somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুলাপাইনা গপ্পো..

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমির হাতে সিগারেট নিয়ে অন্যমনস্ক ভাবে হাটছে। আসাদ এভিনিউ ধরে হেটে আসাদগেট থেকে টাউন হলের দিকে যাচ্ছে। হঠাৎ পিছন থেকে ডাকঃ
.
এ্যাক্সকিউঝ মি, মিঃ সিগারেট ভাইয়া!
.
আমির এত মনোযোগ দিয়ে সিগারেট টা টানছিল যে, যে কেউই দেখলে ভাববে তার দুনিয়ায় সে আর তার হাতের সিগারেট ছাড়া আর কিছুরই অস্তিত্ব নাই। এত গভীর অন্যমনস্কতায় ডুবে থাকার কারণে ডাক শুনে চমক খেল।
.
আচমকা ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে দাড়াল। কিছু বুঝে উঠার আগেই জিজ্ঞাসাঃ
.
ভাইয়া ভাল আছেন?
.
সিগারেট ধরে রাখা হাতটা পিছনে লুকিয়ে পরিস্থিতি গোছ-গাছ করে ইহ জগতে কিঞ্চিৎ ফিরে এসে দেখতে পেল একটি মেয়ে হাসি হাসি মুখ নিয়ে এক গাদা কাগজ-পত্র শিশু পুত্রের মত বুকের সাথে জড়িয়ে দাঁড়ানো।
.
এতে আমির আরোও আশ্চর্য হল। এই মেয়েকে সে জীবনে কখনোও কোথাও দেখেছে কিনা মনে করতে পারছে না।
.
আমির অবাক হয়ে বোবার মত দাঁড়িয়ে আছে। কোন কথা বলতে পারছে না। মেয়েটিই বললঃ
.
আপনি বোধ হয় আমাকে চিনতে পারেন নি। চিনার কথাও না। আপনারা যে ফ্লাটে থাকেন তার সরাসরি দক্ষিণ দিকের ফ্লাটটাতে আমরা থাকি।
.
প্রতিদিন বিকালে বেলকনিতে বসে যে আপনারা গল্প করেন, আমি দেখতে দেখতে আপনাদেরকে চিনে ফেলেছি।
.
আমির মেয়েটার কথা শুনে বললঃ
.
ও আচ্ছা!
.
আর মুখে ”ও আচ্ছা” বললেওমনে মনে ভাবল, বেলকনিতে দেখে দেখে চিনে ফেলেছে আবার রাস্তায় ডাক দিয়ে দাঁড় করাল কথা বলার জন্য, আর যে ভাবে কাগজ-পত্র কোলে নিয়ে দাঁড়িয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে কথা বলার জন্য আট-ঘাট বেধেই নেমেছে।
মেয়েটা কি সাংঘাতিক নাকি নাকি পাগল? আমির কিছু বলার আগেই মেয়েটা বললঃ
.
ভাই আমার নাম লিজা। আপনি কি বিরক্তি বোধ করছেন?
.
আমির বলল, না না! বিরক্তি বোধ কেন করব?
.
--বেশ কয়েকদিন আপনাদের কে বারান্দায় আর দেখছি না। আর আপনি একা কেন? ভাবী কোথায়?
.
আমির চোখ কপালে তুলে প্রশ্ন করল, ভাবী মানে?
.
--সরি ইফ আই ওয়্যার রং, আমি আপনার ওয়াইফের কথা বলছি।
.
--আই এ্যাম নট মেরিড! আপনি যে কি সব কি বলছেন বুঝতে পারছি না।
.
লিজা বলল, তাহলে বেলকনি তে বসে প্রতিদিন গল্প করেন যে, ওনি কে?
.
আমির জিভ কামড় দিয়ে বলল, ছি ছি কি সব বলেন? উনি তো আমার আপু, আমার মায়ের পেটের বড় বোন!
.
আমিরের কথা শুনে লিজাও এবার জিভে কামড় দিল। লজ্জায় মাটির দিকে তাকিয়ে কৈফিয়ত দেয়ার মত করে বললঃ
.
সরি ভাইয়া, বুঝতে পারিনি, প্রায় প্রতিদিনই এত লম্বা সময় ধরে আপনারা গল্প করেন বেলকনিতে, আর এত এত দুষ্টামি-ফাজলামি আর হাসি-তামাশা করেন, ভুল বুঝে ফেলেছি। মাফ করবেন।
.
আমির লিজাকে অস্বস্তি থেকে বাঁচানের চেষ্টা করে বলল, না ঠিক আছে, আপনি তো আর জেনে বলেন নি। আমি কিছু মনে করিনি।
.
লিজা মুখ তুলে তাকানোর চেষ্টা করল। তার মুখে শুরুর দিকের সেই হাসিটা আর নাই। লজ্জা আর অস্বস্তিতে চোখ-মুখ কুচকে আছে।
.
আমির এবার তার ভাবের জগৎ থেকে সম্পুর্ণ বেরিয়ে এসে একগাল হেসে বললঃ
.
ইজি ম্যাম!
আপনি একা নন, পারিবারিক ভাবে পরিচিত নয়, এমন বন্ধু-বান্ধবি প্রায়ই এই ভুল করে থাকে। এক বন্ধু এক দিন কি মন্তব্য করেছিল, শুনলে তো আপনি আকাশ থেকে পড়বেন!
