তারেক মাসুদ : কর্মসমগ্র
মিশুক মুনীর : কর্মসমগ্র
১৭ই আগস্ট' ২০১১
আজ বুধবার দুপুর দেড়টায় ফরিদপুর ভাঙ্গা পাইলট হাইস্কুল মাঠে তারেক মাসুদের জানাজা শেষে নূরপুরে গ্রামের বাড়ির পূর্ব পাশের আঙিনায় তাঁকে সমাহিত করা হয়। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে ফিরে সাংবাদিক ব্লগার হাসান শরিফ প্রথম আলো'তে বিস্তারিত লিখেছেন : আঙিনায় আশ্রয় নিলেন তারেক ।
১৬ই আগস্ট' ২০১১
আজ মঙ্গলবার দুপুরে বনানী কবরস্থানে মিশুক মুনীর’কে সমাহিত করা হয়। মিশুক মুনীরের দাফন শেষে বিমানবন্দর সড়কে নিরাপদ সড়কের দাবীতে মানববন্ধন হয়। মানববন্ধনে মিশুক মুনীরের স্ত্রী মঞ্জুলী কাজী, রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে বলেন...
১৪ই আগস্ট' ২০১১ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে:
সকাল ১০টার আগেই প্রিয়মানুষ দুজনকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকেন তাদের ভক্ত, শুভানুধ্যায়ীরা। চারদিকে থমথমে পরিবেশ। সাড়ে ১০টার কিছুপরে কফিন দু’টো পৌছাঁয় শহীদ মিনারে। ততোক্ষনে চারদিকে আক্ষরিক অর্থেই মানুষের ঢল নেমেছিল। এক ছোট্টমনিকে দেখলাম, এক হাতে ধরেছে বাবার কড়ে আঙ্গুল, অন্য হাতে কয়েকটি গোলাপ। সরকারের মন্ত্রী-আমলা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সংবাদকর্মী থেকে সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী সবাই এখানে হাজির হঠাৎ ঝরে পড়া নক্ষত্রদ্বয়কে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে।
ঢাবি কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণ ও এফডিসি’তে নামাজে জানাজা শেষে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর’র মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিমঘরে রাখা হয়েছে। ক্যাথরিন মাসুদের মা ঢাকায় পৌছাঁলে তারেক মাসুদের দাফন করার স্থান নির্ধারণ করা হবে এবং মিশুক মুনীরের ভাই আহমেদ মুনীর ভাষণ আগামী মঙ্গলবার দেশে ফেরার পর তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে। এর আগপর্যন্ত দুজনের মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিমঘরেই থাকবে।
এ সম্পর্কে বিস্তারিত খবর : প্রথম আলো । বিডিনিউজ২৪ । বাংলানিউজ২৪ ।
তারেক মাসুদ : কে শোনাবে আর..... মুক্তির গান
আজ সকাল সাড়ে ১০ থেকে ১২টা পর্যন্ত তারেক মাসুদ ও আশফাক মুনীর মিশুক-এর মরদেহ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। তাদের প্রথম জানাজা হবে আজ রোববার ১২টা ৩০মিনিটে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে।
মেডিকেলের আনুষ্ঠানিকতা সেরে তারেক মাসুদের মরদেহ ফার্মগেটে তার বোনের বাসায় এবং মিশুক মুনীরের মরদেহ তার বনানীর বাসায় নেওয়া হয়। রাতে লাশ রাখা হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিমঘরে।
টিভি রিপোর্ট থেকে নেয়া ভিডিওচিত্রে দুর্ঘটনার আদ্যোপান্ত এখানে.....
