সকালের ঘুম ভেঙ্গে মনে হল কি যেন ঠিক হয় নাই । প্রতিদিন সকালের মত আজকের সকাল টা শুরু হল না । মোবাইলটা হাতে নিয়ে আরেকটু অবাক হলাম । মিমির কোন মিস কল নাই ।
আজিব ! এমন তো হয় না কোন দিন !
কয়েকবার এমন হয়েছে যে মিমি আমাকে ফোন দিয়েছে অথচ আমার ঘুম ভাঙ্গে নি । মিমি নিরলস ভাবে ফোন দিয়েই গেছে ।
কাল রাতেও তো কথা হয়েছে ।
আমি কল ব্যাক করলাম মিমিকে ! মেয়েটার আজকে কি হল কে জানে ?
দুই
মিমির হাসির ভিতর কেমন একটা অন্য রকম আভা আছে । একবার দেখলে কেবল দেখতেই ইচ্ছে করে । আর বিশেষ করে ফেসবুকের ছবিতে মিমিকে যেমন মনে হয়েছিল এখন তো তার থেকেও আরো বেশি সুন্দর মনে হচ্ছে । আমার কাছে অনলাইনের সব সুন্দরীদের হয় মেকাপ সুন্দরী কিংবা ডিএসএলআর সুন্দরী মনে হয় । মিনির বেলাতেও ঠিক তেমনই মনে হয়েছিল কিন্তু বাস্তবে তো দেখতেছি মেয়েটা আরও বেশি সুন্দর ।
-কি দেখছো এমন করে ?
-তুমি তো অনেক সুন্দর দেখতেছি !
মিমি খানিকটা চোখ দিয়ে হেসে বলল
-তাই ? খুব পছন্দ হয়েছে ?
-হুম ! খুব পছন্দ হয়েছে ।
-প্রেম করবা ?
-প্রেম ? হুম, করা যাবে না কেন ? অবশ্যই প্রেম করবো !
-আচ্ছা আহলে আজ থেকে আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড হয়ে গেলাম !
-সত্যি তো ?
-একদম সত্যি !
তিন
-আপনাকে কে কি আমি চিনি ?
আমি মিমির দিকে তাকিয়ে বললাম
-আপনার কি মনে হয় ?
-না আমি ঠিক বুঝতে পারছি না । আজ নিয়ে বেশ কয়েক দিন আপনার সাথে আমার দেখা হয়েছে এখানে ! যতবার আপনার সাথে চোখাচোখি হয়েছে কিংবা আপনার দিকে চোখ পড়েছে, বরবার মনে হয়েছে আপনাকে মনে হয় আমি চিনি !
আমি কিছু না বলে মিমির দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছু টা সময় ! কয়েকদিন আগে শুনলে হয় তো খানিকটা অবাক হতাম কিন্তু এখন আর অবাক হই না ! কিছুটা প্রশ্ন বুকের ভেতর আটকে থাকলেও চুপ করে থাকি ! কিছু জানতে চাই না !
চার
সেদিন বিকেলে মিমির সাথে সময় কাটলো বেশ ভালই । আমি যেমন করে রসিকতা করছিলাম ভাবছিলাম যে মিমিও মনে হয় আমার সাথে ইয়ার্কিই মারছে । ও যেমন রসিকতা করে বলেছে আমার গার্লফ্রেন্ড হবে আমিও ঠিক তেমন করেই বলেছি । আমার আসলে ওকে যতদুর চিনি ও এমনই হাসিখুশি টাইপের মেয়ে । সব সময় সবার সাথে ফান করে কথা বলছে ।
মিমির সাথে পরিচিয় একটা পোস্টের কথা কাটাকাটির সুবাধে । আমার এক ফেসবুক ফ্রেন্ড লিস্টে সে ছিল তার পোস্টের কমেন্ট থেকেই ওর সাথে পরিচয় ! কথা বার্তা অন্য দিকে চলে যাচ্ছিল দেখে সেই বন্ধুটি পোস্ট টি সরিয়ে নিল কিন্তু মিমি এবার আমার ইনবক্সে এসে আমার সাথে তর্ক করা শুরু করলো, ভাল করে বললে আমাকে ঝাড়ি দিতে শুরু করলো ।
