somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শীত ও বিয়ে! শীতকালীন বিয়ে এবং হিজিবিজি

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শীত এবং বিয়ে, সম্ভবত এই টপিকটা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে বছরের পর বছর সবচেয়ে বেশি ট্রল হয়ে আসছে। অবশ্য শুধুমাত্র ট্রলকারীদের এককভাবে দোষারোপ কারও উচিৎ হবে না। শীতের এই সময়টাতে সত্যি-সত্যিই বিয়ের ধুম পড়ে যায় দেশজুড়ে। এমনও হয় যে এই মৌসুমটাতে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করতে গিয়ে সম্ভাব্য তারিখ গুলোতে মেকআপ আর্টিস্ট বা পার্লার, ক্যামেরাম্যান, বাবুর্চি এমনকি কম্যুনিটি সেন্টারটি গ্রহনসাধ্য হবে কি না কিংবা অন্য কোন আত্নীয়দের একই দিনে ঠিক করে রাখা কোন অনুষ্ঠান আছে কি না -- এই সবকিছুর উপর নির্ভর করতে হয়! এমনও হয় যে কম্যুনিটি সেন্টারে একই দিনে একই ফ্লোরে দুটি অনুষ্ঠান বুক করতে হয়, সেক্ষেত্রে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত একজনের জন্য বরাদ্দ হলে সন্ধ্যা থেকে রাত বরাদ্দ পায় অন্যজন। এক অনুষ্ঠানের অতিথিরা কম্যুনিটি সেন্টার ত্যাগ করবার আগেই অন্য অনুষ্ঠানের অতিথিরা এসে অপেক্ষা শুরু করে। আবার একই দিনে দু'জন আত্নীয়ের অনুষ্ঠান পড়ে গেলে মেহমান কোনটি রেখে কোন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবে তা মনস্থির করতে দ্বিধা-দন্দে পড়ে যায়।

সে যেমনই হোক, "শীত এবং বিয়ে"-র এই মেলবন্ধন কিন্তু অযৌক্তিক নয়। বরং হিসেব করলে দেখা যাবে এর পেছনে যৌক্তিক কারণটাই মূখ্য বিষয়। আজ সেইসব বিষয় নিয়েই একটু বলা যাক।

মেহমানদের উপস্থিতি
যে কোন অনুষ্ঠানের জন্যেই মেহমানদের উপস্থিতি বিশেষরকম গুরুত্ব বহন করে। দেখা যায় যে আমাদের দেশের বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শীতের এই সময়টাতে একটু ঢিলেঢালা ভাব থাকে। বার্ষিক ছুটি, পরীক্ষার ছুটি, মিড বা সেমিষ্টার ফাইনাল এক্সাম শেষ হয়ে নতুন সেশন শুরু হয় এই সময়টাতে, তাই ইচ্ছে হলেই ২/৪ দিনের জন্যে কোন অনুষ্ঠানে সে সময়টাতে উপস্থিত হওয়া যায়। তাছাড়া বেশিরভাগ প্রবাসীদের এই সময়টাতে দেশে আসবার সুযোগ ঘটে, তাই পরিবার নিয়ে এমন একটা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া এবং প্রায় বাকি সকল আত্নীয়দের সাথে দেখা করবার দারুণ একটা সুযোগ পায় তারা। সেই সুবাদে বিয়ের অনুষ্ঠানে মেহমানদের উপস্থিতি বছরের অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্য ভাবে বেশি থাকে।

মুখরোচক খাবার
আপনি স্বীকার করুন চাই না করুন, বিয়ের অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ হয় খাবার! বছরের অন্য সময়ে বিয়ের আয়োজন করলে খাবারের গুণগত মান ও স্বাদ ঠিক রাখতে যতটা কাঠখর পোড়াতে হয় তা শীতের মৌসুমে অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। অতিরিক্ত বা একটু লম্বা সময় নিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন করতে এই সময়টাতে ঝাক্কিঝামেলা অনেক কম পোহাতে হয়। শুধু মূল অনুষ্ঠান নয়, বরং এই সময়টাতে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে মেহমানদের জন্যে নানা পদের সুস্বাদু খাবার রান্না হয়ে থাকে। অন্য দিকে শীতের এই মৌসুমে প্রচুর সবজি পাওয়ার কারণে নানান আইটেমের খাবার পরিবেশন সহজ ও খরচ সহায়কও হয়ে থাকে। গ্রামের দিকে দেখা যায় হলুদ অনুষ্ঠান কিংবা মূল অনুষ্ঠানের সকলের দিকে মেহমানদের খিচুরি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। আর সেই খিচুরিতেও ব্যবহার হয় নানান ধরনের মৌসুমী সবজি।

