somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিথিলার গল্প

১৫ ই মে, ২০১৪ দুপুর ২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কাল রাত তিনটায়... মাত্র শুয়েছি চোখটা ধরে এসেছে সাথে সাথে ফোন বেজে উঠল
ফোন রিসিভ করার পর ওপাশ থেকে কেউ বলে উঠলো
-আপনি মিথিলা বলছেন???
নাম্বার টা আরেকবার দেখলাম ! পরিচিত কোন নাম্বার না ! রাত তিনটার সময়ে যদি অপরিচিত কেউ ফোনে বলে আপনে মিথিলা বলছেন তাহলে কেমন লাগার কথা ? মেজাজ খানিকটা গরম হলেও আমি বললাম
-আপনি কে?
অপর প্রান্ত থেকে আওয়াজ এল
-আমি আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী ... আপনি কি কাল বাসা থেকে বের হবেন??? যদি বের হন তাহলে একটু সাবধানে থাকবেন !

আমার শুভাকাঙ্ক্ষী ? রাইত তিনটার সময় আমারে ফোন দিয়া কয় সাবধানে থাকবেন ? ফাইজলামীর একটা সীমা থাকা উচিৎ ! এমনিতেও ঘুমে চোখ লেগে আসতেছে আর এই রাত বিরাতে এই লোক আমার সাথে ফাইজলামি করে !
বেটাকে একটা ধমক দেওয়ার ইচ্ছা টা দমন করে বললাম
-কেন ?
শুভাকাঙ্ক্ষী বলল
-এই না মানে রাস্তা ঘাটে তো পদে পদেই বিপদ..

মেজাজ টা আসলেই খারাপ হল ! বেটাকে একটা জোড়ে ধমক দেওয়ার প্রস্তুতি নিলাম । বেটা রাত তিন টার সময় আমাকে ফোন দিয়ে কয় রাস্তা ঘাটে কত প্রকার বিপদই না থাকে ! বেটা তোর কাছ থেকে আমাকে শুনতে হবে ! আমি কিছু বলতে যাবো তখনই সে বলল
-আর কিছুদিন ধরে একটা ছেলে আপনাকে ফলো করছে...
-ফলো ?
-জি ?
-আপনি কিভাবে জানেন ?
-আমি জানি ! এই জন্য তো বললাম !
-তা আমার নাম্বার কোথা থেকে পেয়েছেন ?
-পেয়েছি !
-কোথা থেকে ?
-জানবেন ? এতো তাড়াহুড়া কেন ?
-আশ্চার্য আপনি আমাকে রাত তিনটার সময় ফোন দিয়ে বলছেন আমি সাবধানে থাকবেন তারপর বলছেন না আমার নাম্বার কোথা থেকে পেয়েছেন ! কে সেটাও বলছেন না ! মানে কি ?
ওপাশ থেকে কন্ঠ টা হেসে উঠলো ! হাসতে হাসতেই বলল
-মিথিলা আপনি ঘুমান ! কাল সকালে আপনার ক্লাস আছে না ! ঘুমান ! গুড নাইট !

আমাকে আর কিছু না বলার সুযোগ দিয়ে লাইন টা কেটে গেল !

সকাল বেলা বের হতে যবো মা ডেকে বলল
-কখন আসবি ?
-মা ! ক্লাস শেষেই আসবো !
-আচ্ছা !
আমি একটু অবাকই হলাম ! এমন তো হয় না ! প্রতিদিন মা তো আরও অনেক প্রশ্ন করে ! বলে ক্লাস শেষ করে আমি যেন সরাসরি বাসায় আসি । অন্য কোন দিকে যেন না যাই ! বেশি যেন ঘোরাঘুরি না করি ! কিন্তু আজকে তেমন কিছুই জানতে চাইলো না !
বরং আমার দিকে এসে বলল
-কপালে টিপ দিস না কেন ?
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম
-কি !
তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে নিজের হাতে আমার কপালে টিপ পরিয়ে দিল ! তারপর বলল
-এই তো ! এখন কত সুন্দর লাগছে !

