প্রোফেসর ত্রিবেদী উত্তেজিত ভঙ্গিতে ফলাফল টা আরেকবার পরীক্ষা করলেন ! এই নিয়ে মোট এগারো বার সে পরীক্ষা করেছে । প্রত্যেক বারই ফলাফল আগের মতই পজেটিভ !
এটা কি সম্ভব ?
আসলেই সম্ভব ?
প্রোফেসর নিজের স্মার্ট ফোনের ওয়াইফাই কানেকশন সাইন টা পরিস্কার দেখতে পাচ্ছেন !
তিনি তার ফেসবুক ওপেন করলেন ! ফেসবুকে তার ফলোয়ার সংখ্যা নেহৎ কম নয় ! যে কোন কিছু লিখলেই সেখানে পক্ষে বিপক্ষে কয়েকশ কমেন্ট এসে হাজির হয়ে কয়েক মিনিটেই !
প্রোফেসর সাহেব নিজেদের ফেসবুক স্টাটাসে লিখলেন
"একটা আশ্চর্য আবিস্কার করে ফেলেছি ! সামনে হয় তো বিপ্লব হতে চলেছে"
#
-এই সুমন কোথায় যাচ্ছিল ?
-মধ্যপাড়ার মাঠে যাবো ?
-কেন ?
-ওখানে বিনা মূল্যে চারা গাছ দিচ্ছে ! আমার বাড়ির চারিপাশে ইদানিং মনে হচ্ছে গাছের সংখ্যা কমে গেছে ! তুই বল গাছ না থাকলে কি ভাল লাগে ?
-তাই নাকি ? চল তো আমিও যাবো ! আমিও কয়েকটা নিয়ে আসি ! সুমির সাথে কাল দেখা করবো নে !
দুই বন্ধু মধ্যপাড়ার মাঠের দিকে হাটা দিল চারা গাছ নেওয়ার জন্য !
##
২২২৫ সাল
এলাইতা খাবার টেবিলে বসে আছে গোমরা মুখে ! আজকে তার মন শুকনো । কারন তার আম্মু সকালের নাস্তায় তেমন কিছুই বানায় নি ! আজকেও রান্না হবে না বলে এলাইতার মা জানিয়েছে । কেবল ফলমূল আর জুস ! আর কিছু না !
এলাইতার প্রতিদিন গাছের ফল খেতে ভাল লাগে না !
কিন্তু এখন এমন একটা সময় চলে এসেছে যে গাছের ফলমূল আর কিছু এখন পাওয়াও যায় না ! আর যেগুলো পাওয়া যায় সেগুলো সাধারন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য নয় ! সেটা কেনা সম্ভবও না তাদের পক্ষ্যে !
এলাইতা নিজের কমিউনিকেশন ডিভাইস টা বের করে "ভিডিও বুক" বের করলো ! ডিভাইসের ক্যামেরা নিজের দিকে তাক করে বলল
"প্রতিদিন ফল খেতে ভাল লাগে না"
এর পর একটা মুখ ভেংচির মত করে থাকলো কয়েক সেকেন্ড ! ভিডিওটা পোস্ট করলো ভিডিও বুকে !
এখনই মিলান সেখানে ভিডিও কমেন্ট করবে এলাইতা জানে !
ছেলেটা এমন বদ হয়েছে । সব সময় এলাইটার প্রোফাইলের দিকে ওর নজর ! কখন কি করে সঙ্গে সঙ্গে তার জবাব দেওয়া চাই ই চাই !
এই তো মিলানের ভিডিও কমেন্ট চলে এসেছে !
ফাজিল একটা !
মনে মনে বলল কথাটা ! যদিও মিলানের মুখ ভেংচি কাটা টা ওর মুখে একটা হাসির রেখা টেনে এনেছে !
###
আহসান হায়দায় বেশ চিন্তিত মুখে নিজের অফিসে বসে আছেন ! মুখটা বেশ গম্ভীর আজ সকাল থেকেই ! সকালে একটা খারাপ স্বপ্ন দেখে তার ঘুম ভেঙ্গেছে ! এই তেইস শতকে এসেও আহসান হায়দার একটা স্বপ্ন নিয়ে খানিকটা চিন্তিত হয়েছেন, এটা তার নিজের কাছেই কেমন বেখাপ্পা লাগছে ! কিন্তু কিছুতেই স্বপ্নের ব্যাপারটা মাথা থেকে বের করতে পারছেন না ! বারবার ঘুরে ফিরে সেই স্বপ্নের কথাটাই মনে আসছে !
একটা সময়ে মানুষের ধারনা ছিল ভোর বেলার স্বপ্ন নাকি সত্যি হয় !
