জনৈক ব্লগার এবং ফেসবুক একটিভিষ্ট সকালে ঘুমায়ে ছিলেন ! সারারাত নেটে বিরাট ব্যস্ত ছিলেন ! এখন তার ঘুম প্রয়োজন !
এমন সময় ফোন বেজে উঠলো ! তিনি বিরক্ত হলেন । ফোন রিসিভ করে বিরক্ত গলায় বললেন
-কোন হালারে ?
-তোর বাপ । এখনও ঘুমাইতাছোস ?
ফেসবুকার লাফ দিয়ে উঠলেন বিছানা থেকে ।
না । ফোনের ওপাশে তার আসল পিতা নয় । তার রাজনৈতিক পিতা । যাকে তিনি নিজের আসল পিতা থেকেও উচ্চ স্থানে বসিয়েছেন ।
গলার কন্ঠস্বর খানিকটা মোলায়েম করে ফেসবুকার বললেন
-জি । নেতা বলেন ।
-এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমাস কেন ?
-নেতা । জানেনই তো সারাতার অনলাইনে থাকতে হয় । বিরোধীদের কে পুন্দাইতে হয় ।
-হুম । যাক শুন । রামপাল নিয়ে ইদানিং খুন ঝামেলা হচ্ছে । এক কাজ কর আজকে রাতে একটা টক শোর ব্যবস্থা করেছি টিভিতে । তুই যাবি ।
-ওকে নেতা ।
-আর ভাল করে বুঝাইবি সবাইরে ।
-ওকে নেতা । কিন্তু সারা রাত তো এইকামই করি ।
-হুম । করোস ভাল কথা । কিন্তু ফেসবুক আর কজন দেখে । দেশের মানুষকেও জিনিসটা বোঝাতে হবে ।
-ওকে নেতা । আপনে কোন চিন্তা করবেন না । সবাইকে এমন বুঝাবো সবাই তখন সুন্দরবনের মাঝকখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসানোর জন্য লংমার্চ করতে শুরু করবে !
সাদা শার্ট পরা উপস্থাপক কে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলল -দর্শকবৃন্দ, আজকে আমরা এসেছি আপনাদের মাঝে একটি গুরুত্বপর্ন বিষয় নিয়ে । আমাদের আজকের বিষয় রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র আমাদের সুন্দরবনের কোন ক্ষতি করবে কি না এই নিয়ে বিশাল আলোচনা ! এই বিষয় নিয়ে আমাদের মাঝে কথা বলার জন্য এসেছেন বিশিষ্ট ব্লগার এবং ফেসবুক এক্টিভিষ্ট ! নাম বললাম না ! আপনারা এমনিতেই চেহারা দেখেই চিনবেন !
ফেসবুকার বিগলিত হাসি দিলেন !
ভীড়ের ভেতর একজন বলে উঠলো
-উনাকে তো দেখতে আমাদের গ্রামের সাবডাল চুরার মত মনে হইতাছে ! নামটা যদি একটু বলতেন !
উপস্থাপক সেই দর্শকের দিকে কঠিন চোখে তাকালেন ! প্রশ্নকারী চুপসে গেল !
উপস্থাপক বললেন
-আপনার আপনাদের প্রশ্ন করতে পারেন আমাদের এই বিশিষ্ট বলগার কে ! সরি ব্লগার এবং ফেসবুক একটিভিষ্ট কে !
দর্শকদের মধ্যে একজন উঠে দাড়ালেন ! আমাদের ফেসবুকার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলেন
-আমরা জানি রামপালের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি হবে দুই দেশের সমান অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে। এই প্রকল্পের অর্থায়ন করবে ১৫% পি ডি বি, ১৫% ভারতীয় পক্ষ আর ৭০% ঋণ নেয়া হবে। যে নীট লাভ হবে সেটা ভাগ করা হবে ৫০% হারে। ১৫% দিয়ে ভারত ৫০% লাভ পাবে ? এটা কেমন হল ? একটু যদি বলতেন !
ফেসবুকার একটু হেসে বলল
-আরে এটা বন্ধুত্য বলে । দেখুন ভারত আমাদের পাশের রাষ্ট্র । আমাদের সুখে দুখে এগিয়ে আসে । কদিনআগে আমাদের পিয়াজ ছিল না দেখেন না কত পিয়াজ দিতাছে । মানুষ বন্ধুর জন্য কি না করে ! আপনারা "আরিয়া" মুভি দেখেন নি ?
দর্শকের মুখে একটু প্রশ্ন বোধক চিহ্ন ফুটে উঠলো !
-কোন মুভি ?
-আরে ইন্ডিয়ান মুভি আরিয়া !
-ও ! আচ্ছা !