.
লিজা বলল, কি বলেছিল?
.
--অনুমান করে নিন, আমি বলতে চাচ্ছি না।
.
লিজা বিষয়টা মনে হয় অনুমান করতে পারল এবং তাতে তার মুখে আবার হাসি দেখা গেল, অস্তস্তি টা দুর হল তবে লজ্জা টা রয়ে গেল এবং তা আরও দিগুন বর্ধিত হলো। আর তাই এই হাসিটা শুরুর দিকের হাসির মত সাবলীল নয়। অন্য রকম। দৃষ্টির লাজুক হাসি!
.
আমির তখন হাতের সিগারেট টা ফেলে দিয়ে বলল, আপুর সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা একটু বেশই। আপু নিজে যখন ঠিকমত দাঁড়াতে-হাটতে পারত না, তখনই নাকি আমাকে কোলে নিয়ে কান্না থামাইত।
ছোট বেলা থেকেই আমাদের দুই ভাই-বোন কে বাসায় রেখে বাবা-মা সারাদিন অফিস করতেন। একদিন নাকি মা অফিস থেকে ফিরে দেখেন বাসায় বেশ কয়েকটা গ্লাস-প্লেট ভাঙ্গা। দেখেই আপুকে ধমকা-ধমকি শুরু করলেন। আমি নাকি আপুকে ধমকানো দেখে রান্নাঘর থেকে বটি নিয়ে এসে মা কে কোপ মারতে গেলাম।
.মা বলে এসব কথা। আমি ছোট ছিলাম, আমার মনে নাই।
.
মা আর আপুর মধ্যে কোন বিষয়ে দ্বি-মত দেখা গেলে আমি যদি আপুর হয়ে কথা বলি, তাহলেই মা বলে বসে, বোনের জন্য মা কে খুন করতে গেছিলি, তুই তো সেই ছেলে, তুই শুনবি আমার কথা!
.
আমিরের কথ গুলো শুনে লিজা অনেকটা স্বাভাবিক হল এবং বলল, বাহ্, দারুণ টান দেখি আপনাদের। এ্যাডোর‌্যাবল আপুটা কোথায় আছে? একটু কাছ থেকে দেখতে ইচ্ছা করছে উনাকে।
.
আমির বলল, ওইযে মাঝখানে ৬/৭ দিন ছিলাম না বললেন যে, তখন আমরা গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। আপুর বিয়ে হল। আগে জব করত। ছেড়ে দিয়েছে। এক মাসের মত ভাইয়াদের গ্রমের বাড়িতে থাকবে, তার পর দেশের বাইরে চলে যাবে, ভাইয়ার সাথে।
.
--ও আচ্ছা, তাহলে তো আর কাছ থেকে দেখা হলো না ওনাকে।
.
--যাওয়ার আগে একবার এইখানে আসবে। তখন যদি আপনি চান, তো দেখা হতে পারে।
আচ্ছা, আমি তো কেবল আমার দিকের কথাই বলে গেলাম, আপনাকে কিছু জিজ্ঞাসও করছি না কিছু বলতেও দিচ্ছি না। আপনি কি করেন?
.
--আমি ঢাবি তে পড়ি। বাবা মার একমাত্র সন্তান। সবাই এখানেই থাকি।
.
--এখন কি ভর্সিটি থেকে ফিরছেন?
.
--না, বিকেলের দিকে ফার্মগেটে একটা এ্যাডমিশন টেষ্ট কোচিং এ টুক-টাক পড়াই। সেখান থেকে ফিরছি। আপনি কোথায় যাচ্ছিলেন? আমি কি আপনার টাইম ওয়েস্ট করলাম?
.
--না না, কি বলছেন! টাইম ওয়েস্ট কেন হবে? আপুও নাই, মাও আসে নাই, কাল থেকে আবার অফিস বলে আমাকে চলে আসতে হল। আর এইদিকে আমার তেমন কোন বন্ধুও নাই। ভাল লাগছিল না, তাই ঘুরে বেড়াচ্ছি। আপনার সাথে কথা বলে ভালই হল।
.
--আচ্ছা, আপনার নিত্যবিকেলের চা-আড্ডার সঙ্গী যিনি ছিলেন, আপনার বোনের কথা বলছি, তিনি তো আজ নাই, আমি যদি রিকুয়েস্ট করি তাহলে আজকের বিকেলের চা টা কি আমার সাথে খাওয়া যায়, আপনার বোনের রিপ্লেসমেন্ট আমি হতে পারব না জানি, তবুও রিকুয়েস্ট………
.
--আমির মুচকি হেসে বলল, আচ্ছা ঠিক আছে চলেন……
.
ফুটপাতের একটা চা-দোকানে একটা বেঞ্চের উপর দুজনে বসে পড়ল, চা খাওয়ার জন্য……
.
.
.

তার পর……
.
তার পর……
.
তার পর……
.
তার পর……
.
.
.
.
.
.
.

আমির আর লিজার বেশ ঘন ঘন সাক্ষাৎ হতে লাগল……….
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:৪৭
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×