somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ টুকরো জীবনদৃশ্য

১২ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক
বাসায় পৌছাতে পৌছাতে বেশ জোরে সরে বৃষ্টি নেমে গেল ! একটু আগেও আকাশে মেঘ ছিল না আর এখন কেমন মেঘ জমে কালো অন্ধকার হয়ে গেছে । আমিতো ভেবেছিলাম হয়তো বাসায় পৌছানোর আগেই আমি ভিজে একাকার হয়ে যাবো । যাক ভাল যে বাড়িতে পৌছাতে পেরেছি !

দরজা খুলে দিল কাজের মেয়েটা !
-তোমার আপু কোথায় ?
-আপু বারন্দায় ?
-বারান্দায় কি ? এই বৃষ্টির ভিতর বারান্দায় দাড়িয়ে আছে কেন ? আশ্চর্য !

আমাদের বারান্দাটা ঠিক অন্য বারান্দা গুলোর মত না ! একেবারে খোলা ছাদের মত । ঝুল বারান্দা এবং সেটার উপরের দুই তৃতাংশতেই ছাদ নেই !
আমি বারান্দায় যেতে যেতে অনেক দেরি হয়ে গেছে । গিয়ে দেখি মিরা মনের আনন্দে বারান্দায় ভিজতেছে । আমি ওকে দেখেই চিৎকার করে উঠলাম
-এই কি কর তুমি ?
মীরা আমার দিকে তাকিয়ে কেমন কিশোরী সুলভ হাসি দিল ! আমি চোখ গরম করে বললাম
-তুমি এভাবে বৃষ্টিতে ভিজতেছো কেন ?
-এমনি !
-এখনই ভেতরে আসো !
-আসবো না ! আসো বলতেছি !
-না !
-দেখো ভাল হবে না বলতেছি !
-না হোক ! আসবো না ! আসবো না ! আসবো না !

আমি খানিকটা অসহায়ের মত মীরার দিকে তাকিয়ে রইলাম ! বলা যায় আমার এখানে কিছুই করার নেই ! মীরা জোরে ধমক দিয়ে লাভ নেই ! আগে অবশ্য কাজ হত হত কিন্তু এখন সে আমার ধমকে ভয় না । কেবল হাসে !
একটা কাজ অবশ্য করা যায় ! এখন বৃষ্টিতে নেমে গিয়ে ওকে নিয়ে আসা ! কাজ টা করবো কি না বুঝতে পারছি না !

বৃষ্টিতে একটা সময়ে অনে ভিজতাম কিন্তু এখন আর তেমন ভেজা হয় না ! আমি পকেটের জিনিস পত্র গুলো এক পাশে রেখে শার্টের হাটা গুটিয়ে নেমে পড়লাম বৃষ্টিতে ! আমাকে বৃষ্টিতে নামতে দেখে মীরা বাচ্চা মেয়েদের মত খুশি হয়ে উঠলো ! আমি ওকে নিয়ে যাবো কি আমার হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলো !
আমি বললাম
-চল এখন ! অনেক ভিজেছো !
-আরেকটু ভিজি না ! আর তো সুযোগ পাবো না !
-মানে ?
-মানে এমন দিন গুলো আস্তে আস্তে শেষ হয়ে আসছে ! আমার দিন....
-চাপ.....

হঠাৎই মেজাজ টা খারাপ হয়ে উঠলো ! মীরার দিকে তাকিয়ে কঠিন কন্ঠে বললাম
-তোমাকে না বলেছি এই কথা আরেকবার না বলতে !
-সরি !
-রাখো তোমার সরি ! ভিজো যত ইচ্ছা !

এই বলে আমি ঘরের দিকে হাটা দিতেই মীরা আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরলো ! তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরলো আরও শক্ত করে ! বুকের ভিতর মুখ লুকিয়ে বললল
-এমন কেন কর আমার সাথে ?
-জানো না কেন করি !
-আচ্ছা বাবা সরি ! সরি বলেছি তো ! আর বলবো না এমন কথা !

আর কিছু বলতে পারলাম না ! মীরা আমাকে জড়িয়ে ধরেই রাখলো ! আকাশ থেকে তখন ঝুম বৃষ্টি পড়েই চলেছে ।


দুই
-তুমি কি বুঝতে পারছো তোমাকে কি করতে হবে ?
-কিছুটা !
দুজনেই কিছুটা সময় নিরব থাকলাম ! আমি তাকে কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না । অন্য দিকে তিনি আমাকে কি বলবে সেটাও হয় তো তিনি খুজে পাচ্ছে না ! অনেক টা সময় চুপ থাকার পরে তিনি বললেন

-দেখো আমার মেয়েটা সব সময় শান্ত স্বভাবের ! কখনও আমার কথার অবাধ্য হয় নাই ! আমি তাকে যা বলেছি সেই সেটাই নেয়ে নিয়েছে !
ভদ্রলোক আবারও কিছুটা বিরতী নিলেন !
-কিন্তু কপাল দেখো, মেয়েটার কত জলদিই না আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে ! আর আমি কিচ্ছুই করতে পারছি না !
-কিছুই কি করার নেই ?
-ভেবেছো আমি কম চেষ্টা করি নি ! কোন লাভ হয় নি ! এমন কি যেই জিনিস আমি বিশ্বাস করি না সেই ফকির ওঝার কাছেও আম গেছি ! লাভ হয় নি !
-আপনি কি চান আমার কাছ থেকে ?



