এই রকম প্রশ্ন সাধারনত কারো মুখ থেকে শোন যায় না । অপরিচিত মানুষের কাছ থেকে তো নয়ই । নতুন বন্ধু হলে কিংবা পরিচিত কারো সাথে আড্ডা মারার সময় এমন প্রশ্ন আসতে পারে । কিন্তু একেবারে অপরিচিত কেউ এসে যদি বলে ভাই আপনার কি গার্লফ্রেন্ড আছে তাহলে ব্যপারটা হজম করা একটু কষ্টকর !
আমারও প্রথমে হজম করতে একটু কষ্টই হল ! আমি বসে আসি রমনা পার্কের বা পাশের গেট টার কাছের একটা বেঞ্চে ! টিউশনীতে যাবো তার আগে একটু হাওয়া খাচ্ছি । এমন সময় এই ভদ্রলোক এসে হাজির ! ঠিক ভদ্রলোক না ! ছোকড়া বললেই মনেহয় ভাল ! আমার থেকে দুএক বছর ছোটই হবে মনে হয় ! আমি যেহেতু এখনও ছোকড়া থেকে লোক হতে পারি নি এই ছেলেটাকে লোক বলাটা ঠিক হবে না ।
আমার পাশে বসতে বসতেই ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো ! প্রতি উত্তরে আমি একটু হাসলাম ! একেবারে মুখ গুরিয়ে নেওয়াটা একটু অশোভন দেখায় !
এই সময় ছেলেটা আমাকে এই প্রশ্নটা করলো !
-ভাই আপনার কি গার্লফ্রেন্ড আছে ?
আমি একটু অবাক হলাম ছেলেটার প্রশ্নে ! আরে এমন কথা কেউ কাউকে জিজ্ঞেস করে নাকি ?
কিন্তু ছেলেটার চেহারা দেখে মনে হল সে সব কিচু স্বাভাবিক ভাবেই নিছে । তার মানে এই প্রশ্ন সে আরো অনেকের কাছেই করেছে !
আমি একটু অস্বস্থিতে পড়লাম ।
কি জবাব দেব?
বলে দেই যে নাই !
কিন্তু এখানে আবার দুইটা সমস্যা আছে । প্রথমটা হল সেটা মিথ্যা বলা হবে । আমার গার্লফ্রেন্ড আছে ! আর দ্বিতীয় কারনটা হল এখন কার যুগে যদি কেউ শুনে যে গার্লফ্রেন্ড নাই তাও আবার ঢাকার মত জায়গায় থেকে তাহলে তো তাকে গোনার ভিতরেই ধরে না কেউ । এই ছেলেটাও হয়তো শুনে আমাকে সেই দৃষ্টিতে দেখবে !
কি দরকার !
আমি বললাম
-কেন ? কেন জানতে চাইছেন ?
-আপনার একটা উপকার করতাম ?
-হুম ! উপকার ! আছে ?
-জি আছে ?
-আপনার থেকে ছোট নাকি আপনার সমবয়সী ! মানে আপনার ক্লাসে পড়ে নাকি নিচে ?
আমি আবার একটু ইতস্ত করলাম ! এই খানে ক বলবো ? আসলে নিশি মানে আমার গার্লফ্রেন্ড আমার থেকে একটু উপরের ক্লাসে পড়ে । আমরা সমবয়সী হলেও আমি মাঝখানে একটা বছর ড্রপ দিয়েছিলাম । সেই খানেই এই বিপত্তি !
আমি বললাম
-আমার সাথেই পড়ে । কেন ?
-বেচে গেছেন !
-কেন ? এই কথা কেন বলছেন ?
-আরে ভাই বলবেন না । পিচ্চি মেয়ে গুলো এমন জ্বালাতন করে ! মাঝে মাঝে মনে হয় সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে চলে যাই যে দিকে চোখ যায় !
-কি রকম !
ছেলেটা আমার কথার কোন জবাব দিল না কিছুক্ষন । কেবল উদাস হয়ে চেয়ে রইলো সামনের দিকে ! আমি কিছু জানে চাইবো কি না বুঝতে পারতাছি না !
কিছক্ষন পরে ছেলেটাই আমাকে বলল
-জানেন ভাই ট্রিপিক্যাল মেয়েদের সাথে রিলেশন রাখাটা বড়ই ঝামেলার কাজ !
-ঝামেলা ?
-না । ঠিক ঝামেলা না । যন্ত্রনার কাজ ! ভালবাসার মানুষ থাকাটা বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার কিন্তু যদি আপনার ভালবাসার মানুষটি যদি ট্রিপিক্যাল হয় তাহলে আর রক্ষা নাই ?
-আপনার টা কি ট্রিপিক্যাল ?
ছেলেটা যেন আমার এই প্রশ্নের জন্যই অপেক্ষা করতেছিল । একেবারে চিৎকার করে উঠল ।
-ট্রিপিক্যাল মানে ? যদি এমন কোন প্রতিযোগিতা হয় যে কার গার্লফ্রেন্ড বেশি ট্রিপিক্যাল তাহলে জাবিন সেই প্রতিযোগিতায় গোল্ড মেডেল পাবে ! গ্যারন্টি !
-জাবিন ?
-আমার গার্লফ্রেন্ডের নাম !
-আচ্ছা !
-আপনার টাও আপনাকে জ্বালাতন করে ?
-নাহ খুব একটা করে না !
