ব্যস্ত হাতে কেডসের ফিতে বাঁধছে ইমন। ভ্রুজোড়া কুচকে আছে। সিগেরেটের ধোয়াটা সরাসরি চোখে লাগছে বলে ঘাড়টা কাত করল। একই সঙ্গে দেখে নিল আয়নায়। না, জেলটা ভালই। স্পাইক হয়েছে। ওয়েট বলেই অনেক্ষণ থাকে, শুধু বৃষ্টি না হলেই হলো। এবার স্পেয়ার ম্যাগটা ঢোকালো বাঁপায়ের মোজায়। টেনে টুনে দেখল ইলাস্টিক। ঠিকই আছে। এখন অপেক্ষা।
রাজাবাজার : আগের দিন, রাত ১০টা
-কামটা কী করতেই হইব ভাই?
-ক্যান, কোনো সমস্যা! তোর কী আজকাল হাত কাঁপে, নাকি মুরগি হইতাছস। প্রেম করস নাকি?
মাথাটা চুলকে নিল শায়েক। দুর্দান্ত সাহসের জন্য ওর আরেক নাম কমান্ডো। এখনো কোনো কামে ফেইল মারে নাই, একাই। ওরে তাই ভাই বিশেষ স্নেহ করে, জটিল কাম ছাড়া দেয় না। আজকের কাজটায় ওর নিজের মনটা সায় দিচ্ছে না। এমন না ইমনের সঙ্গে ওর খুব দোস্তি। কিন্তু পোলাটার সাহস আছে। একবার নিজে অ্যাকশনে দেখেছে। ওয়ান পিস। এরকম কেউ থাকবে না, তাও একই দলের। খারাপই লাগছে। ইমনের দোষ ভাইয়ের সঙ্গে তর্ক করেছে। ভাইয়ের মনে হচ্ছে এটা বিপদ সংকেত। কারণ ওখানে রাকিব-টোকনরাও ছিল। যদি দেখে এরকম বেয়াদবি করে ইমন পার পেয়ে গেছে, তাহলে ওরাও করবে। আর তাহলেই বিপদ। এসব ব্যাপারে কেয়ারলেস হলে মুশকিল। এতদিনের সাম্রাজ্যটা টিকে আছে এরকম ঠিক সময়ে ঠিক কাজটি করাতেই। মেশিন হাতে পেলে যে কেউই গুন্ডা হতে পারে। ওরকম ১০০ ছেলে ভাই রোজ বানাতে পারেন, তাই এক ইমনে কিছু এসে যায় না।
-ঠিকাছে ভাই। ফোন দিমুনে।
-বুঝিছ কইলাম, ও আবার সেয়ানা পোলা। তোর লগে নজরুলরেও লইয়া ল। একা তোরে দেখলে সন্দেহ করতে পারে।
- না, লাগব না ভাই।
-যা কই শোন।
কথা বাড়ায় না শায়েক।
বেগুনবাড়ি : আগের দিন রাত ১০ টা
কোনো আওয়াজ ছাড়াই বাইকটা থামে অলির গ্যারেজে। সেলিম বাইর হচ্ছে ডেনিশের একটা কৌটা হাতে, চা আনবে বোধহয়। কৌটা হাত বদল করে সালাম দেয়, আগবাড়িয়েই বলে-
আছে ভাইজান। একটু আগেই আসছে।
ঘাড়লক করে নামে ইমন। শট শার্টটা টেনে দেয় নিচে। টিটুর সঙ্গে আগেও লেনদেন করেছে, তাই তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু লাইনটা এমন, শালার কে যে কখন কাঠের চশমা পড়ে ঠিক নাই। সন্ধ্যায় ভাইয়ের সঙ্গে তর্ক মতো হলো। আসলে রাকিব-টোকনকে দেখেই ওর মেজাজটা খিচড়ে গেছিল। এত কষ্ট করে টেম্পু স্ট্যান্ডের দখল করল সে, এখন সেটার টাকাটা নিবে শালারা। ওরা জানে, একটু হলেই সেদিন যেত ইমন! লোকমানের মেশিন না ফাঁসলে ওর জায়গায় ইমনের লাশটাই পড়ত। আবছা অন্ধকার ঠেলে এগিয়ে যায়। টিটু একাই।
-এত দেরি করলা ক্যান?