আমার অবশ্য মজাই লাগছিল ! সকাল বেলা উঠে মিমিকে উদ্দেশ্য করে বিরাট একটা পোস্ট লিখলাম । অবশ্যই সরি বলে । আমি জনাতাম ও আমার প্রোফাইলের দিকে চোখ রাখবেই । এই জন্যই পোস্ট টা লিখেছিলাম । দেখলাম সন্ধ্যার আগেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এসে হাজির । তারপর থেকেই মিমির সাথে যোগাযোগ বেড়ে যায় । আমার প্রত্যেকটা পোস্টে এসে তার পঁচানো চাই ই চাই । আমিও কম যাই না, তাকেও কোন ছাড়াছাড়ি নাই । কোন কিছু লিখলেই হল । তার বিরোধীতা আমার করা চাই ই চাই ।
এভাবে কমেন্ট পাল্টা কমেন্ট করতে করতে কখন যে আমরা ভাল বন্ধু হয়ে গেলাম আমরা টেরই পেলাম না । তারপরই অনলাইন ছেড়ে বাস্তবে দেখা করা ।
পাঁচ
সত্যি বলতে কি মিমির সাথে সম্পর্ক শুরু হওয়ার পরে দিন গুলো কেবল চমৎকার ভাবে কেটে যাচ্ছিল । নিশ্চিন্তে । প্রতিদিন সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গতো মিমির ফোন পেয়ে । তারপর দেখা হওয়ার আগ পর্যন্ত ফোনের পর ফোন । নিজেকে অনেক সুখি মনে হত তখন । কিন্তু সুখের দিনের শেষ আছে । একদিন সকাল বেলা মিমির ফোন আসলো না ।
সকাল টা শুরু হল অন্য ভাবে । তারপর সারা দিনে তার কোন খোজ নাই । কয়েকবার ফোন দিতে গিয়েও ফোনে পেলাম না । প্রথমে ফোন বাজতো কিন্তু কেউ ধরতো না ! পরে ফোন বন্ধ আসা শুরু করলো ।
এবং অবাক হয়ে দেখলাম দেখতে দেখতে পরপর সাতটা দিন মিমির কোন খোজ নাই ।
ফেসবুকে কত মেসেজ দিলাম কিন্তু সেখানেও তার কোন উত্তর এল না । না কোন স্টাটাস আপডেট না কোনমেসেজ ! একেবারে যেন মেয়েটা গায়েব হয়ে গেল ।
যতবার ওর সাথে দেখা হয়েছে ততবারই ও গাড়ি নিয়ে এসেছে । কেবল জানতাম ধানমন্ডি ৮ ওর বাসা । কোন দিনর বাসায় যাওয়া হয় নি । এবং একটা আজব ব্যাপার হল ও নিজের বাসার ঠিকানা আমাকে বলেও নি কোন দিন !
কদিন ধানমন্ডি আটের ঘোরাঘুরি করলাম এই আশায় যে হয় তো মিমিকে দেখতে পবো ।
মেয়েটার হঠাৎ করে কি এমন হয়ে গেল ! এভাবে গায়েব হয়ে যাওয়ার মানে কি ?
ছয়
আমার ধারনা ছিল মিমি রসিকতাই করছে কিন্তু রাতে ওর সাথে কথা বলে এবং পরদিন আবার দেখা করতে গিয়ে টের পেলাম যে মিমি মনে হয় আসলেই একটু সিরিয়াস হয়ে গেছে । বিশেষ করে ওর তাকানোর ধরন দেখে বুকের ভেতরে কেমন করে উঠলো যেন ।
এতো সহজে মিমির সাথে এমন ভাবে সম্পর্কে জড়িয়ে যাবো ভাবতে পারি নি । তারপর থেকেই ফেসবুকে ওর একটিভি একটু কমে গেল । আমাদের বাস্তবে যোগাযোগ বেড়ে গেল অনেক গুনে । খাওয়া ঘুম আর ক্লাসের সময়টা বাদ দিয়ে প্রায় সারাটা সময় মিমি আমার সাথে থাকে । কোথাও গেলে তাকে নিয়ে যেতে হয় আমার কোন প্রকার আপত্তি সে শুনে না । কিছু বলতে গেলে কেঁদে কেটে অস্থির !
মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগলেও মন টা ভাল থাকে ও আশে পাশে থাকলে । আমার সময়ও ভাল কাটে বেশ ।
তবে একটা বিষয় আমার কাছে একটু অবাক লাগতো যে মিমি কোন ভার্সিটিতে পড়তো না । এতো জলদি তো ওর পড়াশুনা শেষ হয়ে যাওয়ার কথা না ! তাহলে ?
