-আফা আর যামু না !
-যাবেন না মানে কি ?
-আফা ! বৃষ্টি শুরু হইছে ! আর যামু না ! আপনে নাইম্মা যান ! টেকা দেওয়ান লাগবো না !
অদিতির এখন খুব কঠিন কিছু কথা বলতে ইচ্ছে করছ রিক্সা ওয়ালা কে ! কিন্তু অদিতি কাউকে কঠিন কিছু বলতে পারে না ! অনেক বার এমন হয়েছে কারো উপর খুব রাগ হয়েছে ! অনেক কিছু বলতে ইচ্ছা হয়েছে অথচ সে কিছুই বলতে পারে নি !
চোখের সামনে দিয়ে রিক্সাওয়ালা ওকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল ! বাইরে ততক্ষনে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে ! বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে অদিতি একটা গাছের নিচে গিয়ে দাড়ালো ! অন্য দিনে ব্যাগের ভিতর ছাতা টা থাকে ! আজকে নেই ! বিরক্ত চোখে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে রইলো !
-আফা সইরা আসেন ! ভিজ্জা যাইবেন তো !
চোখ ফিরিয়ে তাকিয়ে দেখে কালো আল্খাল্লা টাইপের পোষাক পরা এক লোক ওর দিকে তাকিয়ে আছে ! চোখ গুলো কেমন একটু ঘোলা টাইপের ! দেখেই মনে হচ্ছে নিয়মিত গাজা খায় ! চুলে ইয়া বড় যট ধরা !
অদিতির বিরক্তিটা আরো বেড়ে গেল ! বৃষ্টির পুরো সময় টা এই লোকটা সাথে থাকতে হবে ভেবেই অদিতির অস্বস্থি লাগা শুরু হল ! অবশ্য ভয়ের কিছু নেই ! গাছের নিচে আরও কয়েকজন দাড়িয়ে আছে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার জন্য !
বিরক্ত হয়েই অদিতি বলল
-সেটা আমি বুঝবো ! আপনার চিন্তা করতে হবে না !
যেন অদিতি খুব একটা মজার কথা বলেছে ! লোকটা দাঁত বের করে হাসলো ! অদিতির গা টা আবার গুলোয়ে উঠলো ! লোকটা দাঁত একেবারে হলুদ ! কত দিন দাঁত মাজে না কে জানে !
অদিতির আর কিছুতেই গাছের নিচে দাড়াতে মন চাইলো না ! অবশ্য দারিয়ে খুব বেশি লাভও হচ্ছে না ! যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে তাতে গাছের পাতা এই বৃষ্টি ঠেকাতে পারবে না ! তার চেয়ে বরং বৃষ্টিতে নেমে পড়াই ভাল !
অদিতি আরো কিছুক্ষন ভাবলো এখন বৃষ্টিতে নামাটা ঠিক হবে কি না ! কিন্তু এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভেজার কোন মানে নেই ! ভিজবেই যখন ভালো করেই ভেজা ভাল !
অদিতি যখন চুড়ান্ত সিন্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে বৃষ্টিতে ভিজবে তখনই পেছন থেকে কেউ একজন অদিতির মাথার উপর একটা ছাতা ধরলো !
-অদিতি ভিজে যাচ্ছো তো !
কন্ঠ টা শুনেই অদিতি প্রথমে কিছুটা সময় ফ্রিজ হয়ে গেল ! নিজের কান কে ঠিক মত বিশ্বাস করতে পারছে না ! ঠিক মত শুনলো তো ?
মানুষটার দিকে তাকাবে কি না বুঝতে পারছে না ! বুকের ভেতরের সেই ডিপডিপ করা আওয়াজটা ফিরে এসেছে । এতো দিন পরে আবার ফিরে এসেছে !
মাহিন আবার বলল কথাটা
-অদিতি ভিজে যাচ্ছো তো ?
অদিতি মাহিনের দিকে না তাকিয়েই বলল
-আমি অলরেডি ভিজে গেছি !
গলাটা কি একটু কাঁপছে ! হুম কাঁপছেই তো !