তিন

-মীরা ! এই মীরা !
তাকিয়ে দেখি মীরা ঘুমিয়ে পড়েছে !
মীরার ঘুমানোর টা আমার কাছে বেশ ভাল লাগে ! সব সময় বিশেষ করে ও যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে বেশি ভাল লাগে !
প্রথম দিন রাতে এমনিতেই রাতে বাধরুমে যাওয়ার জন্য ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল । বাধরুম থেকে ফিরে এসে যখন আবার শুতে যাবো তখনই হঠাৎ চোখ পড়লো মীরার ঘুমন্ত মুখের উপর ! আবছায়া চাঁদের আলো আসতেছিল ! আমি খানিকটা সময় কেবল অবাক হয়ে ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলাম ! কি হল আমি বুঝতেই পারলাম না ! আমার মনে আছে সেদিন ভোরের আযান পর্যন্ত আমি মীরার চেহারার দিকে তাকিয়ে ছিলাম ! মাঝে মাঝে ও নড়ে উঠছিল আমার বুকের ভেতর কেমন একটা মোচড় দিয়ে উঠছিল !

সেদিনই হয় তো আমার মীরার প্রতি প্রথম কিছু একটা শুরু হয় !
তারপর থেকে প্রতিদিনই এই কাজটা করতাম ! মাঝে মাঝে মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে ওর ছবি তুলতাম । অফিসের ফাকে মোবাইল বের করে দেখতাম ! কেন দেখতাম আমি নিজেই জানি না ! আমি যে এখানে একটা কন্ট্রাকে এসেছি আমার মনেই থাকতো না ! অথবা আমার সেই কথা আর মনেই রইলো না আর !


চার
-আপনি আমাকে কেন বিয়ে করতে চান ?
আমি মীরার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি কেন আমাকে বিয়ে করতে চান বলুন ?
মীরার চোখটা ঝট করে আমার দিকে উঠে গেল ! আমার সাথে কিছুটা সময় চোখাচোখি হয়ে তাকিয়ে রইলো ! চোখ জুড়ে কত কিছুই না বলতে চাইছে । মীরা বলল
-আপনাকে কে বলল যে আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাইছি ?
-ও চাইছেন না ? তারমানে আপনি আমাকে বিয়ে করতে চান না ?
-আমি তো এই কথা বলি নি !
-তাহলে ? আমাকে কি আপনার পছন্দ না ?
-আমি এই কথাও বলেছি ?
-তাহলে ? আমাকে কি আপনার পছন্দ ?

মীরা এই কথার জবাব না অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো !
আমি বললাম
-দেখুন, জীবনে অনেক কিছুই চাওয়ার থাকে ! অনেক কিছু পাওয়া হয় না ! আবার অনেক কিছু অপ্রত্যাশিত ভাবে হাতে চলে আসে ! আপনি তেমন একজন মানুষ !
-কিন্তু সব কিছু জেনে আপনি কেন এমন টা করতে চাইছেন ?
-জানি না ! দেখুন হয়তো অন্য কাউকে বেছে নেওয়া আমার উচিৎ ! কিন্তু তার সাথে জীবনের বাকী সময় আমি যে সুখে থাকবো এটার কোন গ্যারান্টি নেই ! আছে বলেন ?
মীরা এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আমার সাথেই যে সেই গ্যারান্টি আছে আপনি এতোটা শিওর হচ্ছেন কিভাবে ?
আমি মীরার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনার চোখ বলছে ! আর কিছু না !


পাঁচ
-আমি যখন ঘুমিয়ে থাকি তখন তুমি কি কর ?
পরোটা মুখে দিতে দিতে গিয়ে আটকে গেলাম ! মীরার দিকে তাকিয়ে বললাম
-কি বললে ?
মীরা বলল
-বললাম আমি যখন ঘুমিয়ে থাকি তখন তুমি কি কর ?
-কি করবো ? আমিও ঘুমাই !
-তাই ?
-হুম ! অবশ্যই ! কেন ?
মীরা আমার কথার জবাব না দিয়ে নিজের মবাইল বের একটা ছবি দেখালো !
তারপর বললল
-এটা কি ?

আমি তাকিয়ে দেখি মীরার সেই ঘুমন্ত মুখের ছবি !
আমার মুখের ভেতর পরোটা আটকে গেল ! আমি পানি দিয়ে কোন মতে আধ খাওয়া পরোটা পেটের ভিতর চালান দিয়ে বললাম
-ও ! তোমার এই ছবিটা কে তুলেছে ?
-আমি কিভাবে বলবো ? তোমার ক্যামেরা ! তোমার ছবি ! তুমি জানো কে তুলেছে !
-দেখো ঢং করবা না বললাম !
-আশ্চার্য আমি ঢং করলাম কোথায় ?
-এমন একটা ভাব করছো যেন আকাশ থেকে পড়লা ?
-আকাশ থেকে না পড়ি, চেয়ার থেকে তো পড়বই !
-দেখি তোমার মোবাইল দাও !
-আমার মোবাইল দিয়ে কি করবা ?
-দিতে বলছি দাও !
-না দিবো না !
-আমি যখন ঘুমিয়ে তাকি তুমি আমার দিকে তাকয়ে কি দেখো ? কেন দেখো ?
আমি কিছু বলতে পারলাম কি দেখি !
-বলবা না কি দেখো ?
-আমি জানি না !
-তাহলে কেন দেখো ?
-ভাল লাগে, তাই !

মীরার দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখে পানি জমতে শুরু করেছে ! আগে এই আশ্রুশিক্ত চোখ দেখে হয়তো নিজের কাছে খানিকটা লজ্জিত হতাম কিন্তু এখন আমি এই অশ্রুকে অনভব করতে পারি ! প্রতিটা বিন্দু আমার প্রতিটি শিরা উপশিরা মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় !

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:২৪
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×