ছেলেটার মুখটা একটু যেন হতাশ হল ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি তো আসলেই ভাগ্যবান ভাই ! আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে ! তার উপর আপনাকে একটুও জ্বালাতন করে না ! এইটা তো ভাল ।
আমি মনে মনে হাসার চেষ্টা করলাম ! মনে মনে ভাবলাম এই বেচারার থেকে মনে হয় আমার অবস্থা ভাল ! বেচারার অবস্থা একটু জানতে ইচ্ছা করলো ! আমি বললাম
-কথা যখন শুরু হয়েই গেছে আসুন পরিচিত হওয়া যাক ! আমি তানভীর ! আপনি ?
এই বলে আমি ছেলেটার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম ।
ছেলেটা আমার হাত ধরে বলল
-আমি জুয়েল !
আমি খানিকটা কৌতুহল নিয়ে বললাম
-জাবিন মানে আপনার গার্লফ্রেন্ড যে ট্রিপিক্যাল এটা কিভাবে বুঝলেন ? মানে আমি বলতে কি কি কাজ করলে গার্লফ্রেন্ডের কে ট্রিপিক্যাল বলা যাবে !
জুয়েল সাহেব একটু যেন চুপ করে রইলো কিছুক্ষন ! তারপর বলল
-ট্রিপিক্যাল মেয়েদের সব থেকে বড় সমস্যা হল তারা কথায় কথায় আপনার সাথে ঝগড়া বাঁধাবে ! বড় সিলি পয়েন্ট ধরবে । তারপর এমন একটা সিচুয়েশন তৈরি করবে যেখানে আপনি তার উপর বিরক্ত হতে বাধ্য হবেন ! কিন্তু আপনি বিরক্ত হতে পারবেন না । বিরক্ত হলেই আপনি হয়ে যাবেন একজন খারাপ বয়ফ্রেন্ড । মোট কথা সে যেমন টি বলবে আপনাকে ঠিক সেমন ভাবেই চলতে হবে ।
আমি বললাম
-একটা উদাহরন দেন তো ভাই । আমার মাথায় ঠিক মত ধরছে না !
-আচ্ছা আমি আর এক জাবিনের এক দিনের কথা আপনাকে বলি । তাহলেই আপনি বুঝতে পারবেন । একদিন কি কথা নিয়ে আমি জাবিন কে বললাম জানো আজকাল না আয়নায় নিজের চেহারা দেখলে কেমন জানি রাগ হয় । আমার কথা শুনে জাবিন কিছুক্ষন চুপ করে রইলো ! তারপর বলল
-আমাকে দেখলে তোমার এখন রাগ হয় তাই না ?
আমি জাবিনের কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লাম ! আমি বলতে চেষ্টা করলাম
-আরে আমি তো তোমার কথা বলি নাই ! আমি বলেছি যে আয়নায় যখন নিজের চেহারা দেখি তখন আমার রাগ হয় !
-ঐ তো একই কথা ! তুমি মানেই তো আমি ! তোমাকে দেখে রাগ হওয়া মানেই তো আমাকে দেখে রাগ হওয়া !
আম এবার সত্যি সত্যি অবাক হলাম ! মনে মনে বললাম এই মেয়ের সমস্যা কি ? এই মেয়ে আমার সাথে গায়ে পরে ঝগরা বাধাতে চাইছে কেন ?
আমি তবুও নিজেকে শান্ত রেখে বলার চেষ্টা করলাম
-দেখো আমি আসলে ঐ কথা বলতে চাই নি !
জাবিন গলা দিয়ে যেন বোমা ফাটলো !
-আমি বুঝি না তোমার চালাকি ? আমাকে সরাসরি কিছু বলতে পারো না তাই ঘুরিয়ে বল ! আমি বুঝি কিছু বুঝি না ! সেদিন আমি তোমাকে বলেছিলাম না যে তোমার আর আমার মাঝে কোন পার্থক্য নাই ! তুমি আর আমি একই ! তুমি সেই কথাটা মনে রেখেছ ! আর আজকে আমাকে এই ভাবে আক্রমন করলে !
ভাই সাহেব আর বলবেন না ! এই রকম প্রত্যেকটা কথায় আমার কথা ধরে ! একটু উনিশ বিশ হলে আর রক্ষা নাই ! প্যানপ্যানি শুরু হয়ে যায় ! জীবন একেবারে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে !
আমি খানিকটা দীর্ঘশ্বাস লুকালাম !
জুয়েল বলল
-আপনার টা এরকম না তো ?
-না না ! আামর টা অনেক আন্ডারস্টান্ডিং !
জুয়েল আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল দেখলামওর ফোন বেজে উঠল ! মোবাইলের স্ক্রীনটা চোখের সামনে নিতেই জুয়েলর চোখে হতাশা দেখা দিল ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আচ্ছা ভাই আমি যাই ! আপনার সাথে কথা বলতে পেরে ভাল লাগলো ! জুয়েল উঠে গেল !
আরে চলে গেল যে !
জুয়েল যেন আরো কিছু বলতে চেয়েছিল ! বলেছিল না যে আমার উপকার করবে ?
কি বিষয়ে উপকারের কথা বলেছিল ?
একবার ভাবলাম ডাক দেই কিন্তু দিলাম না ।
আমি বসে বসে জুয়েলের চলে যাওয়া দেখলাম । জুয়েল যখন চোখের আড়ালে চলে গেল তখনও বসেই রইলাম ওর চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে !
নিজেকে জুয়েলের সাথে তুলনা দেওয়ার চেষ্টা করলাম ! মনে করার চেষ্টা করলাম আমার নিশি আমার সাথে এমন করে নাকি !!
কিছু মনে পড়লো আর কিছুটা আমি মনে করতে চাইলাম না !
দুঃসময়ের কথা না মনে করাই ভাল !
ফেবু লিংক
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:২৭