অনলাইন, কাছে আসার গল্প
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
গল্প একঃ ব্রেকআপের পর.....
-আপনি নাকি গার্লফ্রেন্ড খুজছেন ?
মুভি দেখছিলাম পিসিতে । তখনই ফেসবুকের মেসেজ টোন টা বেজে উঠলো ! বুঝলাম কেউ মেসেজ পাঠিয়েছে ! মুভিটা পজ করে মেসেজ উইন্ডোটা চালু করতেই এই মেসেজ টা !
একটা মেয়ের কাছ থেকে এরকম একটা প্রশ্ন শোনা টা ঠিক স্বাভাবিক না !
মেয়েটির ফেসবুক নাম নীল পরী ! জগতে কত পরী আছে তা ফেসবুকে আসলেই টের পাওয়া যায় ! আমার ফ্রেন্ড লিস্টে আছে ! এতো দিন লক্ষ্যই করি নি !
যাইহোক, নীলুর সাথে কদিন আগে ব্রেক আপ হয়েছে ! অনলাইন কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল ! তাই সেদিন খানিকটা ফান করেই স্টাটাস দিয়েছিলাম যে একজন পার্ট টাইম গার্লফ্রেন্ড দরকার যে আমার সাথে অনলাইনে লাটুপুটু করবে ! আমাকে আই লাবিউ লিখে বারবার স্টাটাস দিবে !
ব্রেক আপের অনেকে অনেক রকম প্রশ্ন করেছে । কেন হল ? কে আগে ব্রেক আপ করলো ? ঠিক করা কি যেত না ইত্যাদি ইত্যাদি !
কিন্তু এই টাইপের প্রশ্ন কেউ করে নি ! আমি খনিকক্ষন ভেবে রিপ্লাই দিলাম
-কেন জিজ্ঞেস করছেন ?
-প্রশ্ন করেছি জবাব দিবেন ! প্রশ্নের জবানে প্রশ্ন করাটা আমার ঠিক পছন্দ না !
-ও আচ্ছা !
-কি খুজছেন ?
-কেন ? আপনি হবেন নাকি ?
-আবার প্রশ্নের বিপরীতে প্রশ্ন ? সোজা ভাবে উত্তর দিন !
-খুজছি তো !
কিছুক্ষন কোন কথা নেই ! আমি এই ফাকে মেয়েটির প্রোফাইলে গিয়ে ঘুরে এলাম ! একটু ধাক্কা খেলাম মেয়েটার প্রোফাইল পিচার দেখে !
ভাল করে দেখার জন্য মাউছ টা নিয়ে ক্লিক করলাম ! মেয়েটির বড় ছবি চলে এল !
প্রোফাইল পিকচারে মেয়েটি সাদা রংয়ের একটা কামিজ পরে আছে ! সাথে সাদা ল্যাগিংস ! একটা গাছের সাথে হেলাদ দিয়ে আছে, এমন ভাবে যে হাত দুটো পরিস্কার দেখা যায় ! দুই হাতেই মেহেদির গাঢ় রং স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছ ! ঠোটে লিপস্টিক নেই, চোখে কাজল আছে গাঢ় করে ! সাথে চুল খোলা !
আমি কিছুটা সময় অবাক হয়ে মেয়েটির ছবিটির দিকে তাকিয়ে রইলাম ! আমার পছন্দের প্রত্যেক টা জিনিস মেয়েটির ভিতর বিদ্যমান ! বোঝা যাচ্ছে মেয়েটি ইচ্ছে করে এমন একটা ছবি লাগিয়েছে ! তার মানে এই অর্থ দাড়ায় অনলাইনে মেয়েটি আমাকে বেশ ভাল করেই লক্ষ্য করেছে ! তা না হলে এমন হত না !
না কি আমি একটু বেশি বেশি কল্পনা করছি !
-হ্যালো ?
-জি বলুন !
-দেখা হয়েছে ?
আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না মেয়েটি কি বলতে চাইলো ! আমি বললাম
-কি বললেন ঠিক ধরতে পারলাম না !
মেয়েটি হাসির ইমো দিল !
তারপর বলল
-বললাম আমার প্রোফাইল ঘুরে এলেন না ? দেখা শেষ ?
কিছুক্ষন চুপ করে রইলাম ! তারপর বললাম
-হুম !
-কেমন লাগলো ?
-কেমন লাগা উচিৎ আপনি ভাল করেই জানেন নিশ্চই !
আবারও হাসির ইমো !
কিছু নিরবতার পর মেয়েটি বলল
-কি সিদ্ধান্ত নিলেন ?
