আমি আজহার সাহেবের দিকে তাকিয়ে দেখি লোকটা শান্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । এমন একটা ভাব যেন এই রকম দুচারটা কথা সে প্রতি নিয়তই শুনে থাকে । অবশ্য পুলিশের চাকরীতে এই রকম হওয়াটা স্বাভাবিক । আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে আজহার সাহেব আমার দিকে পানির গ্লাসটি এগিয়ে দিল । একটু ইতস্তঃ করে আমি পানি ভর্তি গ্লাসটি তুলে নিলাম বাঁ হাতে ।
হঠাৎই কেন জানি মনে হল আমার খুব পানির পিপাসা পেয়েছে । এই পানি টুকু না খেলে হয়তো তৃষ্ণায় আমি মারা যাবো । এক চুমুকেই পুরো টুকু পানি খেয়ে নিলাম ।
-আর কিছু খাবেন ?
-জি ?
পুলিশ এতো ভাল ব্যবহার করছে !! বিশ্বাসই হচ্ছে না ঠিক । হয়তো একটু পরেই আমার কপালে খারাবী আছে ! ছাগল জবাই করার আগে যেমন তাকে আদর যত্ন করা হয় হয়তো আমার বেলাতেও সেই রকম কিছু হতে যাচ্ছে ।
-খাবেন আর কিছু ?
ইন্সেপেক্টর আজহার আবার বলল কথা টা । আমি কাঁপা কন্ঠে বললাম
-জি না । কিছু খাবো না ।
আজহার সাহেবের মুখে একটু যেন হাসির রেখা দেখতে পেলাম । টেবিলের উপরে রাখা একটা বেল চাপ দিলেন । কয়েক সেকেন্ড পরেই একজন সেন্ট্রি টাইপের লোক রুমের ভিতর ঢুকলো ।
-দুইকাপ চা নিয়ে এসো ।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি দুধ চা খান নাকি র চা ?
-দুধ চা ।
আজহার সাহেব সেন্ট্রি টাইপের লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল
-একটা দুধ চা ।
লোকটা চলে গেল ।
--------
আমি জানতাম নীলা আমার কাছ থেকে এমন কথা শুনে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকাবে । কিছুক্ষন তাকিয়েই রইলো আমার দিকে । চোখের সামনেই ওর মুখের ভঙ্গি বদলে যেতে দেখলাম । এতোক্ষন যেখানে নীলার চোখে অদ্ভুদ একটা বিষন্নতা ছিল সেখানে একটা ক্রোধের চিহ্ন উদয় হল ।
-আমি সত্যি বলছি বিয়ে করবি আমাকে ?
-দেখ সুমন আমার সাথে হয়তো অনেক খারাপ কিছু হয়ে গেছে কিন্তু আমাকে করুনা করার অধিকার আমি কাউকে দেই নি । তোকেও না ।
-তুই এভাবে কেন নিচ্ছিস ?
-তো কিভাবে নিবো ? আমার বিয়ে হচ্ছে না । বাবা মা চিন্তায় অস্থির । আমার হবু বর আমাকে ফেলে চলে গেছে । যাক মেয়েটাকে বিয়ে করে পরোপকার করা যাক । তাই না ?
-নীলু তুই ভুল বুঝছিস !
-দেখ ! আমার আর এখানে থাকতে ইচ্ছা করছে না । তুই রিকোয়েস্ট করেছিলি বলে এখানে এসেছিলাম । কিন্তু এই কথা বলবি জানলে কোন দিন আসতাম না ।
এই টুকু বলেই নীলা উঠে দাড়াল । তারপর হনহন করে হেটে চলে গেল । একটা বারের জন্যও পিছন ফিরে তাকালো না ।
নীলার সাথে ঐ দুর্ঘটনাটা ঘটার পর থেকেই নীলা কেমন যেন হয়ে গেছে । কারো সাথে ঠিক মত কথা বলে না কারো সাথে দেখাও করে না । আর অবাক করা বিষয় ওর পরিচিত মানুষ গুলোও যেন নীলা কে একটু এড়িয়ে চলতে শুরু করে ।
কি আজব মানুষ গুলোর আচরন ! নীলাকে সেই কাজটার জন্যই শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে যেটার জন্য ও কোন ভাবেই দায়ী না । এতো কিছুর পরেও হয়তো অবস্থা অতটা খারাপ হত না যদি না মিতুল ভাই এই কাজটা না করতো ।
আমি ঐ দিন ওদের কাছেই ছিলাম । নীলা তখন সবে মাত্র হাসপাতাল থেকে ফিরেছে । হাসপাতালের দিন গুলোতে অনেকেই নীলাকে দেখতে এসেছে । কিন্তু মিতুল ভাই একবারের জন্যও আসে নাই । একদিন নীলা নিজেই আমাকে ফোন করে বলল
-তুই কোথায় রে ?