অদিতি স্বাভাবিক থাকো । সে একজন স্বভাবিক মানুষ ! এতো অস্বস্থির হওয়ার কিছু নেই ।
অদিতি মানুষটার দিকে ফিরে তাকাতে চাইলো না ! একবার তাকালে হয়তো আর চোখ ফেরাতে পারবে না ! অনেক কষ্ট করে সেই চোখের নেশা ও কাটিয়েছে ! আবার সেই নেশায় ও পড়তে চায় না !
-কি ব্যাপার ? তুমি ওদিকে তাকিয়ে কথা বলছো কেন ?
এর পরে আর অন্য দিকে তাকিয়ে থাকা যায় না !
অদিতি মাহিনের দিকে ফিরে চাইলো ! তাকাতেই অদিতির বুকের ভেতর টা ধক করে উঠলো ! মাহিনের চোখে চশমা নেই ! ওর চোখ টা একেবারে সরাসরি দেখা যাচ্ছে ! কেমন টলটলা করছে ! সারাক্ষন কিছু বলতে চইছে !
অদিতির একটা সময় মনে আছে কেবল এইচোখ টার জন্য কি পাগলই না হয়েছিল ! সারাদিন কেবল এই চোখের দৃষ্টির জন্য আকুল হয়ে অপেক্ষা করতো ! সেই দিন কার অনুভুতি গুলো কিছুতেই ভুলে যাওয়ার নয় !
-তুমি কি কাঁদছো ?
-কাঁদবো কেন ? এটা বৃষ্টির পানি ! চোখের পানি না !
-ও !
-আপনি এখানে কি করছেন ?
-বৃষ্টিতে ভিজছি !
-ছাতা মাথায় দিয়ে ?
অদিতির কথা শুনে মাহিন একটু বোকার মত হাসলো ! অদিতির বুকের ভেতর টা আবার একটু মোচড় দিয়ে উঠলো ! মানুষটা এতো দিনে একটুও বদলায় নি ! সেই তেমন করেই তাকায় সেই তেমন ছেলেমানুষী হাসি এখনও হাসে !
হাসি থামিয়ে মাহিন বলল
-আসলে বৃষ্টির পানি মাথায় পড়লে জ্বর আসে ! তাই ছাতা !
-তা জ্বর যখন আসে বৃষ্টিতে ভেজার দরকার কি ?
এই প্রশ্নটার উত্তর দিকে গিয়ে মাহিন দিলো না ! কেবল বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে রইলো উদাস হয়ে ! কিছু যেন ভাবছে ! কিছু যেন মনে যাচ্ছে তার !
-চলুন আজকে ছাতা ছাড়াই বৃষ্টিতে ভিজবেন আমার সাথে !
-কি বলছো ?
-হুম ! আসুন !
এই সময়ে অদিতি খুব সাহসী একটা কাজ করে ফেলল ! মাহিনের হাত টা ধরে বৃষ্টিতে নেমে পড়লো । তারপর প্রথমে কিছুটা সময় মাহিন অবশ্য ছাতা দিয়ে বৃষ্টি আটকাতে চাইলেই অদিতি মাহিনের ছাতাটা সরিয়ে দিল !
-অদিতি ! কি করছো ?
-কেন দেখতে পাচ্ছেন ! আজকে সারাটা ক্ষন আপনি আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবেন !
-যদি জ্বর আসে ?
-আসুক ! দরকার হলে আমি আপনার মাথায় পানি ঢেলে দিবো ! জল পট্টি দিয়ে দিবো ! ঠিক আছে !
বড় গাছ নিচে দাড়িয়ে থাকা লোক গুলো খানিকটা স্বাভাবিক চোখেই দেখতে লাগলো একটা চিকন রোগা পাতলা ছেলের হাত ধরে একটা মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে ! কিন্তু মেয়েটির কান্না ভেজা চোখ লোক গুলোর চোখে ধরা পড়লো না ! বৃষ্টির পানিতে চোখের পানি মিলেমিশে একাকার !
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৪ রাত ২:১২