somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদিতির বৃষ্টি ভেজার গল্প

০৯ ই জুন, ২০১৪ রাত ২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



-আফা আর যামু না !
-যাবেন না মানে কি ?
-আফা ! বৃষ্টি শুরু হইছে ! আর যামু না ! আপনে নাইম্মা যান ! টেকা দেওয়ান লাগবো না !

অদিতির এখন খুব কঠিন কিছু কথা বলতে ইচ্ছে করছ রিক্সা ওয়ালা কে ! কিন্তু অদিতি কাউকে কঠিন কিছু বলতে পারে না ! অনেক বার এমন হয়েছে কারো উপর খুব রাগ হয়েছে ! অনেক কিছু বলতে ইচ্ছা হয়েছে অথচ সে কিছুই বলতে পারে নি !

চোখের সামনে দিয়ে রিক্সাওয়ালা ওকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল ! বাইরে ততক্ষনে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে ! বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে অদিতি একটা গাছের নিচে গিয়ে দাড়ালো ! অন্য দিনে ব্যাগের ভিতর ছাতা টা থাকে ! আজকে নেই ! বিরক্ত চোখে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে রইলো !

-আফা সইরা আসেন ! ভিজ্জা যাইবেন তো !
চোখ ফিরিয়ে তাকিয়ে দেখে কালো আল্খাল্লা টাইপের পোষাক পরা এক লোক ওর দিকে তাকিয়ে আছে ! চোখ গুলো কেমন একটু ঘোলা টাইপের ! দেখেই মনে হচ্ছে নিয়মিত গাজা খায় ! চুলে ইয়া বড় যট ধরা !

অদিতির বিরক্তিটা আরো বেড়ে গেল ! বৃষ্টির পুরো সময় টা এই লোকটা সাথে থাকতে হবে ভেবেই অদিতির অস্বস্থি লাগা শুরু হল ! অবশ্য ভয়ের কিছু নেই ! গাছের নিচে আরও কয়েকজন দাড়িয়ে আছে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার জন্য !
বিরক্ত হয়েই অদিতি বলল
-সেটা আমি বুঝবো ! আপনার চিন্তা করতে হবে না !

যেন অদিতি খুব একটা মজার কথা বলেছে ! লোকটা দাঁত বের করে হাসলো ! অদিতির গা টা আবার গুলোয়ে উঠলো ! লোকটা দাঁত একেবারে হলুদ ! কত দিন দাঁত মাজে না কে জানে !

অদিতির আর কিছুতেই গাছের নিচে দাড়াতে মন চাইলো না ! অবশ্য দারিয়ে খুব বেশি লাভও হচ্ছে না ! যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে তাতে গাছের পাতা এই বৃষ্টি ঠেকাতে পারবে না ! তার চেয়ে বরং বৃষ্টিতে নেমে পড়াই ভাল !

অদিতি আরো কিছুক্ষন ভাবলো এখন বৃষ্টিতে নামাটা ঠিক হবে কি না ! কিন্তু এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভেজার কোন মানে নেই ! ভিজবেই যখন ভালো করেই ভেজা ভাল !

অদিতি যখন চুড়ান্ত সিন্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে বৃষ্টিতে ভিজবে তখনই পেছন থেকে কেউ একজন অদিতির মাথার উপর একটা ছাতা ধরলো !
-অদিতি ভিজে যাচ্ছো তো !

কন্ঠ টা শুনেই অদিতি প্রথমে কিছুটা সময় ফ্রিজ হয়ে গেল ! নিজের কান কে ঠিক মত বিশ্বাস করতে পারছে না ! ঠিক মত শুনলো তো ?
মানুষটার দিকে তাকাবে কি না বুঝতে পারছে না ! বুকের ভেতরের সেই ডিপডিপ করা আওয়াজটা ফিরে এসেছে । এতো দিন পরে আবার ফিরে এসেছে !