কি হাস্যকর একটা ব্যাপার !
এবং তখনকার মানুষ নাকি এটা বিশ্বাসও করতো !
আহসান হায়দারের আজকের সকালের স্বপ্নটা বিশ্বাস করার কোন কারন নেই । এমন কি এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ারও কোন কারন নেই । কিন্তু তবুও তিনি চিন্তা করছেন !
বারবার মনে হচ্ছে এটা যেন সত্য হবে ! এই চিন্তাটাই তাকে বারবার ভাবচ্ছে !
আজ ভোর বেলা তিনি স্বপ্ন দেখেছেন একদল গোল জাতীয়, ডিমের মত সাইজের কিছু একটা তাকে তাড়া করে বেরাচ্ছে ! তিনি দৌড়েই যাচ্ছে কিন্তু কিছুতেই যেন সেই গোল অদ্ভুদ প্রানীর কাছ থেনে নিজেকে দুর করতে পারছেন না !
হঠাৎ গোল প্রানীটা বলে উঠলো
-তুমি পালাতে পারবে না ! তুমি পালাতে পারবে না !
এই বলে প্রানীটা এগিয়েই আসছে !
তারপর হঠাৎ করেই তিনি দেখলেন যে তার চারিপাশে সেই গোল গোল প্রানী গুলো ! তাকে ঘিরে ধরেছে ! তিনি কিছুতেই পালাতে পারছেন না ! প্রানি গুলো তাকে চেপে ধরলো ! তারপর একটা প্রানীর শরীরের কিছুটা অংশ ভেঙ্গে ছোট হতে লাগলো ! তারপর তার নাক মুখ দিয়ে নিজের শরীরে প্রবেশ করতে লাগলো !
তিনি যতই বাঁধা দিতে চাইলেন কিছুতেই পারলেন না ! কেউ যেন তার কানে কানে বলছে
আমাকে ছাড়া তুমি বাচতে পারবে না ! আমাকে তোমার দরকার ! আমাকে তোমার দরকার !
আহসান হায়দারের ঘুম ভেঙ্গে গেল তখনই ! তার বুঝতে একটুও অসুবিধা হল না যে গোল গোল জিনিস টা কি ? এটা এখন পৃথিবীর অন্যতম প্রধান সমস্যা !
তিনি একজন অক্সিজেন বিশেষ্যজ্ঞ ! গত শতক ধরে পৃথিবীতে অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে গিয়েছে আশংকা জনক ভাবে ! যেখানে বাতাসে ২১ শতাংশ অক্সিজেন থাকার কথা সেখানে প্রায় ৫০ শতাংশ অক্সিজেন এখন ! এই অতিরিক্ত অক্সিজেন ডোজের কারণে মানুষের মাঝে বিশাল পরিবর্তন দেখা দিয়েছে ইতি মধ্যেই। মানুষ এখন সবসময় হালকা মেজাজে থাকে, কোন প্রকার পরিশ্রম করতে যায় না। বাচ্চা উৎপাদনেও উৎসাহ দেখায় না। ফলে পুরো পৃথিবীর লোক সংখ্যা কমে গেছে আশংকাজনক ভাবে ! অনেকে পৃথিবীর বিলুপ্তির কথাও চিন্তা করছে । যেকোন সময়ই এটা হতে পারে ! কেউ বলছে এটা কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র !
পরিবর্তন টা শুরু হয় ২০৫০ সালের দিকে ! গ্লোবাল ওয়ার্মিং সর্বোচ্চ আকার ধারণ করেছে তখন। ডুবে যাচ্ছে সমুদ্র-নিকটাবর্তী অঞ্চল গুলো। বাংলাদেশের পাঁচ ভাগের একভাগ ডুবে যাবে এরকম কথাও শোনা যাচ্ছিলো। তখনই বাংলাদেশের প্রোফেসর প্রিবেদী নামের একজন বিজ্ঞানী আবিস্কার করে যে জলবায়ু পরিবর্তিনের ফলে গাছের ভিতর একটা আশ্চর্য পরিবর্তন দেখা দিয়েছে ! গাছের শারীরিক গঠনে একটা পরিবর্তন এসেছে । খানিকটা মিউটেশন হয়েছে গাছের কোষ গুলোর ভিতরে ! সেই সাথে আশ্চার্য একটা ক্ষমতা জন্মেছে গাছের ভিতর !
