-এ্যাই শোন , কাল তুমি আমার কাছে একটা চিঠি লিখবা !
আমি অবাক হলাম । বললাম
-এই মোবাইলের যুগেও কি কেউ চিঠি লেখে ?
-আমি অত কিছু শুনতে চাই না । চিঠি লিখতে বলেছি লিখবা ! ব্যস !
কি ঝামেলায় পড়া গেল । এমনিতেও আমার হাতের লেখা ভাল না । তার উপর লাভ লেটার লিখতে হয় কিভাবে তাও জানি না । তাছাড়া আরো সমস্যা আছে আরো । চিঠি না হয় লিখলাম কোন এক ভাবে । কিন্তু চিঠি পৌছাবো কিভাবে ?
নিশির মা যে কড়া । এক পলকের জন্য মেয়েকে বাইরে ছাড়ে না । সাথে করে স্কুলে নিয়ে যায় আবার সাথে করে নিয়ে আসে !
আমি বললাম
-বাবু, চিঠি না হয় লিখলাম কিন্তু তোমাকে দিবো কিভাবে ? তোমার জল্লাদ .........
-কি বললা তুমি ?
-না আমি তো কিছু বলিই নি । আমি বলটে চেয়েছি তোমার আম্মু তো সব সময় তোমার সাথ্বে থাকে !
নিশি কিছু বলতে গিয়েও বলল না । মনে হয় ওর মা চলে এসেছে । তাই তাড়াহুড়া করে বলল
-শোন কাল, কাল স্কুলে ২য় পিরিয়ডে তুমি আমাদের স্কুলের সামনে দাড়িও । আমি বাইরে যাবার নাম করে আসবো । তখন দিও ।আচ্ছা রাখি মা চলে এসছে !
নিশি ফোন রেখে দিল । আমি পড়লাম মহা বিপদে !
নিশি বলেছে চিঠি লিখতে তার মানে চিঠি তার কাল চাই ই চাই ! তা না হলে আমার জীবন যে সাপাসাপা করে দিবে ।
এখ চিঠি টা লিখি কেমনে !! এসএমএস হলে না হয় টুক করে লিখে ফেলা যায় কিন্তু এক পাতার একটা চিঠি লিখতে হলে কি কি লিখতে হবে কে জানে !
যদিও নিশি বলে গেল যে স্কুলের গেটে দাড়াতে কিন্তু ব্যাপারটা অত সহজ না । আর মেয়েদের স্কুলের সামনে দাড়ানোটা কেমন হয়ে যায় না !!
কিভাবে যে করি !!
পাইছি !! পল্টু !!
এক মাত্র পল্টুই পারে আমাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে !! মেয়েদের স্কুলের সামনে দাড়ানোর ব্যাপারে পল্টু একেবারে ওস্তাদ ! ওকেই ধরতে হবে !!
আমি আর নিশি একই স্কুলে পড়ি । যদিও আমার বিল্ডিং আলাদা । মোটামুটি সব কিছুই আলাদা হয় । এমন কি সময়টাও । কেবল নামটাই এক ! নিশিদের ক্লাস মর্নিং পিরিয়ডে আমার আমাদেরটা বিকেলে ! আমি আর পল্টু সকাল বেলাতেই স্কুল গেটে হাজির হলাম ।
কাল রাতে অনেক চেষ্টা চরিত্র করে এক খানা পত্র লিখতে পেরেছি । আর সকাল বেলা পল্টুকে হাড়ে পায়ে ধরে তার পর নিয়ে আসতে হয়েছে !! পল্টু ছাড়া আমি একা একা কিভাবে দাড়িয়ে থাকি !! নিজের কাছেই কেমন যেন অনুভুত হবে !!
পল্টু বলল
-আমার জন্য দুটো বিড়ি নিয়ে আয় তো ।
ইদানিং পোলাপাইন সিগারেট কে আর সিগারেট বলে না । বিড়ি বলে ! যাই হোক এই বিড়ি জিনিসটা আমার একদম পছন্দ না । আর তার থেকেও বড় অপছন্দ হল কারো জন্য বিড়ি কিনতে যাওয়া । বললাম
-দোস্ত এখনই নিশি চলে আসতে পারে । সময় হয়ে গেছে ।
পল্টু বলল
-আরে চিঠিটা আমার কাছে দিয়ে যা । নিশি যদি চলেই আসে আমি দিয়ে দিবো । আমার এখন বিড়ির টান উঠেছে । বিড়ি না খেলে মাথা গরম হয়ে যাবে । তুই যাবি না আমি যাবো !
