
এই কান্না কিন্তু আপনাদের ভোট চাওয়ার সময় কান্নার মত ফেইক না
তখন আমি চট্টগ্রাম সরকারী বানিজ্য কলেজে একাউন্টিং অনার্সে পড়ি। মনে হয় সালটা ২০০৮ এর জরুরী সরকারের সময়কালীন। ক্লাসে স্যারে ফিনান্স পড়াচ্ছেন। বলছেন এই যে তোমাদের ফেস ভ্যালু, ব্রেক ইভেন, ইপিএস, ডিভেডেন্ড, স্টক ইন্ডেক্স পড়াচ্ছি এগুলো যদি আরো ভাল করে এবং প্রাক্টিকালি বুঝতে চাও তাহলে তোমাদের শেয়ার বাজারে যেতে হবে। আমরা তখন এর আগা মাথা তেমন বুঝতামনা। যাহোক আস্তে আস্তে যখন বুঝা শুরু করলাম টার্মগুলো তখন এক সিনিয়র ভাইয়ের সাথে ভয়ে ভয়ে একদিন চলে গেলাম তৎকালীন ভনিক বাংলা যা এখন লংকা বাংলা ফাইন্যান্স নামে পরিচিত সেই ব্রোকারেজ হাউসে। আস্তে আস্তে সেখানে যাওয়া শুরু হল। সাথে ছিল এখন লন্ডন এইচএসবিসিতে চাকুরী করা বন্ধু সুলতান আর স্টানচাট বাংলাদেশের মামুন। যেহেতু আমরা শেয়ার বাজারের খুটিনাটি খুটিনাটি আগে থেকে জেনেছি সেহেতু আমি সাহস করে সেখানে একাউন্ট খুলে ফেললাম। আমার দেখা দেখি মামুন সুলতানও খুললো। এভাবে আমরা তিনবন্ধু অনেক এনালাইসিস করে তখন ফান্ডামেন্টালি খুবই শক্তিশালী ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ার ক্রয় করলাম। আমি ১ লক্ষ টাকার মামুন সুলতান ৩ লক্ষ টাকার শেয়ার নিল। এরপর শুরু হল এক অন্যরকম উত্তেজনা। আমাদের টার্গেট আমাদের শিক্ষকের কথামত ডিভিডেন্ট এর দিকে। কারন কোম্পানি শক্তিশালী হল ভাল ডিভিডেন্ট আশা করা যায়। তাছাড়া বিগত বছর পর্যালোচনা করে দেখা গেল এনবিএল নিয়মিত ভালোই স্টক ডিভিডেন্ট দিয়ে আসছে। যথারীতি ভালোই ডিক্লারেশন এলো। ৫০ কি ৫৫% স্টক ডিভিডেন্ট দিল। আমরাতো খুশিতে আটখানা। ১ বছরে অনেক লাভ হতে যাচ্ছে। আমি ১ লাখে লাভ করলাম ১৫ হাজার টাকা। সন্তুষ্ট ছিলাম। তখন শেয়ার বাজারের আজকের ক্রেইজ ছিলনা। চলছিল ভালোই। নতুন সরকার এল। শেয়ার বাজারে বন্যার জোয়ারও এল। নতুন নতুন মানুষের আনাগোনা দেখা শুরু করলাম। টাকার বস্তা নিয়ে হাজির হতে লাগলো লোকজন। আমরা সাইডবেঞ্চে চলে গেলাম।
গ্রেফতার হচ্ছে বিনিয়োগকারী, অথচ লুটেরারা নিরাপদ
তারপর শুরু হল আসল খেলা। গুজুবে সয়লাব বাঁজার। এই কাল ওটা ডাবল হবে। ১ মাস পর তিনগুন হবে। ১ বছর পর ১০ গুন হবে। এভাবেই শেয়ার বেচাকেনা শুরু হয়ে গেল। আফসোস এসব গুজব ছড়ানো হত স্বয়ং স্টক এক্সচেঞ্জের সাথে জড়িত লোকজন এর মাধ্যমে। সরকারের কোন গা নেই। মানুষও ছুটছে পঙ্গপালের মত। আমরা যারা ফান্ডামেন্টাল দেখে বিনিয়োগ করছিলাম তাদের অবস্থাও নাজুক হতে লাগলো। কারন জ্যাকপটের মত টাকা তুলে নিচ্ছে নটন গজিয়ে উঠা