ওসামা বিন লাদেন নিহত হয়েছেন। কিন্তু ওসামা বিন লাদেন এর মৃত্যু’র খবরে’র চেয়ে আমার জানালা’র পাশে মৃত আম গাছ কাটার শব্দটা কানে লাগছে বেশি। গাছটা’র অবশ্য আজকেই মারা যায় নাই। আসলে ঠিক কখন মারা গেল সেটাও ঠিক জানি না। গত গ্রীস্মে’র রোদেও এর গাছে আম ছিলো। ক’বছর ধরেই এই অসম্ভব জড়াজড়ি করে ওঠা আশেপাশে’র বাড়িগুলো মাঝে পরে তাকে কেমন বিহ্বল দেখাতো। এরকম পরিস্হিতি সে আগে কখনো পরে নাই। বাড়ি’র এক কোনাতে বড় হলেও হাত পা ছড়াবার মোটামুটি জায়গা ছিলো তার আশেপাশে। আকাশে তো কোন সীমানা নাই। তাই আজকাল যেমন বাড়ি গুলোতে বুদ্ধি করে দোতালা’র পর থেকে ঘরের বারান্দা গুলো রাস্তার উপর টেনে দেয়া হয়, সেইরকম সেও তার ডালপালা ছড়িয়ে ছিলো আমাদের বাসার সীমানা দেয়ালে’র উপর দিয়ে পাশে’র ঐদিকে আঙিনায়। আর এই দিকে একে বারে আমাদের একতলা বাড়ি’র ছাদের উপর পর্যন্ত । তখন অবশ্য বাড়ির দেয়ালেরপাশে ছিলো পুকুর। তাই তার এই অবৈধ বেড়ে ওঠা নিয়ে পুকুরে’র মাছরা, আলো বন্ঞিত ঘাসরা তেমন প্রশ্ন তোলে নি। বরং এলাকার ছোট ছোট ছিঁচ্কে চোরদের এক মৌন সমর্থনতো ছিলোই। তবু আম গাছ বলতে যে বিশাল আমগাছে’র ছবি চোখে ভেসে আসে সেইরকম সে কখনোই হয়ে উঠতে পারে নাই। পাশাপাশি তিনটা গাছ গায়ে গা লেগে বড় হওয়াতে দূর হতে বেশপাতা ছড়ানো হয়তো লাগতো, কিন্তু আসলে আমার মতই শুকনা শাকনা ছিলো গাছ গুলো।
তখন ছিলো গোয়েন্দা গিরি আর তদন্তে’র জন্য হেডকোয়ার্টার এর যুগ আমার। কিন্তু কিশোর পাশা’র মতো ইয়ার্ডের নিচে তো আমার কোন গোপন আস্তানা ছিলো না। ঘরে’র মধ্যে আউট বই পড়াও সব সময় নিরাপদ না। তাই ছাদ দিয়ে গিয়ে গাছে’র মধ্যে ঢুকে দুপুর কে বিকাল বানিয়ে ফেলতাম। গাছটার একেবারে মাঝখানটা বসা’র জন্য কিভাবে জানি একটা বাই ডিফল্ট আসনটাইপ ছিলো। [কিছুক্ষণ বসে থাকলে অবশ্য আপনা আপনি পশ্চাতদেশ ব্যথা হয়ে যেত]। তিন গোয়েন্দার কত রহস্যে’র সমাধান আমার এই আমগাছের ভিতর হয়েছে তা এখন আর মনে করতে পারি না। মাঝে মাঝে বর্শি’র মাথায় নিষ্ঠুর ভাবে ফরিং এর দেহ লাগিয়ে গাছে পা দুলিয়ে আরো নিষ্ঠুর ভাবে মাছও ধরতাম। সেই মাছগুলো আসলে খাওয়া যেত না। ‘রাগাটাকি’ নামের মাছ। সেগুলো ধরে ধরে একলিটার এর পানি’র বোতলে ভরে রাখতাম। বেচারারা তাদের মুখ থেকে বর্শি খোলার ধকল সহ্য করতে না পেরে একদিনে’র মাথায়ই মরে যেতো! খুব বেশি আগে’র তো কথা না। আট-নয় বছর? এখন মনে হয় এখানে এইরকম কি কিছু হয়ে ছিলো কখনো!
আস্তে আস্তে আমি বড় হতে শুরু করলাম আর গাছগুলো যেন আমার তুলনায় ছোট হয়ে যেতে লাগলো। যেমন হাউজিং জ্যামে আকাশ ছোট হতে লাগলো। পাশে’র পুকুর ভরাট করে বাড়ি হতে লাগলো। গাছটাকে কেটে ফেলা না হলেও বেয়াদব ভাবে ছড়িয়ে পড়া ডাল গুলো ছেটে দিয়ে বেড়ে উঠলো দেয়াল। প্রথমে এক তলা, তারপর দুই তলা। পাশ ঘেষে উঠলো আরেকটা বাড়ি যেটা আসলে সাত তলা হলেও আমাদের বাড়ি’র ছাদ থেকে ওটার ছাদ দেখতে হলে প্রায় উন আশি ডিগ্রী অ্যাঙেলে তাকাতে হয়। তাই আমরা ওইটার নাম দিলাম চব্বিশ তলা! দুই বাড়ির’র মাঝে পরে আমার দক্ষিনে’র জানালায় আকাশ হয়ে গেল একটা লম্বা আয়তক্ষেত্রে’র মতো!
ডালপালাহীন ভাবে শুধু শরীরটা নিয়ে দু’দিকের দেয়ালে’র সাথে গা বাঁচিয়ে থাকতে থাকতে আমার ভীষন বিষন্ন গাছগুলো কখন মরে গেলো টেরই পেলাম না! হয়তো তাদের শিকড়ও গিয়ে ঠেকেছিলো আমাদের বাড়ি’র পাঁচতলা ফাউন্ডেশনে’র গভীর কংক্রিটে।
ঠুক! ঠুক!! ঠুকক্!!!
মে ০২, ২০১১. দুপুর ০১.১১
আলোচিত ব্লগ
পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?
মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে
যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন
দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?
দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন
শেখস্তান.....
শেখস্তান.....
বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন
সেকালের বিয়ের খাওয়া
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন