somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিলু....বিলু......বিলু.......মাথায় নাই ঘিলু......!!!!

২১ শে আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৩:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা সময় ছিল যখন খেয়ে না খেয়ে জাফর ইকবালের, হুমায়ুন আর রকিব হাসানের বই পড়তাম! ছোটবেলা থেকেই ভাইবোনদের ‘আউট বই’ পড়ার বদভ্যাস ছিলো বলে আমারো হয়ে গিয়েছিল। আরেকটু বড় হয়েই (আমি আসলে আমার নিজের কাছে কখনোই ছোট ছিলাম না...দুঃখের ব্যাপার কখনো বড়ও হই নি!!) বড়দের বই যেমন মাসুদ রানা, সমরেশ এমনকি হুমায়ুন আজাদের ‘সবকিছু ভেঙে পড়ে’ আর তসলিমা নাসরিনে’র ‘লজ্জা’ বইটাও পড়ে ফেলেছিলাম!!

সে যাই হোক। সেই কাল গত হয়েছে। ইন্টারনেট এর কল্যাণ আর আরো কিছুটা বড়(!) হয়ে যাওয়ায় বই পড়াটা কেমন যেন কমে শূন্যের কাছাকাছি চলে এসেছে!

সেইদিন এক মেয়ের সাথে কথা হচ্ছে অনলাইনে।

হ্যালো দিলাম। জিজ্ঞেস করলাম, “কেমন আছো”?

সাথে সাথেই জবাব পেলাম। একটু অবাক হলাম। কারণ আমাদের জ্বালা যন্ত্রনায় মেয়েরা সাধারণত অতিষ্ঠ থাকে। এত তাড়াতাড়ি রিপ্লাই পাব আশা করিনি!

“খুব ভালো”!

মজা পেলাম। ‘খুব ভালো’ কথাটা আজকাল খুব একটা শুনি না। সবার মুখেই ‘এইতো’! কইতো আমি আর তা আর বুঝি না!

হাসলাম। বললাম, “আমার নাম টুকুন” [এটা যে মিথ্যা নাম সেটাও বলে দিলাম] ।

বললাম, “তড়িৎ প্রকৌশলে পড়ছি। আর ‘খুব ভাল থাকা’ কারো সাথে আমার কথা বলতে কোন আপত্তি নাই!”


জবাব এলো, “ইইই [তড়িৎ প্রকৌশলই!], চুয়েট, হাসি মুখের কারো সাথে আড্ডা দিতে আপত্তি নাই!”

খুবই মজা পেলাম। মেয়েদের মধ্যে সুক্ষ্ণ হিউমার দেখা পাওয়া মুশকিল [আরো মুশকিল হলো আমি আসলে ‘মেয়ে’ই খুব দেখেছি!!! ]

“তুমি কোথায় পড়ছো?”, জিজ্ঞেস করলো সে।

“আমি তোমার তুলনায় যথেষ্ঠই মূর্খ, এ আই উ বি তে পড়ছি” , কুন্ঠিত কন্ঠে জবাব দিলাম।

নাম জানলাম, ‘অপু’।

আমারও আসল নাম জানালাম।

আমার ‘নিক’টা ছিলো টুকুনজিল। সেটা জাফর ইকবালের এক বইয়ের নাম থেকে ধার করা। বইটা পড়েছি কিনা জিজ্ঞেস করাতে বললাম। একটু বাড়তি ভাব জাহির করতে বললাম, “কিছু নতুন আসা বই ছাড়া আমার জাফরের প্রায় সব বইই পড়া”!

ওর ‘অপু’ নাম [যেটা ইংলিশে লিখল আসে ‘আপু’!] সেটা নিয়ে কিছুক্ষন মজা করলাম। সেও আমার ডাক নাম [আমার সত্যি নামও যে খুব শ্রুতিমধুর তা না!] নিয়ে কথা বলতে ছাড়লো না!


এমনি সাধরণ কথা বার্তা হচ্ছে। হঠাৎই কোন কারণ ছাড়াই সে বলে উঠলো,

“বিলু.......বিলু.....বিলু......মাথায় নাই ঘিলু”!!!

আমি তো একটু বেকুব হয়ে গেলাম। কিছু না বুঝেই বললাম, “হ্যা মাথায় নাই ঘিলু”।

বলে “বলো তো, এইটা কোন বইয়ের ছিলো?”

