somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাধারণ পাতা

০৯ ই আগস্ট, ২০১০ রাত ৩:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে আমার টিউশুনি’র প্রথম দিন। এমন না যে আমি এই প্রথম পড়াতে যাচ্ছি কাউকে। মাধ্যমিক পরীক্ষার পর থেকেই তো আমাদের দেশের ছেলেমেয়ে দের পড়ানো’র অভিজ্ঞতা চলে আসে!
তবু ভিতরে ভিতরে একটা প্রথম প্রণয় প্রথম প্রণয় ভাব চলে আসছে। মাঝে ছাত্র পড়ানোর দীর্ঘ বিরতিই বোধ হয় এর কারণ!
বিকালের দিকে খুব মনোযোগ দিয়ে গিটারের হুইসকি লুলাবাই এর কর্ড তোলার কাজে ব্যস্ত ছিলাম। হঠাৎ ই ফোন। মৌ’র ।

- ওই তুমি না পড়ানোর কথা বলেছিলা?

মৌ আমার ছোটবোন। মামাতো বোন। এইবার ইন্টারে উঠেছে। ওকে আগেই বলে রাখা ছিলো কেউ পড়তে চাইলে যেন আমাকে বলে।

- হু। পড়াবো।
- মেয়ের নামও মৌ! আমার বান্ধবী। তোমার নাম্বার দিয়ে দিয়েছি। কিছুক্ষন এর মধ্যেই ফোন করবে।
- আচ্ছা।


কিছুক্ষনের মধ্যেই আমার হবু ছাত্রী আরেক মৌ’র ফোন এলো।

- রিয়েল ভাইয়া বলছেন?!
- হ্যা, কে বলছেন।
- আমি মৌ।
- ও আচ্ছা। বলো?
- কোন মৌ বুঝেছেন?
- হ্যা, বুঝছি বলো! ‘আমাদের’ মৌ তোমার কথা বলেছে।
- হ্যা ভাইয়া আপনি কি আজ আসতে পারবেন? বিকালে? নাহ, সন্ধ্যার পর?!


কথা টথা বলে ঠিক ঠাক করলাম কখন আসবো, কোথায় বাসা এইসব। হঠাৎ করেই কেমন জানি ভালো লাগতে শুরু করলো। পড়ানো’র ব্যাপারটা মনে হয় অভ্যস্ততার মধ্যে চলে গেছিলো। সন্ধ্যা হলেই মনে হতো কি জানি করা হচ্ছে না। টাকা পয়সা’র ব্যাপার তো ছিলোই।
যাক, চা – বেনসনের খরচটা উঠে যাবে।
ভাবতে ভাবতে আবার মনোযোগ দিয়ে হুইসকি লুলাবাই এ মন দিলাম।

চা খাবি? আব্বু জিজ্ঞেস করছে।

আলো কেমন কমে কমে এসেছে। আব্বু চা খাবি বললে, কেমন জানি অস্বস্তি হয় আমার। এমনিতে আমার সাথে আব্বুর সাথে সারাদিন যে কয়টা কথা হয় তা গুনে ফেলা যাবে। সকালবেলা দেরি করে উঠলে নাস্তা খাওয়ার বকা আর যদি দেরী না করি তাহলে তো কোন কথাই নাই! প্রায় সব কথাই খাওয়া বিষয়ক অথবা এটা করো বা ওইটা করেছো কেন এই রকম।

আমার প্রায় প্রতিবারেরই আমতা আমতা উত্তর থাকে।
- মম্ ..বানাইবেন?
- হ আমি খামু, খাবি?
- আচ্ছা..।