-দেরি মানে, তুমিও তো এখনই আসলা।
টিটু চুপ মেরে যায়। কোমরে হাত দেয়, হাত দেয় ইমনও। হাসে টিটু, একটা ন্যাকড়ার পুটলি বের করে।
-তাওরাস। অরজিনাল। ৬৫ হইলে ছাড়ব।
হাতে তুলে নেয় ইমন। ওর একই জিনিস আছে। বেশ নির্ভরযোগ্য। সবচেয়ে বড় কথা গুলি ফাঁসেনা। বুড়ো আঙ্গুলে টিপে ম্যাগাজিনটা স্লাইড করে। খালি। ট্রিগার টেনে, ছেড়ে দেয়। এরপর একবার কক করে। না, ঠিকই আছে। পকেটে হাত দিয়ে বোন্দাটা বের করে আনে।
-৬০ আছে।
-আরে না মামা। আমি অনেক বার্গেনিং করছি। ওরা ছাড়তে চায় না। অন্য পার্টিও আছে। আমি কী তোমার লগে লাভ খামু নাকি।
খেচরম্যাচর সহ্য হয় না ইমনের।
-টিট্যা, টাকাটা গুন, তারপর ফুট। তুই যে ফর্মাগিরি করছ, এইডা বহুদিন ধইরা জানি। কবে ভাইয়ে হান্দাইয়া দিব, তখন বুঝবি সাপের খেইল। ভাইল দাও খালি- মাদারি।
কোন কথা না বলে উঠে পড়ে টিটু। যাওয়ার আগে শুধু বলে
-হুনলাম ভাইয়ের লগে ঝগড়া হইছে তোমার?
_ঝগড়া মানে? কেডা কইছে! অবাক হয় ইমন।
-না হুনলাম।
বেরিয়ে যায় টিটু। সেলিম ঢুকে।
-হেই বেডা কই গেল! মামা আপনারে জিতু মামা খুঁজতাছে। কী বলে কথা আছে। কথাটা শুনেই রিং করে ইমন। ফোন বাজছে। ধরছে না জিতু।
মোহসিন হল : সকাল ৮টা
সারারাত কার্ড খেলেছে জিতু। নাম জিতু, কিন্তু হারু পার্টি। ক্যাশ হেরেছে ২৫, ধার হয়েছে আরো ১২। ইমন বহু মানা করেছে, কিন্তু তারপরও নেশাটা ছাড়তে পারে না। ইমনের কথা মনে হতেই মনে পড়ে যায়। আয় হায়। সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে। দেখে মিস কল উঠে আছে অনেকগুলো। ইমনের নম্বর। ও ভাইব্রেশনে দিয়ে রেখেছিল বলে টের পায়নি। ফোন বাজছে ধরছে না ইমন। তাড়াতাড়ি সেন্টুর কাছ থেকে চাবি নেয়। একটানে মগবাজার যেতে হবে। দেরি হলেই সর্বনাশ।
মগবাজার : সকাল ৮ টা
ইচ্ছে করেই ফোনটা ধরছে না ইমন। শালা, তুমি জুয়া খেলবা, আমি ফোন করলে ধরবা না। টাকা শর্ট, এহন ফোন কর। কাটতেই আবার কল। ভাইয়ের ফোন। এত সক্কালে!
-জি ভাই!
-ইমন, রাইগা আছস না?
-না ভাই।
-শোন আমি বুঝি সব। আরে একটা বড় কাম আছে তাই রাকিব-টোকনগো লাগব আমার।
-ভাই, ওরা অ্যান্টি, পল্টি দিব যেকোনো দিন।
-দাদারে আদা পড়া দেছ নাকি! হোন আমি সব বুজি। ভালো কথা। ফ্রি আছছ?
-ক্যান ভাই!
-কমান্ডোরে পাঠাইতাছি। ও অবশ্য একাই পারে। তুই খালি বাইকে ওরে লিফট দিবি। ফরহাদের ট্রেস পাইছি। হুনলাম তাওরাস লইসছ। মেশিন ভালো তো!
এবার সত্যি চমকায় ইমন! ভাইয়ের 4টা চোখ আটটা কান কথাটা তাইলে সত্যি!