-এই তো ! কেন ?
-মিতুলের খোজ নিয়ে দিতে পারবি ?
-পারবো । কেন ?
-না তুই শুধু খোজ নিবি ও কাল বিকেলে কোথায় থাকে । আর আমাকে ওর কাছে নিয়ে যাবি । পারবি না ?
-হুম ।
আমি অত কিছু বুঝতে পারি নি । পরদিন বিকেল বেলা নীলাকে মিতুল ভাইয়ের কাছে নিয়ে গেলাম । আমি ভেবেছিলাম ওরা হয়তো কথা বলবে । আমি নীলাকে মিতুল ভাইয়ের কাছে দিয়ে যখন চলে আসবে তখন নীলা বলল
-দাড়া । আমার কাজ এখনই শেষ হয়ে যাবে ।
মিতুল ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি ওনার মুখটা কেমন হয়ে গেছি । উনি কিছু একটা বলতে গেলেন । কিন্তু নীলা ওনাকে মাঝ পথেই থামিয়ে দিল । তারপর আমাকে অবাক করে মিতুল ভাইয়ের গালে ঠাস করে একটা চড় মাড়লো ।
মানে কি ? আমি কিচ্ছু বুঝতে পারলাম না । তারপর আমার দিকে হন হন করে হেটে চলে এল ! আমাকে বলল
-চল ! আমার কাজ শেষ !
আমি অবাক হয়ে বললাম
-এসবের মানে কি ?
-কোন মানে নেই !
নীলা আর দাড়ালো না ! হাটতে লাগলো সামনের দিকে ! আমি একবার নীলার দিকে তাকাই আরেকবার মিতুল ভাইয়ের দিকে । মিতুল ভাই এখনও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে । নীলা যে ওনাকে চড় মাড়বে এটা উনি ভাবতেই পারে নি । আমি নিজেও ভাবতে পারি নি ।
-------
-নিন ! চা খান !
আজহার সাহেবের চায়ের কাপে গাঢ় খয়েরী রংয়ের পানীও দেখা যাচ্ছে । আমার কাছে কেন জানি চায়ে র রংটা একটু রক্তের মত ! শিবলুর শরীরের রক্তের রংটা কি এমন ছিল ? কে জানে ? আমার সামনেই যখন ওর শরীরের রক্তটা ছড়িয়ে পরে মেঝেতে তখন রংটা খানিকটা এমনই তো মনে হচ্ছিল । হয় তো তখন আলো টিমটিমে আলোর জন্যই এমন মনে হয়েছিল !
তাই নয় কি ?
ইন্সেপেক্টের কথায় আমি চায়ের কাপে চুমুক দিলাম ! দুধের পরিমান একটু বেশি হয়েছে । আর একটু কম হলে ভাল হত ! তবে খেতে মন্দ লাগছে না !
আজহার সাহেব বলল
-তারপর ? তারপর কি হল ?
-আমি শিবলুর ঠিকানা জানতাম ! বলতে গেলে নিজেই ওর খোজা বের করি ! একদিন ওর সাথে সামনা সামনি দেখা হয়ে গেল ! ওরা যেখানে বসে আড্ডা মারে সেখানে ।
-মানে উকু মিয়ার ক্যারাম ঘরের পেছনে ?