অন্যদিকে শীতের এই সময়টাতেই চলে পিঠা উৎসব। বিয়ের এই আনুষ্ঠানিকতায় বিশেষ অতিথি এবং উভয় পক্ষ একে অপরকে বাহারি রকম আঞ্চলিক পিঠা উপহার হিসেবে দিয়ে থাকে। আর সত্যি বলতে কিনে খাওয়া পিঠার চেয়ে এইসব পিঠার স্বাদ হাজারগুণ ভালো হয়। ছোটবেলায় দেখতাম বিয়ের আগে বেয়াই বাড়িতে পিঠা উপহার দেয়ার জন্যে বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হবার দিন পনের আগে থেকেই চাল ভাঙ্গানো কিংবা চাচী-ফুপুরা সবাই মিলে নকশী পিঠা তৈরী করছে মহোৎসবে।

আবহাওয়া ও পরিবেশ
আবহাওয়া বিয়ের আনুষ্ঠানিতকায় কত বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে তা যে নিজে এমন বিরূপ অবস্থায় না পড়েছে সে অনুধাবনও করতে পারবে না। সুন্দর সাজগোজ করে বিয়েতে উপস্থিত হলেন, এর মাঝে শুরু হলো বৃষ্টি কিংবা দারুন তাপদাহ। অবস্থাটা ভাবুন একবার। সুন্দর পরিহীত পোষাকটা তখন সাপটে থাকবে আপনার সাথে; চুপচুপে ঐ পোষাকে থাকলে যতই দারুন আপ্যায়ন কিংবা খাবার হোক না কেন, কোনটাই আপনাকে স্বস্তি দিতে পারবে না। তাছাড়া শেরওয়ানি কিংবা সুট আর দামী দামী ভারী সব বিয়ের শাড়ি কিংবা লেহেঙ্গাতে বর-কনে‌'র যে কি অবস্থা হয়, তা একমাত্র তারাই বলতে পারবে। এর সাথে যুক্ত হয় ক্যামেরার অসহনীয় উজ্জ্বল ও তপ্ত লাইট; ঐ সময়টা মনে হয় প্রখর রৌদ্রে কেউ জোর করে গাড়ি থেকে উত্তপ্ত পিচের রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে।

এছাড়া এই সময়টাতে মেহমানদের ম্যানেজ করাও কিছুটা সহজ হয়। অন্য সময়টাতে একত্রে অনেক মানুষ জমায়েত হলে দেখা যায় কয়েকটি ফ্যান কিংবা এসিও সেখানে পর্যাপ্ত ভাবে তাপমাত্রা ঠিক রাখতে পারে না। সেদিক থেকে শীতের এই সময়টা অনেকটাই সুবিধা প্রদান করে। এমনও হয় যে হোষ্টের বাড়ির বিছানা সরিয়ে সেখানে ঢালাও ভাবে ফ্লোরে বিছানা পাতা হয়। আর আমন্ত্রিত অতিথিরাও আনন্দ চিত্তে সেই বিছানা দখল করে নিচ্ছে। যদিও লেপ কিংবা কম্বল ভাগে পাওনা নিয়ে অনেকেই অনেক অভিযোগ তোলেন। কিন্তু এই একত্রে ঢালাও বিছানায় সবাই মিয়ে শুয়ে শুয়েও রাতভর গল্প করবার একটা দারুন সুযোগ পেয়ে বসে। আর অনেকের কাছে এই সুযোগটাও একটা গোল্ডেন মেমরি হয়ে রয়।