ক্যাথরিন মাসুদ এখন আশঙ্কামুক্ত। তাঁকে স্কয়ার হাসপাতালের নিউরো বিভাগের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। বাকি দুজনও আশঙ্কামুক্ত। এর মধ্যে ঢালী আল মামুন দুই হাতে ও চোয়ালে ব্যথা পেয়েছেন, তাঁকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে, তাঁর স্ত্রী জলির আঘাত ততটা গুরুতর নয়। এ ছাড়া তারেক মাসুদের প্রডাকশন সহকারী সাইদুলকে প্রাথমিক চিকিত্সা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
কিছুক্ষন আগে ‘বাংলার সায়মন ড্রিং’ খ্যাত আশফাক মুনীর মিশুক’র মরদেহ তার কর্মস্থল কারওয়ানবাজারে এটিএন নিউজের প্রধান কার্যালয়ের সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। এখন তার মরদেহ বনানীতে তার নিজ বাসভবনের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
তারেক মাসুদ ও আশফাক (মিশুক) মুনীরসহ ৫ জনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ডিএমসি) হাসপাতালে পৌঁছেছে।
ক্যাথরিন মাসুদের জন্য রক্তের প্রয়োজন। রক্তের গ্রুপ “ও নেগেটিভ’ (O- negetive), এবং ঢালী আল মামুনের জন্যে ও পজেটিভ (O+ possitive)। তারা এখন স্কয়ার হাসপাতালে আছেন। কেউ রক্ত দিতে চাইলে ০১৭১১৫৩৮৫৩০ নম্বরে ফোন করে স্কয়ার হাসপাতালে চলে আসুন।
মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলী এটিএন নিউজ-কে টেলিফোনে জানাচ্ছেন...
আহত ক্যাথরিন মাসুদ, চিত্রশিল্পী ঢালী আল-মামুন ও তার স্ত্রী দিলারা বেগম জলি এবং তারেকের প্রোডাকশন ইউনিটের সহকারী সাইদুল ইসলাম-কে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের ভর্তি করা হয়েছে।
এইমাত্র তারেক মাসুদ ও আশফাক মুনীর মিশুক’র লাশ মানিকগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে নেয়ার উদ্দেশ্যে গড়িতে তোলা হয়েছে...
---------------------------------------------------------------------------------------
আজ দুপুরে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ তার নতুন ছবি ‘কাগজের ফুল’ এর শুটিং স্পট দেখে ফেরার পথে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বালিয়াজুড়িতে এক সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হন। এতে তিনি ও এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশফাক মুনীর মিশুক সহ পাঁচ জন নিহত এবং ক্যাথরিন মাসুদসহ তিন জন গুরুতর আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় নিহত বাকি তিনজন হলেন, মাইক্রোবাসের চালক মুস্তাফিজ, তারেক মাসুদের প্রোডাকশন ম্যানেজার ওয়াসিম ও কর্মী জামাল।
দুর্ঘটনা কবলিত গাড়িটিতে এটিএন নিউজের স্থানীয় সংবাদদাতা মুনিস রফিকও গাড়িতে ছিলেন। তিনি একটি গণমাধ্যমকে জানান, মানিকগঞ্জে একটি শুটিং স্পট দেখে ফেরার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মিশুক মুনীর ও তারেক মাসুদ ছাড়াও গাড়ির চালকসহ আরো তিন জন ঘটনাস্থলে মারা যান। এছাড়া ক্যাথরিন মাসুদসহ গুরুতর তিন জনকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তারেকের মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদও একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজক। ঢালী আল-মামুন ও তার স্ত্রী দিলারা বেগম জলি দুজনেই চিত্রশিল্পী হিসেবে দেশে ও দেশের বাইরে পরিচিত মুখ।
---------------------------------------------------------------------------------------
তারেক মাসুদ তার বাল্যকালের অধিকাংশ সময়ই কাটিয়েছিলেন মাদ্রাসায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার মাদ্রাসা শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। যুদ্ধের পর তিনি সাধারণ শিক্ষার জগতে প্রবেশ করেন এবং একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকেছেন এবং দেশে-বিদেশে চলচ্চিত্র বিষয়ক অসংখ্য কর্মশালা এবং কোর্সে অংশ নিয়েছিলেন। তারেক মাসুদ ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন `মাটির ময়না` (২০০২) এবং মুক্তির গান (১৯৯৫) চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে। বিশেষ করে, মাটির ময়নার জন্য তিনি অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার পান। এগুলোর মধ্যে ২০০২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিটিকস অ্যাওয়ার্ড ও পরিচালনার জন্য তিনি পুরস্কার পান।