-কি বিষয়ে ?
-ঐ যে ! অনলাইন গার্লফ্রেন্ড ?
-হুম ! একটা তো দরকারই !
-তা তার কি কি যোগ্যতা থাকা দরকার ?
-তেমন কিছুই না ! কেবল আমাকে সহ্য করতে পারলেই হল ! মেয়েরা কিছু দিন পর থেকেই আমাকে সহ্য করতে পারে না !
-তাই ?
তারপর আরও কিছুক্ষন নিরবতা ! কিছুক্ষন পর দেখলাম মেয়েটি আমাকে ইন এ রিলেশনশীপ রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে ! আমি একটু হেসে রিকোস্ট টা গ্রহন করে নিলাম !
গল্প দুইঃ তন্বী
ক্লাস শেষ করে বের হতেই তন্বী এসে সামনে দাড়ালো ! মুখ টা গম্ভীর ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনার মোবাইল টা দিন !
-কেন ?
-দিতে বলছি, দেন !
তন্বীর মুখ টা যেন একটু বেশি গম্ভীর ছিল ! আমি একটু অবাক হলাম ! মেয়েটির কাজ কারবার আমি কিছুই বুঝতে পারি না ! কখন কি যে করে ঠিক বোঝার উপায় নেই ! মেয়েদের বোঝা একটু কষ্টকর তন্বীকে বোঝা মনে হয় আরও একটু বেশি কষ্ট কর !
তন্বী আমার মোবাইল কি যেন টেপাটেপি করলো ! তারপর আমার দিকে মোবাইলে স্ক্রীনটা দেখিয়ে বলল
-এটা কে ?
তাকিয়ে দেখি তন্বী আমার মোবাইল থেকে আমার ফেসবুক বের করেছে ! সেখানে গত দিনের লাগানোর রোজের সাথে প্রোফাইল পিকচার টা দেখা যাচ্ছে !
আমি শান্ত কন্ঠে বললাম
-কেন ?
-প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন করবেন না ! বলুন এটা কে ?
-আমার পরিচিত একজন !
-শুধুই পরিচিত ?
-দেখে কি তাই মনে হচ্ছে না ?
-আপনি এখনই এই প্রোফাইল পিকচার বদলে ফেলুন ?
-সে কি কেন ? কালকেই তো দিলাম !
-না এইটা বদলে ফেলবেন ! এখনই বদলে ফেলবেন ! এখনই ?
-তোমার কথা আমি শুনব কি জন্যে?
আমার কথা শুনে তন্বীর মুখটা আরও বেশি গম্ভীর হয়ে গেল ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আমি বলেছি তাই শুনবেন ।
-আচ্ছা কাল পরশু বদলে দিব । কয়েকটা দিন থাক !
-কি জন্যে পালটাতে বলছি বুঝতে পারছেন?
-উঁহু পারছি না !
তন্বী খানিকটা ব্যাকুল কন্ঠে বলল
-জানার ইচ্ছে আছে?
-আমার কৌতূহল কম , তবে তুমি চাইলে বলতে পারো।
-আমার হিংসে হচ্ছে !
আমি এবার হেসে বললাম
-বল কী ! ট্রেইলার দেখেই এই অবস্থা? পুরো গল্প দেখলে তো হার্টফেল করতা ।
-আপনি একটা ইতর,একট বদমাইশ, একটা, একটা.........
তন্বী আমাকে আমার মোবাইল টা না দিয়েই পিছন দিকে হেটে চলে গেল ! আমি যে আমার মোবাইল টা ওর কাছে চাইবো কি মনে হল যেন চাইলাম না ! ওর বাসা আমাদের কমিউনিটিতেই ! কাছাকাছিই বলা চলে ! বাসায় গিয়ে নেওয়া যাবে !
তবে আমার বেশ মজাই লাগছিল তন্বীর রাগ আর ঈর্ষা দেখে । মেয়ে গুলো এতো বোকা হয় কেন ? নিজে মুখ ফুটে কিছু বলবে না আবার কিছু সহ্যও করবে না ! হয় বলতে হবে নয়তো সহ্য করতে হবে !