এখন তো মাথা চুলকাতে লাগলাম! আমতা আমতা করে বললাম, জাফরের কোন বইয়ে!?

“এইটা ছিলো টুকুনজিলে”!

আমার তো লজ্জায় মাথা কাটা যাবার মতো অবস্হা! ‘নিক’ নিয়ে বসে আছি কিন্তু এইটা মনে নাই!

“এই জন্যই আমি চুয়েট এ পড়ি বুঝলা! হুহ হু!!” একে তো ‘কাটা’ তার উপর আবার ‘নুন’!!

“হু!”

“প্রুভ করে দিলাম!”, বলেই বিটকেলে একটা হাসি’র ইমো!

কিছু কইতেও পারলাম না, তিতে ঢেকুর গিলে বলতে হলো “তোমার প্রুভে খুবই প্রুভাবিত হইলাম!”

“বলো তো, ইকারুসের নায়কের নাম কি!!”

“আরে কি আজব আমি কি সব বই মুখস্ত করে আছি নাকি!!”, মনে মনে ভাবলাম।
কিছুক্ষন চিন্তা করে বললাম, “মনে নাই!”

“বুলবুল!”

“ও!”

এখন তো আমারও কিছু জিজ্ঞেস করতে হয়! বললাম,

“বলো তো,


বকুল আমার নাম,
আমার সাথে তেড়িবেড়ি...
ঘুষি মারি ধুমধাম...!
আমার সাথে ফাইট?
এমন মাইর দিব
জন্মের মতো টাইট!!!

তারপর....


কাশেম কাশেম
ধুম ধাম ধেম
ভেম ভেম ভেম!

এইগুলো কোন বইয়ে লেখা!!”

দুর্বল প্রচেষ্টা। শুরুতেই লেখা আছে 'বকুল'। যে এইটা পড়েছে তার সাথে সাথেই মনে পড়ে যাবে যে ‘বকুলাপ্পু’!

পেরে গেল!

“পারামন” ?, ওর প্রশ্ন।

“এইটা আবার কি!”

“এইটা জাফর ইকবাল স্যার এর ছো্ট গল্প, যেমন ‘রোবনিশি’!”

“ওহ আচ্ছা!”

“এইটা ছিলো জিনোম গোনোম(!) এ। বলেছিলা তো উনার সব বই পড়েছো!”

“আমি তো তাইই জানতাম আর আমি কি জানি এইরকম কুইজ দিতে হবে কোনদিন!!” ভাবলাম!

আমার তখন মরিয়া অবস্থা! তুমি যদি ‘নাট’ হও আমিও ‘বল্টু’!!

জিজ্ঞেস করলাম, “যারা বায়োবট?”।

“পড়িনি!”

“আহ!!”, ‘যারা বায়োবট’ পড়ে আমার জীবন সার্থক মনে হতে লাগল!

“আমার বন্ধু রাশেদ? [জাফর ইকবালের যে একটা বইও পড়েছে সেও এই বইয়ের নাম জানে! কিন্তু যুদ্ধবস্হায় আর কোন নাম মাথায়ও আসছে না!]”

“পড়েছি, কেঁদেছিও”।

“হুমম”। এই বই পড়ে আমার খরা চোখেও দু’এক ফোটা পানি এসেছিল সে সময়। কিন্তু সেই আমার ‘বন্ধু’ রাশেদ এইরকম শত্রু হতে পারলো!?”

“আর আর?”, মনে মনে হাতড়াতে লাগলাম!

“রাজু আর আগুনালির ভূত?” জিজ্ঞেস করলাম।

“ হা হা হা....বলো তো এই বইয়ের নায়িকা’র নাম কি?”, ওর প্রশ্নে উল্টো বিপদে পড়ে গেলাম।

“আর শোনো এইটা ‘রাজু আর আগুনালির ভূত’ না ‘রাজু ও আগুনালির ভূত’!”, অপুর কারেকশন!

হায় হায়, এই মেয়ে তো জাফর ইকবালের বই পড়েনি, খেয়েছে!!! তাড়াতাড়ি অনলাইন থাকা এক বন্ধুকে টাইপ করলাম, “দোস্ত, রাজু ও আগুনাল বইয়ের মেয়েটার নাম জানি কি!” দেখি রিপ্লাই নাই!