চা বানাতে বানাতে আজান দিয়ে দিলো। আব্বু ভুলে সব চা এ চিনি দিয়ে বানিয়ে ফেলেছেন।
- সবটুক টা তে চিনি দিয়া ফালাইছি। তুই খায়া ফালা।
আমি কাপে নিয়ে দেখলাম আমার এক মগ হয়েছে। আব্বু নামাজ পড়তে চলে গেলেন। আমি সিড়ি কোঠায় বসে চা এর সাথে একটা সিগেরেট ধরিয়ে খেতে লাগলাম। এইখান থেকে পাশের বাড়ি কারো দেখার উপায় নাই।
আমাদের চারপাশে বাড়ি গুলো ইয়ার দোস্তের মতো একেবারে গলাগলি ধরে বেড়ে উঠেছে একজনের বারান্দা আরেক জনের জানালা প্রায় একই কথা।

খেতে সাতটার বেশী বেজে গেল। ভার্সিটি বন্ধ ছিলো প্রায় এক সপ্তাহ। এই পুরো সপ্তাহ প্রায় একদমই বাসা থেকে বের হইনি। শেষ ক’দিন দাত ব্রাশ, গোসল করা হয়েছে কি না মনে করতে পারছি না। গা দিয়ে খুব সম্ভবত ‘পিগ স্মেল’ আসছে! যদিও এই নিয়ে আমার যে খুব আপত্তি আছে এমনো মনে হচ্ছে না। আমাদের বাসায় প্রায় তেমন কেউ আসে না। বাসায় আব্বু ছাড়া আর কেউ নেই। তাই বাইরে বের না হলে আমি সাধারনত প্রেজেন্টেবল হবার প্রয়োজন বোধ করি না। শুনেছি এইটা আসলে উচ্চতর নোংরামি এবং অলসতার লক্ষন।

সুপ্তি বলতো, তোকে দেখলেই আমার কেনো জানি আমার এলোমেলো বুকশেলফ
মনে হয়! মনে হয় পরিস্কার করে গুছিয়ে দেই!
সু্প্তি আমার বন্ধু। ভাল বন্ধু। সারাক্ষন এক ছেলের প্রেমে হাবুডুবু খেতে থাকে। কিন্তু যেই সব কথা ‘বয়ফ্রেন্ড’ কে বলা যায় না সেগুলো নিয়ে আমার সাথে আসে শেয়ার করতে! আমার কাছে বলা আর একটা গাছের সাথে কথা বলা নাকি একই কথা! শুধু গাছ হু হা করে না। নাহলে আমার ধারণা ও গাছের সাথেও কথা বলতো! ওকে আমার ভালই লাগে। সারাক্ষন প্রেম ভালোবাসা দুঃখ সুখ হিংসা আদর এইসব নিয়েই আছে।

রেজর কেনা হয় নি। পকেটে রেজার কেনার টাকাও নাই। শেভ করা দরকার।
এই অবস্হা অন্তত কোন ‘মেয়ে’র স্টুডেন্ট এর বাসায় প্রথমদিন গিয়ে উপস্থিত হওয়া যায় না। পুরনো শক্ত হয়ে যাওয়া একটা রেজর পাওয়া গেলো। শেষ পর্যন্ত এইটা দিয়েই কাজ চালালাম। নিজেকে আয়নায় একটু যাচাই করলাম।
নাহ, আমি ছেলেটা দেখতে খুব একটা খারাপ না। এভারেজ মার্ক পেয়ে যাবো। আয়নাটা আমার থেকে নিচুতে হওয়া ঝুকে দেখতে হলো। পাচ ফুট নয় ইন্চির সাধারণ উচ্চতার দেহে তালপাতার সেপাই’র দেহ সৌষ্ঠব, আয়নায় আমাকে একটু কঠাক্ষ করার চেষ্টা করলেও পাত্তা দিলাম না। সারাদেহ ডলে এক সপ্তাহর জমে ওঠা দেনা শোধ করতে লাগলাম।

টি-শার্ট খুজতে গিয়ে দেখা গেল প্রায় সব গুলোই ‘ইস্ত্রি’র করার অযত্নে দলা পাকিয়ে আছে। তবে ধোয়া। এইটুক স্বান্তনা পাওয়া গেল। ইস্ত্রি করে নিলেই হলো, ভাবলাম। আর শিট! কারেন্ট চলে গেল।
মোবাইলের আলোতে যা দেখা যায় সেটুকু বুঝে সেই অবস্হাতেই পড়ে রওনা দিলাম।

