The Curse of The Golden Flower:
Year: 2006
Director: Zhang Yimou.
ছবির পটভূমি ৯২৮ সালের ট্যাং সাম্রাজ্য। সম্রাট চো-ইউন-ফ্যাট, সম্রাজ্ঞী, সম্রাটের ৩ পুত্র- বড়ছেলে ওয়ান, মেঝছেলে জাই এবং ছোটছেলে ইউ।
ওয়ান কিন্তু সম্রাজ্ঞীর সন্তান নয়। এ সম্রাটের প্রথম পক্ষের স্ত্রীর, যে কিনা ওর জন্মের সময়ই মারা যায়।
তার প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন স্বরুপ প্রতিবছর ওই দিনে "ক্রিস্যান্থিয়াম"(ডেইজি জাতীয় উজ্জ্বল এক প্রকার ফুল) নামক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
প্রতিবছরের ন্যায় উৎসব সমাগত, দুর্দান্ত প্রস্তুতি চলছে।
বড়ছেলেটি রাজার সবচেয়ে প্রিয়। প্রথানুসারে ওয়ান সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী। কিন্তু রাণীমাতার প্রিয়তম।কিন্তু ওয়ানের সম্রাট হবার কোন ইচ্ছা হয় না, সে তার অনুজকে সাম্রাজ্যের ভবিষ্যত সম্রাট হিসেবেই যোগ্য মনে করে।সে সব ছেড়ে দিয়ে কুইংঝো চলে যেতে চায়- সাথে নিতে চায় গোপন প্রেমিকা চ্যান- চিকিৎসকের কন্যার সাথে। যা কিনা সম্রাজ্ঞীর পছন্দ নয়।মেঝছেলে জাইয়ের কোন উচ্চকাংক্ষা নেই, সম্রাটের আদেশই তার শিরোধার্য। তবে ছোটছেলে ইউয়ের মনে উচ্চাকাংক্ষা বড় বেশি। সে সাম্রাজ্যের অধিকারী হতে চায়। বড় ভাইয়ের প্রতি বাবার অতিরিক্ত আদর ও যত্ন কিশোর রাজপুত্রের মনে হিংসাদ্রেক করে।
সম্রাটের বধূ সম্রাজ্ঞী কঠিন অসুখগ্রস্থ। রাজচিকিৎসক পথ্য দেন, সেই অনুযায়ী চিকিৎসক-কন্যা সম্রাজ্ঞীর জন্য ঔষধ এনে দেয় এবং রাণীমাতা সে ওষুধ সেবন করেন।গত ১০ বছর যাবত ওষুধ সেবনের পরো রাণীর অসুখ সারছে না, বরং গত কিছুদিন যাবত রাণীর কোন উন্নতি তো হয়ই না বরঞ্চ আরো অবস্থার অবনতি হয়।রাণী বুঝতে পারেন তার ঔষধে কোন গন্ডগোল আছে। এক নারী যে কিনা রাজবদ্যির স্ত্রী, গোপনে এসে রাণীকে জানায় পারস্য থেকে আনা এক প্রকার কালো ছত্রাক রাণীর পথ্যে যোগ করা হয়েছে। এ ছত্রাকটি ধীরে ধীরে মানুষকে পাগল করে দেয় এবং নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে। রাণী বুঝতে পারে সম্রাট তাকে হত্যা করার জন্য
এ ব্যবস্থা করেছে।সম্রাটের মনে রাণীর প্রতি ভালোবাসা কোনকালেও ছিল না।রাণীর মনে ক্ষোভ মাথাচারা দিয়ে উঠে। রাজার ঘরে রাজার পূর্ববর্তী স্ত্রীর ছবি দেখে রাণী চিনে ফেলে এ আর কেউ নয় রাজবদ্যির স্ত্রী।ওদিকে রাজবদ্যির স্ত্রী বন্দী হয়, এবং সম্রাটের সম্মুখে আনা হয়। সম্রাট একান্ত গোপনে তার সাথে আলাপ করে। কারণ এ নারী আর কেউ নয়, রাজার ভালোবাসার প্রথম স্ত্রী ও যুবরাজ ওয়ান এর গর্ভধারিণী মা, বর্তমানে রাজবদ্যির স্ত্রী। যাকে মহারাজ বহু পূর্বেই ত্যাগ করেছে লিয়াং রাজার কণ্যাকে বিবাহকল্পে ও বিশাল সাম্রাজ্যের মালিক হবার জন্য। রাজবদ্যি পরিত্যাক্তা সেই রমণীকে বিবাহ করে।
রাজা কুটবুদ্ধি আটে। রাজ চিকিৎসককে গভর্নর করে তাকে ও তার পরিবারকে পাঠিয়ে দেয় সু্ঝোউ অঞ্চলে। সেখানে সম্রাট তার আততায়ির বিশাল বাহিনী পাঠিয়ে তার পূর্বের স্ত্রী ও তার বর্তমান স্বামি ও কন্যা চ্যান কে খুন করার পরিকল্পনা করে।