শেষমেষ অপুকে সারেন্ডার করলাম, “জানি না!” আর সাথে সাথেই ঐ বন্ধুর রিপ্লাই “শাওন!”

আমিও সাথে সাথে অপুকে জানালাম, “শাওন...শাওন!!”

“কি? দেখে বললা??”

“না মানে শুনে বললাম আর কি!”

“চিটিং!”

“ইয়ে আধ একটু দেখে বললে কি হয়!!”

সাথে সাথে আরো কিছু মনে পড়ে গেল...’জগলুল সিংগুলারিটি’, ‘অনুরন গোলক’!

“তুমি আর কার বই পড়ো!”

যাক হাতে প্রাণ পেলাম!! অন্তত জাফোরোফোবিয়া(!) থেকে মুক্তি পেলাম! মনে হয় ঐগুলো ওর কমন পড়েনি, তাই প্রসঙ্গ ঘুরাতে..হাহ হা!! এইবার আসো বাছাধন!!

“গল্পগুচ্ছো পড়েছো?” জিজ্ঞেস করলো আমাকে।
আকাশ থেকে পড়লাম! “কার গল্পগুচ্ছ!! রবীন্দ্রনাথ এর ?” , সরল মনে বললাম। ভাবলাম কত মানুষইতো গল্পগুচ্ছ লিখতে পারে!

শুনে হাসতে হাসতে তার গড়াগড়ি অবস্থা, “কেন তোমার কি
নিজের লেখা গল্পগুচ্ছ আছে!?”

আঁতে ঘা!! এমনিতেই ব্লগে একটু লেখা লেখি করি, কয়েকজন দয়া করে এসে ভাল ভাল মন্তব্যও করেন মাঝে মাঝে!! তাই নিয়ে আমার গর্বের শেষ নাই! আমাকে এত বড় কথা!
“হু আমারও আছে কয়েক পাতা!!”, কোনমতে জানালাম!

“ওইগুলা গল্পগুচ্ছ হবে না...ওই গুলা হলো গল্পধূলি....ডাস্ট....বুঝছো?”

“হু, বুঝেছি”!!

“রাগ করলা ?”

আমার এইদিকে প্রেস্টিজ নিয়া টানাটানি, তার উপর জিজ্ঞাসিত হচ্ছি করছে রাগ করলাম কি না!!

আজকে একটা ফয়সালা হয়ে ছাড়বে!! কি কি জানি কঠিন ইংলিশ বই পড়ছি সব নাম মনে করার চেষ্টা করতে লাগলাম!!! বই পড়া নিয়ে এইরকম ছেলেমানুষী যুদ্ধে যেতে হবে কল্পনাও করি নাই! তাই বলে হার মানাতে নারাজ তখন!

“এরিখ মারিয়া রেমার্ক এর ‘অল কোয়ায়েট ইন দ্যা ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’, ‘রোড ব্যাক’, ‘থ্রি কমরেডস’?। মারিও পুজো’র ‘গড ফাদার’? ”

“রেমার্ক না রেমারিও! তবে তুমি আমার চেয়ে বেশি পড়েছো আমি শুধু ওয়েস্ট্রান ফ্রন্টটা পড়েছি”

আমার তখন ছাইড়া দে মা, কাইন্দা বাঁচি অবস্হা! আল্লাহ মাফ করুক আমি আর নাই, তাও যে দয়া করে বলেছে আমি বেশি পড়েছি, এইটুকই থাক!

[আজ অপু'র জন্মদিন। এই লেখাটা লিখে রেখেছিলাম বেশ ক'দিন আগেই!! ভেবে রেখেছিলাম আরো ঠিকঠাক করবো পরে....কিন্তু গতদুই দিনের জ্বরের শেষে আমার আর কিছু মাথায় আসছে না!!! তাছাড়া আমার ধারণা আমি যতই ভাল করে লিখি না কেন সে একটা না একটা ভুল বের করতে পারবেই....এবং আমার প্রেস্টিজ এর ডাইল-খিচুড়ি বানিয়ে ফেলবে....তারচেয়ে এরকমই থাকুক....বলতে পারব...জ্বরের মাথায় কি বলতে....কি খেলেছি!!

শুভ জন্মদিন]



৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×