প্রোফেসর প্রিবেদীই প্রথমে দেখতে পান যে গাছের ভিতর ওয়াইফাই ইন্ট্রিগেশন হয়েছে ! অথাৎ প্রত্যেকটা গাছ প্রাকৃতিক ভাবে ওয়াইফাই রাউটারে রূপান্তর হয়েছে ! এবং এটা এই ওয়াইফাই নেট দিয়ে যুক্ত হওয়া যাচ্ছে মুল নেটওয়ার্কের সাথে !
ব্যাপারটা সংক্ষেপে এরকম- একটা গাছের কাণ্ড যত মিটার লম্বা হবে, সেটা তত বর্গ মিটার জায়গায় ওয়াই-ফাই সার্ভিস দিতে পারবে। এবং ব্যাপারটায় কোন বাড়তি খরচ নেই ! গাছটা যতদিন বাঁচবে, ওয়াইফাই ততদিন থাকবে !
আর যায় কোথায় ! পৃথিবীর মানুষ এতো দিন নির্বিচারে গাছ ধ্বংশ করে এসেছে, একটা বাড়তি গাছ লাগালোর প্রয়োজন মনে করে নি সেই মানুষই ঘাটে মাঠে গাছ লাগানো শুরু করে দিল ! গাছ লাগানো যায় এমন একটা জায়গাও বাদ রইলো না ! যে সব জায়গায় গাছ লাগানোর উপায় নেই সেখানে বড় বড় টবে গাচ লাগানো শুরু হল ! মরুভুমি গুলোতে আলাদা সেচের মাধ্যমে লাগের বেছে থাকার উপযোগি করে গাছ লাগালোর ব্যবস্থা হল ! এমন কি মানুষ এই ওয়াইফাই ফ্রি নেট ব্যবহারের জন্য নিজের পিঠে একটা টবে করে গাছ নিয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগলো ! অনেক টা এন্টেনার মত !
কয়েক বছরের ভিতরেই ইন্টার্নের সার্ভিস প্রোভাইডারেরা নিজেদের সব সার্ভিস বন্ধ করে দিতে বাধ্য হল । মানুষ পুরোপুরো তখন এই প্রাকৃটিক ওয়াইফাইয়ের উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠলো ! ফলে চারিপাশ টা ছেয়ে গেল গাছে গাছে !
পরবর্তী কয়েক বছরে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমান স্বাভাবিক হয়ে এল । গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের পরিমান টাও কমে এল । কিন্তু সমস্যা টা শুরু তখন থেকেই !
পৃথিবীতে প্রয়োজনের থেকেও বেশি গাছ হয়ে যাওয়া থেকেই পঞ্চাশ বছরের মধ্যে বাতাসে বিপদজনক ভাবে অক্সিজেনের পরিমাণ বেড়ে গেল। ফলে আরেক ভাবেই বাতাসে অক্সিজেনের পরিমান নাইট্রজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের ভারসাম্যটা ভেঙ্গে পড়লো !
প্রত্যেকটা দেশের প্রধানরা এক জায়গায় বসে একটা সিদ্ধান্তে আসলো যে পৃথিবী থেকে গাছের পরিমান কমিয়ে ফেলতে হবে ! কিন্তু ততদিনে বেশ দেরি হয়ে গেছে ! সারা পৃথিবীর আর একটা যায়গাও ফাঁকা নেই ! পুরো টা জায়গায় কেবল গাছ আর গাছে এবং গাছের নিচে নিজের বীজ, লতা পাতা পতিত হয়ে এমন একটা অবস্থা হয়েছে যে একজায়গায় গাছ কেটে ফেলে তো কয়েকদিন পরে সেখান থেকে নতুন গাছ জেগে ওঠে ! সেখানে কেটে ফেলে আবার নতুন গাছ জেগে উঠে ! এক টা সময় সবাই হাল ছেড়ে দেয় ! সবাই বুঝতে পারলো যে কেটে কিংবা আগুনে পুড়িয়ে আর কিছুতেই গাছের পরিমান কমানো সম্ভব না ! এখন প্রায় ২০০ বছর পরে পৃথিবীটা পুরোপুরি গাছে দখলে চলে গেছে । গাছ গুলো এতো ঘন হয়ে একে ওপরের সাথে লেগে আছে যে সূর্যের আলো পৃথিবীতে এসে আর পৌছায় না ! ফলে আবাহাওয়া হয়ে পড়েছে অনেক ঠান্ডা ! এক টা সময় গরম কাল বলে যে একটা কাল ছিল সেটা আর এই সময়ে নেই ! এখন সব সময় ঠান্ডা থাকে ! গরম পড়ে না !