-জি ! ওখানেই ওদের আড্ডা খানা ! সন্ধ্যা হলেই ওখানে বসে বসে ওরা তাস খেলে, মদ গাজা খায় !
-হুম ! তারপর বলুন !
-আমি যেদিন শিবলুকে সরাসরি দেখি সেদিন আশ্চার্য ভাবে লক্ষ্য করতে থাকি যে আমার পুরো শরীর জুরে এক আশ্চার্য ক্রোধ অনুভব করছি ! আমি সারা জীবন নির্ভেজাল টাইপের মানুষ ! কখনও কারো গালে একটা চড় মেরেছি বলে মনে পড়ে না ! কিন্তু শিবলু কে দেখে মাথায় রক্ত চড়ে গেল ! কিভাবে যে নিজেকে সেদিন নিয়ন্ত্রন করেছিলাম আমি নিজেই জানি না ! বাসায় এসে কেবল একটা কথাই মনে হল যে আমি শিবলুকে খুন করবো ! যে কোন মূল্যেই ওকে খুন করবো !
আজহার সাহেব একটু অবাক চোখে আমার দিকে তাকালো !
আমি বললাম
-কি অবাক হচ্ছেন ?
-একটু কি হওয়ার কথা না ?
-জি ! অবশ্যই অবাক হওয়ার কথা ! ছা পোষা টাইপের একজন মানুষ হঠাৎ করেই একজন কে কিভাবে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিতে পারে ! আমি নিজেই খুব অবাক হয়ে গেছিলাম নিজের উপর !
-হুম ! বোঝা যাচ্ছে নীলাকে আপনি অনেক ভালবাসেন ! তাই না ?
-হয়তো !
-------
নীলা আমার সাথে সকল প্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে দিল ! আমাকে ফোন করে না । আমি ফোন করলে ফোন ধরে না । মেসেজ পাঠালে উত্তর দেয় না । আমি কিছু দিন বেশ অস্থিরতায় কাটাতে থাকি । এমনি একদিন নীলার বাবা আমাকে ডেকে পাঠায় ! ওদের বাসায় গিয়ে হাজির হলে তিনি আমাকে ডেকে জানতে চান আমি নীলা যা বলেছি তা সত্য কি না ?
তার মানে আমি সত্যি সত্যি নীলাকে বিয়ে করতে চাই কি না ?
জানি না উনি কিভাবে জেনেছেন তবে মনে হচ্ছে নীলা নিজেই বলেছে । আর তো কোন ভাবে জানার কথা না !
আমি বললাম
-জি !
-তোমার ফ্যামিলি ?
-আমার বাসায় কোন সমস্যা নাই । মা আছে । উনি গ্রামে থাকেন । আমি বিয়ে করেছি জেনে উনি খুশিই হবেন ! আর নীলাকে তো অপছন্দ করার মত কোন কোন কারন নেই !
-কিন্তু ..।
নীলার বাবা কথাটা বলতে গিয়ে থেমে গেল ! আমি বললাম
-আঙ্কেল ! এটা কোন সমস্যা না ! আপনি এটা নিয়ে কোন চিন্তা করবেন না !
দেখতে দেখতে নীলার সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেল ! আমার আসলে ঐ দিন মনেই হয় নি যে আমাদের বাসায় কোন বিয়ে হচ্ছে । এমন কি বাসর রাতেও নীলা ছিল একদম চুপ ! আমি ঘরে ঢুকে দেখি ও পাশে ফিরে শুয়ে আছে । একবার মনে হল ওকে ডাকি ! কিন্তু ওকে ডাকি নি ! আমি জানি ও জেগেই ছিল ! কেবল একটা চাদর টেনে দিলাম ওর গায়ের উপর !
ছোট বেলা থেকেই অনেক কিছুই ভেবে রেখেছিলাম এই রাত টার জন্য কিন্তু তার কিছু মিল খুজে পেলাম না !
সকাল বেলা উঠে সব আবার স্বভাবিক ! কেবল নীলা আমার বাসায় থাকছে এটাই নতুন ! আমাকে সেই আগের মত তুই বলেই ডাকছে । আমি ওর সাথে টুকটাক কথা বলার চেষ্টা করছি । কিন্তু আমরা যে স্বামী স্ত্রী এটা ঠিক মনে হচ্ছে না !
