
-আমি কেন বলবো আগে ! ও আগে বলুক !

আফসার সাহেব আবার দুজন কে থামিয়ে বললেন
-আচ্ছা ! আমি আগে গল্প শুরু করি ! তারপর তোমরা ঠিক করে নিও কে আগে বলবা ! ঠিক আছে ?
-আচ্ছা !
দুজনের কারো ইচ্ছে নেই এমন একটা ভাব করে দুজনে আফসার সাহেবের দিকে মুখ করে বসলো !

হঠাৎ করেই আফসার সাহেবের মুখে একটা আনন্দের অভিব্যাক্তি ফুটে উঠলো ! যতবারই তিনি এ গল্পটা মানুষকে বলেন নিজে খুব আনন্দ পান ! শ্রোতারা কত টুকু শুনে আনন্দ পান তার থেকেও তিনি বলে আনন্দ পান ! যতবার মানুষকে এই গল্পটা শুনিয়েছেন ততবার মন এক অনাবিল আনন্দ ভরে উঠেছে ।

-তখন আমি সবে মাত্র ভার্সিটিতে উঠেছি । নতুন জায়গা । সব কিছুই নতুন ! তখন তো এই ঢাকা শহরে এতো এতো লোক ছিল না । মানুষ জন ছিল কম ! আমাদের ভার্সিটি এলাকাটাও ছিল ফাঁকা ফাঁকা !
এখনকার মত তখনও আমি সকাল বেলা হাটতে বের হতাম । প্রতিদিন কার মত একদিন হাটতে বের হয়েছি । নির্জন রাস্তায় একটা মেয়েকে দেখলাম ! তখনকার দিনে একটা মেয়ে একা একা পার্কে জগিং করছে এটা খুব বেশি স্বাভাবিক দৃশ্য ছিল না । আমি একটু অবাক হয়েই মেয়টাকে দেখতে লাগলাম !
মেয়েদের একটা সহজাত ক্ষমতা থাকে যে কেউ তাদের দিকে তাকিয়ে থাকলে তারা বুঝে ফেলে । মেয়েটাও কিছু সময় পরে বুঝে ফেলল যে আমি তার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আছি । মেয়েটাও আমাকে দেখতে লাগলো !

-তারপর ! তারপর কি করলেন আপনি ? চোখ সরিয়ে নিলেন ?
ফাইজা জানতে চাইলো ! রিমন তখন চুপ করে বসে আছে । এমন একটা ভাব যেন শুনছে না কিন্তু কানটা এদিকে ঠিকই আছে ।

আফসার সাহেব বলল
-আমার মাথায় হঠাৎ তখন একটা দুষ্ট বুদ্ধি এল । আমি মেয়েটার কাছে গিয়ে পরিচিত ভঙ্গিতে বললাম আরে মিরা সেই কখন থেকে তোমাকে খুজছি ! কোথায় ছিল ? এমন একটা ভাব যেন মেয়েটাকে আমি অনেক দিন ধরে চিনি । আসলে মেয়েটা একটু চমকে দেওয়াই আমার ইচ্ছে ছিল ! কিন্তু আমি মেয়েটাকে চমকে দেবো কি মেয়েটাই আমাকে চমকে দিল ! খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলল
-একদম মিথ্যা কথা বলবা না সজল ! আমি সেই কখন থেকে এখানে তোমার জন্য দাড়িয়ে আছি । তুমি কই শুনি ?
মেয়েটার এই উত্তর শুনে আমি কথা হারিয়ে ফেললাম । বলতে গেলে মেয়েটার কাছে এমন স্বাভাবিক উত্তর আমি আশা করি নাই !
মেয়েটা বলল
-তোমাকে যে বকুল ফুল আনতে বলেছিলাম ! কই সেটা ?
-বকুল ফুল ?
-হুম ! ভুলে গেছো ?
-হুম !
-এখনই নিয়ে আসো ! যাও বলছি !