ওকে কয়েকবার জানতে চেয়েছি কিন্তু ও ঠিক মত জবাব দেয় নি । বলেছে ওর নাকি মনে পড়ছে না । এটা আবার কি রকম কথা কে জানে ।
সাত
প্রথম প্রথম ওর অভাব খুব বেশি করে অনুভব করতাম । কিছু ভাল লাগতো না ! কিন্তু জীবন যেহেতু কারো জন্য থেমে থাকে না, আমা রজীবন টাওথেমে থাকলো না ! আস্তে আস্তে কষ্ট গুলো কমে আসতে শুরু করলো ।
আট
পরদিন আবারো মিমির সাথে দেখা হয়ে গেল । আমার কেন জানি মনে হল আমি যেমন ওর সাথে দেখা হবে এই আশায় আসি এখানে ঠিক তেমনি মিমিও আসে আমার সাথে দেখা হবে এই আশায় !
আমি বললাম
-আমাকে কি আপনি চিনেন ?
-কি জানি ? জানি না ! আসলে .....
-আসলে ?
আমি খানিকটা আগ্রহ নিয়ে মিমির চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম । মিমি কিছু একটা নিয়ে দ্বিধা করছে । আমাকে কথা ফগুলো বলবে কি না বুঝতে পারছে না । তারপর দ্বিধা কাটিয়ে বলল
-আসলে আমার আগের কিছুই মনে নেই !
-মনে নেই বলতে ?
-মানে.........
কিছুটা সময় খানিকটা ইতস্তর ভাব ! তারপর আমার দিকে তাকিয়ে ওর ডান দিকের কানের কাছে চুল সরিয়ে দেখালো ! আমি একটা ভাল করেই দেখতে পেলাম সেখানে একটা কাটা ডাক ! স্পষ্টই বোঝা যায় যে কোন গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল কোন কালে ।
মিমি বলল
-আপনাকে বলি কারন কেন জানি আপনার দিকে তাকিয়ে আমার মনে হচ্ছে আপনার সাথে আমার পরিচিয় আছে । আপনি জেনে রাখুন ! কদিন পরে হয়তো আমার আর মনে থাকবে না !
আমার কৌতুহল আরও একটু বাড়লো যেন !
মিমি বলল
-আসলে আমি যখন কলেজ পাশ করি তখন আমার একটা বড় কার এক্সিডেন্ট হয় ! সব কিছুই ঠিক আছে কিন্তু মাথায় খুব বড় আঘাত পাওয়ার কারনে কিছু দিন পরপর আমার স্মৃতি হারিয়ে যায় ! কিছু কিছু জিনিস আবছা আবছা মনে থাকে কিন্তু পরিচিত বেশির ভাগ জিনিসও মন থেকে হারিয়ে যায় !
খাইছে ! এটা তো গজনীর মত কাহিনী ! ওখানে আমির খান প্রতি ১৫ মিনিটে স্মৃতি হারিয়ে ফেলে আর এখানে মিমি কত দিনে হারায় কে জানে ! একরকম একটা হলিউড মুভিও দেখেছিলাম মনে হয় ! নাম টা কি যেন ঠিক মনে পড়ছে না ।
মিমি বলল মাঝে মাঝে, প্রায় তিন চার মাস পরপর এমন হয় ! প্রতিবার যখন আমি জেগে উঠি তখন বাবা আমাকে আস্তে আস্তে সব কিছু বলে !
-আপনার কোন বন্ধু বান্ধব নাই ?
-আগে ছিল মনে হয় ! ভাসা ভাসা কিছু মনে পড়ে কিন্তু এবার কেন জানি আর কাউকে পাচ্ছি না ! মনে হয় আমার এই রোগটার কারনে আমাকে এড়িয়ে চলছে ! বোঝেনই তো ! এরকম মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখা টা একটা ঝামেলা !
-মোবাইল কিংবা ল্যাপটপ ? সেখান থেকে বন্ধু কিংবা পরিচিত মানুষ গুলোর খোজ পাওয়া যায় তো ?
-যায় হয়তো ! কিন্তু আব্বু সেগুলো সব বদলে ফেলে ।
-কেন ?
-একটা ব্যাপার চিন্তা করেন তো ! আমাকে একজন ফোন দিল নাম বলল তারপর পরিচিত ভঙ্গিতে কথা বলল কিন্তু আমি তাকে কিছুতেই চিনতে পারছি না ! পরিস্থিতি টা কেমন হবে বলেন ! আর এতে আমার নাকি আমার মনে উপর আরও বেশি জোর পড়ে । সেক্ষেত্রে মেমোরী ব্রেক ডাউন নাকি আরও তরান্বিত হয় !