-জি ভাই।
-একটা নতুন ম্যানুয়েল আনাইছি। কামটা সাইরা আইয়া লইয়া যাইছ। বেরেটা।
-আইচ্ছা ভাই। শাইক্কা কহন আইব।
-ধর ১১টা সাড়ে ১১টা। ডেমরা। সমস্যা নাই। নাম্বার প্লেট লাগাইছ না।
-জি ভাই। ফোন কেটে যায়। বেল বাজে। শাইক্কা না, কেডা আইল। কি হোলে চোখ রাখে ইমন। জিতু, ঘামাচ্ছে। দরজায় রীতিমতো ধাক্কা। খোলে ইমন।
-ওফ। সিরিয়াস ক্যাচাল। তুই ফোট।
-মানে।
-তরে লইয়া গুটি হইছে।
-ক্যাডায়?
-ভাইয়ে।
-কী? -হ, শাইক্কা কামডা করব।
দুয়ে দুয়ে চার মেলায় ইমন
-তুই শুনলি কইত্যে?
-ফারাবিরে চিনস না, ৪০৮ নম্বরের?
- না।
-যাক, চিননের কাম নাই। শাইক্কার মেশিন ওর কাছে থাকে। ও জিগাইছে, কেডা। শাইক্কা তোর নাম কইছে। ও আবার জানে না আমি তোর দোস্ত।
-হুমম। বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ইমন। জিতু এসব ব্যাপারে রিলায়েবল।
-যা তুই। দেখি, কী করা যায়।
-তুই সিলেট যাগা, কামরানগো কাছে।
- যা তুই।
মগবাজার : সোয়া ১১টা
কল দিয়েছিল কমান্ডো। বাইকে চড়ে রেডি ইমন। শার্টের নিচের বোতামটা খোলা। নায়লনের যে হোলস্টারটা কিনেছিল, আজ কাজে লাগছে। শোল্ডার হোলস্টার। বাটটা উল্টো দিকে ঘুরিয়ে আটকে নিয়েছে। 10 সেকেন্ডেই ফায়ার করতে পারবে মেশিন বের না করে। শায়েক পেছনে উঠে বসে। আলতো হাত ছোয়ায় শার্টের পেছনে। মনে মনে হাসে ইমন। হাত দুটো কোমরে যায় এবার। ইমন নড়ে ওঠে।
-দুর মিয়া কুতকুতি লাগে। সোজা হইয়া বস। যেমন বইছ মনে হয়...। কথা শেষ না করেই স্টার্ট দেয়। সামনে ধাক্কা খায় শায়েক। ইমন টের পায়, কোমরেই মেশিনটা রেখেছে ও।
বিশ্বরোডে উঠতেই শায়েক বলে, 'খিলগাও মাটির মসজিদটা ঘুইরা যাও তো। একটা কাম আছে। ফোর্থ গিয়ারেই টার্ন নেয় ইমন। বাইক ঘুরে। আবুল হোটেলের উল্টো দিকের গলিতে ঢুকতেই হঠাৎ কাধে হাত পড়ে। 'থামো'।
নড়াচড়াটা টের পায় ইমন। ওর হাত হ্যান্ডেল ছেড়ে কোমরে নামে, একইসঙ্গে ঘাড় কাত করে বাইকও শুইয়ে দেয়। গুলিটা ঠিক গলা বরাবর লাগে শায়েকের। মেশিন এবার হাতে নিয়ে ওর কপালে ঠেকায় ইমন। সাইলেন্সার লাগে না। ধপ করে আওয়াজ। বাইক তোলে ইমন। না, তাওরাস আসলেই চিজ! স্টার্ট নিয়ে ফের টান দেয় আগের পথে। হাওয়ার ঝাপটায় পতপতিয়ে উড়ছে শার্ট। বোতাম আটকে নেয় ইমন। একবার রিয়ার ভিউ মিররে চোখ বোলায়। নাহ্ জেলটা আসলেই ভালো।
পাদটীকা : এক বন্ধু জানতে চাইছে গালাগালি ছাড়া আমি লেখতে পারি কীনা! যেই সাবজেক্টে লিখলাম, সেইটা গালাগালি/ স্ল্যাং ছাড়া সম্ভব না। তবু টেরাই করলাম।