আফসার সাহেব কথা বলে একটু থামলেন ! ফাইজা বলল
-তারপর আপনি কি করলেন ?
-আমি ?
আফসার সাহেব হাসলেন !
-বোকার মত একটা কাজ করলাম ! প্রায় ১৫/২০ মিনিট একটানা এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করে মেয়েটার জন্য বকুল ফুল নিয়ে এলাম । মেয়েটা মানে মিরা আমার কাছ থেকে ফুল গুলো নিলো ! তারপর কিছুই হয় নি এমন ভাব করে হাটতে হাটতে চলে গেল ! আমি বোকার মত মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলাম !

পরের দিন আবারও একই কাজ !
আমি মেয়েটি আগের দিনের মতই দাড়িয়ে ছিল ! আমি মেয়েটিকে দেখে এগিয়ে যাবো কি না সেটা চট করেই সিদ্ধান্ত নিতে পারলাম না ! একবার মনে হল কালকের মত আজকেও যাই ! তারপর মনে হল, নাহ ! রিস্ক নিয়ে লাভ নেই । কালকের মতই যে মেয়েটা আজকেও আমার সাথে একই রকম আচরন করবে এমন কোন মানে নেই । এই মেয়ে খানিকটা অন্য রকম । কালকে এর সাথে মজা নিতে গিয়ে আমি নিজেই মজা হয়ে গেছি ! আজকেও যদি এমন কিছু হয় !
আমি ঘুরে চলে চাইলাম । কিন্তু ততক্ষনে দেরি হয়ে গেছে !
মেয়েটিই আমাকে ডাক দিল !
-এই সজল ! এই কোথায় যাও ?
-আমি ?
-হ্যা ! তুমি ছাড়া আর কে ? কোথায় পালাও ?
আমি কাঁপা কাঁপা পা নিয়ে মেয়েটির কাছে হাজির হলাম ! কালকের ঠাট্টা মেয়েটা আজকেও মনে রাখবে ভাবতে পারি নি !
আমি মেয়েটির কাছে গিয়ে বললাম
-কই পালাবো কেন ?
-তাহলে ?
-আসলে আজকেও ফুল আনতে ভুলে গেছি !
মেয়েটি চোখ কপালে তুলে বলল
-তুমি কি সত্যি আমার বয়ফ্রেন্ড ? ভাবতে অবাক লাগে ? সিম্পল একটা কাজ ভুলে যাও কিভাবে ?


-আঙ্কেল একটা কথা !
ফাইজার কথা শুনে আফসার সাহেব কে থামতে হল । বললেন
-কি কথা ?
-আঙ্কেল ? বয়ফ্রেন্ড তো এখনকার শব্দ ! আপনাদের যুগে কি এই শব্দটা ছিল ?
-থাকবে না কেন ? কে বলেছে ? তোমরা যে আমাদের যুগটাকে নিয়ে কি মনে কর না ! যাক যেই কথা বলছিলাম । আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম !
মেয়েটি মানে মিরা বলল
-কি কথা বলছো না কেন ?
-আসলে ভুলে গেছি ! সেটাই তো নিয়ে আসতে যা্ছিলাম !
-তাই ?
-হুম ! সত্যি !
-যাক আজকে যাওয়া লাগবে না ! আজকে আসো আমরা একসাথে হাটি !
-এক সাথে ?
-কেন ? কোন সমস্যা আছে ?
-না মানে তোমার আব্বা যদি দেখে ফেলে ? সেদিন আমাকে দোনালা বন্দুক দিয়ে হুমকি দিয়ে বলেছে আমাকে তোমার আসেপাশে না ঘেষতে । এখন যদি বন্দুক নিয়ে হাজির হয় !
-ও !! তাই বাবু ! এতো ভয় পেয় না । আব্বা এখন আসবে না ! আর আসলে আমার জন্য একটা দুইটা বন্দুকের গুলি হজম করতে পারবা না ? এটা কেমন কথা !
বলতে বলতে মিরা হেসে উঠলো !
মনে হল নিস্তব্ধ সকালে কোন পাখি ডেকে উঠলো ! আমি হাসির শব্দে কোথায় যেন হারিয়ে গেল খানিকক্ষন ! তারপর আবার কথা শুরু ! এভাবে কথার পিঠে চলতেই থাকলো আমাদের মাঝে !