-------
উকু মিয়ার দোকানের সামনেই একটা বাসা ভাড়া করলাম ! পাঁচতলা যে সাদা বিল্ডিংটা ! ঐ টা ! একদম উপর তলায় ! চিলে কোঠাও বলতে পারেন ! কারনে একটা পাশ ফাকা ছিল ! অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নিলাম মাস খানেকের জন্য ! বাসা থেকে ১০ টার দিকে বের হই ! সোজা চলে আসি এখানে ! সারা দিন লক্ষ্য রাখি ! শিবলুদের আড্ডা খানায় কে কে আসে ! কে যা য় ! আর ধীরে ধীরে নিজের কর্ম পন্থা ঠিক করি ! আস্তে আস্তে প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র এনে জোগার করতে শুরু করি ! এক বারে আনলে মানুষ জন সন্দেহের চোখে দেখতে পারে তাই ! আস্তে আস্তে আনতে থাকি !
একবারে কথা গুলো বলেই আমি খানিকক্ষন চুপ করে থাকি !
-তারপর ?
-তারপর একদিন মানে মাস খানেক আগে সুযোগটা আসে !
-কি রকম !
-কিছুদিন এলাকায় কিছু হিন্দু বাড়িতে হামলা হয়েছিল মনে আছে ?
-জি ! এই তো ত্রিশ পয়ত্রিশ দিন আগে !
-সেটার প্রধান আসামী ছিল শিবলুর ও তার দলের লোক গুলো ! ওরা সবাই তখন গা ঢাকা দেয় ! শিবলুও দেয় । কিন্তু দুতিনদিন পরেই ও চলে আছে ঐ আড্ডায় ! আমি ঐ দিন ছাদেই দাড়িয়ে ছিলাম ! দেখলাম টলতে টলতে শিবলু আড্ডা খানায় ঢুকছে ।
বাইরে প্রচুর ঠান্ডা ছিল । যত দুর মনে পড়ে সেদিন এলাকার তাপমাত্রা ছিল সব থেকে নিচে । আর রাত তখন প্রায় ১০ টা ! এতো রাতে পুরো রাস্তা এমনকি পুরা এলাকায় কেউ ছিল না ! আর আড্ডা খানায় শিপলু ছাড়া আর কাউকে ঢুকতেও দেখি নি ! আমার কাছে মনে হল এই সুযোগ ! তবুও আম খুব বেশি তাড়াহুড়া করলাম না ! নীলাকে ফোন করে বললাম আজকে বাসায় আসবো না ! তারপর আরো দুই ঘন্টা অপেক্ষা করলাম !
১২ বাজার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে নিচে নেমে এলাম । যখন আড্ডা খানার সমানে এবং পুরো এলাকা টা মনে হচ্ছিল যেন একটা মৃত্যুপুরি ! দুরে কেবল একটা কুকুর দেখলাম দাড়িয়ে আছে !
আমি দোকানের পিছনে ঢুকে পড়লাম ! সম্ভাবনা ছিল আরও একজন লোক থাকলেও থাকতেও থাকতে পারে কীন্তু ভিতরে ঢুকে দেখি শিবলু ছাড়া আর কেউ নেই ! শিবলু উপুর হয়ে পড়ে আছে । মদ খেয়ে এমন মাতাল হয়ে আছে যে শীত টাও ঠিক মত অনুভব করতে পারছে না !
আমি আবার থামলাম !
তাকিয়ে দেখি ইন্সেপেক্টর আজহার আমার দিকে কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে আছে !
------
আসলে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের ভিতর মনে হয় আলাদা কিছু একটা আছে । যতই এক জন দুরে থাকার চেষ্টা করুক কিংবা নিজেকে গুটিয়ে রাখার চেষ্টা করুক না কেন আস্তে আস্তে প্রিয় মানুষটার উপর এক ধরের মায়া জন্মে যায় । ভালবাসা জন্মে ! বিয়ের মাস খানেক যেতে না যেতেই আমি বেশ ভাল করেই বুঝতে পারছিলাম আস্তে আস্তে নীলার ভিতর স্ত্রী সুলোভ আচরন ধরা পরছিল ! দিন গুলো খারাপ যাচ্ছিল না ! বলতে গেলে আমরা সুখেই ছিলাম । অতীতের সব কিছু ভুলে নতুন কোন পথে আমরা হাটছিলাম !