কনের সাজ
পাড়া-প্রতিবেশী আর বেশ কিছু আত্নীয়-স্বজন যে বিয়ের দিনে কনের সাজ‌'টা কেমন হলো তা নিয়ে জাজ করে তা আশা করি আপনাদের আর নতুন করে বলতে হবে না। কিন্তু এই সাজ বা মেকআপ ধরে রাখা কিন্তু সহজ কোন বিষয় না। এমনকি শীতের এই সময়টাতেও মেকআপ নিয়ে স্টেজে বসলে দেখা যায় পাশ কনের এই মেকআপ ঠিক রাখতে একজন হেল্পিং হ্যান্ড প্রয়োজন পড়ছে। গরমে তো সেই ঘটনাটা হয় আরও ভয়াবহ।

বাহারি রকম ফুল
শীতে নানান সবজীর মত দেখা মেলে বাহারি রকম ফুলের। বছরের অন্য সময়টাতে প্রয়োজন মত ফুল পাওয়া না গেলেও এই মৌসুমটাতে প্রচুর ফুল পাওয়া যায়। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় এটি মেজর কোন ইস্যু না হলেও এটি একটি একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার বিয়ের আনুষ্ঠানিক সাজসজ্জার ব্যাপারে।

পরিশ্রম ও ক্লান্তি
একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে এত এত কাজ থাকে যে সময়মত একটু বিশ্রামেরও ফুরসত মেলে না। আগে দাদী-নানীরা বলতো 'বিয়ে করা আর ঘর করা সমান খাটনি'; মানে একটা ঘর বা বাড়ি বানাতে যে ইফোর্ট দিতে হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা ঠিকঠাক চালিয়ে যেতেও সেই একই ইফোর্টের প্রয়োজন পড়ে। এখানে মূল অনুষ্ঠানের মাস খানিক আগে থেকেই শুরু হয় ছোটাছুটি। আর তা শেষও হয় বিয়ের মূল অনুষ্ঠানের অন্তত ৫‌/৭ দিন পরে। আর এই সময়টাতে টানা চলতে থাকে একটা না একটা কাজ। বাড়ির মহিলারা সেই ভোর থেকে ভোররাত পর্যন্ত ঘরের মেহমান সামলাবার কাজ করে, আর পুরুষরা আনুষ্ঠানিকতার বাকি সব দেখভাল করতে করতেই সময় পার করে। বছরের অন্য সময়টাতে অনেকেই এত লম্বা সময় সমানতালে কাজ করতে পারে না, কিংবা অনেকেই কাজের মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। সে তুলনায় শীতের এই ঠাণ্ডা সহজেই এই পরিশ্রমের ক্লান্তিকে কমিয়ে নিয়ে আসে, আর ক্লান্তিও দূর করে নিমিষে।


'শীত এবং বিয়ে' নিয়ে মানুষ যতই হাসাহাসি করুক, ট্রল করুক, কৌতুক বলুক দিন শেষে উপরোল্লিখিত বিষয় গুলো আপনি মোটেই অগ্রাহ্য করতে পারবেন না। যে বা যারা ট্রল করছে, হাসাহাসি করছে তাদেরও যদি জিজ্ঞাস করা হয় তার স্মৃতিতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিয়ের অনুষ্ঠান কোনটি, তাহলে দেখা যাবে সেটিও কোন এক শীতে অনুষ্ঠিত বিয়ের অনুষ্ঠান। অথবা জিজ্ঞাস করলে তাদের মধ্যে অবিবাহিত বড় একটা সংখ্যাই হয়তো শীতেই বিয়ে করতে চাইবে।

সে যাই হোক, 'বিয়ে' এবং বিয়ের 'অনুষ্ঠান'টি হোক সকলের জন্যে আনন্দদায়ক উপভোগ্য একটি ঘটনা সমৃদ্ধ স্মৃতি। বিয়ে হোক নতুন ও পুরাতন সকল আত্নার আপন আত্নীয়দের মিলনমেলা। এই প্রত্যাশা ব্যাক্ত করে আজকে এখানে ইতি টানলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৪১
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×