তারপর থেকে প্রতিদিন আমাদের দেখা হতে লাগলো । আমাদের দেখা হলে আমরা খুব পরিচিত ভঙ্গিতে কথা বললাম । ওর জন্য বকুল ফুল নিয়ে আসতাম ! ও ফুল নিতো । কথা বলতো হাসতো আমিও কথা বলতাম ! বলতে গেলে আনন্দেই সময় কাটতো !

এভাবেই কাটলো পরের সপ্তাহ টা ! এরপর থেকে আমি ফুল নিয়েই মিরার সাথে দেখা করতে যেতাম । আমরা নিজেদের ব্যাপারে কি জানতে চাইতাম না ! নিজেদের মনে বানানো কিছু কথা বলতাম ! মিরা সায় দিতো আমার কথায় ! আমি সাই দিতাম ওর কথায় ! মাঝে মাঝে তোমাদের মত অভিমান করতাম । আসলে মিরাই অভিমান করতো আমার উপর ! আমি রাগ ভাঙ্গাতাম ! হা হা হা !

এই টুকু বসে আফসার সাহবে আবার একটু থামলেন ! চোখ বন্ধ করলেন আনন্দ নিয়ে ! পুরানো সেই দিন গুলো এখনও যেন তার চোখের সামনে ভাসে । প্রতিবার গল্প বলার সময় এই বিরতির সময়ে তিনি উপভোগ করেন !

ফাইজা রিমন কে উদ্দেশ্য করে বলল
-দেখছো তো ! মেয়েরা রাগ করে আর ছেলেরা রাগ ভাঙ্গায় ! আর আমি ! হুহ !
-আমার ঠেকাই পরেছে !
আফসার আবার বলল
-আবার শুরু করলে তোমরা !
-তারপর কি হল ?
-তারপর ? এভাবেই বেশ কিছু দিন চলল ! আমরা সারাদিন যেমনই হোক না কেন এই সকাল বেলা এলেই আমরা একে অপরের প্রেমিক প্রেমিকা হয়ে যেতাম ! এই সকালের সময়ে যেন আমরা সব কিছু ভুলে যেতাম । কত রকমের রোমান্টিক কথা বার্তা বলতাম ! বিশেষ করে বই পুস্তকে যেমন টা হয় ! তখনকার বাস্তবতার সাথে সেটা মানায় না কিছুতেই ! কিন্তু আমাদের দিন ভালই যাচ্ছিল ! কঠিন বাস্তবতার ভিতরে একটু কল্পনা ! খারাপ কি ?

কিন্তু একদিন মিরা এল না ! আমি বেশ কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে চলে এলাম কিন্তু কিছুতেই শান্তি পেলাম না ! বারবার মনে হচ্ছিল কি যেন নাই । কি যেন নাই । পরের দিনও মিরা এল না ! সদ্য প্রেমিকার কাছ থেকে দুরে থাকার মত অবস্থা হতে লাগলো আমার । সারাদিন অস্বস্থিরতার ভিতর কাটে । সকাল না ভোর হলেই আমি পার্কে চলে যাই । বিভিন্ন দিন বিভিন্ন রকমের ফুল নিয়ে ! অনেকক্ষন অপেক্ষা করি তারপর চলে আসি ।
মনে হল যেন মিরার সাথে মনে হয় আর দেখা হবে না ! আমার কাল্পনিক প্রেমিকা মনে হয় আমাকে সেখানেই রেখে চলে গেছে ! কিন্তু মিরা এল ! সেখানেই আমাদের গল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল না !

