জীবনের একটা বড় সময় কেটেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। জীবনের অনেক কিছু পেয়েছি আমি আমার এই স্বপ্নের ক্যাম্পাস থেকে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে রয়েছে অম্ল মধুর স্মৃতি।
সময়ের স্রোতে ভেসে গিয়ে অনেকদিন এই স্বপ্নের ক্যাম্পাসে আসা হয়ে উঠেনা। এবার সুযোগ পেলাম, কারন পূজার চুটির পরে আজই ক্যাম্পাস আবার প্রাণ চঞ্চল হয়ে উঠেছে আর আমি খুলনাতেই আছি এবং হাতে কোন কাজ নেই।
সকাল বেলা রিক্সা করে চলে গেলাম ক্যাম্পাসে। রিক্সা থেকে নেমে প্রথমেই গেলাম আমাদের একসময়কার আড্ডার তীর্থস্থান ক্যাফেটরিয়ায়। আমাদের সময়ের মামারা এখন আর নেই, কয়েকটা ছেলে মেয়েকে দেখলাম আড্ডাবাজিতে ব্যস্ত, কিন্তু চিনলাম না, দেখে বুঝলাম অনেক জুনিয়র। ক্যাফেটরিয়ার পাশে ফটোস্ট্যাট দোকানে গিয়ে পেলাম রোকন ও খোকন ভাইকে। পরিচিত মানুষ পেয়ে যেন স্বর্গ হাতে পেলাম। দুই ভাই একটু ও বদরায় নি। এখনও তেমনি যত্নের সাথে ফটোকপি করে চলেছেন, অনেকক্ষন গল্প করলাম দু'জনের সাথে। এরপর গেলাম ক্যাফেটরিয়ার সামনেই শহীদ মিনারে, মনে পড়ে গেলো ২০০৪ সালের ১৩ মার্চের কথা এখানেই এনে রাখা হয়েছিল কটকা ট্রাজেডি তে আমাদের ছেড়ে যাওয়া কাওসার ভাই ও রুপা আপুর মৃতদেহ। এখানেই ১৭ আগস্টের সিরিজ বোমা হামলার সময় বোমা পাওয়া গিয়েছিল আর তখন আমরা এই বেদীতে বসেই উদযাপন করছিলাম্আমাদের ডিসিপ্লিনের প্রথম ক্রিকেট সাফল্য।
ঘুরতে ঘুরতে আমাদের ক্লাস রুম, তপনদার চায়ের দোকান, মুজিবর ভাই এর চায়ের দোকান ঘুরে এলাম লাইব্রেরীতে (এখন নতুন ভবন হয়েছে)। সেখান থেকে চলে গেলাম ছাত্রী হলে, আমি যে কক্ষটাতে থাকতাম সেখানে। সব জায়গায় নতুন মানুষ এসেছে। মনে পড়ে যেতে শুরু করল মান্না দে'র সেই বিখ্যাত গানের কলি "সেই সাতজন নেই আজ টেবিলটা তবু আছে, সাতটা পেয়ালা আজ খালি নেই, একই সে বাগানে আজ এসেছে নতুন কলি শুধু সেই সেদিনের মালি নেই"। সবকিছু ঘুরে দেখতে দেখতে কখন যে চোখের পাতা ভিজে গেছে টের পেলাম না। হঠাৎ আমার এক শিক্খকের সাথে দেখা এবং তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে ক্যাম্পাসকে আবার ও বিদায় বলে মন খারাপ করে বাসায় ফিরে এলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৩:২৫