বিনিয়োগকারীরা। নীতিমালা নেই বাজারে। যে যার মত টাকা লোপাট করছে। সরকারের কোন নজরদারী নেই। উল্টো সরকারী লোকজন এসবের সাথে দায়ী বলে তদন্তে বের হয়ে আসে। বাজারে আসে মহাপতন। যে সরকার তার আগে বিশ্ব অর্থনৈতিক পতন স্বত্বেও বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে পতন না ঘটায় বাহবা কুড়াচ্চিল, নিজের প্রশংসায় নিজে পঞ্চমুখ ছিল সেই সরকার বলা শুরু করলো, শেয়ার বাজারের কোন দায়ভার সরকার বহন করবেনা। মন্ত্রী বললেন, পুজিবাজারে বিক্ষোভকারীরা বিনিয়োগকারী নয়,তারা ফটকাবাজ। হায় কি নির্মম পরিহাস। আপনাদের দায়ভারতো কেউ বহন করতে বলেনি। বিনিয়োগকারীরা দাবী করেছিল, যারা শেয়ার বাজারের টাকা লোপাট করে অট্টালিকা গড়েছে দেশে বিদেশে, যাদের নাম এসেছে তদন্ত রিপোর্টে তাদের ধরে বিচার করে বিনিয়োগকারীদের টাকা আবার বাজারে ফিরিয়ে আনা। না আপনার করলেন উল্টো। কফিনে শেষ ফেরেক মেরে দেয়ার মত আপনারা এক শেয়ালকে দিলেন শেয়ার বাজারের দায়িত্ব। যারা প্রমানিত ফটকাবাজ তাদের পদায়ন করা হল বাজারের গুরুত্বপুর্ন নীতি নির্ধারক পজিশনে। কি নির্মম তামাশাটাই না করলেন আমাদের সাথে। দুই হাজার তিন হাজার কোঁটি টাকার লেনদেন এখন নেমে এসেছে দুই তিনশ তে। এই হাজার হাজার কোঁটি টাকা কোথায় গেল?? কারা নিয়ে গেল? কিভাবে নিয়ে গেল?

আপনার অর্থমন্ত্রী আমাদের বলেছিল ফটকাবাজ। আপনার বিরাট ক্ষমতাধর অর্থ উপদেষ্ঠা বললেন শেয়ার বাজারের সামনে যারা প্রটেস্ট করে তারা সুনাগরিক নয়। আপনি এখনো এ ব্যাপারে মুখ খুলেননি। আজকে আপনার পুলিশ বাহিনী গতকাল থেকে চলে আসা অত্যন্ত শান্তিপুর্ন অনশন কর্মসুচিতে দিল হামলা। এভাবে আর কত দিন? নাগরিকদের প্রতিবাদের সকল পথ রুদ্ধ করার ফল কখনই ভাল ফল দেয়না। একভাবে না একভাবে তা প্রকাশ হবেই। সেই প্রকাশ শাসকগোষ্ঠীর জন্য খুবই খারাপ পরিনতি বয়ে আনবে। তাই এখনো বলি সাবধান হউন। সময় খুব একটা হাতে নেই। আজ অয়াল স্ট্রীট এর মত স্থানেও ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ। পুঁজিপতিদের আক্রমণে দিশেহারা মানুষ দলে দলে নেমে এসেছে রাস্তায়। হয়ত এখানেও মানুষ সেই অপেক্ষাটির জন্য অপেক্ষা করছে। তাই একটু হলেও সময় দিয়ে ব্যাপারটি ভাবুন।
আমাদের এই কান্নার শব্দ, মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার আর্তনাদ শুনার কেউ কি দেশে আছেন?
আমরা হেরে গেছি। আমাদের স্বাধীনতার অহংকার, গৌরব মাটিতে মিশে গেছে। হায়রে অভাগা জাতি আমরা !!
গ্রেফতার হচ্ছে বিনিয়োগকারী, অথচ লুটেরারা নিরাপদ
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১:৫৯