-আরে ঐ মুভিতে নায়ক বন্ধুত্যের জন্য নিজের গার্লফ্রেন্ড কে ছেড়ে দেয় !
-আচ্ছা তাহলে আপনার কাছে গার্লফ্রেন্ড আর দেশ এক হল ?
ফেসবুকার কোন কথা বলেন না !
অবস্থা বেগতিক দেখে সাদা শার্ট পরা উপস্থাপক কথা বলে উঠলেন !
উপস্থাপক বললেন
-আচ্ছা আমরা অন্য দর্শকের কাছে যাচ্ছি ! এই লাল জামা পরা ! আপনি বলেন !
লাল শার্ট পরা আরেক লোক উঠে দাড়ালো !
-আপনারা বলছেন রামপালের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সুন্দরবন থেকে ২১ কিলো মিটার দুরে ! কিন্তু প্রকৃত দুরুত্ব আরো কম ! ৯ থেকে ১৪ কিলোমিটার ! এখানে আপনাদের মতামত কি !
ফেসবুকার আবারও মাইক তুলে নিলেন ! বললেন
-আসলে দুইটাই ঠিক আছে ! আগে ১৪ কিলোমিটারই ছিল ! তারপর আমরা সেইটা ২১ কিলোমিটারে নিয়ে গেছি !
-কিভাবে যদি বলতেন ?
-দেখুন জানেনই তো আমাদের একটা ছাত্রসংগঠন আছে ! এরা পারে না আমন কোন কাজ নাই । আমরা যে দেখলাম প্রস্তাবিত জমিটা নিরাপদ দুরুত্বে নাই আমরা আর দেরী না করে আমাদের সেই ছাত্রসংগঠনকে দায়িত্ব দিয়ে দিলাম ঐ টা কে দুরে নিয়ে আসা জন্য । ওরা কি করলে রামপালের সেই জায়গায় গিয়ে জমি ধরে ঠেলতে শুরু করলো ! আমি আগেই বলেছি তারা পারে না এমন কোন কাজ নাই ! ঠেলতে ঠেলতে তারা ২১ কিলোমিটার দুরে নিয়ে এসেছে !
বাহ ! বাহ !
চারিদিকে হাত তালি শোনা গেল !
এবার একজন মেয়ে দর্শক উঠে দাড়ালো মাইক নিয়ে !
-বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১০ ব্যাসার্ধের মধ্যে বছরে ৬২,৩৫৩ টন এবং প্রকল্প এলাকায় ১২৮৫ টন ধান উৎপাদিত হত এবং ১,৪০,৪৬১ টন অন্যান্য শস্য উৎপাদিত হত ! এগুলোর কি হবে একবার কি ভেবে দেখেছেন ?
মাইক উঠে এল আমাদের বিশিষ্ট ফেসবুকারের হাতে ! তিনি আবারও হাসি মুখে বলল
-দেখুন আমরা কি তৈরি করছি ! বিদ্যুৎ । এই বিদ্যুৎ যতই বাড়বে আমার কলকারখানায় উৎপাদন বাড়বে ! আমরা এই বর্ধিত বিদ্যুৎ দিয়ে কলকারখানায় কৃত্রিম ভাবে ধান তৈরি করবো !
-কৃত্রিম ভাবে !!!
-অবশ্যই ! আমাদের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কি বলেছে শুনেন নাই ? কৃত্রিম ভাবে সুন্দরবন তৈরি করা দিবে ! তাহলে কৃত্রিম ভাবে ধান কেন তৈরি করা যাবে না ? আমার তো মনে হয় কৃত্রিম ভাবে পাশুপাখি তৈরি করা যাবে ! নদীর মাছ তৈরি করবো ! আমাদের বাংলাদেশ বিজ্ঞানীলীগ এরই ভিতর কাজ শুরু করে দিয়েছে !
এবার কালো পাঞ্জাবী পরা এক কলেজ ছাত্র উঠে দাড়ালো !
-কয়লাভিত্তিক প্রকল্পে প্রতি ৫০০মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রায় ২.২ বিলিয়ন গ্যালন পানির প্রয়োজন হয়। রামপালের প্রকল্পের ক্ষেত্রে তা নিঃসন্দেহে মেটানো হবে পশুর নদী থেকে। আপনার কি মনে হয় না এর ফলে নদীর উপর একটা বিরূপ প্রভাব ফেলবে ! এতে আপনার মতামত কি ?
আমাদের ফেসবুকার
-ভাল প্রশ্ন ! আমরাও এটা নিয়ে অনেক ভেবে দেখেছি ! শেষে আমরা একটা পথ বের করেছি ! আমরা ঠিক করেছি আমরা পানি নদী থেকে নিবো না !