মানিব্যাগ, মোবাইল, চাবি হুমম সব নিয়েছি। আর কি.... আর কি?, ভাবতে লাগলাম। আমার কাছে ভেতরের দরজার চাবি নেই। এইটা লাগিয়ে দিয়ে বাইরে যাব। বাসায় কেউ নেই। কিছু ভুলে রেখে গেলে আর ঢুকতে পারবো না।
চশমা?
ও নাহ ওইটা নানুদের বাসায় আগেই একদিন ভুলে রেখে এসেছিলাম, মনে পড়লো। এতদিনের বন্ধে চোখের প্রয়োজন পরে নি। যাওয়ার পথে নিয়ে নিতে হবে। পরে দেখা যাবে ডাক দিচ্ছেন ছাত্রীর মা, আমি ছাত্রী ভেবে এগিয়ে যাব। কেলেংকারী হয়ে যাবে।

দরজা লাগিয়ে দেওয়ার সাথে সাথেই মনে পড়লো আমার ড্রয়ারে একটা বেনসন ছিলো। মানিব্যাগ এ টাকা নেই। কিনে খাবো যে তার উপায়ও নেই।

রাস্তায় এসে ছাত্রীকে ফোন দিলাম। বাসায় কিভাবে আসবো জানতে। ধরলো ওর বাবা।

- জ্বি, কিভাবে আসতে হবে?
- আপনি কি ওই মোড়টা কাছে এসেছেন? তাহলে ময়লা ফেলা! ওই ময়লা ধরে সামনে দিকে এসে বায়ে দিকে এসে...সামনের দিকে এসে... বায়ে এসে....
ময়লার ধরে সামনের দিকে আসতে হবে!! এ কি বিপদ! তার উপর এই লোক ডানে বায়ে কি বলছে কিছুই বুঝছি না। তার ভাব দেখে মনে হচ্ছে সে একেবারে গুগল আর্থ দেখে আমাকে ঠিকানা বলছে।
- ...সামনে এসে দেখবেন রিকশার গ্যারেজ পাশে একটা সাদা লাইট জ্বলছে।
এই কথাটা কাজে দিলো। একটা রিকশার গ্যারেজ চিনতাম। কিন্তু বিশ্ব ব্যাংকের কল্যানে এখন সব খানে সাদা লাইট!! কোন লাইট দেখবো।
যাহোক, একটু এগিয়ে যেতেই অদ্ভুত ভাবে বাসাটা পেয়ে গেলাম। নিচে উনাদের কাজের মেয়ে দাড়ানো। দোতলায় বাসা।

ঢুকেই ছাত্রীর সাথে দেখা। আশা করছিলাম ওর বাবা বা মা’র সাথে দেখা হবে। অভ্যাসবশত সালাম দিয়ে ফেললাম। সালাম পেয়ে আমার ছাত্রী কেমন জানি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল! আমিও এমন একটা ভাব করলাম আমি তো সবাইকে সালাম দেই! আমার এইরকম বোকামীতে কাজের মেয়েটা বেশ বিরক্ত হলো মনে হয়। ঘরের ভেতর বলতে চলে গেল আমি এসেছি বলতে।

ওর ভাব দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে আমি ওকে আগে থেকেই পড়াই! গিয়েই দেখি বই খাতা সব ঠিকঠাক করে পড়ার জন্য তৈরী।
আমি তো এরকম সময় প্রথম দিন কি পড়াবেন, কখন পড়াবেন এইসব কথা বলেই আমার স্যার কে বিদায় করে দিতাম। আজকালকার ছেলে মেয়েরা বোধহয় অনেক সিরিয়াস টাইপের হয়। যেয়েই পড়ানো শুরু করে দিলাম। একদিক থেকে ভালোই হলো। টিউশুনিটা মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেল।




৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×