মানুষকে এখন আর কষ্ট করে কিছু উৎপাদন করতে হয় না ! এতো ফলফলাদি হয় যে মানুষ খেয়ে শেষ করতে পারে না ! আবার ফল মাটিতে পরে নষ্ট হয়, সেখান থেকে নতুন গাছ জন্মে !
আহসান হায়দার সারা দিন সেই পুরানো কথাই চিন্তা করলেন ! বেশ কিছু ইতিহাসের বই ঘেটে তিনি এসব জেনে এসেছেন ! মাঝে মাঝে মনে হয় সেই বাঙালী বিজ্ঞানী যদি সেদিন সেই আবিস্কার টা না করতো তাহলে হয় তো এই সমস্যাটার সৃষ্টি হত না ! আহসান হায়দার স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছেন এমন ভাবে চলতে থাকলে পৃথিবীর ধ্বংশ অনিবার্য ! এরকম কর্মহীন ভাবে বেঁচে থাকলে, কোন কিছু করার প্রতি আগ্রহ না জন্মালে, মানুষ কি টিকে থাকতে পারে ?
আহসান হায়দার নিজের কমিউকেশন ডিভাইস বের করে মানুষজন কে সচেতন করার জন্য একটা পাবলিক ভিডিও পোস্ট করলো । কিন্ত সেখানে খুব বেশি কমেন্ট দেখালো না কেউ ! লাইকও দিলো না খুব !
কেউ কেউ অবশ্য বলল
খুব ভালো বলেছেন !
অথবা
আমাদের এখনও সচেতন হতে হবে !
আমাদের অচেতন জাতি কবে সচেতন হব !
এই টাইপের ভিডিও কমেন্ট পড়লো বটে ! কিন্তু আহসান হায়দার খুব ভাল করেই জানে যে এরা আসলে কথায় যা করে । এরা বেশি কামে না ! তারা কিছুই করবে না ! কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই !
আসলে মাথার উপর থেকে খাদ্যের চিন্তা টা দুর হয়ে গেলে মানুষ অন্য কোন কাজ করে আর মজা পায় না, কিংবা করতে আগ্রহ বোধ করে না ! এখন মানুষের সময় কাটে বিশাল বিশাল আম গাছে বসে ফ্রি নেট ব্যবহার করে । আগে ফেসবুক জাতীয় একটা ওয়েব সাইট ছিল এখন সেটার স্থান দখল করে নিয়েছে ভিডিও বুক ! সেখানেই তারা সারাদিন কাটায় ! সময় পেলে মুভি দেখে তবে এক মুভি আর কত দেখা যায় ! সেই কবে থেকে মানুষ মুভি বানানো বন্ধ করে দিয়েছে । এতো পরিশ্রম কে করে ! পুরানো গান গুলো শোনে গাছের ডালে বসে !
প্রায় সবারই ট্রি হাউজ আছে । তারা সারা দিন সেখানেই কাটায় ! রাতেও নিচে নেমে আসে না ! মানুষের বেঁচে থাকার আর কোন কারনই কেউ খুজে পায় না এখন !
####
২৩১৭ সাল !
নিমিন নিজের ট্রি হাউজে শুয়ে শুয়ে নিজের শুয়ে থাকার ভিডিও পোস্ট দিল ! অপেক্ষা করতে লাগলো কেউ একজন সেখানে কিছু একটা কমেন্ট করুক !
কিন্তু কমেন্ট করার মত কেউ আর তখন এই পৃথিবীতে বেঁচে নেই !
নিমিন হঠাৎ করেই খুব বিষন্ন বোধ করলো ! একটা বড় আম পেড়ে মুখে দিয়েও তার কেমন একটা বিষাদ স্বাদ লাগলো !
থুঁ বলে মুখ থেকে আম টুকু ফেলে দিয়ে নিমিন গাছের ডাল থেকে ঝাপ দিল নিচের দিকে ! সরাসরি মাটিতে পড়ার আগে নিমিন আরও ছয়টা ডালের সাথে বাড়ি খেল ! মাটিতে পড়ার আগেই মাথার রগ ছিড়ে মৃত্যু হল পৃথিবীর শেষ আজাইড়া মানুষটির !!
সত্যিই যদি এমন হয় তাহলে মানুষ নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে গাছ লাগানো শুরু করবে । অন্তত বাংলাদেশের ফেসবুক জেনারেশন তো করবেই ! এমনি তে কেউ একটা গাছ লাগাবে কি না সন্দেহ আছে । যাক প্রিয় ব্লগার প্রোফেসর শঙ্কুর ১১টা থিমের ভিতর এইটা থিম নম্বর নয় । দেখি সামনে কোনটা লেখা যায় ।