ইটালীতে আসার পর যে কয়জন বাঙ্গালী ছেলে মেয়েদের সাথে আমার উঠা বসা তার ভিতর তন্বী একজন ! মেয়েটি প্রথম থেকেই একটু অন্য রকম লাগলো আমার কাছে । পরে খোজ খবর করে জানতে পারলাম তন্বী বেশ জেদি ! যা ভাববে তাই করবে ! এরকম মেয়েদের কাছ থেকে দুরে থাকা উচিৎ কিন্তু কেন জানি দুরে থাকা গেল না দুইটা কারনে । প্রথম কারন টা হচ্ছে ওর বাবা মা ! ওর পরিবারের সাথে আমার পরিবারের একটা আলাদার বন্ধুত্ব্য তৈরি হল, যাতায়াত বেড়ে গেল আর অন্য একটা করন হল মেয়েটার মুখে একটা আশ্চার্য রকম মায়া জড়িয়ে ছিল ! একবার তাকালে আবার তাকাতে মন চাইতো !
যাই কোন দুপুরের বাসায় এসে একটা ঘুম দিলাম খেয়ে ! তন্বী তখনও মোবাইল টা দিয়ে যায় নি ! না জানি করছে মোবাইল টা দিয়ে ! বিকেল বেলা যখন বাইরে বের হলাম দেখি আসে পাশের বেশ কয়েক জন আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো ! একজন আমার কাছে বলল
-সানি, তলে তলে এতো দুর ?
আমি কিছু বুঝতে না পেরে বললাম
-মানে কি ?
-মামা এখন কিছুই জানো না ?
আমি আসলেই কিছু বুঝতে পারছিলাম না ! তখন সে তার মোবাইল বের করে আমার দেখালো !
আমরা এখানে বাঙ্গালীরা যেমন বাস্তবে একে ওপরের সাথে একে ওপরের যুক্ত তেমনি অনলাইনেও ! ফেসবুক বের করে আমাকে এমন একটা জিনিস দেখালো আমি একটু চমকে উঠলাম ! সেখানে দেখা যাচ্ছে আমার আর তন্বীর ইন এ রিলেশনশীপ স্টাটাস !
খাইছে !
বদ মেয়ে করছে কি ?
আমার মোবাইল নিয়ে এই আকাম করছে ! এতোক্ষনে তো সবাই জেনে গেছে । বাসায় জেনে গেলে উপায় আছে ?
আমি তন্বীকে খুজতে লাগলাম ! পেয়েও গেলাম ! ওদের বাসা থেকে একটু দুরে একটা বড় লেক আছে । বিকেল হলে অনেকেই এখানে আসে বেড়াতে ! আমি ওখানে গিয়ে দেখ তন্বী একটা বেঞ্চের উপর বসে আছে চুপ করে !
প্রথমে ইচ্ছা খুব জোরে একা ধমক দেই ! কিন্তু দিতে পারলাম না ওর চেহারা দিকে তাকিয়ে ! মনে হচ্ছে কোন কারনে কেঁদেছে কিছুক্ষন আগে !
বাহ !
আকাম করবা আবার কান্না কাটিও করবা !
আমাকে দেখে কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আবার লেকের দিকে তাকালো ! আমি পাশে বসতে বসতে বললাম
-এই কাজ টা কেন করলা ?
-আমার ইচ্ছা ?
-যা ইচ্ছা তাই করতে হবে ?
-হুম হবে ! আপনি কেন পিক বদলালেন না ? কেন ?
আমি কিছু না বলে তন্বীর দিকে একটু এগিয়ে বসলাম ! ও ওর পকেট থেকে আমার মোবাইল টা বের করে দিয়ে বলল
-চাইলে আপনি চেঞ্জ করে নিতে পারেন ! আই ডোন্ট মাইন্ড !
আমি মোবাইল টা হাতে নিতে নিতে বললাম
-মুখ ফুটে কিছু না বললে আমি কিভাবে বুঝবো ?
তন্বী আমার দিকে তীব্র চোখে তাকিয়ে বলল
-সব কিছু মুখে বলার প্রয়োজন আছে ?
-নেই ?
-না নেই ! বুঝে নিতে হয় !
-হু !
-কি হু ?
-হু মানে আমার কপালে এর পর থেকে দুঃখই আছে বুঝতে পারছি !
তন্বী আবারও আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি এখনই আমার কাছ থেকে চলে যান ! এখনই !
-যাবো ? সত্যি চলে যাবো ?
আমি উঠে পড়তে গেলে দেখি তন্বী চোখে পানি চলে এসেছে ! আমি আবার বসে পড়লাম ! এমন মেয়েকে ছেড়ে যাওয়া কি সম্ভব ?
মেয়েগুলো আসলেই একটু অন্য রকম ! এরা কখন কি যে চায়, কি চায় আর কি বোঝাতে চায় সেটা কেউ জানে না ! চেষ্টা করেও কেউ বের করতে পারে না ! আমার কপালে সামনে কি আছে কে জানে !
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?
স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন