বাংলাদেশের একমাত্র বীচ যেখান থেকে সূর্যাস্ত এবং সূর্যদয় দুটোই দেখা যায়। কুয়াকাটা গিয়েছিলাম ২০১০ সালের মার্চ মাসে। ভ্রমন পথটা একটু কষ্টকর তবে কষ্ট করে যে কেষ্টটি মিল্বে তার কথা চিন্তা করে কষ্টের কথা বেমালুম ভুলে যান!
কিভাবে যাবেনঃ
সর্বোচ্চ তিন দিন এবং সর্বনিম্ন ২ দিনেই ঘুরে আস্তে পারবেন কুয়াকাটা। ঢাকা থেকে সরাসরি কুয়াকাটার বাস পাবেন "সাকুরা" এবং "বিআরটিসি"। সাকুরা গাবতলি থেকে প্রতিদিন রাত সাড়ে ১০টায় ছাড়ে, সময় লাগবে ১২-১৫ঘন্টা (!!), ভাড়া ৪৫০টাকা এবং বিআরটিসি ছাড়ে সায়েদাবাদ থেকে ভাড়া একটু কম।
তবে সবচেয়ে সহজ এবং আরামে যেতে চাইলে লঞ্চে যাওয়া ভাল। ঢাকা থেকে বরিশালের লঞ্চ ছাড়ে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে, রাত ৬-৯টার মধ্যে। ডেকে গেলে জনপ্রতি খরচ ৬০-৮০ টাকা। সিঙ্গেল কেবিন ৬০০-৭০০, ডাবল কেবিন ৯০০-১৪০০ এবং ভিআইপি কেবিন ২০০০-২৫০০ টাকা (ভিআইপি কারন, এসি আছে, টিভি আছে যদিও সারা রাত হাতির বস্তার নাচ গান ছাড়া আর কিছু দেখা যাবে না, টয়লেট আছে, একটা ডাবল বেড এবং সোফা আছে, যদিও কেবিন আসলে ২ জনের জন্য তবে আমরা ৬জন ছিলাম!!)। সদরঘাট থেকে পটুয়াখালি যাওয়ার লঞ্চ আছে, সেটাতেও যেতে পারেন, খরচ একই তবে সময় বেশি লাগবে এবং লঞ্চগুলো বরিশালের লঞ্চের তুলনায় একটু নিম্নমানের।
ভিআইপি কেবিনে আমরা কয়েকজন।
লঞ্চের বারান্দা থেকে।
সারা রাত আরামে শুয়ে বসে ঘুমিয়ে থাকবেন, ভোর ৫ টার মধ্যে বরিশাল পৌছে যাবেন। আরো কিছুখন ঘুমান, ৬টা বা ৭টায় উঠে রিকশায় করে বরিশাল বিআরটিসি কাউন্টারে চলে যান। তার আগে সকালের নাস্তা সেরে নিন। বাস সকাল ৭টা থেকে প্রতিঘন্টায় কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় তবে ছুটির দিনে প্রথম বাস সকাল ১১টায় ছাড়ে। আমরা এটা জানতাম না বিধায় কাউন্টারে ৪ ঘন্টা বসে থাকতে হয়েছিল।
বাস কাউন্টারে অপেক্ষা।
বরিশাল থেকে কুয়াকাটা যেতে সময় লাগবে ৫-৬ ঘন্টা। রাস্তা অনেক খারাপ এবং ৫টি ফেরী পার হতে হবে। একটু ধৈর্য্য ধরুন, বিকাল বা সন্ধায় পৌছাবেন। বাস যেখানে থামবে সেখানেই কিছু হোটেল পাবেন। ভাড়া খুব বেশী না, জনপ্রতি ১০০-২০০টাকা খরচ হবে। সন্ধ্যায় সূর্যাস্ত দেখতে চলে যান কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে।
কুয়াকাটায় সূর্যাস্ত।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত।
সৈকতে এক যায়গায় দেখবেন অস্থায়ী ২টি ঘর, তারা ফাতরার চরে যাওয়ার জন্য ট্রলার ভাড়া দেয়। জনপ্রতি ১০০ (সম্ভবত, ঠিক মনে নেই) টাকা কয়রে নেবে। পরদিন সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে ছাড়বে। ট্রলার রিজার্ভ করাই ভাল নাহলে ওরা ফাতরার চরে বেশিক্ষন থাকবে না। বড়জোর ১-২ ঘন্টা।
ফাতরার চর গামী ট্রলার।
ফাতরার চর, এটি সুন্দরবনের একবারে পূর্বাংশ। কুয়াকাটা দেখতে এসে সুন্দরবন দেখে যান!
সমুদ্র যাত্রা।
ফাতরার চরে ২টি রাস্তা দেখতে পাবেন, একটি বড় এবং একটি ছোট, ছোট রাস্তাটি গভীর জঙ্গলে ঢুকে গেছে, এদিকে বেশীদূর যেতে পারবেন না। বড়রাস্তা ধরে কিছুদূর গেলে একটি খাল পার হতে হবে এবং এখানেই আছে প্রকৃতির কিছু অবাক বিস্ময়!!
খালের পাড়ে অনেক ছোট ছোট কাকড়া দেখতে পাবেন, লাল, নীল, হলুদ, বেগুনী রঙের!! আর পানিতে? একটু পর পর স্বচ্ছ জেলীফিশ ভেসে যাবে!
প্রথম জেলীফিশ দেখা, যদিও এটা মৃত ছিল।
জেলীফিশ ধরছি! (জ্যান্ত)
লেবুর চর (ফাতুরার চরে যাওয়ার পথে উপকূলের দৃশ্য)
ছোট রাস্তা।
সুন্দরবনে হারায় গেলাম!
বড় রাস্তা।
ফাতরার চরের সৈকত (ফটোসেশন চলছে!)
নেটওয়ার্ক আছে!
একটি গবেষনা (কিসের গবেষনা বলা যাবেনা!)
জেলীফিশ খালের প্রবেশমুখ।
আমরা কয়েকজন।
ফটোসেশন (আমি!)
ফটোসেশন
আমাগো না দেইখ্যা সিন সিনারি দেখেন!
হইছে এইবার আসেন ফিরা আসি। বিকালের মধ্যে সৈকতে এসে একটু লাফালাফি করতে পারেন, অতঃপর সৈকতের নিকটেই বৌদ্ধমন্দিরে ঘুরে আসুন।
বৌদ্ধমূর্তি।
সন্ধ্যার আগে সাকুরা কাউন্টারে এসে সরাসরি ঢাকার বাসে রওনা দিতে পারেন অথবা আবার বরিশাল যেয়ে লঞ্চে ফিরতে পারেন।
সময়ঃ
২-৩ দিন।
খরচঃ
২৫০০-৩৫০০টাকা
যাওয়ার সময়ঃ
বর্ষাকাল বাদে যেকোন সময়েই যেতে পারেন, আর জেলীফিশ দেখাটাও নির্ভর করছে সময়ের উপর।আমরা মার্চের শেষে গিয়ে জেলীফিশ দেখেতে পেরেছিলাম।
কি কি নেবেনঃ
যা ইচ্ছা নেন কোন সমস্যা নাই! তবে বহন যেহেতু আপনাকেই করতে হবে তাই চিন্তা করে দেখুন।
উইকিলিঙ্ক
মার্চ কিন্তু চলতেছে সুতরাং আজকেই দৌড় মারেন
আপনাদের জন্য বুক ভরা ভালবাসা!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১২:২৩