আমাদের শ্রেদ্ধেয় শিক্ষাবিদ সরদার ফজলুল করিমের কয়েকটি লেখা পড়ে বোঝা যায়, তিনি একজন দার্শনিককে খুব আদর করেন। আর সে হল, ফরাসি দার্শনিক রুশো। রুশোর প্রতি মমতায় তিনি রুশোকে উল্লেখ করেন, “আমার প্রিয় রুশো” হিসেবে। রুশোর যে লাবন্যময় চিত্র আমরা দেখি তাতে ‘প্রিয়’ শব্দটির ব্যবহার বেখাপ্যা লাগে না। সরদার স্যারের মত, আমারও একজন প্রিয় ব্যক্তি রয়েছেন। তাকে কি দ্বারা সম্বোধন করব বুঝে উঠতে পারছি না। কবি? সাহিত্যিক? উপন্যাসিক? গীতিকার? দার্শনিক? তার লেখা গান গুলো, যেন আমার জন্যই লেখা। বিভিন্ন স্থান সময়ে, বিভিন্ন মানসিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে তিনি গান গুলো লিখেছেন যেন শুধু আমারই জন্য। তাই তাকে বলব, “আমার মনের গীতিকবি”। তিনি আমারই রবীন্দ্রনাথ।
কোটি মানুষের ভীড়ে মোদের এই ঢাকা শহরে আমার নিসঙ্গতা যখন মনটাকে খুঁচিয়ে রক্তাত্ব করে, রবীঠাকুর বোঝান, “আমার এ পথ চাওয়াতেই নাকি আনন্দ”। মনটা পথ চাওয়া থেকেই আনন্দ খুঁজে নেয়। যখন দেখি সবার সাথে মনের মানুষটাও চলে যাচ্ছে, তাকে ডাঁকবার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না, তখন রবীঠাকুর শিখিয়ে দেন বলতে, “যেতে দাও,গেল যারা,তুমি যেও না,আমার বাদলের গান হয়নি সারা”।
মরুভূমিতে যেমন বৃষ্টি নামে, তেমনি নিসঙ্গ এই জীবনেও মাঝে মাঝে অতিথি আসে। হঠাৎ, মন সজীব হয়ে উঠে, তখন রবীন্দ্রনাথের ভাষায় কানে বন্যা গেয়ে উঠেন, “কে দিল আবার আঘাত,আমারও দুয়ারে, এ নিশিত কালে কে আসি দাঁড়ায়ে,খুঁজিতে আসিলে কাহারে”। দিন কেটে যায় একটা প্রশ্নে কি চাই? “সুখ নাকি প্রেম”। রবীঠাকুর বলেন সাগর সেনের কন্ঠে “এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মেলে না, শুধু সুখ চলে যায়, এমনি মায়ার ছলনা”। মন স্থির হয়ে উঠে, কারন আসল প্রেমে মানুষ নাকি, সুখ দুঃখ ভুলে সুখ পায়।
কি করে সম্ভব? ১৮৬১ থেকে ১৯৪১ এই আশি বছরে রবীন্দ্রনাথ কি আমাকে কোথাও পেয়েছিলেন। নাকি আমি তাকে বলেছিলাম, আমার মনের কথা? নাকি রবীন্দ্রনাথ মানুষের জন্য গান লিখেছিলেন? তবে, সব মানুষের জীবন কি একই? কোনভাবে এ প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে পারি কি?
মানুষের জগৎ বড় ভয়ঙ্কর। বিবর্তনের ধারায় সৃষ্টির শ্রেষ্ট জীব হবার সৌভাগ্যে উল্লাসিত হতাম আমি, আর আজ কেন জানি না উলটো পথে হাটতে মন চায়। এ শ্রেষ্টত্ব আজ বড় হাস্যকর লাগে। মানব শাবক হওয়ায় এই পঁচিশ বছর বয়সেও আমার শিক্ষা জীবন চলছে। জীবনকে যত বুঝতে শিখছি, ততই নিসঙ্গতা আঁকড়ে ধরছে। সময়ে সাথে আমার চোখ দৃশ্য মানুষদের জগতের অদৃশ্য সত্য গুলো ধরতে শিখছে। নাটক করতে শিখাচ্ছে সমাজ। সবকিছুর মাঝে ক্ষত বিক্ষত আমার মন। এরই মাঝে আসলাম এই সাইবার জগৎ ব্লগে। এখানেও যদি মন না মানে, তবে চলে যাবার আগে, দিয়ে যাব একটি শেষের কবিতা। এটাও রবীন্দ্রনাথই আমাকে জন্য লিখে দিয়ে গেছেন,
এই কথাটি মনে রেখ।
তোমাদের এই হাসি খেলায়
আমিত গান গেয়েছিলাম
জীর্ণপাতা ঝরার বেলায়।
শুক্নো ঘাসে শুন্য বনে আপন মনে,
অনাদরে অবহেলায়
আমিতো গান গেয়েছিলাম
জীর্ণপাতা ঝরার বেলায়।।
দিনের পথিক মনে রেখ
আমি চলেছিলেম রাতে
সন্ধ্যাপ্রদীপ নিয়ে হাতে।
যখন আমার ওপার থেকে গেল ডেকে,
ভেসেছিলাম ভাঙা ভেলায়,
আমিত গান গেয়েছিলেম
জীর্ণপাতা ঝরার বেলায়।
~রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর~
ফাল্গুন ৩, ১৩৩২
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৩:২২