-তাহলে ?
-আমরা ঠিক করেছি আমাদের পানি গুমি আমরা প্রতিদিন বালতি বালতি করে নিয়ে প্রজেক্টে নিয়ে যাবো !
-বালতিতে করে ?
-হুম ! আমি তো আগেই বলেছি আমাদের একটা ছাত্র সংগঠন আছে । তারা পারে না এমন কোন কাজ নাই । কিন্তু তারা কোন কাজ করতে চায় না ! এবার তাদের এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে । তারা বালতির পর বালতি পানি নিয়ে রামপালের দিকে দৌড়াবে প্রতিদিন !
-আর পশুর নদী থেকে প্রতি ঘন্টায় ৯১৫০ ঘনমিটার করে দুষিত পানি প্রত্যাহার করা হবে। এইটার কি হবে ?
-আরে না না ! কে বলল ! কোন পানি নদীতে পরবে না ! যারা বালতি করে পানি নিয়ে যাবে তারাই প্লান্টের নিস্কাশন মুখে আবার সেই বালতি নিয়ে দাড়াবে লাইন ধরে ! সেই পানি বালতিতে ভরে আমার রওনা দিবে ! সো ! কোন দূষিত পানি পড়বে না !
আবারও হাত তালির আওয়াজ পাওয়া গেল !
এবার নীল শাড়ি পরা এক মহিলা উঠে দাড়ালো !
-ইআইএ রিপোর্ট অনুসারে ২৭৫ মিটার উচু চিমনী থেকে নির্গত গ্যাসীয় বর্জ্যরে তাপমাত্রা হবে ১২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস ফলে আশেপাশের তাপমাত্রা বেড়ে যাবে ! এটার ফলে কি হবে ?
ফেসবুকার মাইক নিয়ে বলল
-আপনার প্রশ্নটি আপনার চেহারার মতই সুন্দর । যাই হোক ! এটার সমাধান তো সব থেকে সহজ ! আমরা ঠিক করেছে পুরো বনের চারিদিকে অনেকগুলো এসি লাগাবো ! সেই এসি চলবে বিদ্যুতে ! আমাদের তো বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছেই ! তাই না ! এসির ঠান্ডা বাতাসে চারিদিক ঠান্ডা হয়ে যাবে ! সো তাপমাত্রা আর বাড়বে না ! ভাল না ?
আবারও চারিদিকে হাততালো শোনা গেল !
আকাশী শার্ট পরা আরেক ভদ্রলোক উঠে দাড়ালো !
-১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৪২ টন বিষাক্ত সালফার ডাই-অক্সাইডও ৮৫ টন বিষাক্ত নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড নির্গত হবে। এতে তো বাতাস বিশাক্ত হয়ে পড়বে !
প্রশ্ন শুনে আমাদের ফেসবুকার হাসলো ! বলল
-আপনারা দেখি নতুন মুভিটুভি কিছু দেখেন না ! আসলে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে আপনাদের কোন ধারনাই নাই দেখছি ! শুনেন অনেক সায়েন্সফিকশন মুভিতে দেখছেন না একটা বাতাস আটকানোর জন্য একটা অদৃশ্য দেওয়াল তৈরি করা হয় ! আমরাও ঠিক সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে যাচ্ছি ! আমাদের পুরো প্লান্ট এলাকা জুড়ে একটা অদৃশ্য দেওয়াল তৈরি করবো যেটা ভেদ করে কোন বিষাক্ত পদার্থ বাইরে যেতে পারবে না !
-আর বনে ভিতর দিলে কাঁচা মাল পরিবহনের বিষয়টা !
-আরে হ্যা ! আপনাদের তো বলাই হয় নি ! আমাদের বাংলাদেশ বিজ্ঞানীলীগ অন্য গ্যালাক্সীর এলিয়েন দের সাথে যুগাযুগ করতে পেরেছে । তাদের সাথে আমাদের চুক্তি হয়েছে তারা আমাদের কে দুইটা স্পেস শীপ দিবে ! যে গুলো বিনা আওয়াজে চলতে পারে খুব দ্রুত ! আমরা স্পেস শীপ ব্যবহার করবো কাঁচামাল পরিবহনের জন্য !
আবারও প্রচুর হাত তালি শোনা গেল ! এই হাত তালি যেন আর থামেই না !
আমরা আর কি করবো দেন বসে বসে হাত তালি ?
আমি এতোক্ষন কাশেম টিভিতে এই টকশো দেখছিলাম ! আমিও হাত তালি দিতে শুরু করলাম !
হাত তালি দিতে দিতেই ঘুম ভেঙ্গে গেল !
হু কেয়ারস ম্যান!! আগে বিদ্যুৎ চাই !!