মায়ের মুখে হাসি দেখে কেমন যেন একটা সন্দেহ জাগলো ! কোন একটা সমস্যা নিশ্চই আছে ! আচ্ছা গতকালকের ফোন কলটার সাথে আজকে আম্মুর এই হাসিটার কি কোন সম্পর্ক আছে ?
কে জানে ? আমি অতো কিছু চিন্তা না করে বের হয়ে এলাম বাসা হয়ে এলাম !


####
-নাজিম ! দেখ ঐ লোকটা অনেকক্ষন ধরে আমার পিছু লেগে আছে !

একবার মনে হল নাজিম কে কথটা বলা ঠিক হবে না ! ওর মাথা এমনিতেই একটু গরম ! শুনলে কি করবে কে জানে ? কিন্তু লোকটা কয়েকদিন ধরেই আমার পিছু লেগেছে । আমি যেখানেই যাই সেখানেই আমার পিছু পিছে গিয়ে হাজির হয় ! আমি কিছু বলতে পারি না ! সে দিনের রাতেই ফোনকলের পর থেকেই এমন টা হয়েছে !
কিছু বলতে পারছিলাম না কারন ছেলেটা আমার কাছে কখন আসে না । কেবল দুর থেকেই আমাকে ফলো করে ! অসশ্য লোকটার চেহারা দেখেও মনে হয় না কোন খারাপ উদ্দেশ্য আছে তবে সারাক্ষন পেছনে লেগে থাকা টা কেমন অস্বস্তিকর লাগছে !
নাজিমের পাশে লিটা ছিল ! আমার মুখের কথাটা কেড়ে নিয়ে বলল
-কোন লোকটা রে ?
-ঐ যে কালো শার্ট পরে আছে !
নাজিম আর লিটা দুজনেই দেখলো তাকিয়ে !
নাজিম বলল
-চল একটা ধোলাই দিয়ে আসি !
লিটা তো এক পায়ে রাজি !
আমার কোন কথা না শুনে দুজনেই উঠে দাড়ালো ! আজকে লোকটা কপালে খারাবীই আছে !
নাজিম লোকটার সামনে গিয়ে বলল
-এই মিয়া সমস্যা কি আপনার ?
লোকটা খানিকতা ইতস্তত করে বলল
-জি মানে ?
-মানে পিছু নিয়েছেন কেন ?
-কার পিছু ?
-এখন ভাজা মাছ টা উল্টে খেতে পারেন না, না ? ফাইজলামো পাইছেন ! মেয়েদের পিছু করা ! তাই না ?
আমি দেখলাম লোকটা আমার দিকে কেমন একটা অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো ! কিছু হয় তো সাহায্যের আশায় ! লোকটার চোখের ভিতর কেমন একটা আকুলত ছিল ! লোকটা যেন আমাকে বলতে চাইছিল যে মিথিলা আমি কি তোমার কোন ক্ষতি করেছি কিংবা করতে চেয়েছি বল ? তাহলে এমন টা কেন করছো ?

ততক্ষনে চারিপাশে লোকজন জমে গেছে ! সবাই নাজিমের পক্ষে নিয়েই কথা বলছে ! আমার কেন জানি অস্বস্তি লাগছে । বিশেষ করে লোকটা চোখের দিকে তাকানোর পর থেকে ! কিছু একটা ছিল সেই চোখের দৃষ্টিতে তে ! কোন রকমে ওদের দুজনকে বের করে নিয়ে আসলাম ওখান থেকে ! নাজিমের তো তখনও রাগ যায় না ! বলল যে বেটা কে একটা ধোলাই না দিলে মনে শান্তি পাবে না !


