বৃষ্টি-জলে’র রাত। কেমন একটা আবেশ চারিদিকে।
খুব মনোযোগ দিয়ে বব ডিলানে’র গান শুনছি।
The answer my friend…is blowing in the wind….the answer is blowing in the wind…
হঠাৎ টিডি টিং টিং করে আমার মোবাইলে’র নকিয়া টিউন বেজে উঠলো।
অপরিচিত নাম্বার।
- হ্যালো। কে ?
খানিকটা বিরক্ত ছিলাম। অন্যথা আমি সাধারণত ফোন ধরে সালাম দেই! (সুন্দরী মেয়ে’র পিতা মাতাগণ লক্ষ করুন!)
- কে মানে!?
বেশ বিরক্ত মনে হলো তাকে আমার প্রশ্নে!
কেমন জানি একটু ভ্যাবচেকা খেয়ে গেলাম। ধরেই নিয়ে ছিলাম পরিচিত কেউ ফোন করেছে। কিন্তু এই তন্বী কন্ঠস্বর তো চিনতে পারছি না! তার উপর ‘কে’ জিজ্ঞেস করায় মনে হচ্ছে সপ্তম মাত্রা’র কোন অপরাধ করে ফেলেছি।
- মানে, কে বলছেন আরকি?! আমতা আমতা করে বললাম।
আরেকটু অপেক্ষা করে কে জানে হয়তো চিনতে না পারায় মেজাজ খারাপ করে কেটে দিলো।
ধন্দে পরে গেলাম! এইটা কি আমার ফোন ছিলো! অনেকদিন পর ফোন করেছে কিন্তু চিনতে না পারায় অপমানিত বোধ করেছে? (ওই রকমই মনে হলো!)
নাকি ভুল বুঝতে পেরে কেটে দিয়েছে? (এইটাই নিশ্চয়ই সত্যি স্বাভাবিক কিন্তু মন কি আর তা মানে!)
যাই হোক। মুঠোফোনে কল ব্যাক করার জন্য পর্যাপ্ত যোগ্যতা ছিলো না। মানিব্যাগেও টাকা পয়সা আছে কি নাই তারও কোন ঠিক ঠিকানা নাই। তাই চুপচাপ বসে রইলাম। এইরকম টিপ টিপ বৃষ্টি রাতে আমাকে নিয়ে বিশ্বমণ্ঞে একটা রোমান্টিক সিন(জানেন তো, সেক্সপিয়ার বলেছেন বিশ্বমণ্ঞে আমরা সবাই কেবল মাত্র ক্যারেক্টার!) হবে এইরকম দুরাশা আমার ছিলো না।
কিছুক্ষন বসে থাকা’র পর উশখুশ করতে লাগলাম। নিজেকে বুঝালাম এইটা তো জরুরী ফোন ও হতে পারে! সামনে পরীক্ষা আমার এমনিতেও একটা পরীক্ষা বিষয়ক একটা ফোন আসার কথা ছিলো। (বাহানা)
এমনো তো হতে পারে, কেউ খুব আশা নিয়ে ফোন করেছিলো, চিনতে না পারায় কষ্ট পেলো। আমি মন্দির-মসজিদ ভাঙার রিস্ক নিতে পারলাম না।
(পাদটিকা ২: মানুষের মন ভাঙা আর মন্দির ভাঙা সমান কথা)
টাকা পয়সা খুঁজে বের করে বৃষ্টি মাথায় করে রিচার্জ করে আসলাম। এসে দোনোমোনো করে কল দিলাম। কিছুক্ষন রিং হবার পর কেটে দিলো। user Busy!
কি আশ্চর্য! আবার একটু চিন্তা করে ফোন দিলাম!
“এই মুহুর্তে মোবাইল সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না...আপনি চাইলে ভয়েস মেসেজ.......”
মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো। সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না মানে!! একটু আগেই তো সম্ভব হচ্ছিলো! সন্দেহ আরো বেড়ে গেলো!
টেক্সট করবো? করাটা কি ঠিক হবে? দেখা গেল পরিচিত কেউ ঠিকই কিন্তু একটু ‘বেশি’ পরিচিত?
শেষ পর্যন্ত কৌতুহল জিতলো। মেসেজ দিলাম,
“এতো কষ্ট করে বৃষ্টিতে ভিজে মোবাইল রিচার্জ করে কল ব্যাক করার পর সেল অফ পাওয়ার মানে কি!!”