মাহিন আবার বলল কথাটা
-অদিতি ভিজে যাচ্ছো তো ?
অদিতি মাহিনের দিকে না তাকিয়েই বলল
-আমি অলরেডি ভিজে গেছি !
গলাটা কি একটু কাঁপছে ! হুম কাঁপছেই তো !
অদিতি স্বাভাবিক থাকো । সে একজন স্বভাবিক মানুষ ! এতো অস্বস্থির হওয়ার কিছু নেই ।

অদিতি মানুষটার দিকে ফিরে তাকাতে চাইলো না ! একবার তাকালে হয়তো আর চোখ ফেরাতে পারবে না ! অনেক কষ্ট করে সেই চোখের নেশা ও কাটিয়েছে ! আবার সেই নেশায় ও পড়তে চায় না !

-কি ব্যাপার ? তুমি ওদিকে তাকিয়ে কথা বলছো কেন ?
এর পরে আর অন্য দিকে তাকিয়ে থাকা যায় না !
অদিতি মাহিনের দিকে ফিরে চাইলো ! তাকাতেই অদিতির বুকের ভেতর টা ধক করে উঠলো ! মাহিনের চোখে চশমা নেই ! ওর চোখ টা একেবারে সরাসরি দেখা যাচ্ছে ! কেমন টলটলা করছে ! সারাক্ষন কিছু বলতে চইছে !

অদিতির একটা সময় মনে আছে কেবল এইচোখ টার জন্য কি পাগলই না হয়েছিল ! সারাদিন কেবল এই চোখের দৃষ্টির জন্য আকুল হয়ে অপেক্ষা করতো ! সেই দিন কার অনুভুতি গুলো কিছুতেই ভুলে যাওয়ার নয় !

-তুমি কি কাঁদছো ?
-কাঁদবো কেন ? এটা বৃষ্টির পানি ! চোখের পানি না !
-ও !
-আপনি এখানে কি করছেন ?
-বৃষ্টিতে ভিজছি !
-ছাতা মাথায় দিয়ে ?

অদিতির কথা শুনে মাহিন একটু বোকার মত হাসলো ! অদিতির বুকের ভেতর টা আবার একটু মোচড় দিয়ে উঠলো ! মানুষটা এতো দিনে একটুও বদলায় নি ! সেই তেমন করেই তাকায় সেই তেমন ছেলেমানুষী হাসি এখনও হাসে !

হাসি থামিয়ে মাহিন বলল
-আসলে বৃষ্টির পানি মাথায় পড়লে জ্বর আসে ! তাই ছাতা !
-তা জ্বর যখন আসে বৃষ্টিতে ভেজার দরকার কি ?

এই প্রশ্নটার উত্তর দিকে গিয়ে মাহিন দিলো না ! কেবল বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে রইলো উদাস হয়ে ! কিছু যেন ভাবছে ! কিছু যেন মনে যাচ্ছে তার !
-চলুন আজকে ছাতা ছাড়াই বৃষ্টিতে ভিজবেন আমার সাথে !
-কি বলছো ?
-হুম ! আসুন !


এই সময়ে অদিতি খুব সাহসী একটা কাজ করে ফেলল ! মাহিনের হাত টা ধরে বৃষ্টিতে নেমে পড়লো । তারপর প্রথমে কিছুটা সময় মাহিন অবশ্য ছাতা দিয়ে বৃষ্টি আটকাতে চাইলেই অদিতি মাহিনের ছাতাটা সরিয়ে দিল !

-অদিতি ! কি করছো ?
-কেন দেখতে পাচ্ছেন ! আজকে সারাটা ক্ষন আপনি আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবেন !
-যদি জ্বর আসে ?
-আসুক ! দরকার হলে আমি আপনার মাথায় পানি ঢেলে দিবো ! জল পট্টি দিয়ে দিবো ! ঠিক আছে !

বড় গাছ নিচে দাড়িয়ে থাকা লোক গুলো খানিকটা স্বাভাবিক চোখেই দেখতে লাগলো একটা চিকন রোগা পাতলা ছেলের হাত ধরে একটা মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে ! কিন্তু মেয়েটির কান্না ভেজা চোখ লোক গুলোর চোখে ধরা পড়লো না ! বৃষ্টির পানিতে চোখের পানি মিলেমিশে একাকার !
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৪ রাত ২:১২
১৫টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×