-না না তুই দাড়া । আমি যাচ্ছি ।
আসলে পল্টু যদি বিড়ি কিনতে যায় তাহলে আমাকে এখানে একা দাড়িয়ে থাকতে হবে । এটা আমার জন্য খুব অস্বস্থিকর ।
চিঠিটা পল্টুর কাছে দিয়ে বিড়ি কিনতে গেলাম । পল্টু আবার লাইট ছাড়া খায় না । আর আমাদের স্কুলের ধারে কাছে কোন সিগারেটের দোকান নাই । একটু দুরে যেতে হল ।
ফিরে এসে যা দেখলাম আমার ভিমড়ি খাবার মত অবস্থা । দেখলাম পল্টুর সাথে রফিক স্যার দাড়িয়ে আছে ।
রফিক স্যার আমাদের স্কুলের মেয়ে সেকশনের হেডস্যার ।
আমি চট করে আড়ালে চলে যাই । রফিক স্যার পল্টুকে বলল
-কি ব্যাপার কতক্ষন ধরে দেখছি তুমি গেটের সামনে দাড়িয়ে আছো ?
পল্টু খুব স্বাভাবিক কণ্ঠ বলল
-আঙ্কেল আপনার কোন সমস্যা আছে ?
আঙ্কেল !!!
রফিক স্যারকে বলছে আঙ্কেল !
রফিক স্যার খুব রেগে গেল পল্টুর কথা শুনে । পল্টুর কান ধরে স্কুলের ভিতরে নিয়ে যেতে চাইল । পল্টু বলল
-আরে চাচা আপনে এমন করতাছেন ক্যান ? আমিতো কেবল দাড়াইয়া ছিলাম । আরে চাচা শুনেন ! চাচা !!
আমি দাড়ালাম না । পল্টুর ভাগ্যে যা হয় সেটা জানার চেয়ে না জানাই ভাল ।
কিন্তু নিশিকে চিঠিটা দিতে পারলাম না !! জানি না ও কি বলবে ! রাতের নিশি ফোন দিল । দিয়েই বলল
-আমি খুব সরি সোনা । প্লিজ রাগ কর না ।
আমিতো কিছু বুঝতেই পারলাম না । ভেবেছিলাম ফোন করতেই আমি ওকে সরি বলব । কিন্তু এখন দেখছি উল্টা ব্যাপার ।
-আমি আসতে পারি নি । তুমি প্লিজ রাগ কর না ।
ও আচ্ছা । তাহলে নিশির যে গেটের সামনে আশার কথা ছিল ও তাহলে আসেনি । যাক বাবা বাঁচলাম । কন্ঠে খানিকটা অভিমান নিয়ে এসে বললাম
-তুমি কেন আসলে না ? তুমি আর আমাকে আগের মত ভালবাসো না ।
-না না সোনাপাখি প্লিজ রাগ কর না । আমিতো আসতেই চাইছিলাম কিন্তু একটা ঝামেলা হয়ে গেছিল ।
-কি রকম ঝামেলা ?
-আর বল না রফিক স্যার কাকে যেন ধরে নিয়েছে গেটের কাছ থেকে । আমিতো ভয়ই পেয়ে গেছিলাম তোমাকে ধরে আনে নি তো ।
-তারপর ?
-তারপর আর কি ? গিয়ে দেখি তোমাদের এলাকার পল্টু ভাই আছে না সে ।
আমি খানিকটা সংকুচিত কন্ঠে বললাম
-তারপর কি হল ?
আমার এ কথা শুনতেই নিশি হাসতে লাগল ।
-জানো পল্টু ভাই যেন কাকে লাভ লেটার দিতে এসেছিল । রফিক স্যার সব মেয়ের সামনে সে চিঠি পড়ে শুনিয়েছে । কি হাস্যকর কথা বার্তা যে লেখা ! বেচারা লজ্জায় একদম লাল হয়ে গেছিল ।
আমি আরো দুর্বল কন্ঠে বললাম
-আচ্ছা !
নিশি বলল
-শুনো তোমাকে আর এতো রিস্ক নিয়ে স্কুলের সামনে আসতে হবে না । ঠিক আছে ?
মনে মনে বললাম তুমি না বললেও আমি আর আসবো না ।
কিন্তু পল্টু !
ভাগ্যভাল যে চিঠিতে আমি কোন সম্মোধন লিখি নি । লিখলে তো আমার খবর হয়ে যেত । কেলেঙ্ককারী হয়ে যেত !
ফেবু লিংক