আধা ঘন্টা পর মনে হলো শেষবারে’র মতো ফোন করে দেখবো নাকি? পেলে পেলাম না পেলে নাই। অন্তত ঘটনাটা কি তা তো জানা দরকার। একবারো মনে হলো না ব্যাপারটা একটু বাড়াবাড়ি হচ্ছে কি না?! [লেখক(!)দের নাকি অনেক অভিজ্ঞতা দরকার পড়ে!]
ফোন করলাম।
কেটে দিলো আবার।
ভাল কথা। শেষ।
সাথে সাথেই কলব্যাক!
- হ্যালো, স্লামালাইকুম! [এইবার আর ভুল করি নাই!]
- হ্যালো....ওপাশ থেকে...একটু অস্পষ্ট...বোধকরি নেটওর্য়াক প্রবলেম।
- হ্যালো...এইবার একটু ধমকের সুরে বললাম!
- হ্যালো...কমল বলছো/ বলছেন!!?
- হ্যা...ল.. কল কেটে গেলো আমার।
আমার তো মাথায় হাত! কমল আমার বড় ভাইয়ে’র নাম!!!
সাথে সাথেই তার কাছ থেকে মেসেজ আসলো.... “Sorry vai, It
was wrong number!”
শিট...শিট...শিট....শিট....শিট...শিট...!!
এইটা তো রং নাম্বার না!!
ভাইয়া দু’বছর আগে সুইডেন চলে যাবার পর থেকে তার নাম্বারটা আমি ব্যবহার করছি! প্রথম প্রথম এইরকম একটু সমস্যায় পড়লেও দু’বছরে তার পরিচিত অপরিচিত প্রায় সবাই জানে যে এইটা এখন আমার নাম্বার। এতোদিন পর এই অবস্হায় পড়তে হবে কে জানতো!! হায়...হায়...!
কিন্তু আমি যে এতো দিন ধরে এই নাম্বার ব্যবহার করি... How come she didn’t know!
সেইরকম লজ্জায় পড়লাম! এখন আবার কল ব্যাক করে যে জানাবো আসল ঘটনা কি...ফোন নিশ্চয়ই তিনি ধরবেন না!
মেসেজ ব্যাক করে দিলাম...
That was network problem most probably…sorry about that. You must be searching Kamol vaia. I’m his younger brother and I have been using his number since last two years! Would you please introduce yourself so that I can inform Vaia about you? – Real
যার সারমর্ম হচ্ছে...ভুল হয়া গেছে! এখন আপনার পরিচয় দিয়ে আমাকে দায় মুক্ত করেন!
বিশ্বমণ্ঞের নাটকে আমার সাথে রোমান্টিক সিন ঘটবে না ভাল কথা কিন্তু এইরকম ট্র্যাজেডিক এন্ডিং হবে কে জানতো!!
অনেক্ষন পর একটা মেসেজ আসলো।
যেটা বাংলা করলে এইরকম দাড়ায়...
“তুমি আমাকে আরেকটা [প্রথম টা!] মেসেজ পাঠিয়েছিলা সেইটা নিশ্চই আমাকে না [অবশ্যই না!!]......
আমি মুন্নি। সলিমুল্লাহ’র।
হ্যা, আমি কমল কে ফোন করেছিলাম। কিন্তু এই ‘কমল’ কে না অন্য কমল কে। যদিও এই কমলও আমার বন্ধু। জানি না এতোদিন পর সে আমাকে চিনবে কি না...কি খবর তার...কেমন আছে সে...জানিও আমাকে....ভালো থেকো...তোমার মুন্নি আপু! ”
অতঃপর এইটা শুধু আমার একার জন্যই ট্র্যাজেডিক উপাখ্যান হিসেবে রইলো না....আমার ভাইয়ে’র জন্যেও নিশ্চই!!
[উপরোক্ত ঘটনা সম্পূর্ণ সত্য এবং বস্তুনিষ্ঠ। কোন বাস্তব চরিত্র বা ঘটনা’র সাথে এর কোন মিল খুঁজে না পেলে আমার কাছ এসে দয়া করে মিলিয়ে নিয়ে যাবেন। এবং ঘটনা এতই বাস্তব যে বাস্তব চরিত্ররা গল্প থেকে উঠে এসে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করার জন্য আন্তরিকভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে! এবং এই গল্পের অনুপ্রেরণা রিমা’পুকে উৎসর্গ করে বলা হচ্ছে- “আমাকে বাঁচায়েন”!।]
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১২