-হুম !
নয়
ঠিক সেই সময়েই মিমিকে দেখতে পেলাম ! আমাদের ক্যাম্পাসের বাঁ দিকে একটা বড় পুকুর আছে । মিমির সাথে প্রায়ই সময়েই সেখানে বসে গল্প করতাম । মিমি চলে যাওয়ার পরে প্রায় সময়েই সেখানে এসে হাজির হতাম !
সেদিনও বসে ছিলাম এমন সময় মিমির দেখতে পেলাম । আনমনে পুকুর পাড়ে হাটছে । প্রথমে মনে হল হয়তো ভুল দেখছি ! কিন্তু পরে আরও ভাল করে দেখলাম যে মিমিই !
আমি ওর সামনে গিয়ে দাড়ালাম । ভেবেছিলাম আমাকে দেখে হয় ও অনে খুশি হবে । অথবা অনেক অবাক হবে, আমার সাথে এভাবে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য ওর চোখে হয় তো লজ্জা দেখা যাবে ।
কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে দেখা গেল, তার কিছুই হল না ! মিমি আমার দিকে এমন চোখে তাকালো যেন সে আমাকে চেনেই । আর যাই হোক মিমির কাছ থেকে এমন একটা প্রতিক্রিয়া আমি আশা করি নাই !মিমি আমার সামনে দিয়ে হেটে চলে গেল অপরিচিত মানুষের মত !
একবার মনে হল ওকে ডাক দেই কিন্তু ডাক দিতে পারলাম না । কিসে যেন বাঁধলো । তারপর থেকে প্রায়ই দেখা হতে থাকে । আমাদের চোখা চোখি হত । কথা হত খুব অল্প !
দশ
কিছুক্ষন দুজনের চুপচাপ থাকলাম ! দুজনেই কি যেন ভাবছি ! একবার মনে হল মিমিকে বলি আগেকার সব কথা । কিন্তু একবার মনে হল থাক ! নাই বা বলি !
চুপ করে থাকার পর মিমি বলল
-তো ! আপনি কি আমাকে চিনেন ? আমার কেন জানি মন বলছে যে আপনি আমাকে চিনেন !
আমি একটু হাসলাম !
-কি দেখে মনে হল আপনি আমাকে চিনেন ?
-আপনার চোখ দেখে ! মনে হচ্ছে যেন খুব পরিচিত চেনা চোখ !
আমার মোবাইল বের করে আমার আর মিমির একটা ছবি দেখালাম !
ছবিটার দিকে বেশ কিছু সময় ধরে তাকিয়ে থেকে থেকে মিমি বলল
-আমরা কি বন্ধু ছিলাম ?
-নাহ !
-তাহলে ?
এই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ওকে আরেকটা ছবি দেখালাম ! এই ছবিতে মিমি আমাকে খানিকটা জড়িয়ে ধরে রেখেছে !
মিমি ছবিটা দেখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আরও বেশি কিছু ছিলাম আমরা ?
আমি কেবল হাসলাম ! বললাম
-থাক ! সেই কথা নাই বলি ! আবার নতুন করে শুরু করা যাক ! কি বলেন ?
-কিন্তু পরে যদি ......।
-থাক ! পরের কথা পরে চিন্তা করলেই চলবে ! তাই না ! আমি তো ভেবেছিলাম আর হয়তো আমাদের দেখাই হবে না !
-আচ্ছা আমাদের সম্পর্ক টা ঠিক কেমন ছিল বল তো ?
যাক আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছে ।
আমি হেসে বললাম
-তুমি কেমন শুনতে চাচ্ছো শুনি ?
মিমি কথার জবাব না দিয়ে কেবল আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ! কিছু একটা চলছে ওর মনে । পিছনের দিন গুলোর মনে করার চেষ্টা নাকি সামনের দিন গুলো কেমন কাটবে সেটার সম্ভাবনা !!
(অনেকের মনে হতে পারে এটা কোন মুভি কাহিনী নিয়ে লেখা । আমি বলবো কি জানি ! আমি আমার মত প্রকাশ করেছি । অনেক দিন আগে একটা মুভি দেখেছিলাম যেখানে মেয়েটা প্রতিদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে সব ভুলে যায় । কি জানি মিলে গেল নাকি)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:৫০