তিনি ইউনিসন, সে, ইন দ্য নেইম অফ সেফ্টি, ভয়েসেস অফ চিলড্রেন, আ কাইন্ড অফ চাইল্ডহুড, নারীর কথাসহ বেশ কয়েকটি ডকুমেন্টারি নির্মাণ করে মুভি বোদ্ধাদের শ্রদ্ধার আসনে স্থান করে নিয়েছেন। এছাড়াও তার নির্মাণ করা প্রামাণ্যচিত্র এবং চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে সোনার বেড়ি (১৯৮৫) আদম সুরত (১৯৮৯), মুক্তির গান (১৯৯৫), মুক্তির কথা (১৯৯৬), মাটির ময়না (২০০২) অন্তর্যাত্রা (২০০৬) রানওয়ে (২০১০) ও নরসুন্দর। মাটির ময়না প্রথম বাংলাদেশি সিনেমা হিসেবে অস্কার প্রতিযোগিতায় বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এডিবনার্গ, মন্ট্রিল, কায়রো উৎসবে মাটির ময়না প্রদর্শিত হয়। পাশাপাশি ২০০২ সালে মারাকেশ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার লাভ করে। ২০০৩ সালে করাচি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও সেরা ছবির পুরস্কার লাভ করে। ২০০৪ সালে ছবিটি ব্রিটেনের ডিরেক্টরস গিল্ড পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। তারেক মাসুদ বাংলাদেশের বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সংগঠন বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৮৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবের কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্ব পালন করেন।
সম্প্রতি কাজ করছিলেন তার নতুন চলচিত্র ‘কাগজের ফুল’ নিয়ে। ডেস্ক ওয়ার্ক শেষ করার পর এ বছরই শুরু হওয়ার কথা ছিল এর শুটিং। নতুন ছবি 'কাগজের ফুল' এর 'লোকেশন' দেখতে মানিকগঞ্জ যায় দলটি। সেখান থেকে ফেরার পথেই এ দুর্ঘটনা ঘটে।
তারেক মাসুদ : কর্মসমগ্র
তারেক মাসুদ সম্পর্কে আরও তথ্য আছে এখানে ।
নারীর কথা প্রামান্যচিত্র নিয়ে তারেক মাসুদ’র একটি সাক্ষাতকার আছে এখানে।
তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ’র একটি একান্ত সাক্ষাতকার আছে এখানে।
---------------------------------------------------------------------------------------
মিশুক মুনীর। পুরো নাম আশফাক মুনীর মিশুক দীর্ঘদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ব্রডকাস্ট জার্নালিসম বিষয়ে শিক্ষকতায় নিযুক্ত ছিলেন। তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবী নাট্যকার মুনীর চৌধুরীর ছেলে। শিক্ষকতার চেয়ে ক্যামেরা হাতে কাজ করাটাই ছিলো তার সবচেয়ে পছন্দের। যখন দেশে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বিকাশ হয়নি তখন সেই টানেই তিনি ছুটতেন দেশের বাইরে। তিনি দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও ইউরোপেরে বিভিন্ন জায়গায় বিবিসির ক্যামেরা পারসন হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। এছাড়া তিনি কানাডার রিয়েল টেলিভিশনের হেড অব ব্রডকাস্ট অপারেশন হিসেবে কাজ করেছেন। বাংলাদেশর প্রথম টেরিস্ট্রেরিয়াল চ্যানেল একুশে টেলিভিশন চালু হওয়ার সময় হেড অব অপারেশন্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। নিজের হাতে গড়ে তোলেন একুশের সংবাদ টিম। নাম পান বাংলার সায়মন ড্রিং। তিনি বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস, চ্যানেল ফোর ও সিবিসি টেলিভিশনের ক্যামেরা অপারেটর হিসেবে কাজ করেন। 'রিটার্ন টু কান্দাহার', 'ওয়ার্ডস অব ফ্রিডম' প্রামাণ্যচিত্রগুলোতে কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু বিদেশের জন্য নয় দেশের জন্যই দেশে ব্রডকাস্ট জার্নালিজমের বিকাশেই কাজ করতে চাইতেন মিশুক মুনীর। সেকারণে গত বছর দেশে ফিরে এটিএন নিউজের সিইওর দায়িত্ব নেন।
মিশুক মুনীর : কর্মসমগ্র
আশফাক মুনীর মিশুক সম্পর্কে আরও তথ্য আছে এখানে ।
ফিলিস্তিন নিয়ে দ্যা রিয়েল নিউজে করা তার একটি প্রতিবেদন আছে এখানে।
ইরাকে তুর্কী হামলা নিয়ে দ্যা রিয়েল নিউজের একটি প্রতিবেদন আছে এখানে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১২ ভোর ৫:৩২