বাসা এসে আসল ঘটনা জানতে পারলাম ! মা তো আমার উপর ক্ষেপা ! আম্মা যা বলল লোকটার নাম ফয়সাল আহমেদ ! মা কোন এক পরিচিতে ছোট ভাই ! গত মাসে কোথায় যেন আমাকে দেখেছে তার পছন্দ হয়েছে ! ঐ দিন রাতে সেই লোকই আমাকে ফোন দিয়েছিল ! নাম্বার টা মায়ের কাছ থেকেই নিয়েছিল ! এখন পারিবারিক বিয়ের কথা বলার আগে আমার সাথে কিছু কথা বলতে চায় । এবং এই জন্য নাকি আমার পিছু নিয়েছিল ! বলতে সাহস পায় নি ! আমার মনটা একটু বিষন্ন হল ! সাথে সাথে লোকটার উপর একটু মেজাজ গরম হল ! বেটা কথা বলবি সরাসরিই বল ! এরকম পিছু নেওয়ার দরকার কি ? বদ লোক !

তবুও মন টা বিষন্ন হয়েই রইলো ! বিশেষ করে লোকটা ঐ চোখের দৃষ্টি কিছুতেই ভুলতে পারছিলাম না ! সারাটা বিকেল কাটলো বিষন্নতায় ! বিষন্নতা টা আরও একটু বাড়লো সন্ধ্যার বৃষ্টি টা ! বারান্দায় দাড়িয়ে বৃষ্টিতে দেখছি তখন লোকটা ফোন এল !
কি কথা বলবো, কেমন করে বলবো এটা ভাবতে ভাবতেই প্রথম কল টা ধরতে পারলাম না ! একটু পরে আবার বেজে উঠলো !
এবার দেরি না করে ধরলাম ।
কোন কথা নেই প্রথমে ! দুজনেই চুপ ! ওপাশ থেকে পরিস্কার বৃষ্টির আওয়াজ পাচ্ছিলাম !
ফয়সাল সাহেবই প্রথমে কথা বলল
-বৃষ্টি দেখছেন ?
-হুম !
-বৃষ্টি পছন্দ আপনার ?
-হুম !
-আমারও ! বৃষ্টি হলেই আমি বৃষ্টিতে ভিজি !
আমি ক্ষীণ কন্ঠে বললাম
-আপনি কি এখন বৃষ্টিতে ভিজছেন ?
-হুম ! বৃষ্টিতে ভিজছি ! আপনি ভিজবেন ?
-হুম ? কি বললেন ?
কিছুক্ষন নিরবতা ! তারপর লোকটা বলল
-আপনি তো আপনাদের ডান দিক কার বারান্দার দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখছেন, তাই না ?
-হুম ! কেন ?
-সোজা তাকান ! ল্যাম্প পোস্টের ডান দিকে ! কিছু দেখা যাচ্ছে !

আমার চোখ বেশ পরিস্কার ! আমি অবাক হয়ে দেখালম ল্যাম্প পোস্ট থেকে প্রায় আট দশ হাত দুরে একজন দাড়িয়া আছে ঝুম বৃষ্টির মধ্যে ! হাতটা কানের কাছে ধরা ! যদিও খানিকটা অন্ধকার তবুও তাকে চিনতে আমার বিন্দু মাত্র কষ্ট হল না !
আমি ঠিক বলতে পারবো না আমার ভিতরে হঠাৎ করেই কি হল ! আমি ফোন টা আপনা আপনি রেখে দিলাম ! তারপর সোজা আমাদের বাইরে বের হয়ে এলাম ! গেটের দারোয়ান আমার দিকে খনিকক্ষন অদ্ভুদ চোখে তাকিয়ে থেকে গেট খুলে দিল !
আমি বৃষ্টির ভিতরে নেমে এলাম ! ঠান্ডা বাতাস টুকু প্রথম শরীরে কাঁপন ধরালেও পরে সয়ে গেল মুহুর্তেই ! আমি ডান দিককার ল্যাম্প পোস্টের দিকে গিয়ে দেখি ফাজিল ছেলেটা এখনও সেখানেই দাড়িয়ে আছে ! আবছায়া আলোতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । চোখে সেই অদ্ভুদ দৃষ্টি আর মুখে এক আনন্দের এক টুকরো হাসি নিয়ে ! যেন ও জানতোই আমি বৃষ্টির ভিতর নেমে আসবো !
আসলেই কি জানতো ?
আমি জানি না ! আমি অবশ্য জানতে চাইও না !

২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×