ওদিকে সম্রাজ্ঞী তার প্রতি সারাজীবন ধরে অনাচারে কারণে ক্ষোভে সম্রাটের বিরুদ্ধে নিজের বড় সন্তান জাই কে প্রলুব্ধ করে। সম্রাটে একান্ত অনুগত ছেলেও মায়ের প্রতি রাজার এমন চক্রান্তের কথা শুনে সেও
মায়ের প্রতি ভালোবাসায় সম্রাটে বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে- গলায় ক্রিস্যান্থিয়াম অঙ্কিত ওরনা বেঁধে। কিন্তু এ খবর বড় রাজকুমার চ্যানের কাছ থেকে শুনতে পায়, যা কিনা চ্যান শুনেছে তার বাবার কাছ ঠেকে।
সে যায় তার সৎ মা সম্রাজ্ঞীর কাছে, যার সাথে তার অবৈধ যৌন সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। সম্রাটের অবহেল ও ঘৃণার কারণে যৌবনবতী রাণী এ অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে বাধ্যই হয়।প্রতিহিংসাপরায়ণ সম্রাজ্ঞীর কাছে ছুটে আসে ওয়ান। জিজ্ঞেস করে সম্রাজ্ঞীর গোপন চক্রান্তের কথা। শেষে পরিবারের ভবিষ্যত ভেবে সে আত্মহত্যার প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু দৈবক্রমে বেঁচে যায়- আঘাত তেমন গুরুতর না হওয়ায়।
অনুষ্ঠানের রাতে ১০ হাজার সৈন্য নিয়ে প্রাসাদে হামলা চালায় মধ্যম রাজকুমার জাই। কিন্তু সম্রাটের সুসজ্জিত ও পূর্ব প্রস্তুত বিশাল সেনা বাহিনীর কাছে প্রবল বিক্রমে লড়াই করে হেরে যায় জাই। ওদিকে ছোট রাজকুমার ইউ কোষমুক্ত তলোয়ার দিয়ে খুন করে বড় ভাই ওয়ানকে। বাবা-মা এই দৃশ্যে অবাক হয়ে যায়। সম্রাজ্ঞী তার প্রিয়তমকে মারা যেতে দেখে শোকে পাথর হয়ে যায়। সম্রাট নিজ হাতে অত্যন্ত নৃশংসভাবে ইউকে খুন করে।সকল সৈন্য হারিয়ে ধরা পড়ে নিজের বাবার বাহিনীর হাতে।রাজপ্রাসাদ নতুন করে সাজানো হয়- হাজার হাজার ক্রিসান্থিয়াম ফুল দিয়ে, সব ধুয়ে মুছে সাফ করা হয়। নিষ্ঠুর সম্রাট তার আসনে অধিষ্টিত হয়ে বিদ্রোহীদের খুন করে ও সম্রাজ্ঞী-মেঝপুত্রকে নিজের কাছে ডেকে নেয়। শাস্তি দেয় রাজকুমারকে নিজ হাতে তারই মা সম্রাজ্ঞীকে সেই বিষ খাওয়াতে হবে। জাই বলে-সে সিংহাসনের জন্য বিদ্রোহ করে নি, সে শুধু তার মায়ের জন্য লড়েছে। সে তার মায়ের কাছে যায় এবং তার পরাজয়ের জন্য ক্ষমা চায়। সে খুবী ব্যথিত, সে তার মায়ের জন্য জয় নিয়ে আসতে পারে নি। সে তারপর এক প্রহরীর তলোয়ার দিয়ে আত্মহত্যা করে তবু তার মাকে নিজ হাতে বিষ খেতে দেয় নি। সর্বহারা সম্রাজ্ঞী তার প্রতি বাড়িয়ে দেয়া বিষের পেয়ালা ছুঁড়ে ফেলে দেয়- সেই বিষ, নকশাকরা টেবিলের সোনালী সেই ফুলকে পুড়িয়ে দেয়। একদিকে রাণীর চিৎকার, অন্যদিকে পাষাণ সম্রাটের নির্বিকার চপস্টিক দিয়ে খাবার খেয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয় এক উপাখ্যাণের।
নারীর ভালোবাসার অভাব, পুরুষের নারীর প্রতি ভালোবাসা, সন্তানের পিতার প্রতি-সম্রাটের প্রতি শ্রদ্ধা, সন্তানের দুঃখীনি মায়ের প্রতি ভালবাসা, সন্তানের প্রতি মায়ের মমতা, পিতার সন্তানের প্রতি টান, সন্তানের পিতার প্রতি দায়িত্ববোধ আবার ভাইয়ে-ভাইয়ে বিরোধ, হিংসা সবই ফুটে উঠেছে সিনেমাটিতে। আশা করি ভালো লাগবে চীনা সিনেমাটি। অসাধারণ পোষাকের সাজ রয়েছে এখানে। আমি অবশ্য ইংরেজীতে অনুবাদিত ছবিটি দেখেছি..................।।
শুভ সকাল।