কিন্তু একটু চলতে গিয়েই হোঁচট খেতে হল !
সেদিনের কথাটা স্পষ্ট মনে আছে !
আমি আর নীলা বিকেল বেলা নিউমার্কেটে যাবো বলে বের হয়েছি ! রেল গেইট ক্রসিং এ আটকা পরেছি তখন নীলা আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল
-চল এখান থেকে !
আমি খানকিটা অবাক হয়ে বললাম
-কেন যাবি না ?
-না বাসায় চল ।
-কি হল ?
-তুই যাবি ! তুই যা ! আমি যাবো না ! এই বলে নীলা রিক্সা থেকে নেমে পড়তে যাচ্ছিল ।
আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না ! কি হল হঠাৎ যে ওর মুড অফ হয়ে গেল !
------
-তারপর কি করলেন !
-খুব শিম্পল কাজ ! ব্যাগে দড়ি ছিল ! দড়ি দিয়ে ওর হাত পা বেঁধে ফেললাম শক্ত করে ! তারপর ও মুখে একটা মেডিক্যাল টেপ পেঁচিয়ে দিলাম যাতে করে চিৎকার করতে না পারে !
আজহার সাহেব আমার দিকে চুপ করে তাকিয়ে ছিল !
-যখন ভুজলাম ওর পক্ষে আর ন চিৎকার কিংবা পালানো সম্ভব না তখন ব্যাগ খেকে ভোজালীটা বের করে সোজা ওর পেটের ভিতর ঢুকিয়ে দিলাম ! তিব্র একটা চিৎকার শিবলুর মুখ থেকে বের হতে চাইলো কিন্তু সেদিক দিয়ে কিছুই বের হল না ! যতক্ষন না সে মরে ততক্ষন ভোজালীটা ওর পেটের ভিতর বাহির করতেই থাকলাম ! তাজা রক্তে মাখা মাখি অবস্থা আমার এর আগে কোন দিন আমি এতো রক্ত দেখি নি ! মানুষের রক্ত !
এই টুকু বলেই আমি থামলাম !
দেখলাম আজহার সাহেব আমার দিকে পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিল ! আমি একে বারে খেয়ে ফেললাম পানি টুকু !
-প্রচুর রক্ত ক্ষন হল ! শিপলু আধা ঘন্টার ভিতরেই নিস্তেজ হয়ে গেল ! এর পর আসলে খেলা ! হাতে করে একটা কেরোসিনের বড় বোতল নিয়ে গিয়েছিলাম ! সারা জায়গার ছড়িয়ে দিলাম সেগুলো ! শিপলুর দেহে তখনও প্রান টিকে আছে । মূহুর্তের ভিতরেই ও বুঝে গেল আমি কি করতে যাচ্ছি ! ওর চোখে বাঁচার আকুতি দেখতে পেলাম !
ও হয় তো বুঝতে পারছিল না আমি কে আর কেনই বা ওকে এমন নৃশংস ভাবে হত্যা করছি !
মুখের ভিতর এক দলা থুতু শিবলুর দিকে ছিটিয়ে ছিলাম । তারপর বললাম "সেদিন করুনা করেছিলি ? আমার নীলা যখন তোর কাছে তার সম্ভ্রমের জন্য হাত জোর করেছিল সেদিন ওকে ছেড়ে দিয়েছিলি ?"
আমি আর কোন কথা বলি নি ! দোকানের পেছন থেকে বের হয়ে এসেছি । আসার আগে দিয়াশলাইয়ের একটা কাঠি জ্বালিয়ে দিয়ে এসেছি !
আমি যখন আবার ছাদের ফিরে গেলাম তখন পুরো দোকান টা জ্বলতে শুরু করে দিয়েছে ! আমি সেদিকে শান্তির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম !
এই টুকু বলে আমি চুপ করে রইলাম !
এবার ইনেস্পেক্টের কাজ !
-------
-তুই শিবলুকে মেরেছিস তাই না ?
নীলার কাছে লুকালাম না কথা টা ! শিবলুর পুড়ে মরার ঘটনাটা বেশ আলোড়ন তুলল ! তবে পুলিশ খুব বেশি কিনারা করতে পারলো না ! অনেকে ধারনা হল কদিন আগে শিবলু আর ওর গ্যাং যেমন হিন্দুদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল সেই প্রতিশোধই হয়তো কেউ নিয়েছ !
অবশ্য পুলিশই খুব বেশি গা করে নি ! সমাজ থেকে একটা সন্ত্রাসী বিদায় হয়েছে । ভালই হয়েছে !
নীলা বলল
-কেন ?
-কেন ? তুই বলছিস কেন ? যে মানুষটার জন্য তোর এমন সুন্দর জীবনটা এভাবে ধ্বংস করে দিল তাকে এবানে ছেড়ে দিব ! তোর মনে আছে সেদিন রেল গেটের কাছে তুমি কেমন করেছিলি ? আমি প্রথমে বুঝতে পারি নি কিন্তু একটু পরে ঠিক বুঝতে পারি তুই শিবলুকে দেখে ওমন করছিলি !
নীলা চুপ করে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে ! আমি বললাম
-আমি জানতাম তুই যতবার শিবলুকে তোর চোখের সামনে দেখবে ততবার তোর ঐ ভয়াল স্মৃতির কথা মনে পরবে ! এটা আমি কিছুতেই মেনে নিত পারবো না ! কিছুতেই না ! যাকে প্রানের চেয়েও বেশি ভালবাসি তার এমন জীবন আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারি নি ! পারবো না !
নীলার চোখে পান দেখতে পেলাম ! তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে নীলা আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমো খেল ! গাঢ় করে এই প্রথম নীলার চুম্বনের অনুভুতি পেলাম সেদিন !
-----
আজহার সাহেব আরও বেশ কিছুক্ষন চুপ করে বসে রইলো ! আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম আমার আসন্ন পরিনতির জন্য ! আসার সময় নীলাকে বলে আসি যে আমি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পন করতে যাচ্ছি ! জানলে ও কি বলত কে জানে ?
হঠাৎ করেই নীলাকে আরেকবার দেখতে ইচ্ছা হল । আচ্ছা যদি ইনেস্পেক্টর কে বলি আমাকে কি আরেকবার নীলার সাথে দেখা করতে যেতে দিবে না ?
কেন দিবে না ? আমি তো আর পালিয়ে যাচ্ছি না ! দেখি বলে কি বলে !
আজহার সাহবে চুপ করে থেকে বলল
-বাসায় যান সুমন সাহেব ! আপনার জন্য নীলা নিশ্চই অপেক্ষা করছে !
আমি খানিকটা অবাক হয়ে বললাম
-বাসায় যাবো ? আমাকে এরেস্ট করবেন না ?
-এরেস্ট ? কেন ?
-আমি....।
আজহার সাহেব হাসলো !
-মানুষ মারলে গ্রেফতার করতাম ! কুকুর মারলে জেল হয় না !
আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না কি করবো ?
আজহার সাহেবের কথা ঠিক মাথায় ঢুকছিল না !
সত্যি কি উনি আমাকে চলে যেতে বলছেন ?
-সত্যি চলে যাবো !
-জি ! যাবেন ! শিবলু হত্যা মামলার ফাইল বন্ধ হয়ে গেছে ! আমাদের এমনিতেও কাজের অভাব নেই । দেশের অবস্থা এমনিতেই ভাল না ! আমাদের কাজের অভাব নেই ! বন্ধ ফাইল কেন আবার খুলবো বলেন ! বাসায় যান ! আচ্ছা দাড়ান ! আপনাকে বাসায় পৌছে দেওয়া ব্যবস্থা করি !
আজহার সাহেব সামনের বেলটা আবার বাজালেন !