পরচর্চায় পরগণ সংশোধিত হইবে না, বরং আপনচর্চায় মনোনিবেশ করিয়া নিজেরে শুদ্ধতার অনলে বারংবার খরচা করিতে হইবে। এইখান-ওইখান হইতে ঘোটাদশেক ইতিহাস, আদর্শবাদের বুলি, পারমার্থিক জ্ঞান সংগ্রহ করিয়া; অন্যেরে উপদেশ দেওয়া ও ছিদ্রান্বেষণের বারোয়ারী বাজারে আত্মপরিচয় সৃষ্টি করিবার বৈদ্যুতিক প্রতিযোগিতায়, তাহা ব্যয় করবার মধ্য দিয়া কি এমন জয় করা যাইবে? বা গিয়াছে! যদি কেবল বই পড়িয়া, ডিগ্রি-ডিপ্লোমা-ডক্টরেট সেবন করিয়া আর নীতিকথা আওরাইয়াই শুদ্ধতার প্রজ্ঞা-রুচি আহরণ করা যাইতো, তবে কী আর ফেবতলার আদালত রোজ রোজ দেখিতে পাইতুম; পথের ন্যাংটো কুত্তটাও বিচারক হইবার অপেক্ষায় কম্প্যুটারে বসিয়াছে। ঘটনা ঘটা মাত্রই তিনি কহিয়া উঠিবেন, অর্ডার, অর্ডার। সকলেই যখন বক্তা, সেখানে শ্রোতার জন্ম হইবে কীনা সন্দেহ আমার! কর্তৃপক্ষ/সরকার বাহাদুর ব্যাপারটা ভাল করিয়াই জানেন, তাই ওসব কানে তোলার ঠেলাঠেলিতে তাহারা আর অভ্যেস করিতে আসেন না। দশকথা ভাসে পানিতে, তাহাদের সিদ্ধান্ত গদিতে। চাহিয়া দেখেন, মতামত প্রকাশের কপচানি, পাণ্ডিত্য সাজ, সবজান্তা ভঙ্গীর জবরদস্ত বাষ্প-লীলায় সাধারণ আমজনতা যখনই ভরসা করিতে যাইতেছে, মাকাল ফলের বাজ ঠুস্ ঠাস বহর নিয়া ভুঁই-পটকা ফাটিয়ে তাদের মাথার উপরই পড়িতেছে। এমনি করিয়া সুশীল এখন একটি জনপ্রিয় গালির ইয়ার্কি সম্ভাষণ। দাদা, ডাক্তার দিতেছেন সামরিক নিরাপত্তার ঔষুদ।
জানা, বোঝা ও মানার মইধ্যে যে প্রগাঢ় পার্থক্য রহিয়াছে, উহার মাহাত্ম উপলব্ধি করিতে হইবে। জগত-প্রকৃতির ক্রিয়া কর্মকে চিত্ত দ্বারা অবলোকন করিতে হইবে। দল-মত-জাতি-বর্ণ ভেদাভেদ না করিয়া সকলের সাথেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়া মিশিতে হইবে। চারদেয়ালের গুহায় বসিয়া যন্ত্রকাতর যজ্ঞতে তুষ্ট থাকিয়া অর্জিত বিদ্যে, অন্তর্জালিক শরীরকে হয়তো পুষ্ট করিতে পারে। কিন্তু মানব সন্তানে প্রোথিত স্ব-রাক্ষসকে পরাজিত করিতে হইলে অভিজ্ঞতার ধ্যান-পাঠ্যটুকও যে গ্রহণ করাই লাগিবে। ঘুরিতে হইবে দেশ, দেখিতে হইবে নোংরা কালো জলের জীবন, যারা রোজ আহার করিতেছে অক্লান্ত দূষণ-ক্লেশ।
এবং দিনের পর দিন, রাত্রি শেষের রজনীতে সমস্ত প্রতিকূলতায় সংগ্রাম করিয়া যে বৃক্ষটি প্রবীণ হইয়া উঠিল। তাহার ছায়ায় গতি থামাইয়া ক্ষণিক বিশ্রামের ছলে আত্মস্থ করিতে হইবে, ‘যাহা জানি আসলে কিছুই জানি না’ বাক্যখানা।
সে যতোই আকর্ষণ লইয়া পাশে থাকুক না কেনো। গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন নহে বিদ্যা, নহে ধন, হলে প্রয়োজন। মুঠোয় মুঠোয় সময় চলিয়া যাইতেছে। আসুন, প্রাপ্তবয়স্ক নহে প্রাপ্তমনস্ক হইবার ব্যবস্থা করি। না হইলে চুলকানি কাটিতে কাটিতে অঙ্গচ্ছেদ হইয়া যাইবে শীঘ্রই।
১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৩
অন্ধবিন্দু | সামহোয়্যার ইন...ব্লগ
[Cartoonist: Mana Neyestani]
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১৬ রাত ৯:২৪