প্রায় এক সপ্তাহ পরে মিরা আবার এল ! খুব ঝগড়া করলাম ওর সাথে ! মুখে যা আসলো তাই বললাম ! মিথ্যে মিথ্যি না রাগ না একেবারে সত্যি সত্যি রাগ । যেন মিরা সত্যি সত্যিই আমার প্রেমিকা ! আমাকে না বলে কোথাও চলে গিয়েছিল !
মিরা কোন কথা না বলে কেবল চুপ করে শুনে গেল ! আমি যখন চুপ করলাম ! মিরা হেসে বলল
-বকা দেওয়া শেষ ?
-মানে ?
-মানে হচ্ছে চাইলে আরও বকা দিতে পারো । পরে কিন্তু আর সুযোগ পাবে না !
-মানে কি ?
মিরা আর কোন কথা বলে নি । হাসতে হাসতে আমার হাত থেকে ফুল গুলো চলে গেল । যাওয়ার আগে বলে গেল যে বিকেল বেলা যেন আমি তার সাথে দেখা করি !

-তারপর ?
আফসার সাহেব লক্ষ্য করলেন দুজনেই বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছে ।
-এরপরেই সব থেকে আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটলো আমার জীবনে ! বিকেল পার্কে এসে দেখি মিরা এসে হাজির । হাতে একটা ছোট্ট ব্যাগ ! আমার কাছে এসে বলল
-আমি বাসা থেকে পালিয়ে এসেছি !
আমি আকাশ থেকে পড়ার ভঙ্গি করে বললাম
-মানে কি ?
-কোন মানে নেই ! গত সাত দিন আমি বাসা থেকে বের হতে পারি নি এই কারনে । আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে । বাসা থেকে বের হওয়া নিষেধ ! কিন্তু গত সাত দিনে একটা জিনিস পরিস্কার বুঝতে পেরেছি যে তুমি খুব বড় কিছু হয়ে গেছো আমার জীবনে । আমি অনুভব করেছি তোমাকে বলা প্রতিটা মিথ্যে কথা সত্যি হওয়া আমার জন্য কতটা জরুরী ! সত্যিই জরুরী ! আর আজকে সকালে আমাকে যেমন ভাবে বকেছো তাকে আমারও মনে হয়েছে আমি তোমার কাছে বেশ জরূরী কিছু ! তাই .....
তবুও এভাবে চট করে চাইলেই তো আর একটা মেয়ের সাথে পালিয়ে যাওয়া যায় না । আমি ইতস্তত করে বললাম
-কিন্তু .....
-সমস্যা নেই ! তুমি যদি আমার সাথে না যেতে চাও, ফাইন ! আমি ফিরে যাচ্ছি ! রাতের আগে বসায় ফিরে গেলে আমার কোন সমস্যা হবে না ! যাবো ফিরে ?

আমি তখন সবে মাত্র পড়াশুনা করছি ! এভাবে একজন কে বিয়ে করা আমার পক্ষে কোন ভাবেই সম্ভব ছিল না ! এটা আমি যেমন জানতাম মিরাও তেমন ভাবেই জানতো ! আর তখন পালিয়ে বিয়ে করাটা একটা কঠিন অপরাধ হিসাবে গন্য করা হত সমাজে ! মিরা আমার চুপ করে থাকা দেখে বুঝে নিল যে আমি ওর সাথে যেতে প্রস্তুত না !


-কি ? আপনি মিরা কে যেতে দিলেন ?
ফাইজা চিৎকার করে উঠলো !
রিমোর ফাইজার সাথে সুর মিলিয়ে বলল
-একটা মেয়ে সব কিছু ছেড়ে আপনার কাছে এল আর আপনি তাকে এভাবে চলে যেতে দিলেন ?

দুজনের মুখ দেখেই মনে হচ্ছে তারা আফসার আহমেদের উপর খুব রাগ করেছে । আফসার সাহেব বলল
-আরে আমার দিক টাও তো একটু ভেবে দেখবে ! নাকি ! ঐ বয়সে চট করেই কি এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব ছিল ?
-বাহ ! মেয়েটা এটোবড় সিদ্ধান্ত নিতে পারলো আর আপনি পারলেন না ? আপনার এমনই !
ফাইজা রীতিমত রেগে গেছে ! রিমনের দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমারও কি এমন মনোভাব ? আমি যদি তোমার কাছে চলে আসি তাহলে তুমিও আমাকে এভাবে ফিরিয়ে দিবো ?
-কি বল ! আমি মোটেই এমন করবো না ! কোন দিন না !
-মনে থাকবে তো ?
-অবশ্যই থাকবে !

-আরে আরে কোথায় চললে ?
-আমরা গল্প শুনবো না ! মিরার জন্য খারাপ লাগছে ! আপনি পচা !
আফসার সাহেব হাসতে হাসতে বলল
-গল্পের শেষ টা শুনে যাও ! তোমাদের থেকে একটু বসয় বেশি ছিল তখন কিন্তু আবেগটা তোমাদের মতই ছিল ! মাথা দিয়ে না আমিও মন দিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম !
দুজনেই এক সাথে বলল
-মানে ? আপনি মিরাকে বিয়ে করেছিলেন !
-হুম ! ও যখন চলে যেতে উদ্ধত হল তখন ওর হাত চেপে বললাম, চল ! হলে গিয়ে বন্ধু-বান্ধবের কাছে টাকা পয়সা ধার কে ব্যাগ গুছিয়ে বের হয়ে এলাম ! মিরা আগেই ট্রেনের টকেট কেটে রেখেছিল ! আমরা ট্রেনে চেপে বসলাম ! শুরু হল আমাদের নতুন যাত্রা !
-তারপর ?
-তারপর আর কি ? এখনও সেই যাত্রা চলছে । যত দিন বেঁচে আছি চলবে !
শুনো, আমি ঠিক জানি ঐদিন মিরার সাথে একটু ঠাট্টা না করতে গেলে হয়তো আজকে আমার জীবন অন্য রকম হত ! তবে এটুকু বলতে পারি জীবন এতো সুন্দর হত না । আচ্ছা তোমরা এবার সরি বল !
দুজনেই হেসে বলল
-লাগবে না ! তবে আমরা কিন্তু মিরা আন্টির সাথে দেখা করবো ! কবে আসবো আপনার বাসায় বলেন ?
-মিরা ? হাহাহাহা !
আফসার সাহেব হেসে উঠলেন ! বললেন
-তোমাদের আন্টির নাম কিন্তু মিরা না !
-তাহলে ?
-তবে আমি তাকে মিরাই ডাকি ! তেমনি ও আমাকে সজলই ডাকে ! যদিও আমার না সজল না ! আচ্ছা আমি যাই ! এখন যাই ! দেরি হলে মিরা আবার চিৎকার চেচামিচি শুরু করবে ! ঐ সে বলেছিল না যে আর সুযোগ পাবো না ! সেই দিনের পর আমি আর সুযোগ পাই নি । কেবল বকা শুনেই গেছি ! হে হে হে !

আফসার সাহেব এমন ভাবে হাসলো যেন বকা শুনা খুব আনন্দের কিছু ! আর দাড়ালনে না ! হাটা দিলেন !

দুজন কিশোর কিশোরী তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো পৃথিবীর অন্যতম সুখী একজন মানুষ তার জীবনের সব থেকে সুখের গল্পটা বলে হেটে চলে যাচ্ছে !



হামা ভাইয়ের থিমে আরেকটা গল্প । গতকাল ঘুম থেকে উঠেই দেখি হামা ভাইয়ের মেসেজ । আমাকে একটা গল্পের থিম দিয়ে বলল গল্পটা লিখতে । আমি এতোই এক্সসাইটেড হয়ে গেলাম যে একটা থিম নিয়ে দুইটা গল্প লিখে ফেললাম । একটা সন্ধ্যা বেলা পোস্ট দিয়েছি । আর এখন শেষের টা ।
হামা ভাই বলতে পারবে কেমন হয়েছে । তার দুইটার ভিতর এইটা পছন্দ হয়েছিল ! আল্লাহ জানে কেমন হল ।






আগের গল্পটি

১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×